পাহাড়িকন্যা সোমেশ্বরী। লাল সিলিকন বালুই বাংলাদেশ ও ভারতের আন্তঃসীমান্ত নদীটিকে করেছে মায়াবী; অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি। এই নদীতে সারা বছর নৌকা চলত, মাছ পাওয়া যেত, পানি টলটল করত। কিন্তু এখন বর্ষাকালের দুই-তিন মাস ছাড়া অন্য সময়ে পানি থাকে না। অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনই সর্বনাশ ডেকে এনেছে সোমেশ্বরী নদীর। শুধু সোমেশ্বরী নয়; বালু উত্তোলন, দখল-দূষণ, অপ্রতুল বৃষ্টি, টানা তাপপ্রবাহ নানা কারণে দেশের নদীগুলো ক্রমাগত শুকিয়ে যাচ্ছে। অনেক নদনদী আবার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে সংকুচিত হয়ে আসছে। কিছু নদী এতটাই শুকিয়ে গেছে, সেগুলো নৌচলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। দেশে এ রকম ৭৯টি নদী শুষ্ক মৌসুমে প্রায় পুরোপুরি শুকিয়ে যায় বলে রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের (আরডিআরসি) গবেষণায় উঠে এসেছে।
‘বাংলাদেশের শুকিয়ে যাওয়া নদী’ শিরোনামে সংস্থাটির এক গবেষণায় বলা হয়েছে, দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত সরকারি তালিকাভুক্ত ১ হাজার ১৫৬টি নদীর মধ্যে অন্তত ৭৯টি শুকিয়ে গেছে অথবা শুকিয়ে যাওয়ার পথে। জলবায়ু সংকট বৈশ্বিক আবহাওয়াকে দিন দিন বৈরী করে তুলেছে। এ কারণে শুধু নদনদীই নয়, এগুলোর ওপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করা মানুষের ওপরও বিরূপ প্রভাব পড়ছে। কৃষিকাজ, জীববৈচিত্র্য, প্রাণপ্রকৃতি, জ্বালানি উৎপাদন কিংবা নদীকেন্দ্রিক পণ্য পরিবহনও এখন হুমকিতে পড়েছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকাশিত সরকারি তথ্য, বিভিন্ন একাডেমিক গবেষণাপত্র এবং সংবাদপত্রের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে এই গবেষণাটি পরিচালনা করেছে আরডিআরসি।
সংস্থাটির গবেষক খালিদ সাইফুল্লাহ বলেন, আমরা দেখেছি এক সময় যেসব নদী কৃষি, জীববৈচিত্র্য ও স্থানীয় অর্থনীতির প্রাণ ছিল, আজ সেগুলোর অনেকটাই শুকিয়ে গেছে বা তাদের তলদেশে প্রচণ্ড পলি জমে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এই অবনতি কৃষি, জীববৈচিত্র্য এবং মানুষের জীবিকার ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে।
এই গবেষণা অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়েছে খুলনা, রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চল। এসব জায়গায় দূষণ, পলি জমা এবং দ্রুত নগরায়ণের কারণে প্রাকৃতিক পানি প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে। খুলনা বিভাগে ২৫টি, রাজশাহীতে ১৯, রংপুরে ১৪, চট্টগ্রামে ৬, ময়মনসিংহে ৫, ঢাকায় ৪ এবং বরিশাল ও সিলেট বিভাগে ৩টি করে নদী রয়েছে।
মৃত বা ব্যাপকভাবে শুকিয়ে যাওয়া নদীগুলো হলো– আলয়, আত্রাই, বাঘবতী, বাঙালী, বড়াল, বেতনা, ভৈরব, ভদ্রাবতী, ভোলা, ভুল্লী, বিলাস, বুড়িখোরা, চন্দনা, চন্দ্রাবতী, চিকনাই, চিত্রা, চুনা, ধলাই, ধলেশ্বরী, ধরলা, ঢেপা, দুধকুমার, ফটকি, গলঘেসিয়া, গাংনাই, ঘাঘট, গোমতী, গনেশ্বরী, গড়াই ও গুমানী, হানু, হরিহর, হিশনা, হোজা, হুরাসাগর, ইছামতী, কাহুয়া, কাকসিয়ালি, কালীগঙ্গা, কালপানি, করতোয়া, কাঁটাখালী, খাকদোন, খোলপেটুয়া, কোহেলিয়া, কপোতাক্ষ, কুলিক, কুমার, কুশিয়ারা, মহানন্দা, মানস, মাথাভাঙ্গা, মহিষাবান, মরিচাপ, ময়ূর, মুহুরী, মুরাদিয়া, নবগঙ্গা, নাগর, নারদ, নরসুন্দা, পাগলা, পুনর্ভবা, সন্ধ্যা, সেলোনিয়া, সাগরখালী, শালিখা, শিব, শোলমারি, শুক, সোমেশ্বরী, সোনাই, সুখদহ, সুরমা, টাঙ্গন, তিস্তা, তিতাস, তুলসীগঙ্গা ও লেঙ্গা। এ ছাড়া যমুনা ও পদ্মার কিছু শাখা নদী শুকিয়ে গেছে।
