চট্টগ্রামে বাংলা নববর্ষ বরণের শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সিআরবিতে হচ্ছে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানও। তবে গতবারের তুলনায় এবারে শোভাযাত্রায় উপস্থিতি ছিল কম। সিআরবিতেও নেই মানুষের ঢল। বর্ষবরণের আগের রাতে ডিসি হিলে মঞ্চ ভাঙচুরের ঘটনায় অনেকে আতঙ্কিত। আবার গরমের কারণেও অনেকে বের হবে দুপুরের পরে। সম্মিলিত পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদ ডিসি হিলে বৈশাখের অনুষ্ঠান বাতিল ঘোষণা করেছে। তারপরও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নগর জুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করেছে।

ঢোলক বাদ্য, বিভিন্ন প্রাণীর মুখোশ এবং ঘোড়া ও মাছের প্রতিকৃতি নিয়ে নগরের চবি চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে সোমবার শতাধিক নারী-পুরুষ সকাল সাড়ে ১০টায় বর্ষবরণ র‍্যালি বের করে। চট্টেশ্বরী মোড় হয়ে আলমাস মোড়, কাজীর দেউড়ি মোড়, এস এস খালেদ রোড, প্রেস ক্লাব ঘুরে সার্সন রোড হয়ে পুনরায় চারুকলা ইনস্টিটিউটে গিয়ে শেষ হয় এই র‍্যালি।

জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে সকাল ৮টায় জাতীয় সংগীত ও ‘এসো হে বৈশাখ’ গান পরিবেশনের মাধ্যমে কর্মসূচি শুরু হয়।

পরে বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়ে ওয়াসা মোড় ঘুরে পুনরায় শিল্পকলা একাডেমিতে গিয়ে শেষ হয়। ময়ূর, মোরগ, ঘোড়া, পাখিসহ নানান প্রতিকৃতি আর মুখোশ নিয়ে সেই শোভাযাত্রায় যোগ দেওয়া মানুষের সংখ্যাও ছিল কম।

বাংলাদেশ শিশু একাডেমি, চট্টগ্রাম এর আয়োজনে সকালে আনন্দ শোভাযাত্রায়ও ছিল  শ'খানেক মানুষের উপস্থিতি। এসময় শিশুদের হাতে শোভা পায় বিভিন্ন প্রতিকৃতি।

এদিকে নগরের ডিসি হিলে বর্ষবরণ মঞ্চে ভাঙচুরের পর সেখানে সকাল থেকে বিরাজ করছে নীরবতা। যারা অনুষ্ঠান দেখতে যাচ্ছেন, তারা ফিরে আসছেন। সম্মিলিত পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদ ডিসি হিলে বৈশাখের অনুষ্ঠান বাতিল ঘোষণা করেছে। অবশ্য সিআরবির শিরীষতলায় নববর্ষ উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে সকাল সাড়ে ৭টা থেকে চলছে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। বিগত বছরগুলোতে বর্ষবরণস্থল লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠলেও এবার সেখানেও ছিল দর্শক খরা। হচ্ছে না বলিখেলা, বসেনি মেলা।

শিরীষতলায় সকালে ভায়োলিনিস্ট চিটাগংয়ের সমবেত বেহালা বাজনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর আনন্দী সংগীত একাডেমি, সংগীত ভবন, রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থা, সুর সাধনা, নজরুল সংগীত শিল্পী সংস্থা, শ্রুতিনন্দন, নটরাজসহ বিভিন্ন সংগঠন দলীয় পরিবেশনায় অংশ নেয়। আবৃত্তি পরিবেশন করে বোধন, প্রমা, তারুণ্যের উচ্ছ্বাসসহ বিভিন্ন সংগঠন। ফাঁকে ফাঁকে চলে নৃত্য। বিকেল ৫টা পর্যন্ত অনুষ্ঠান চলবে বলে জানিয়েছেন নববর্ষ উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ফারুক তাহের।

সিআরবিতে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে আগতদের তল্লাশিসহ পুলিশের নজরদারি দেখা গেছে। এছাড়া নগরের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সংগঠনের আয়োজনে চলছে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান।

