ফ্যাসিবাদী মুখাকৃতি সামনে রেখে শেষ হলো বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা
Published: 14th, April 2025 GMT
নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদের আয়োজনে রাজধানীতে পালিত হয়েছে বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা। এবার ফ্যাসিবাদী মুখাকৃতি মোটিফটি সবার সামনে রাখা হয়েছে। শোভাযাত্রার শুরুতে স্বজাতীয় নাচে গানে অংশ নিয়েছে ২৮টি জাতিগোষ্ঠী। এ ছাড়া রঙ বেরঙের পোশাকে আপামর জনতা, বিদেশি নাগরিকদেরও শোভাযাত্রায় অংশ নিতে দেখা গেছে।
আজ সোমবার সকাল ৯টা ৩ মিনিটে শোভাযাত্রাটি চারুকলার সামনে থেকে শুরু হয়। এরপর এটি শাহবাগ মোড়, টিএসসি, শহীদ মিনার, দোয়েল চত্বর, বাংলা একাডেমির সামনের রাস্তা দিয়ে সাড়ে ১০টায় পুনরায় চারুকলা অনুষদে গিয়ে শেষ হয়। শেষে মোটিফগুলো সবার দেখার জন্য চারুকলায় রাখা হয়েছে।
এবারের শোভাযাত্রাকে শুধু বাঙালির নয়, বাংলাদেশের প্রাণের উৎসব হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন সাংস্কৃতিক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
শোভাযাত্রায় অংশ নিয়ে ফারুকী বলেন, এটাকে আমরা অনেকদিন বাঙালির প্রাণের উৎসব বানিয়ে রেখেছি। এটা শুধু বাঙালির প্রাণের উৎসব আর নয়। এটা বাংলাদেশের প্রাণের উৎসব। বাঙালি, চাকমা মারমা গারোসহ সকল জাতিগোষ্ঠী বর্ষবরণ পালন করে। ফলে আমরা এটাকে আমরা বাংলাদেশের উৎসব হিসেবে পালন করা শুরু করলাম।
তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি, এটা বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐক্য এবং সম্মিলনের একটি বড় ধাপ। আমরা হয়ত ২০-৩০ বছর পর থাকবো না, কিন্তু আজকের বছরটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কারণ, এরপর থেকে বাংলাদেশ এভাবেই চলবে।
শোভাযাত্রার শুরুতে মারমা, ম্রো, চাকমা, বম, খুমি, ত্রিপুরা, পাঙখুয়া, রাখাইন, তঞ্চঙ্গ্যা, মনিপুরী, খাসিয়া, চা জনগোষ্ঠীসহ ২৮টি জাতিগোষ্ঠী নিজস্ব জাতিগোষ্ঠীর নাচ গানে শোভাযাত্রায় অংশ নেয়। জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ভাবুক দল নিয়ে অংশ নেয় ফরহাদ মজহার।
জাতিগোষ্ঠীর পরের অংশে ছিল শোভাযাত্রার মূল দল। এতে সাংস্কৃতিক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) সায়মা হক বিদিশা, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) মামুন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী প্রমুখ শোভাযাত্রার নেতৃত্ব দেন। তাদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার, বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন অংশ নিয়েছে।
উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ বলেন, এবারের প্রেক্ষাপটে ভিন্ন। একটু মুক্ত পরিবেশে আমরা একত্র হয়েছি। কিছু বাধা-ষড়যন্ত্র ছিল। তবে আমরা আল্লাহর সাহায্য নিয়ে প্রতিকূলতা অতিক্রম করেছি। আজকের দিনে কারো প্রতি বিরোধ নেই। পিছনে তাকাচ্ছি না, সামনে তাকাচ্ছি। আমাদের সামনে নতুন সুযোগ এসেছে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, জাতি, ধর্ম, পেশা সব ক্ষেত্রে যত অবারিত অন্তর্ভুক্তিমূলক করা যায়।
এরপরে হাতে বহনকারী ঘোড়ক দল অংশ নেয়। এরপরে প্রধান মোটিফগুলো রাখা হয়েছে।
মোটিফগুলোতে যথাক্রমে ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি, এরপরে যথাক্রমে বাকি ছয়টি প্রধান মোটিফ- বাঘ, মাছ, পাঁচটি পাতার শান্তির পায়রা, পালকি, গণঅভ্যুত্থানে মুগ্ধর ‘পানি লাগবে’, ৩৬ জুলাই, ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে ‘তরমুজের পালি’ রাখা হয়েছে।
মোটিফের পরে রাখা হয়েছে ১০০ ফুটের পটচিত্রগুলো। পটচিত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে- পটচিত্র আকবর, পটচিত্র বেহুলা, গাজীর পট, পটচিত্র বনবিবি, পটচিত্র বাংলাদেশ ইত্যাদি।
এ ছাড়াও আপামর ছাত্রজনতা, ব্যান্ড দল, কৃষকদের একটি অংশ, রিকশা দল, ঘোড়ার গাড়ির দল অংশ নিয়েছে। শোভাযাত্রার একদম শুরুতে ছিল ডিএমপির অশ্বারোহী দল। এছাড়াও র্যাব, পুলিশের সোয়াট টিম, প্রক্টরিয়াল টিম নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল।
শোভাযাত্রায় ‘হাসিনার বিচার কর’, ‘জুলাই গণহত্যার বিচার কবে?’, ‘ভারতের সঙ্গে সকল অসম চুক্তি বাতিল কর’, নদী বাঁচাও—ইত্যাদি প্ল্যাকার্ড দেখানো হয়। এ ছাড়া মাঝারি-ছোট সাইজের ১৪টি মোটিফ, নানা মুখোশ, চিত্র ইত্যাদি দেখানো হয়।
শোভাযাত্রা ছাড়াও ঢাবিতে ছিল নানা আয়োজন। সকাল ৮টায় কলা ভবনের সম্মুখে বটতলায় বর্ষবরণের আয়োজন করা হয়। ‘বরিষ ধরা মাঝে শান্তির বারি’ প্রতিপাদ্য নিয়ে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ বর্ষকে স্বাগত জানিয়ে আয়োজনটি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগ।
তবলায় নিরূপম প্রামাণিকের তবলায় কাননের বাঁশীবাদন অনুষ্ঠানের শুরুতে ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে, এসো হে বৈশাখ এসো এসো’সহ নানা সংগীত পরিবেশন করা হয়। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংগীত বিভাগের চেয়ারপারসন সহযোগী অধ্যাপক প্রিয়াঙ্কা গোপ।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র প র ণ র উৎসব উপ চ র য চ র কল র স মন
এছাড়াও পড়ুন:
প্রাগে পুরস্কৃত ‘নট আ ফিকশন’,অনলাইনে মুক্তি ১ মে
