পাহাড়ে শুরু হয়েছে বৈশাখের প্রধান সামাজিক উৎসব। এতে আছে বিজু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু, বিহু, সাংক্রাই, পাতা উৎসব। গতকাল শনিবার থেকে তিন দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠান নিয়ে তিন পার্বত্য জেলা এখন উৎসবের জনপদ।
উৎসবের প্রথম দিন শনিবার ছিল ফুল বিজু। বাংলা বর্ষের শেষ দু’দিন ও নতুন বছরের প্রথম দিন এ উৎসব পালন করে থাকে পাহাড়ে বসবাসরত বিভিন্ন সম্প্রদায়। এদিকে উৎসব ঘিরে তিন পার্বত্য জেলায় বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নানা মেলার আয়োজন করেছে। উৎসব ঘিরে গ্রামাঞ্চলের চেয়ে শহরের বাজারগুলো সরগরম।
পার্বত্য চট্টগ্রামের (রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান) ১৩ ভাষাভাষী ১৪টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী প্রধান সামাজিক উৎসব হচ্ছে বিজু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু, বিহু, সাংক্রাই ও পাতা। এসব উৎসবকে চাকমা সম্প্রদায় বিজু, মারমারা সাংগ্রাই, ত্রিপুরা বৈসু, তঞ্চঙ্গ্যারা বিষু, অহমিয়ারা বিহু, খুমিরা সাংক্রাই, সাঁওতালরা পাতা বলে থাকে। উৎসবটির উচ্চারণগতভাবে বিভিন্ন নামে পালন করলেও এর নিবেদন কিন্তু একই। তাই এ উৎসব পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর জন্য শুধু আনন্দের নয়, পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল সম্প্রদায়ের সামাজিক, রাজনৈতিক অর্থনৈতিক, ঐক্য ও মৈত্রী বন্ধনের প্রতীকও বটে।
আজ ফুল বিজু উপলক্ষে ভোরে পানিতে ফুল নিবেদনের মধ্য দিয়ে উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হচ্ছে। এদিন শিশু ও কিশোর-কিশোরীরা ভোরে ঘুম থেকে উঠে বনফুল সংগ্রহ করে বাড়ির আঙিনা সাজায়। তরুণ-তরুণীরা পাড়ায় পাহাড় বৃদ্ধদের শ্রদ্ধার সাথে স্নান করায়। আদিবাসী মেয়েরা বাড়ি-ঘর পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে থাকে। সন্ধ্যায় বৌদ্ধ মন্দির, নদীর ঘাট ও বাড়িতে প্রদীপ প্রজ্জালন করে। নানা খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। উৎসবের প্রথম দিনে বিজু-সাংগ্রাই-বৈসুক-বিষু-বিহু-সাংক্রান উদযাপন কমিটি রাঙামাটির উদ্যোগে রাজবন বিহার পুর্ব ঘাট এলাকায় নদীতে ফুল নিবেদন করা হবে।
আগামী কাল সোমবার উৎসবের দ্বিতীয় দিন মূল বিজু। এ দিন বাড়িতে বাড়িতে চলবে খাওয়া-দাওয়ার পর্ব ও আনন্দ-আয়োজন। ৩০ থেকে ৪০ প্রকার তরকারি নিয়ে রান্না করা পাজনসহ বিভিন্ন রকমের সুস্বাদু খাবার আগত অতিথিদের পরিবেশন করা হবে।
উৎসবের তৃতীয় দিনে অর্থাৎ ১৪ এপ্রিল “গজ্যাপজ্যা বিজু”। এ দিনে পাহাড়িরা সারাদিন ঘরে বসে বিশ্রাম নিয়ে থাকে। এদিন বৌদ্ধ মন্দিরে প্রার্থনা ও বয়োজ্যেষ্ঠদের বাড়িতে ডেকে নিয়ে এসে যত্ন সহকারে ভাত খাওয়ানোর পর আর্শীবাদ নেয়া হয়। পাহাড়িরা মনে করে থাকে সারাদিন আনন্দ আর হাসি-খুশিতে কাটাতে পারলে সারাবছর সুখে–শান্তিতে ও ধন-দৌলতে কেটে যাবে। এদিন তারা যেকোন প্রাণী হত্যা থেকে বিরত থাকে। তাছাড়া, মারমা সম্প্রদায়ের লোকজন এদিন ঐতিহ্যবাহী পানি খেলার আয়োজন করে। তারা পানি খেলার মাধ্যমে পুরনো বছরের সমস্ত গ্লানি ও দুঃখ কষ্টকে দূর করে নতুন বছরকে বরণ করে থাকে।
উৎসব ঘিরে ঐতিহ্যবাহী ঘিলে হ্রা,নাদেং হ্রা, বলি খেলা, বাশহরম, ফোর খেলার আয়োজন চলছে। রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের উদোগে সপ্তাহব্যাপী বিজু মেলার আয়োজন করা হয়েছে।। মেলায় পোশাক, হস্তশিল্প ও গৃহ সামগ্রী, খাবার-দাবার, আলংকারের ষ্টল ছাড়াও প্রতিদিন সন্ধ্যায় ছিল মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
