নেপালে আজ থেকে প্রায় দুই দশক আগে রাজতন্ত্র আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। প্রতিষ্ঠা করা হয় ধর্মনিরপেক্ষ প্রজাতন্ত্র। কিন্তু অর্থনৈতিক উন্নতির যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল, তা জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না। এই পরিস্থিতিতে ‘হিমালয়কন্যা’ হিসেবে পরিচিত দেশটিতে রাজতন্ত্র ফিরিয়ে আনার দাবিতে বিক্ষোভ বাড়ছে।

গত মাসে রাজতন্ত্র ফিরিয়ে আনার দাবিতে রাজধানী কাঠমান্ডুসহ নেপালের বিভিন্ন স্থানে হাজারো মানুষ বিক্ষোভ করেছেন। পুলিশ এতে বাধা দেয়। ফলে বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নেয়। এতে দুজন নিহত হন। ১০০ জনের বেশি বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

রাজতন্ত্র ফিরিয়ে আনার দাবিতে নেপালে এবারই প্রথমবারের মতো বিক্ষোভ হয়েছে, তা কিন্তু নয়। গত দুই দশকে এই দাবিতে অনেকবার বিক্ষোভ হয়েছে। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতা, দুর্নীতি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধীরগতি দেশটির মানুষের মধ্যে বর্তমান রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি হতাশা বাড়াচ্ছে। প্রজাতন্ত্র নিয়ে আগ্রহ কমছে। অন্যদিকে রাজতন্ত্রের সমর্থনে সাম্প্রতিক বিক্ষোভগুলোতে মানুষের অংশগ্রহণ বেড়েছে।

হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ নেপালের পার্লামেন্টে ২০০৮ সালে রাজতন্ত্র আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্ত করে ধর্মনিরপেক্ষ প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। তখন দেশটিতে এক দশক ধরে চলা গৃহযুদ্ধ শেষ করার জন্য একটি শান্তিচুক্তি হয়, যে গৃহযুদ্ধে ১৬ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। মূলত সেই শান্তিচুক্তির ধারাবাহিকতায় রাজতন্ত্র বিলুপ্ত করে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল।

নেপালের রাজতন্ত্রপন্থী রাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র পার্টির (আরপিপি) চেয়ারপারসন রাজেন্দ্র লিংডেন মনে করেন, রাজা নেপালিদের জাতীয় পরিচয় এবং গর্বের সঙ্গে যুক্ত। বার্তা সংস্থা এএফপিকে তিনি বলেন, ‘শাসন করার ইনস্টিটিউশন হিসেবে আমরা রাজতন্ত্র চাই না। তবে দেশের অভিভাবক হিসেবে আমরা রাজতন্ত্র চাই, যেটি দেশের স্বার্থ রক্ষা করবে এবং বিদেশি হস্তক্ষেপ প্রতিহত করবে।’

আরপিপি ২০১৭ সালের নির্বাচনে পার্লামেন্টে আসন পেয়েছিল একটি। সর্বশেষ ২০২২ সালের নির্বাচনে রাজতন্ত্র ও হিন্দুপন্থী কর্মসূচি নিয়ে দলটি ১৪টি আসন পায়। আরপিপি বর্তমানে নেপালের পঞ্চম বৃহত্তম রাজনৈতিক দল।  

৪৩ বছর বয়সী শিক্ষক রাজিন্দ্র কুনওয়ার গত মাসে রাজতন্ত্রের সমর্থনে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভে অংশ নেন। এএফপিকে তিনি বলেন, ‘দেশ অস্থিতিশীলতার মধ্যে রয়েছে। দ্রব্যের দাম বাড়ছে, মানুষের চাকরি নেই। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ-সুবিধারও অভাব রয়েছে। এ কারণেই আমাদের রাজাকে ফেরানো দরকার।’

‘পুরোনো ধারণা’ সিংহাসনচ্যুত রাজা জ্ঞানেন্দ্র বীর বিক্রম শাহকে স্বাগত জানান রাজতন্ত্রের সমর্থকেরা.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জতন ত র ফ র য়

এছাড়াও পড়ুন:

এককালের প্রেম যখন উপেক্ষিত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার পুরনো বন্ধু কিম জং উনের সাথে সাম্প্রতিক এশিয়া সফরে হঠাৎ করেই আলোচনার আশা করেছিলেন। কিন্তু উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন এ ব্যাপারে কোনো সাড়া দেননি। 

