পারকিনসনস দিবস উপলক্ষে ব্যতিক্রমী আয়োজন
Published: 10th, April 2025 GMT
আজ বিশ্ব পারকিনসনস দিবস। প্রতিবছর ১১ এপ্রিল বিশ্বজুড়ে দিবসটি পালন করা হয়। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘ইউনাইট ফর পারকিনসনস’। এবার দিবসটি উপলক্ষে ভিন্নধর্মী এক আয়োজন করেছিল স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের নিউরোসায়েন্স সেন্টার। হাসপাতালের মিলনায়তনে গতকাল বৃহস্পতিবার পারকিনসনস আক্রান্ত ব্যক্তি এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের জন্য জীবনঘনিষ্ঠ এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
পারকিনসনসকে সাধারণভাবে একধরনের ‘মুভমেন্ট ডিজঅর্ডার’, যা রোগীর স্বাভাবিক চলন শক্তিকে বাধাগ্রস্ত করে। রোগীর পেশি কাঁপতে থাকে, তাঁর স্বাভাবিক গতি ধীরে ধীরে কমে আসতে থাকে। বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় পেশির জড়তায়। একপর্যায়ে ছোট ছোট পদক্ষেপে হাঁটেন তিনি। হাঁটাচলার সময় ভারসাম্য রাখতে অসুবিধা হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে চিকিৎসকদের জন্য ছিল বৈজ্ঞানিক সভা। হাসপাতালটির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা ছাড়াও সেখানে বক্তব্য দেন জাতীয় নিউরোসায়েন্সেস ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ রুমী।
পারকিনসনস রোগের চিকিৎসায় ওষুধ এবং বিশেষ ব্যায়াম ছাড়াও বিশেষায়িত শল্যচিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আলোচনা করেন অধ্যাপক জালাল উদ্দিন। চিকিৎসাপ্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশেও এ ধরনের শল্যচিকিৎসা করা হচ্ছে, এখন পর্যন্ত যদিও তা স্বল্প পরিসরে।
সভায় যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক থেকে ভার্চ্যুয়ালি যোগ দেন নিউরোলজির অধ্যাপক আলেসান্দ্রো ডি রোকো। তিনি জানান, বিশ্বে সবচেয়ে দ্রুতগতিতে যে স্নায়বিক রোগটি বাড়ছে, তা হলো পারকিনসনস। রোগটি সম্পর্কে তাই সবারই সচেতন হওয়া জরুরি।
পারকিনসনস আক্রান্ত যেসব ব্যক্তি স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডে চিকিৎসা নিয়েছেন, তাঁদের এবং তাঁদের স্বজনদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল এই বিশেষ আয়োজনে। ফুল দিয়ে তাঁদের বরণ করে নেওয়া হয়। তাঁদের পক্ষ থেকে কয়েকজন নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা ভাগ করে নেন বৈজ্ঞানিক সভায়।
হাসপাতালটির নিউরোলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও কো-অর্ডিনেটর মফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। জিনগত বিষয়ও জড়িত থাকে কারও কারও ক্ষেত্রে। তিনি বলেন, অনেকের জন্যই বাড়তি ঝুঁকি সৃষ্টি করে পরিবেশে ছড়িয়ে থাকা মারাত্মক দূষণকারী পদার্থ। বায়ুতে মিশে থাকা কণা এবং কৃষিপণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত রাসায়নিক কীটনাশক হলো এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ উপাদান। স্বাস্থ্যকর জীবনচর্চা এ রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে।
নিউরোলজি বিভাগের কনসালট্যান্ট মুহাম্মদ ওয়াহিদুর রহমান একজন মুভমেন্ট ডিজঅর্ডার বিশেষজ্ঞ। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেলোশিপ সম্পন্ন করে এখন দেশের মানুষকে বিশেষায়িত সেবা দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন এই চিকিৎসক।
এই চিকিৎসক জানালেন, পারকিনসনসকে সাধারণভাবে মুভমেন্ট ডিজঅর্ডার বলা হলেও এতে দেহের বহুবিধ পরিবর্তন হয়। কিছু সাধারণ উপসর্গ দেখা দেয় রোগীর চলাচল বাধাগ্রস্ত হওয়ারও আগে। চলাচলের সমস্যা দেখা দিলে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক। স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডে বিশেষায়িত পারকিনসনস ইউনিট চালু করারও স্বপ্ন দেখেন তিনি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চ ক ৎসক
এছাড়াও পড়ুন:
দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে হিন্দু নেতাদের সাক্ষাৎ
আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিভিন্ন পূজা উদ্যাপন পরিষদের নেতারা সাক্ষাৎ করেছেন। তাঁরা এ সময় প্রধান উপদেষ্টাকে পূজামণ্ডপ পরিদর্শনের আমন্ত্রণ জানান।
