লালমনিরহাটে আদালতে কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন
Published: 13th, April 2025 GMT
লালমনিরহাট জেলা ও দায়রা জজ আদালত কার্যালয়ে তিনটি পদে মোট ২৪ জন কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ তুলে তা বাতিলের দাবি জানানো হয়েছে। রোববার দুপুরে লালমনিরহাট শহরের একটি অভিজাত রেস্তোরাঁয় ‘লালমনিরহাট সচেতন নাগরিক সমাজ’–এর ব্যানারে সংবাদ সম্মেলন করে এই দাবি জানানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন লালমনিরহাট সচেতন নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক অবসরপ্রাপ্ত কলেজশিক্ষক জয়নুল আবেদীন স্বপন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য লালমনিরহাট পৌর বিএনপির সভাপতি মো.
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, লালমনিরহাটের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ নিত্যানন্দ রায়কে নিয়োগ বোর্ডের প্রধান করে সম্প্রতি লালমনিরহাট জেলা ও দায়রা জজ কার্যালয়ে কম্পিউটার অপারেটর কাম মুদ্রাক্ষরিক পদে ১৪ জন, জারিকারক পদে ৪ ও অফিস সহায়ক পদে ৬ জন নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। গত ২২ ফেব্রুয়ারি কম্পিউটার অপারেটর কাম মুদ্রাক্ষরিক পদে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ২৮ ফেব্রুয়ারিতে লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মৌখিক পরীক্ষা গত ৪ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়। ৫ মার্চ মৌখিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয় এবং একই দিন নিয়োগপত্র ইস্যু করে উত্তীর্ণদের চাকরিতে যোগদান করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। আর গত ২৮ ফেব্রুয়ারি অফিস সহায়ক ও জারিকারক পদের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। উত্তীর্ণদের ৫ মার্চ মৌখিক পরীক্ষা হয়। একই দিন উত্তীর্ণদের নিয়োগপত্র ইস্যু করে সেই দিনই চাকরিতে যোগদান করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে অতিরিক্ত শর্তাবলি মোতাবেক শারীরিক যোগ্যতার সনদ এবং পুলিশ ভেরিফিকেশন সনদসহ চাকরিতে যোগদান করতে বলা হয়।
সংবাদ সম্মেলেনে লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয় নিয়োগের আগে নিজ জেলার সিভিল সার্জনের অনুমোদিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার শর্তাবলি যুক্ত করতে হয়। নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা চুয়াডাঙ্গা, নীলফামারী, রাজশাহী, কুড়িগ্রাম, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও জেলার বাসিন্দা। একই দিনে নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা কীভাবে স্বাস্থ্য পরীক্ষার সনদ সংগ্রহ করলেন? আসলে নিয়োগের বিষয়টি পূর্বনির্ধারিত, তাই সময় বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে তাঁদের চাকরিতে যোগদান করিয়ে নেওয়া হয়, যা অনৈতিক, স্বজনপ্রীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার বলে প্রতীয়মান হয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে লালমনিরহাট সচেতন নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক জয়নুল আবেদীন বলেন, এই নিয়োগে অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার পরিলক্ষিত হওয়ায় লালমনিরহাট সচেতন নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে নিয়োগ বাতিলের দাবিতে ৬, ৭ ও ৮ মার্চ লালমনিরহাট শহরে মাইকিং করে ৯ মার্চ লালমনিরহাট শহরের মিশন মোড়ে সকাল ১০টায় বিক্ষোভ সমাবেশ করে জজকোর্ট অভিমুখে মিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছিল। এই কর্মসূচি ঘোষণা ও মাইকিং করা হলে ৮ মার্চ লালমনিরহাট জেলা ও দায়রা জজ মোহা. আদীব আলী স্বাক্ষরিত নিয়োগ স্থগিতসংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে লালমনিরহাট সচেতন নাগরিক সমাজের পূর্বঘোষিত ৯ মার্চের কর্মসূচি স্থগিত করা হয়।
