টাকার অভাবে কেউ ওষুধ কিনতে পারছেন না; কারও থেরাপি নেওয়া বন্ধ। কারও চিকিৎসাই বন্ধ। ক্যান্সার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, পক্ষাঘাতগ্রস্ত, জন্মগত হৃদরোগ ও থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত ৪১ হাজার ৫৬৭ রোগী পড়েছেন বিপাকে। সমাজসেবা অধিদপ্তরের আর্থিক সহায়তা কার্যক্রমের অনুদান তারা পাচ্ছেন না।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে প্রতিবছর ৩ লক্ষাধিক লোক ক্যান্সার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোকে প্যারালাইজড, জন্মগত হৃদরোগ ও থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। অর্থের অভাবে এসব রোগে আক্রান্তরা ধুঁকে ধুঁকে মারা যায়। অনেকের পরিবার চিকিৎসা ব্যয় বহন করে নিঃস্ব হয়ে পড়ে।

‘হাসপাতাল সমাজসেবা কার্যক্রমে’র মাধ্যমে দুস্থ ও অসহায় রোগীদের আর্থিক সহায়তা দেয় সমাজসেবা অধিদপ্তর। ২০১০ সাল থেকে তিন মাস অন্তর টাকা দেওয়া হয়। বর্তমানে এককালীন ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। এ জন্য অনলাইনে আবেদন করতে হয়। গত জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি-মার্চের টাকা চলতি এপ্রিল মাসের অর্ধেক পার হলেও তারা পাননি। কবে পাবেন, তা তারা জানেন না।
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার বাসিন্দা রাশেদা বেগম (৪৫) জানান, তিনি স্তন ক্যান্সারে ভুগছেন। ভ্যানচালক স্বামী এবং ছেলেমেয়ে নিয়ে তাঁর পরিবার। অভাবের কারণে তিনি চিকিৎসার খরচ বহন করতে হিমশিম খাচ্ছেন। উপায়ান্তর না পেয়ে এলাকার মানুষের পরামর্শে সমাজসেবা অধিদপ্তরে আবেদন করেন। আর্থিক সাহায্য পেলে তিনি চিকিৎসা করাতে পারবেন।
খুলনা সদরের মহেষ্যপাশার মানিকতলার বাসিন্দা ইয়াসমিন জাহান মাঈশা (২৫) জানান, দুরারোগ্য ব্রেন ক্যান্সারে আক্রান্ত তিনি। সমাজসেবা অধিদপ্তরে সাহায্যের আবেদন করেছেন। তাঁর স্বামী ইজিবাইক চালক। সংসারে রয়েছে দুই কন্যা। চিকিৎসার খরচ জোগাতে তিনি ঘুরছেন দ্বারে দ্বারে। 

রাজশাহীর তানোর উপজেলার বেলী বেগম (৪৫) জানান, তিনি ক্যান্সার আক্রান্ত। স্বামী আলমগীর হোসেন তেমন কোনো কাজ করেন না। ছোট্ট একটি ফার্মেসির উপার্জন দিয়ে চলছে তাঁর সংসার। চিকিৎসার টাকা জোগাতে তারও হিমশিম খেতে হচ্ছে। শেষ ভরসা হিসেবে সমাজসেবায় জমা দিয়েছেন সহায়তার আবেদন।
জানতে চাইলে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাইদুর রহমান খান সমকালকে বলেন, বছরে চারবার এই টাকা দেওয়া হয়। সর্বশেষ ডিসেম্বরে টাকা দেওয়া হয়েছে। শিগগির এবারের টাকা ছাড় দেওয়া হবে।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক (সামাজিক নিরাপত্তা) মো.

মোশাররফ হোসেন বলেন, ৭৫ শতাংশ অর্থ ৬৪ জেলায় জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে বিভাজন করে পাঠানো হয়। যারা আর্থিক সহায়তার জন্য আবেদন জমা দিয়েছেন, তাদের প্রক্রিয়াগত কার্যক্রম সম্পন্ন করার পর দ্রুত টাকা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: অন দ ন আর থ ক স

এছাড়াও পড়ুন:

সবাই ভেবেছিলেন কিশোরী ডুবে গেছে, ১০ দিন পর ফোন করে জানাল সে গাজীপুরে আছে

১০ দিন আগে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর মরা কালিগঙ্গা নদীতে গোসল করতে গিয়েছিল কিশোরী সোহানা খাতুন। বাড়িতে ফিরে না আসায় পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসী তাকে খুঁজতে শুরু করেন। পরে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল নদীতে অভিযান চালিয়েও তার সন্ধান পায়নি। তবে গত বুধবার রাতে মাকে ফোন করেছে সোহানা; জানিয়েছে সে গাজীপুরে প্রাক্তন স্বামীর কাছে আছে।

নিখোঁজ হওয়া কিশোরীর নাম সোহানা খাতুন। তার বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার বাগুলাট ইউনিয়নের বাঁশগ্রাম কারিগর পাড়ায়। তার বাবা গোলাম মওলা ও মা শিরিনা খাতুন।

পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯ জুলাই দুপুরে বাড়ির পাশের মরা কালিগঙ্গা নদীতে গোসল ও কাপড় ধুতে গিয়েছিল সোহানা। দীর্ঘ সময়েও না ফেরায় তার মা নদীর ধারে যান; দেখেন, সোহানার কাপড় পড়ে আছে। এরপর স্বজন ও এলাকাবাসী তাকে খুঁজতে শুরু করেন। খবর পেয়ে ওই রাতে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল নদীতে উদ্ধার অভিযান চালায়। পরদিন খুলনা ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল ১২ ঘণ্টা অভিযান চালিয়েও তার সন্ধান না পেয়ে অভিযান স্থগিত করে। ২১ জুলাই এক কবিরাজ এনে নদীতে খোঁজার চেষ্টাও করেন সোহানার বাবা–মা।

এমন অবস্থায় বুধবার রাতে হঠাৎ সোহানা তার মায়ের ফোনে কল দিয়ে জানায়, সে ঢাকার গাজীপুরে তার প্রাক্তন স্বামীর কাছে রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান সোহানার বাবা গোলাম মওলা। তিনি বলেন, ‘প্রথমে ভেবেছিলাম, মেয়ে নদীতে ডুবে গেছে। সবাই মিলে খোঁজাখুঁজি করেছি। এমনকি কবিরাজও এনেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ বুধবার আমার স্ত্রীকে ফোন দিয়ে জানায়, সে প্রাক্তন স্বামীর কাছে আছে। আমরা বিষয়টি গতকাল রাতে পুলিশকে জানিয়েছি।’ বিষয়টি বুঝতে না পেরে সবাইকে কষ্ট দেওয়ার জন্য তিনি ক্ষমা চান।

স্থানীয় লোকজন জানান, প্রায় দুই বছর আগে খালাতো ভাই কুতুব উদ্দিনের সঙ্গে পালিয়ে যায় সোহানা এবং দুজন বিয়ে করে। তবে বনিবনা না হওয়ায় তিন মাস আগে সোহানা তাকে তালাক দিয়ে বাবার বাড়ি চলে আসে। নদীতে নিখোঁজ হওয়ার ‘নাটক’ করে সে পালিয়ে গেছে।

এ বিষয়ে কুমারখালী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আমিরুল ইসলাম বলেন, শুরুতে পরিবারের লোকজন জানিয়েছিল, নদীতে গোসলে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছে সোহানা। গতকাল আবার তার বাবা জানিয়েছে, মেয়ে গাজীপুরে প্রাক্তন স্বামীর কাছে আছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