গবেষণায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনা-মেঘনা (বিজিএম) অববাহিকার ওপরও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, উজানে বাঁধ নির্মাণ ও পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের ফলে এসব নদীতে প্রাকৃতিক প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে। ফলে এসব নদীর ওপর নির্ভরশীল কোটি কোটি মানুষের জীবনধারা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে আরডিআরসি।
তবে গবেষণায় এটিও স্পষ্ট করা হয়েছে যে, শুধু জাতীয় পর্যায়ের উদ্যোগ যথেষ্ট নয়। অনেক নদীই আন্তর্জাতিক সীমান্ত অতিক্রম করে প্রবাহিত। তাই বাংলাদেশের উচিত উজানের দেশগুলোর সঙ্গে আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার করা।
আরডিআরসির চেয়ারম্যান এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, সরকারকে অবিলম্বে এই নদীগুলোর দিকে মনোযোগ দিতে হবে এবং নৌপরিবহনকে উৎসাহিত করতে হবে। যদি আমরা সব নৌযান চলাচলের উপযোগী নদীতে জল পরিবহন ব্যবহার না করি, তাহলে আমরা সেগুলো সংরক্ষণ করতে পারব না।
গবেষণা অনুসারে, দেশে প্রায় ২৪ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ নদী, খাল ও স্রোতধারা রয়েছে। বর্ষাকালে এর মধ্যে প্রায় ৬ হাজার কিলোমিটার নৌচলাচলের উপযোগী থাকে। শুষ্ক মৌসুমে এই সংখ্যা নেমে আসে ৩ হাজার ৮০০ কিলোমিটারে। সড়কপথ ব্যবহারে প্রতি টন কিলোমিটারে ২.
এ বিষয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, কিছু নদী প্রাকৃতিক কারণে শুকিয়ে যায়, কিছু মানুষের কার্যকলাপের কারণে শুকিয়ে গেছে। কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আগে, আমাদের প্রতিটি নদীর শুকিয়ে যাওয়ার কারণ নির্ধারণ করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার নদী উদ্ধারের উদ্যোগ নিয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ম শ বর প রব হ সরক র র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ায় গুলিতে ৩ পুলিশ নিহত
যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যে গুলিতে অন্তত তিনজন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও দুজন পুলিশ সদস্য।
অঙ্গরাজ্যটির পুলিশ কমিশনার ক্রিস্টোফার প্যারিস বুধবার সংবাদমাধ্যমকে হতাহতের এ তথ্য জানান।
ক্রিস্টোফার প্যারিসের বরাতে বিবিসি জানিয়েছে, স্থানীয় সময় বুধবার দুপুরের এ ঘটনায় সন্দেহভাজন বন্দুকধারীও পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। আহত দুই পুলিশ সদস্যের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
পেনসিলভানিয়ার গভর্নর জশ শাপিরো ফিলাডেলফিয়া থেকে প্রায় ১৮৫ কিলোমিটার বা প্রায় ১১৫ মাইল পশ্চিমে নর্থ কোডোরাস টাউনশিপে ঘটনাস্থলে গেছেন।
কে বা কারা এ গুলিবর্ষণের পেছনে জড়িত, সে সম্পর্কে প্রাথমিকভাবে পুলিশ কোনো তথ্য দেয়নি।
অ্যাটর্নি জেনারেল পামেলা বন্ডি পুলিশের বিরুদ্ধে সহিংসতাকে ‘আমাদের সমাজের জন্য একটি অভিশাপ’ বলে অভিহিত করেছেন।
পামেলা বন্ডি আরও বলেন, স্থানীয় কর্মকর্তাদের সহায়তার জন্য ফেডারেল এজেন্টরা ঘটনাস্থলে গিয়েছেন।