অনুষ্ঠানে আসা মোহাইমিনুল শুভ বলেন, ‘প্রতিবার এই দিনকে ঘিরে অনেক পরিকল্পনা সাজাই। এবারে সেই প্রাণ নেই। নানা ঘটনার কারণে মনে দ্বিধা এসেছে। তবুও এসেছি প্রাণের সঙ্গে প্রাণ মেলাতে।’

সিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাহমুদা বেগম বলেন, নববর্ষের সকল অনুষ্ঠান ঘিরে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সব মূল পয়েন্টে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। অনুষ্ঠানস্থল ও আশপাশের সড়কে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। শোভাযাত্রায় সোয়াট ইউনিটের সদস্য এবং সাদা পোশাকে পুলিশ, র‍্যাব ছিল। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন স আরব ত নববর ষ এক ড ম

এছাড়াও পড়ুন:

ভালো ফলনের আশায় গাছকে খাওয়ান তাঁরা

চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাহাড়ি প্রদেশ গুইঝৌতে প্রাচীনকাল থেকে ‘গেলাও’ জনগোষ্ঠীর বসবাস। ভিয়েতনামেও এই জনগোষ্ঠীর মানুষ বাস করেন। চীনে তাঁদের সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ ৭৭ হাজার।

কৃষিনির্ভর গেলাও জনগোষ্ঠীর সদস্যরা আজও প্রাচীনকালের পুরোনো এক ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন। বছরের নির্দিষ্ট দিনে তাঁরা গাছকে খাওয়ান, যা চীনা ভাষায় ‘ওয়েই শু’ রীতি নামে পরিচিত।

এই প্রাচীন রীতি মূলত একধরনের প্রার্থনা। স্থানীয় অধিবাসীদের বিশ্বাস, এতে প্রকৃতি তুষ্ট হয়, ফসল ভালো হয়, পরিবারে শান্তি ও সমৃদ্ধি আসে। প্রতিবছর দুটি উৎসবের সময় এই অনুষ্ঠান পালন করা হয়—চীনা নববর্ষে, যা বসন্ত উৎসব নামে পরিচিত। আর গেলাও নববর্ষে, যা চান্দ্র পঞ্জিকার তৃতীয় মাসের তৃতীয় দিনে পালিত হয়।

অনুষ্ঠানের দিন সকালে আত্মীয়স্বজন ও গ্রামবাসী পাহাড়ের ঢালে জড়ো হন। তাঁরা সঙ্গে করে চাল থেকে তৈরি মদ, শূকরের মাংস, মাছ ও লাল আঠালো চাল নিয়ে আসেন। পাহাড়ে পৌঁছে প্রথমে আতশবাজি পোড়ানো হয়। এতে করে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

এর মধ্যেই একটি পুরোনো ও শক্তিশালী গাছ বাছাই করা হয়। এরপর সবাই ধূপ জ্বালিয়ে নতজানু হয়ে প্রার্থনা করেন। সবশেষে মূল পর্ব ‘গাছকে খাওয়ানো’ শুরু হয়।

একজন কুঠার বা ছুরি দিয়ে গাছে তিনটি জায়গায় ছোট করে কেটে দেন। সেই ক্ষতস্থানে চাল, মাংস ও মদ ঢেলে দেওয়া হয়, যাতে গাছ তাঁদের দেওয়া ভোগ গ্রহণ করতে পারে। পরে ওই জায়গা লাল কাগজে মুড়ে দেওয়া হয়।

এ ছাড়া গাছের গোড়া ঘিরে আগাছা পরিষ্কার করা হয়, মাটি আলগা করে দেওয়া হয়। এতে নতুন জীবনের বার্তা মেলে বলে মনে করেন গেলাও জনগোষ্ঠীর সদস্যরা।

যে গাছকে খাওয়ানো হয়, সেটি যদি ফলদ হয়, তাহলে ভোগ দানকারীরা একটি আশাব্যঞ্জক শ্লোক উচ্চারণ করেন। বলেন, ‘তোমায় চাল খাওয়াই, ফল দিয়ো গুচ্ছ গুচ্ছ; তোমায় মাংস খাওয়াই, ফল দিয়ো দলা দলা।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভালো ফলনের আশায় গাছকে খাওয়ান তাঁরা