লালমনিরহাট জেলা ও দায়রা জজ আদালত কার্যালয়ে তিনটি পদে মোট ২৪ জন কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ তুলে তা বাতিলের দাবি জানানো হয়েছে। রোববার দুপুরে লালমনিরহাট শহরের একটি অভিজাত রেস্তোরাঁয় ‘লালমনিরহাট সচেতন নাগরিক সমাজ’–এর ব্যানারে সংবাদ সম্মেলন করে এই দাবি জানানো হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন লালমনিরহাট সচেতন নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক অবসরপ্রাপ্ত কলেজশিক্ষক জয়নুল আবেদীন স্বপন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য লালমনিরহাট পৌর বিএনপির সভাপতি মো.

আফজাল হোসেন, আইনজীবী মো. ময়েজউদ্দিন সরকার, ব্যবসায়ী মো. আবুল কাশেম ও সাহেদুল হক সরকার।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, লালমনিরহাটের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ নিত্যানন্দ রায়কে নিয়োগ বোর্ডের প্রধান করে সম্প্রতি লালমনিরহাট জেলা ও দায়রা জজ কার্যালয়ে কম্পিউটার অপারেটর কাম মুদ্রাক্ষরিক পদে ১৪ জন, জারিকারক পদে ৪ ও অফিস সহায়ক পদে ৬ জন নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। গত ২২ ফেব্রুয়ারি কম্পিউটার অপারেটর কাম মুদ্রাক্ষরিক পদে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ২৮ ফেব্রুয়ারিতে লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মৌখিক পরীক্ষা গত ৪ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়। ৫ মার্চ মৌখিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয় এবং একই দিন নিয়োগপত্র ইস্যু করে উত্তীর্ণদের চাকরিতে যোগদান করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। আর গত ২৮ ফেব্রুয়ারি অফিস সহায়ক ও জারিকারক পদের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। উত্তীর্ণদের ৫ মার্চ মৌখিক পরীক্ষা হয়। একই দিন উত্তীর্ণদের নিয়োগপত্র ইস্যু করে সেই দিনই চাকরিতে যোগদান করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে অতিরিক্ত শর্তাবলি মোতাবেক শারীরিক যোগ্যতার সনদ এবং পুলিশ ভেরিফিকেশন সনদসহ চাকরিতে যোগদান করতে বলা হয়।

সংবাদ সম্মেলেনে লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয় নিয়োগের আগে নিজ জেলার সিভিল সার্জনের অনুমোদিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার শর্তাবলি যুক্ত করতে হয়। নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা চুয়াডাঙ্গা, নীলফামারী, রাজশাহী, কুড়িগ্রাম, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও জেলার বাসিন্দা। একই দিনে নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা কীভাবে স্বাস্থ্য পরীক্ষার সনদ সংগ্রহ করলেন? আসলে নিয়োগের বিষয়টি পূর্বনির্ধারিত, তাই সময় বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে তাঁদের চাকরিতে যোগদান করিয়ে নেওয়া হয়, যা অনৈতিক, স্বজনপ্রীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার বলে প্রতীয়মান হয়েছে।

লিখিত বক্তব্যে লালমনিরহাট সচেতন নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক জয়নুল আবেদীন বলেন, এই নিয়োগে অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার পরিলক্ষিত হওয়ায় লালমনিরহাট সচেতন নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে নিয়োগ বাতিলের দাবিতে ৬, ৭ ও ৮ মার্চ লালমনিরহাট শহরে মাইকিং করে ৯ মার্চ লালমনিরহাট শহরের মিশন মোড়ে সকাল ১০টায় বিক্ষোভ সমাবেশ করে জজকোর্ট অভিমুখে মিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছিল। এই কর্মসূচি ঘোষণা ও মাইকিং করা হলে ৮ মার্চ লালমনিরহাট জেলা ও দায়রা জজ মোহা. আদীব আলী স্বাক্ষরিত নিয়োগ স্থগিতসংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে লালমনিরহাট সচেতন নাগরিক সমাজের পূর্বঘোষিত ৯ মার্চের কর্মসূচি স্থগিত করা হয়।

জয়নুল আবেদীন আরও বলেন, নিয়োগ স্থগিত করায় প্রমাণিত হয় যে এই নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতি, নিয়োগ-বাণিজ্য, স্বজনপ্রীতি ও আওয়ামী দোসরদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে, যা গত জুলাই ২৪ গণ–অভ্যুত্থানে শহীদদের রক্তের সঙ্গে প্রতারণার শামিল। এই ধরনের কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