আজ সোমবার বিকেলে হিন্দু নেতারা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় যান। এ সময় তাঁদের কাছে দুর্গাপূজার প্রস্তুতি ও সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি তাঁদের বলেন, ‘আপনাদের সঙ্গে সব সময় দেখা করার ইচ্ছা থাকলেও সুযোগ হয় না। পূজা উপলক্ষে বছরে একবার সামনাসামনি দেখা হয়, কথা বলার সুযোগ হয়।’
হিন্দুধর্মীয় নেতারা জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর এক হাজারের বেশি পূজামণ্ডপ বেড়েছে। সারা দেশে পূজামণ্ডপ তৈরির কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে।
নেতারা বলেন, ধর্ম উপদেষ্টা নিয়মিতভাবে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন, মন্দির পরিদর্শন করেন। দুর্গাপূজা উৎসবমুখর করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হচ্ছে। গতবারের মতো এবারও নির্বিঘ্নে পূজা উদ্যাপন হবে বলে তাঁরা আশা করছি।
এ সময় স্থায়ী দুর্গামন্দিরের জন্য রেল মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জায়গা বরাদ্দ দেওয়ায় প্রধান উপদেষ্টাকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান মহানগর পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব। তিনি বলেন, ‘এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। এ জন্য আপনাকে বিশেষ ধন্যবাদ। আপনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে নিয়মিত আমাদের খোঁজখবর রেখেছেন। গত বছরের মতো এ বছরও পূজায় আমরা দুই দিন ছুটি পেয়েছি। এ জন্যও আপনাকে বিশেষ ধন্যবাদ। গত বছর ৮ আগস্ট দেশে ফেরার পরপরই আপনি ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন করে বলেছিলেন, আমরা সবাই এক পরিবার। আপনার বক্তব্য আমাদের মনে গভীরভাবে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।’
বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর বলেন, ‘গত বছর দুর্গাপূজায় ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শনে গিয়ে আপনি বলেছিলেন, নিরাপত্তা বাহিনী দিয়ে কড়া পাহারা বসিয়ে পূজা হবে এমন দেশ আমরা চাই না। আমরা প্রথমবারের মতো কোনো সরকারপ্রধানের কাছে এমন বক্তব্য শুনেছি। আমরাও আপনার বক্তব্যের সঙ্গে একমত, আমরাও চাই এ আয়োজনে সবাই সহযোগিতা করুক, দেশের সবার মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক থাকুক।’
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের মহাসচিব এস এন তরুণ দে বলেন, ‘আপনি দায়িত্বে থাকাকালীন দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজির স্থাপন করেছেন। আমরা লক্ষ করেছি, এক বছর ধরে, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচুর মিথ্যা কথা, ফেক নিউজ ছড়ানো হচ্ছে। আপনার নেতৃত্বে ধর্ম–বর্ণ–জাতিনির্বিশেষে বাংলাদেশের সব মানুষের কল্যাণ হবে, আমরা সেটাই কামনা করি।’
বৈঠকে ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, ‘ধর্ম মন্ত্রণালয় সব ধর্মের প্রতিনিধিত্ব করে। কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে আমরা কল্যাণকর কর্মসূচিগুলো নিশ্চিত করি।’ এ সময় তিনি বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সহযোগিতার কথা তুলে ধরেন।
প্রধান উপদেষ্টা সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও পূজার অগ্রিম শুভেচ্ছা জানান এবং দুর্গাপূজা ঘিরে যাতে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্রের সুযোগ তৈরি না হয়, সে জন্য সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান।
বৈঠকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার, হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান তপন চন্দ্র মজুমদার ও সচিব দেবেন্দ্র নাথ উঁরাও, রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী পূর্ণানন্দ (একক), বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু সমাজসংস্কার সমিতির সভাপতি অধ্যাপক হীরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, শ্রীশ্রী গীতা হরি সংঘ দেব মন্দিরের সভাপতি বিমান বিহারী তালুকদার, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন ফ্রন্টের আহ্বায়ক অপর্ণা রায় দাস, শ্রীশ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দিরের সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ চন্দ্র দত্ত ও সিদ্ধেশ্বরী সর্বজনীন পূজা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রণীতা সরকার উপস্থিত ছিলেন।