ট্রাম্প তার এশিয়া সফরের সময় কিমকে বারবার আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেছিলেন,  তিনি বৈঠকের জন্য শতভাগ উন্মুক্ত। এমনকি ট্রাম্প কয়েক দশক ধরে মার্কিন নীতির বিপক্ষে গিয়ে স্বীকার করেছেন যে উত্তর কোরিয়া ‘এক ধরণের পারমাণবিক শক্তিধর।’

কিন্তু পিয়ংইয়ং আমন্ত্রণে চুপ ছিল। এর পরিবর্তে তারা ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছে এবং রাশিয়া ও বেলারুশে তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে পাঠিয়েছে, যাদের সাথে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সম্পর্ক আরো গভীর হয়েছে।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এশিয়া সেন্টারের একজন ভিজিটিং স্কলার সিওং-হিওন লি বলেন, “নিষ্ঠুর বাস্তবতা হল যে কিম জং উনের অংশগ্রহণের কোনো উৎসাহ ছিল না। ওয়াশিংটনের বিশ্বাস করা যে তিনি আসবেন, এটি একটি মৌলিক ভুল হিসাব ছিল।”

লি জানান, ট্রাম্পের বারবার প্রস্তাব উত্তর কোরিয়ার নেতার জন্য একটি ‘বিজয়’ হিসেবে দেখা যায়, যা তাকে এবং তার পারমাণবিক কর্মসূচিকে বিশাল মাত্রার বিশ্বাসযোগ্যতা প্রদান করে।

তিনি বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কিমকে একটি বিশাল, অপ্রাপ্ত ছাড় দিয়েছেন।”

২০১৯ সালে শেষবারের মতো ডিমিলিটারাইজড জোনের (ডিএমজেড) পানমুনজমে দেখা করেছিলেন ট্রাম্প ও কিম জং উন। ট্রাম্পের নেতৃত্বে পিয়ংইয়ংয়ের সাথে সেই বৈঠকে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ এবং নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সুযোগের ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়।

তারপর থেকে উত্তর কোরিয়া নিজেকে একটি‘অপরিবর্তনীয়’ পারমাণবিক রাষ্ট্র ঘোষণা করেছে এবং রাশিয়ার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করেছে, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে মস্কোকে সমর্থন করার জন্য সেনা পাঠিয়েছে।

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-এর সাবেক বিশ্লেষক সু কিম এএফপিকে বলেছেন, কিম এখন ‘বেশ স্বাচ্ছ্যন্দের জায়গায়’ আছেন।

তিনি বলেন, “রাশিয়ার সমর্থন সম্ভবত আজকাল উত্তর কোরিয়ার কৌশলগত হাতকে শক্তিশালী এবং দৃঢ় করার সবচেয়ে নির্ধারক কারণগুলোর মধ্যে একটি। তিনিই (উন) সর্বোচ্চ ক্ষমতা ধরে রেখেছেন, যার ফলে ট্রাম্পকে আমন্ত্রণ জানানো তার পক্ষে সহজ হয়ে যায়।”

দক্ষিণ কোরিয়া থেকে বাড়ি ফিরে চীনা নেতা শি জিনপিংয়ের সাথে বৈঠকের সময় ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, তিনি কিমের সাথে দেখা করার জন্য খুব ‘ব্যস্ত’ ছিলেন।

দৃশ্যটি ২০১৯ সালের থেকে সম্পূর্ণ বিপরীত ছিল, যখন ভিয়েতনামের হ্যানয়ে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ এবং নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার আলোচনা নাটকীয়ভাবে ভেঙে পড়েছিল - কিমকে কোনো চুক্তি ছাড়াই পিয়ংইয়ং ফিরে যাওয়ার জন্য দীর্ঘ ট্রেন যাত্রা সহ্য করতে হয়েছিল।

অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের কোরিয়ান স্টাডিজের অধ্যাপক ভ্লাদিমির টিখোনভ এএফপিকে বলেছেন, “অভিজ্ঞতা পিয়ংইয়ংকে বেদনাদায়ক করে তুলেছে। তারা খুব তাড়াহুড়ো করে এগিয়ে যেতে চায় না।” 

তিনি জানান, পিয়ংইয়ং ট্রাম্পের কাছ থেকে আরো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবের জন্য অপেক্ষা করছে, যার মধ্যে রয়েছে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক স্বীকৃতি এবং পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ ছাড়াই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার।
 

ঢাকা/শাহেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তাঞ্জানিয়ায় নির্বাচনী বিক্ষোভে নিহত ৭০০
  • এককালের প্রেম যখন উপেক্ষিত