কলকাতায় চাকরি হারানো শিক্ষকদের মিছিল, মমতার পদত্যাগ দাবি
Published: 10th, April 2025 GMT
ভারতের সুপ্রিম কোর্টের রায়ে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিলের সিদ্ধান্তে অশান্ত হয়ে উঠেছে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি, দাবি উঠেছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগেরও। কলকাতাসহ গোটা পশ্চিমবঙ্গে প্রতিদিনই এ নিয়ে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ চলছে। আজ ন্যায়বিচার চেয়ে কলকাতায় এক বিশাল মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) ভারতের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ পশ্চিমবঙ্গের স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) এবং এর মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া ২৫ হাজার ৭৫২ জন শিক্ষকের চাকরিকে অবৈধ ঘোষণা করে চাকরি বাতিলের আদেশ দেন। এ রায় ঘোষণার পর থেকেই রাজ্যজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তরের সামনে শুরু হয় চাকরিহারাদের অবস্থান ধর্মঘট ও অনশন।
ন্যায়বিচার চেয়ে বুধবার শিয়ালদহ স্টেশন থেকে বিশাল এক মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি বউবাজার সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ হয়ে ধর্মতলার ওয়াই চ্যানেলে শেষ হয়। এদিন সল্টলেকের প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তরের কাছে ফুটপাতে চাকরিহারা শিক্ষকেরা অবস্থান ধর্মঘটে বসেন। এ সময় তাঁরা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিরুদ্ধে চাকরির নিয়োগে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন। অযোগ্য প্রার্থীদের চাকরি বাতিল করে যোগ্যদের চাকরি নিশ্চিত করার দাবিও তোলেন তাঁরা।
ধর্মঘটে বসা শিক্ষকেরা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ঘুষ–বাণিজ্যের শিকার হওয়ার অভিযোগ তোলেন। এ সময় তাঁরা ১৮ হাজার যোগ্য প্রার্থীর চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান।
উল্লেখ্য, কলকাতা হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও রাজ্য সরকার যোগ্য ও অযোগ্য প্রার্থীদের পৃথক তালিকা আদালতে জমা দেয়নি। ফলে আদালত একযোগে সবার চাকরি বাতিলের নির্দেশ দেন। তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ইতিমধ্যে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়ে দীর্ঘদিন জেলে আছেন।
তবে এবার আন্দোলনকারীরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে তাঁর পদত্যাগ চেয়েছেন। তাঁদের দাবি, মমতার দলের অতিলোভের কারণেই ঘুষের বিনিময়ে অযোগ্য প্রার্থীদের চাকরি দেওয়া হয়েছে এবং যোগ্য প্রার্থীদের চাকরি কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এমনকি শূন্য পাওয়া প্রার্থীদের খাতা ঘষামাজা করে চাকরি দেওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগও করেছেন চাকরিহারা এসব শিক্ষক।
এসব দুর্নীতির অভিযোগের দায় তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘাড়ে চাপাচ্ছে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, যাঁরা চাকরি হারিয়েছেন, তাঁদের পাশে থাকবেন তিনি।
এদিকে চাকরিহারা ও বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীরা ‘বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থী, চাকরিজীবী ও চাকরিহারা ঐক্যমঞ্চ’ নামে একটি নতুন সংগঠন গঠন করেছেন। গত শনিবার বিকেলে কলকাতা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা জানান, চাকরি বাতিলের সম্পূর্ণ দায় রাজ্য সরকার ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিতে হবে। তাঁরা অভিযোগ করেন, ১০ বছর ধরে মুখ্যমন্ত্রী চাকরির নামে সাধারণ চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বন দ য প ধ য য় ম খ যমন ত র দ র চ কর চ কর হ র কলক ত সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
৮% জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে কীভাবে ঐক্য হয়, প্রশ্ন সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনসহ কোনো সংস্কার কমিশনে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি দেখা যায়নি বলে মন্তব্য করেছে সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলন। তাদের প্রশ্ন, ঐকমত্য কমিশনে কোনো রাজনৈতিক দলকেও প্রশ্ন করতে দেখা গেল না যে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৮ শতাংশ জনগোষ্ঠীর কোনো প্রতিনিধি না থাকলে বা তাদের বাদ দিয়ে কীভাবে ঐক্য গঠন হয়।
‘অভ্যুত্থান পরবর্তী এক বছরে ৮% জনগোষ্ঠীর অবস্থা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্ন তোলা হয়েছে সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের লিখিত বক্তব্যে। আজ শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সংগঠনটি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) তরুণ রায়। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গণ-অভ্যুত্থানের আগে হোক বা পরে, রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে এখনো ৮ শতাংশ শুধু রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করার জায়গা। তাদের অধিকার নিয়ে সচেষ্ট হতে দেখা যাচ্ছে না কোনো রাজনৈতিক দলকে। সে ক্ষেত্রে এমন অবস্থা চলমান থাকলে ৮ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে নিজেদের অস্তিত্বের জানান দিতে ভবিষ্যতে নির্বাচনের সময় ভোটকেন্দ্র বয়কটের সিদ্ধান্তও নিতে হতে পারে।
সংবাদ সম্মেলন থেকে বলা হয়, গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষেরা আক্রান্ত হতে থাকেন। তাৎক্ষণিকভাবে গত বছরের ৯ আগস্ট থেকে সংখ্যালঘুরা জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলেন। সেই আন্দোলন থেকে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠনসহ ৮ দফা দাবি তোলা হয়। সেসব দাবি বাস্তবায়নে তখন অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিল। কিন্তু গত ১ বছরে ৮ দফা দাবি বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকারের আশানুরূপ কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হয়নি।
সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলন লিখিত বক্তব্যে আরও উল্লেখ করেছে, বিগত ৫৩ বছরে কোনো সরকারই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি। আগামী দিনের নিরাপত্তা ও অধিকার রক্ষায় ৮ দফার বাস্তবায়ন করতে হবে। ৮ দফা যে দেশের ৮ শতাংশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রত্যেকের মনের কথা জানান দিতে ২২ আগস্ট ‘জাতীয় সংখ্যালঘু সম্মেলন-২০২৫’ আয়োজন করা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক সুস্মিতা কর বলেন, সরকারের ঐকমত্য কমিশনে সংখ্যালঘু প্রতিনিধি নেই। দেশের একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীকে নিয়ে তো ঐকমত্য গঠন হতে পারে না। গত বছরের ৯ আগস্ট থেকে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নিজেদের অধিকার নিয়ে সচেষ্ট আছে। সংখ্যালঘুদের সব সংগঠন আট দফা দাবিতে একাত্ম। যদি নির্বাচন–পূর্ববর্তী সময়ে সরকার কিংবা রাজনৈতিক দলগুলো থেকে এসব দাবি বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করতে না দেখা যায়, তাহলে হয়তো সংখ্যালঘুরা ভোট বয়কট লড়তে পারে।
এই সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের প্রচার সম্পাদক সুব্রত বল্লভ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির আদিবাসী সংগঠক সুমন ত্রিপুরা।