অনেক ‘ঝড়’ পেরিয়ে স্বপ্নার কোল জুড়ালো বৈশাখী
Published: 15th, April 2025 GMT
স্বপ্না আক্তারের (২৩) সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য দিন ছিল আগামী ২০ এপ্রিল। তবে হঠাৎ রোববার গভীর রাতে প্রসব ব্যথা ওঠে। এত রাতে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার জন্য কোনো গাড়ি পাওয়া যাচ্ছিল না। বাধ্য হয়ে নিজের কাঁচামাল টানা ভ্যানে করে তাকে পাঁচ কিলোমিটার দূরের হাসপাতালে নিয়ে যান বাবা দেলোয়ার খান। ততক্ষণে ভোর। এদিকে স্বপ্না ব্যথায় কাতর। চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখলেন, পেটের পানি নেমে গেছে, শিশুর অবস্থা জটিল। এ অবস্থায় নরমাল ডেলিভারি সম্ভব নয়। অবেশেষে সিজারিয়ান ডেলিভারির মাধ্যমে সোমবার পহেলা বৈশাখের সকালে স্বপ্নার কোলজুড়ে আসে ফুটফুটে কন্যাসন্তান।
বৈশাখের প্রথম দিন জন্ম নেওয়ায় দেলোয়ার খান নাতনির নাম রেখেছেন বৈশাখী, আর দাদা আবদুল জব্বার ফকির রেখেছেন হাবিবা। মা ও মেয়ে দু’জনই এখন সুস্থ। নববর্ষের প্রথম দিন শিশুর জন্মে খুশি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বপ্নাকে উপহার ও শুভেচ্ছা জানিয়েছে। সেই সঙ্গে পুরো হাসপাতালে মিষ্টি বিতরণ করেছে।
এদিকে দুশ্চিন্তা, শঙ্কা পেরিয়ে সন্তান এসে কোল জুড়ালেও স্বপ্নার মন কিছুটা খারাপ। কারণ এই সময়ে স্বামী আল ইসলাম ফকিরকে তিনি পাশে পাননি। এ নিয়ে মন খারাপ হলেও স্বামীর প্রতি তাঁর কোনো রাগ কিংবা ক্ষোভ নেই। কারণ, ইসলাম কাজের জন্যই স্ত্রীর পাশে থাকতে পারেননি। তাই তো স্বপ্না বলেন, ‘শুধু সন্তানের জন্মের মুহূর্তে ও পাশে থাকলে খুব ভালো লাগত। কিন্তু আমি জানি, সে কত কষ্ট করে সংসার চালায়।’
শরীয়তপুর পৌরসভার আটং গ্রামের আবদুল জব্বার ফকিরের বড় ছেলে ইসলাম ঢাকার একটি বেসরকারি মেকানিক্যাল ওয়ার্কশপে কাজ করেন। মাসে ২০ হাজার টাকা বেতনে চলে তাঁর সংসার। ছুটি চেয়েও তিনি পাননি, বহুবার অনুরোধ করেও ফিরতে পারেননি স্ত্রীর পাশে। ইসলাম দ্বিতীয় কন্যার জন্মের খবর পান মোবাইল ফোনের মাধ্যমে। জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে স্ত্রীর পাশে থাকতে না পেরে তাঁর কষ্টও কম হয়নি।
আল ইসলাম সমকালকে বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে আমার স্ত্রী অসুস্থ ছিল। কিন্তু কাজের চাপের কারণে ছুটি পাইনি। স্ত্রীর সবচেয়ে প্রয়োজনের মুহূর্তেও পাশে থাকতে পারিনি। এ নিয়ে নিজের কষ্ট বুকের মাঝে চেপে রাখি। তবুও খুশি, এমন একটি দিনে আমার সন্তান হয়েছে।’
পৌর শহরের চৌরঙ্গী মোড়ের নিউ পপুলার হাসপাতালের চিকিৎসক ঐশ্বর্য চৌধুরী জানান, স্বপ্নাকে পহেলা বৈশাখের ভোরে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি আগে থেকেই অসুস্থ ছিলেন। অবস্থার অবনতি হলে রাত ৪টার দিকে মাতৃসদন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেয় পরিবার। কিন্তু সেখানে তখন চিকিৎসক পাওয়া যায়নি। পরে স্বপ্নাকে নিউ পপুলার হাসপাতালে এনে ডা.