হস্তশিল্পের স্টলে কথা হয় লাকী চাকমার সঙ্গে। তিনি জানান, মেলায় ১৫ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি করতে পারলেও তেমন লাভ হয়নি। মেলার চেয়ে অনলাইনে বিক্রি করে ভালো লাভ করতে পারতেন। বই বিক্রেতা মেগলো চাকমা বলেন, ‘৩০ থেকে ৪০ হাজার বই বিক্রি করে মোটামুটি লাভ হয়েছে।’
খাবারের স্টল দেওয়া সুশীল চাকমা জানান, এবারের মেলায় ষ্টলের সংখ্যা বেশি ছিল। শুধু খাবারের স্টল ছিল শতাধিক। প্রথম দিন ১৬ হাজার টাকা বিক্রি করতে পেরেছেন। পরের দিনগুলোতে তিন থেকে চার হাজার টাকার খাবার বিক্রি করতে পেরেছেন। তেমন একটা লাভ করতে পারেননি। তবে আগের বছরের মেলায় ৩০ থেকে ৩৫টি খাবারের স্টল ছিল। তখন বেচা-বিক্রিও ছিল বেশ ভালো।
উৎসব ঘিরে বিভিন্ন হাট-বাজারগুলো বেচা-বিক্রি সরগরম উঠেছে। বৃহস্পতিবার নানিয়ারচর উপজেলার ঘিলাছড়ির সাপ্তাহিক হাটে দেখা গেছে ক্রেতাদের ভিড়। কথা হয় বাজারে আসা ক্রেতা নব বিকাশ চাকমা, চন্দ্র সেন চাকমা, খোকন চাকমা, সূচনা চাকমার সঙ্গে। তারা জানান, আয় অনুযায়ী উৎসবের জন্য সদাই করেছেন। তবে জিনিসপত্রের দাম একটু বেশি।
বনরুপা উত্তর বাজার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি বিজয়গিরি চাকমা বলেন, ‘বিজুকে কেন্দ্র করে আগে বনরুপা বাজারে জাকজমকভাবে বেচা-বিক্রি হতো কিন্তু এবার তা কম। তার কারণ হচ্ছে মানুষের মধ্যে ক্রয় ক্ষমতা কমেছে।’ উৎসব উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ইন্টুমনি তালুকদার বলেন, ‘তিন পার্বত্য জেলায় উৎসবমুখর পরিবেশে শান্তিপূর্ণভাবে উৎসব চলছে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প রথম দ ন উৎসব ঘ র অন ষ ঠ ন উৎসব র আনন দ
এছাড়াও পড়ুন:
যে কারণে সালাহ-ফন ডাইকদের কাছে এই শিরোপা বিশেষ
একসময় ইংলিশ ফুটবলের রাজা তারাই ছিল। ষাটের দশকের মাঝামাঝি থেকে আশির দশকের শেষ পর্যন্ত তো বলতে গেলে লিভারপুলেরই একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল ইংল্যান্ডের শীর্ষ লিগে। তখন অবশ্য নামটা প্রিমিয়ার লিগ ছিল না, ছিল প্রথম বিভাগ লিগ। ১৯৯২ সালে প্রিমিয়ার লিগ নাম হওয়ার পর থেকে যেন লিভারপুলের দুর্ভাগ্যের শুরু। প্রথম বিভাগ যুগে ১৮টি লিগ জেতা লিভারপুল প্রিমিয়ার লিগ যুগে এসে জিততেই ভুলে গেল!
প্রিমিয়ার লিগে শুরু হলো ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের একচ্ছত্র রাজত্ব। স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের অধীন ১৩বার লিগ জিতে ইউনাইটেডের মোট লিগ শিরোপা হয়ে গেল ২০টি। লিভারপুলকে পেরিয়ে তারা হয়ে গেল ইংল্যান্ডের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল ক্লাব।
ইউনাইটেডের সেই আধিপত্যও শেষ হলো ২০১৩ সালে ফার্গুসনের অবসরের পর। কিন্তু রাজত্ব ফিরে পেল না লিভারপুল। ইংলিশ ফুটবলের নতুন রাজা হয়ে ওঠল ম্যানচেস্টার সিটি। পেপ গার্দিওলার অধীন সর্বশেষ সাত মৌসুমে ছয়বার শিরোপা জিতে সিটি একের পর এক নতুন রেকর্ড গড়তে থাকল।
আরও পড়ুনলাল সমুদ্রে গোল উৎসবে চ্যাম্পিয়ন লিভারপুল১১ ঘণ্টা আগেমাঝে ২০১৯-২০ মৌসুমে ৩০ বছর পর লিভারপুল পেল ইংলিশ লিগের শিরোপার স্বাদ। তবে পৃথিবী তখন করোনা মহামারি চলছে। শিরোপা উৎসব হলো না লিভারপুলের মনের মতো।
এবার আর্নে স্লটের অধীন প্রথম মৌসুমেই আবার চ্যাম্পিয়ন লিভারপুল। সেটাও কী রাজকীয়ভাবে! চার ম্যাচ হাতে রেখে, নিজেদের মাঠ অ্যানফিল্ডে, ভরা গ্যালারির সামনে। লিভারপুলের এটি ২০তম লিগ শিরোপা, ইউনাইটেডের সঙ্গে যৌথভাবে তারাও এখন ইংল্যান্ডের সবচেয়ে সফল ক্লাব।
ইতিহাস গড়া এই ট্রফি জেতার পর কী বলছেন লিভারপুলের খেলোয়াড়েরাকোডি গাকপোর উদ্যাপন