নববর্ষের অনুষ্ঠানে নিরাপত্তাজনিত কোনো সমস্যা হবে না: র্যাবের ডিজি
Published: 13th, April 2025 GMT
বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠান ঘিরে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এই অনুষ্ঠানে নিরাপত্তাজনিত কোনো সমস্যা হবে না বলে জানিয়েছেন র্যাবের মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান।
আজ রোববার ঢাকার রমনা বটমূলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠান ঘিরে র্যাবের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে তিনি রমনা বটমূল এলাকার নিরাপত্তাব্যবস্থা পরিদর্শন করেন।
র্যাবের মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান বলেন, জেলা-উপজেলা ও গ্রামপর্যায়ে বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তাই সব জায়গায় র্যাবের নিরাপত্তাবলয় বিস্তৃত করা হবে। যাতে সুন্দরভাবে সব জায়গায় এই অনুষ্ঠান করা সম্ভব হয়।
নিরাপত্তাঝুঁকির বিষয়ে র্যাবের মহাপরিচালক শহিদুর রহমান আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার এক মাসের মাথায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তখন নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন এসেছিল। পূজা হবে কি না, সেটা নিয়েও সংশয় ছিল। সরকারের পক্ষ থেকে তাঁদের আশ্বস্ত করা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা পূজা উদ্যাপন কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে। খুব সুন্দরভাবে পূজার উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। নিরাপত্তাজনিত কোনো সমস্যা হয়নি। এরপর বিজয় দিবস, খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের বড়দিনসহ যতগুলো অনুষ্ঠান হয়েছে নিরাপত্তাজনিত কোনো সমস্যা হয়নি।
বিগত বছরগুলোর তুলনায় এ বছরের সব কটি অনুষ্ঠান নিরাপত্তা ও আনন্দ উৎসবের দিক থেকে সুন্দরভাবে সম্পূর্ণ হয়েছে বলে জানিয়েছেন র্যাবের মহাপরিচালক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে নববর্ষের শোভাযাত্রার জন্য বানানো মোটিফ পুড়ে যাওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে র্যাবের মহাপরিচালক বলেন, চারুকলায় আগুন দেওয়ার ঘটনা সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের কোনো গাফিলতি থাকলে সেটাও তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গতকাল শনিবার ভোর ৪টা ৪৫ মিনিটে আগুন দেওয়া ঘটনা ঘটে। এতে চারুকলা অনুষদে নববর্ষের জন্য বানানো ২০ ফুট উচ্চতার ‘স্বৈরাচারের মুখাকৃতি’ নামে মোটিফটি পুরোপুরি পুড়ে যায়। তার পাশেই রাখা ‘শান্তির পায়রা’ মোটিফের একটি ডানা ও লেজের খানিকটা পুড়ে গেছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ফসলের ক্ষেতে আশার আলো
বৈশাখ মাস, চারদিকে উৎসবের আমেজ। সেই উৎসবের ঢেউ লেগেছে শহর-বন্দর, গ্রাম-গঞ্জে। নতুন ধান ঘরে তোলার ধুম লেগেছে হাওর অঞ্চলে; বিশেষ করে সুনামগঞ্জ, ময়মনসিংহসহ কয়েকটি এলাকায়। হাওরের পুবালি বাতাসে এখন পাকা ধানের ম-ম গন্ধ। বৈশাখ এলেই সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে চিরচেনা এ রূপ চোখে পড়ে। ঠা-ঠা রোদ মাথায় নিয়ে ক্ষেতে ধান কাটেন কৃষক। অন্যদিকে চলে মাড়াই। কিষানিরা মনের আনন্দে মাড়াই করা ধান শুকান। বিকেলের শান্ত রোদে শুকনো ধান মাথায় নিয়ে ঘরে ফেরেন।
ধান কাটা উৎসবে শুধু কিষান-কিষানি নন, সব বয়সী মানুষই যোগ দেন। হাওরে এটি এক অনন্য উৎসব। চলে বৈশাখজুড়ে। এ উৎসবের কাছে কাঠফাটা রোদ, ঝড়-বৃষ্টি যেন তুচ্ছ। ধানের সবুজ শীষের রং যখন লালচে হতে শুরু করে, তখন কৃষকের মনের রং বদলায়। চোখ-মুখ খুশিতে ভরে ওঠে। লোকমুখে প্রচলিত– বছরের প্রথম দিনে ঘরে ফসল তুললে সারাবছর অভাব থাকে না। তাই তো হাওরে চলছে পাকা ধান কাটার উৎসব। তবে চলতি মৌসুমে বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় ধান তলিয়ে যায়। যাতে অনেক কৃষক নিঃস্ব হয়ে পড়েন।
আনন্দ-বেদনার এ বৈশাখে প্রকৃতি নতুন বিন্যাসে সাজে। বসন্তে প্রকৃতিতে যে রং লাগে, তা পূর্ণতা পায় বৈশাখে। অসীম আকাশে নানা বর্ণের মেঘের আনাগোনা আমাদের মনে সঞ্চারিত করে সঞ্জীবনী মন্ত্র। চোখে প্রশান্তি এনে দেয় সর্ববিস্তৃত প্রকৃতি। এ সময় চারদিকে আগুন ছড়ানো কৃষ্ণচূড়া, পলাশ, জারুল, বাগানবিলাসসহ প্রকৃতিতে রঙের ছড়াছড়ি। দেখা মেলে আম, কাঁঠাল, লিচু, জামরুলসহ মধুমাসের বিভিন্ন ফলের। কৃষিনির্ভর গ্রামবাংলা মেতে ওঠে উৎসব আমেজে। বৈচিত্র্যময় সমারোহে বসে বৈশাখী মেলা। এতে লোকগান, পুতুলনাচ, বায়োস্কোপ, নাগরদোলা, সার্কাস ইত্যাদি আকর্ষণ করে সবাইকে।
ঋতুবৈচিত্র্যের এ দেশে রুদ্রমূর্তির বৈশাখে প্রকৃতিতে থাকে ভিন্ন চেহারা। কালবৈশাখী আসে তীব্রবেগে। উড়িয়ে নিয়ে যায় অভাগীর জীর্ণ কুটির। উপকূলে বিপদ হয়ে আসে সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস। গ্রীষ্মের তাপদাহে তটস্থ হয় মানুষ। এ সময় আবহমান গ্রামবাংলার ছোট নদী, খালবিল, ডোবা শুকিয়ে যায়। কৃষকরা পড়েন বিপাকে। আবার এ সময়ে প্রকৃতি সাজে নতুন করে। তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করা মানুষ একটু স্বস্তি পেতে আশ্রয় নেয় সবুজ প্রকৃতির শীতল ছায়ায়। একদিকে বৈশাখ খরতাপ ছড়ায়, অন্যদিকে প্রকৃতির প্রশান্তির শীতল ছোঁয়া দেয় পরম আনন্দ। বৈশাখ আসে নতুন করে সব গড়তে। শীর্ণ-জীর্ণতায় সবুজ সতেজ করে তুলতে। ‘নূতনের কেতন উড়ে’ কালবৈশাখীতে। একরাশ স্বপ্ন বুকে নিয়ে শুরু হয় নবজীবনের হিসাবনিকাশ। স্বপ্নমুখর বৈশাখের রং তাই একটু বেশিই উজ্জ্বল। প্রকৃতি সজীব সতেজ আর মানুষেরা প্রাণচঞ্চল।
সুহৃদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়