জয়নুল আবেদীন আরও বলেন, নিয়োগ স্থগিত করায় প্রমাণিত হয় যে এই নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতি, নিয়োগ-বাণিজ্য, স্বজনপ্রীতি ও আওয়ামী দোসরদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে, যা গত জুলাই ২৪ গণ–অভ্যুত্থানে শহীদদের রক্তের সঙ্গে প্রতারণার শামিল। এই ধরনের কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
সংবাদ সম্মেলনে আবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির মাধ্যমে নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করার দাবি জানানো হয়। সেই সঙ্গে ১৭ এপ্রিল ১০টায় লালমনিরহাট শহরের মিশন মোড় চত্বরে একই সংগঠনের উদ্যোগে বিক্ষোভ সমাবেশ ও জজকোর্ট অভিমুখে প্রতিবাদ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
নিয়োগপ্রক্রিয়ায় দুর্নীতির বিষয়ে বক্তব্য জানতে লালমনিরহাট জেলা ও দায়রা জজ কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবু ফাত্তাহ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তিনি যাঁকে চাকরি পেতে সহায়তা করেছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়েছে, তাঁকে তিনি চেনেন না। এ বিষয়ে তিনি আর কিছু বলতে রাজি হননি।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ল খ ত পর ক ষ পর ক ষ র চ কর ত
এছাড়াও পড়ুন:
নেপাল, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা: দক্ষিণ এশিয়ায় জেন–জি বিপ্লবের পরবর্তী নিশানা কে
লোহার ফটক ভাঙার শব্দে চারপাশ কেঁপে উঠল। বিক্ষুব্ধ লোকজন তখন দৌড়ে ঢুকে পড়লেন ভবনের ভেতরে। কয়েক ঘণ্টা আগেও যেসব প্রতিবন্ধক ছিল ক্ষমতার প্রতীক, মুহূর্তেই সেগুলো গুঁড়িয়ে দিল জনতার ঢল।
প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের করিডর ভরে গেল কাদামাখা পায়ে হাঁটার শব্দে। কেউ জানালার কাচ ভাঙলেন, কেউ আবার দামি চাদর আর জুতা নিয়ে গেলেন।
নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা যে বাড়ি এত দিন ছিল সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে, সেদিন কয়েক ঘণ্টার জন্য তাঁরাই তা দখলে নিলেন।
এ দৃশ্য নেপালের গত সপ্তাহের। আবার এটি শ্রীলঙ্কার ২০২২ সালের কিংবা বাংলাদেশের ২০২৪ সালেরও চিত্র।
এসব আন্দোলনের আসল শক্তি হলো তরুণদের স্বপ্ন দেখা—একটা ভালো রাজনীতি আর ভালো অর্থনীতির ভবিষ্যৎ কল্পনা করার ক্ষমতা। কিন্তু সেই কল্পনার সঙ্গে বাস্তব জীবনের বড় পার্থক্য তাঁরা বুঝতে পারছেন। স্বপ্নের সঙ্গে বাস্তবের এ ফারাকই তাঁদের ক্ষোভ বাড়িয়ে দিয়েছে।পল স্ট্যানিল্যান্ড, শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক৩০ মিলিয়ন (৩ কোটি) মানুষের দেশ নেপাল, ভারত ও চীনের মাঝখানে অবস্থিত। সেখানকার সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ প্রথাগত নির্বাচনী গণতন্ত্রের চেনা ধারা ভেঙে দিয়েছে। আর দক্ষিণ এশিয়ার এ দেশগুলোয় একের পর এক সরকার পতনে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণ প্রজন্ম বিশ্বকে নতুন এক প্রশ্নের মুখে ফেলেছেন—দক্ষিণ এশিয়াই কি জেন–জি (জেনারেশন জেড) প্রজন্মের বিপ্লবের কেন্দ্রস্থল?
শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক পল স্ট্যানিল্যান্ড আল–জাজিরাকে বলেন, ‘এটা সত্যিই চোখে পড়ার মতো। এখানে একধরনের নতুন অস্থির রাজনীতির জন্ম হচ্ছে।’
গত বৃহস্পতিবার প্রায় ১০ হাজার নেপালি তরুণ–তরুণী অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করেছেন। এ তরুণ–তরুণীদের অনেকে প্রবাসী। তবে কোনো নির্বাচনী ব্যালটে নয়, বার্তা আদান–প্রদানের মাধ্যম ডিসকর্ডে ভোট দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বাছাই করেছেন। এর আগে তিন দিনের দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতিবিরোধী বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নেয় এবং সেনাসদস্য ও পুলিশের দমন–পীড়নে ৭০ জনের বেশি নিহত হন। এখন নেপাল সরকার ঘোষণা করেছে, আগামী মার্চে নতুন নির্বাচন হবে।
প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলির জেন–জি প্রজন্মকে উপহাস করার কয়েক দিনের মধ্যেই তাঁর পদত্যাগ দেখিয়ে দিয়েছে—দক্ষিণ এশিয়ার তরুণেরা বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থায় আস্থাহীন হলে নিজেরাই ক্ষমতা হাতে তুলে নিচ্ছেন এবং নিজেদের নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তী প্রশাসন কে হবে, তা–ও নির্ধারণ করছেন।
শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ও নেপালের আন্দোলনের পেছনে প্রতিটির নিজস্ব ইতিহাস ও অনন্য প্রেক্ষাপট আছে। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, এর মধ্যে মিলও আছে—নতুন প্রজন্ম আর ভাঙা প্রতিশ্রুতি মেনে নিচ্ছে না।স্ট্যানিল্যান্ড বলেন, এটি দক্ষিণ এশিয়ার জন্য নাটকীয় পরিবর্তন। এ অঞ্চল দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিক আন্দোলনের সাক্ষী, তবে সরকার পতনের ঘটনা বিরল।
‘এ ধরনের আন্দোলন বিভিন্ন দেশে সংঘটিত সামরিক অভ্যুত্থান থেকে আলাদা। দক্ষিণ এশিয়ার সংকট বরাবরই অন্যভাবে সমাধান হয়েছে, এবার সেটা ভিন্নপথে যাচ্ছে’, বলেন স্ট্যানিল্যান্ড।
শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ও নেপালের আন্দোলনের পেছনে প্রতিটির নিজস্ব ইতিহাস ও অনন্য প্রেক্ষাপট আছে। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, এর মধ্যে মিলও আছে—নতুন প্রজন্ম আর ভাঙা প্রতিশ্রুতি মেনে নিচ্ছে না।
এ ছাড়া দেশগুলোর আন্দোলন একে অন্যের কাছ থেকেও শিক্ষা নিচ্ছে।
তিন দেশের আন্দোলনের মূল কারণ এক—বৈষম্য আর দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনৈতিক অভিজাত শ্রেণি। এ শ্রেণি তরুণ প্রজন্মের বাস্তব চাওয়া-পাওয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল।মীনাক্ষী গাঙ্গুলি, এইচআরডব্লিউর দক্ষিণ এশিয়ার উপপরিচালক কলম্বো থেকে ঢাকা হয়ে কাঠমান্ডু: আন্দোলনের পটভূমিনেপালে সাম্প্রতিক জেন–জি আন্দোলনের সূত্রপাত সরকারের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করার সিদ্ধান্ত থেকে। সরকার বলেছিল, প্ল্যাটফর্মগুলোর অপব্যবহার হচ্ছে এবং নিয়ম মেনে নিবন্ধন করছে না। তবে ক্ষোভের প্রকৃত কারণ অন্য—বৈষম্য, দুর্নীতি আর স্বজনপ্রীতি; তা–ও এমন একটি দেশে, যেখানে প্রবাসী নেপালিদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতির এক–তৃতীয়াংশ অবদান রাখছে।
হাজার হাজার কিশোর–কিশোরী স্কুলের ইউনিফর্ম পরেই রাস্তায় নেমে আসে। ৭০ জনের বেশি নিহত হয়, আহত হয় শত শত।
শ্রীলঙ্কার কলম্বোতে প্রেসিডেনশিয়াল সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভকারীদের যাওয়া ঠেকাতে সড়ক অবরোধ করে পুলিশের বিশেষ টাস্কফোর্স