প্রাগ চলচ্চিত্র উৎসব, ২০২৫ এ বেস্ট সুপার শর্ট ফিল্মের পুরষ্কার জিতেছে বাংলাদেশের ওয়ান শট ফিল্ম ‘নট আ ফিকশন’। এটি নির্মাণ করেছেন তরুণ নির্মাতা শাহনেওয়াজ খান সিজু। এর আগে তিনটি অস্কার এবং দুটি কানাডিয়ান স্ক্রিন এওয়ার্ডস কোয়ালিফাইং উৎসব ঘুরে আসা এই ছবিটি মূলত একটি ঐতিহাসিক দলীল যা গত দুই যুগে বাংলাদেশের আনাচে কানাচে ঘটে যাওয়া অসংখ্য বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে কথা বলে।
চেক প্রজাতন্ত্রের রাজধানী প্রাগের কিনো পাইলোটু থিয়েটারে গত ২৩ থেকে ২৬ এপ্রিল আসর বসেছিল ফিল্মফ্রিওয়ের র্যাং কিং এ পূর্ব ইউরোপের সেরা হিসেবে খ্যাত এই উৎসবের। উৎসবের এবারের আসরে জমা পরা ৯৫টি দেশের ৩২৬৬টি ছবির মধ্যে অফিসিয়াল সিলেকশন পেয়েছিলো ৭২টি ছবি যার মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রতিনিধি ছিলো এই ছবিটি। গত ২৬ এপ্রিল প্রাগ সময় রাত ৯টায় উৎসবের গালা নাইটে ঘোষণা করা হয় পুরষ্কার বিজয়ীদের নাম যেখানে বেস্ট সুপার শর্ট ফিল্মের এওয়ার্ড পায় ‘নট আ ফিকশন’।
এই উৎসবের বিচারকের দায়িত্বে ছিলেন কান চলচ্চিত্র উৎসব ২০২৩ এর পাম ডি অর স্পেশাল মেনশন ‘শর্ট ফিল্ম’ বিজয়ী নির্মাতা ও অভিনেত্রী গুন্নুর মার্টিনসডোত্তির স্লুটার এবং পোলিশ নির্মাতা এলজবিয়েতা বেঙ্কোভস্কা যার ছবি ‘ওলেনা’ ২০১৩ সালের কান উৎসবের অফিসিয়াল সিলেকশন ছিলো। এর মাধ্যমেই ইউরোপীয়ান প্রিমিয়ার হলো বাংলাদেশের আইনবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে নির্মিত ছবি নট আ ফিকশনের।
পুরষ্কারটি গ্রহণ করার জন্য প্রাগে গিয়েছিলেন নির্মাতা শাহনেওয়াজ খান সিজু। বর্তমানে বার্লিনে অবস্থানরত এই নির্মাতা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, ‘এটাই আমার প্রথম আওয়ার্ড যে কারনে এখনো ঘোর কাটছে না। কাফকার শহরে এসে দেশের নাম উজ্জ্বল করতে পারছি এটাই গর্বের বিষয়। তবে এই পুরো জার্নিতে সবচেয়ে ভালো লেগেছে একজন বিচারকের কথা শুনে, তিনি বলেন আমার এই ছবিটির সাথে তীব্র প্রতিযোগিতা করছিলো ইউরোপেরই আরেকটি আলোচিত ছবি যার বাজেট প্রায় ৫০ হাজার ইউরো অথচ এওয়ার্ড উইনার হিসেবে ১০০ ইউরোরও কম বাজেটে নির্মিত নট আ ফিকশন কে নির্বাচিত করার পেছনে গল্প এবং নির্মাণের জোরকেই প্রাধান্য দিয়েছিলেন তারা, কারন বড় বাজেটের ছবি তো অহরহই হতে থাকে কিন্তু নট আ ফিকশনের মতো কাজ হয় কালেভদ্রে এবং তারা এই ছবিটিকে যথাযথ সম্মান জানাতে চেয়েছিলেন এখন একটা ভাল সংবাদ দিতে চাই, আগামী ১ মাসের মধ্যেই অনলাইনে মুক্তি পাবে নট আ ফিকশন।’’
নির্মাতা সিজুর সঙ্গে নট আ ফিকশনের সহ-প্রযোজক হিসেবে কাজ করছেন চলচ্চিত্র সমালোচক ও সাংবাদিক সাদিয়া খালিদ রীতি এবং লাইলি বেগম। ছবিটির গল্প এবং চিত্রনাট্য লিখেছেন মোকাররম রানা। এছাড়া অভিনেতা হিসেবে কাজ করেছেন উদয়ন রাজীব, নাঈমুল আলম মিশু, ঐশিক সামি আহমেদ, রুদ্রনীল আহমেদ, জাওয়াদ সৌধ এবং মিথুন।