সংবাদ সম্মেলনে আবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির মাধ্যমে নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করার দাবি জানানো হয়। সেই সঙ্গে ১৭ এপ্রিল ১০টায় লালমনিরহাট শহরের মিশন মোড় চত্বরে একই সংগঠনের উদ্যোগে বিক্ষোভ সমাবেশ ও জজকোর্ট অভিমুখে প্রতিবাদ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।

নিয়োগপ্রক্রিয়ায় দুর্নীতির বিষয়ে বক্তব্য জানতে লালমনিরহাট জেলা ও দায়রা জজ কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবু ফাত্তাহ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তিনি যাঁকে চাকরি পেতে সহায়তা করেছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়েছে, তাঁকে তিনি চেনেন না। এ বিষয়ে তিনি আর কিছু বলতে রাজি হননি।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ল খ ত পর ক ষ পর ক ষ র চ কর ত

এছাড়াও পড়ুন:

আরপিওর বিধানের বৈধতার রায় রিভিউর জন্য হলফনামার অনুমতি

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নের সঙ্গে যুক্ত করাসংক্রান্ত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের বিধানের বৈধতা দিয়ে ১৪ বছর আগে রায় দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। এই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আবেদনের জন্য হলফনামার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছেন দুজন আইনজীবীসহ সাত ব্যক্তি। শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব আজ সোমবার হলফনামা করার অনুমতি দিয়েছেন।

আবেদনকারী সাত ব্যক্তি হলেন ব্যারিস্টার এম সারোয়ার হোসেন, মেজর (অব.) এস এম হারুনুর রশীদ, কাজী জাহেদুল ইসলাম, আইনজীবী এস এম আজমল হোসেন, মেজর (অব.) নিয়াজ আহমেদ জাবের, মেজর (অব.) মো. জিয়াউল আহসান ও সালাহ উদ্দিন।

আদালতে আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ওমর ফারুক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এ মামলায় আবেদনকারীরা পক্ষ ছিলেন না। যে কারণে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন দায়েরের জন্য হলফনামা করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন তাঁরা। চেম্বার আদালত হলফনামা দায়ের করার অনুমতি দিয়েছেন। আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া শেষে শিগগিরই রিভিউ আবেদন করা হবে।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ১২(৩ক)(ক) বিধান অনুযায়ী নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নপত্রের সঙ্গে যুক্ত করে দিতে হবে। তবে শর্ত থাকে যে কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী ইতিপূর্বে জাতীয় সংসদের কোনো নির্বাচনে সদস্য নির্বাচিত হয়ে থাকলে ওই তালিকা প্রদানের প্রয়োজন হবে না।

আইনজীবীর তথ্য অনুসারে, ঢাকার একটি আসন থেকে ২০০৭ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাহবুব আহমেদ চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি মনোনয়নপত্র নেন। পরে নির্বাচনের ওই তারিখ পিছিয়ে যায়। অন্যদিকে ২০০৮ সালে আরপিও দফা ১২(৩ক)–তে সংশোধনী আনা হয়। এই বিধান সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদ ও আরপিওর ১২(১) ধারার পরিপন্থী উল্লেখ করে মাহবুব আহমেদ চৌধুরী ২০১০ সালে হাইকোর্ট রিট করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল দেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১০ সালের ১৬ আগস্ট হাইকোর্ট রুল ডিসচার্জ (খারিজ) করে রায় দেন। দফা (৩ক) সংবিধান পরিপন্থী নয় বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১০ সালে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন রিট আবেদনকারী। শুনানি শেষে আপিল বিভাগ ২০১১ সালের ২৩ জানুয়ারি লিভ টু আপিল খারিজ করে রায় দেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নের সঙ্গে যুক্ত করাসংক্রান্ত আরপিওর ১২(৩ক)–তে বেআইনি কিছু পাননি বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।

ওই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে দুই আইনজীবীসহ সাত ব্যক্তি আবেদন করতে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তাঁদের আইনজীবী ওমর ফারুক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে ভোটারের গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে। ভোটার কোন প্রার্থীকে ভোট দেবেন বা দেবেন না, এটি একান্তই তাঁর চিন্তা ও মতপ্রকাশের অধিকার। সিক্রেট ব্যালটে হামলা হলে ভোট বাতিলও হয়। সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে প্রার্থীর যোগ্যতা নির্ধারণ করা আছে। রাজনৈতিক দল হলে ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন লাগবে না, অথচ স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে গেলে লাগবে অর্থাৎ একই মনোনয়নপত্র ঘিরে দ্বৈত বিধান। ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন থাকার ওই বিধানের মাধ্যমে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখার সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা সংবিধান সমর্থন করে না এবং ভোটারের গোপনীয়তারও লঙ্ঘন—এসব যুক্তি তুলে ধরে আবেদনটি করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