ঐশ্বর্য চৌধুরী বলেন, ‘স্বপ্নাকে হাসপাতালে আনতে আরও ৩০ মিনিট দেরি করলে শিশুটিকে হয়তো বাঁচানো যেত না। পহেলা বৈশাখে আমাদের হাসপাতালে শিশুর জন্ম হওয়ায় আমরা অনেক খুশি।’
হাসপাতালের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন বাদল বেপারী বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে নিম্ন আয়ের মানুষ বেশি আসে। কারণ আমরা কম খরচে সেবা দিই। যারা অতিদরিদ্র, তাদের খরচ নিই না। উৎসবে জন্ম নেওয়া শিশুদের উপহার দিই, মিষ্টি বিতরণ করি। ১৪ এপ্রিল সকালে জন্ম নেওয়া শিশুটিকেও উপহার দিয়েছি।’
সোমবার সকালে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তানকে পাশে জড়িয়ে রেডে শুয়ে আছেন স্বপ্না আক্তার। তাঁর চোখেমুখে আনন্দের ছাপ। স্বপ্নার পাশে বসে থাকা তাঁর মা আসমা বেগম জানালেন মেয়ের জীবনের গল্প।
তিনি জানান, তাঁর তিন সন্তানের মধ্যে স্বপ্না বড়। নাসিমার স্বামী দেলোয়ার খান ভ্যানে করে কাঁচামাল বিক্রি করেন। অভাবের কারণে অষ্টম শ্রেণিতেই থেমে যায় স্বপ্নার পড়াশোনা। মাত্র ১৬ বছর বয়সে ২০১৯ সালে পারিবারিকভাবে তাকে বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ের পর ঢাকায় স্বামীর সঙ্গে ভাড়া বাসায় ছিলেন। এক বছর পর জন্ম হয় প্রথম কন্যাসন্তান। দ্বিতীয় সন্তান জন্মদানের উদ্দেশ্যে মার্চের শেষে বাবার বাড়িতে ফিরে আসেন তিনি।
নাসিমা বলেন, ‘আমার মেয়েটার ছোট বয়সে স্বপ্ন ভেঙেছে সংসারের চাপে। আজ সেই মেয়ের কোলজুড়ে নতুন আশার আলো এলো। ওর স্বামী এই আনন্দের সময়টায় পাশে থাকতে পারেনি। তবু আমরা জানি, ওর বুকের কষ্ট কতটা।’
স্বপ্না আক্তার বলেন, ‘অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় আমার বিয়ে হয়। এক বছর পর প্রথম সন্তান আসে। এরপর ঢাকায় স্বামীর সঙ্গে ভাড়া বাসায় থাকি। সে তার কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতো, আর আমি একা হাতে সংসার সামলাই। দ্বিতীয়বার গর্ভবতী হলে এক মাস আগে বাবার বাড়িতে আসি। ডেলিভারির সম্ভাব্য তারিখ ছিল ২০ এপ্রিল। কিন্তু ১৩ এপ্রিল রাতেই অবস্থা খারাপ হয়। অনেকবার স্বামীকে বললেও সে ছুটি নিয়ে আসতে পারেনি। তবে এত কষ্টের মধ্যেও যখন সন্তানের মুখ দেখি, সব ভুলে যাই। আল্লাহ চেয়েছেন নববর্ষেই আমার সন্তান জন্ম নিক, তাই হয়েছে।’
দ্বিতীয় নাতনিকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন স্বপ্নার শাশুড়ি হোসনারা বেগমের। তিনি বলেন, ‘আমার বড় সন্তান আল ইসলামের দ্বিতীয় মেয়েকে মাদ্রাসায় পড়াবো। আমার ইচ্ছা, সে একদিন বড় ইসলামী চিন্তাবিদ হবে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ শ র জন ম র জন ম জন ম ন প রথম ইসল ম অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
রাইজিংবিডিতে সংবাদ প্রকাশ: ডেরা রিসোর্টের লাইসেন্স বাতিল
মানিকগঞ্জের ঘিওরের বালিয়াখোড়ায় অবস্থিত ডেরা রিসোর্ট এন্ড স্পা সেন্টারের নানা অনিয়ম নিয়ে রাইজিংবিডিতে ‘কবরস্থানে হরিণের খামারসহ নানা অনিয়মের আখড়া ডেরা রিসোর্ট’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর প্রতিষ্ঠানটির লাইসেন্স বাতিল করেছে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে ডেরা রিসোর্টে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সহকারী নিয়ন্ত্রক (সিনিয়র সহকারী সচিব) শেখ রাশেদুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক নির্দেশনা পত্রে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
জানা গেছে, ডেরা রিসোর্ট এন্ড স্পা সেন্টার ২০২২ সালের ১৮ ডিসেম্বর লাইসেন্স প্রাপ্তির আবেদন করেন। নানা অনিয়মের কারণে তাদের লাইসেন্স নামঞ্জুর করা হয়েছে। রিসোর্টের লাইসেন্স না থাকায় প্রশাসনকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
২০২৫ সালের ১৪ জানুয়ারি ‘ফসলি জমি দখল করে ডেরা রিসোর্ট নির্মাণ, বিপাকে কৃষক’; ১৯ মার্চ ‘ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে ডেরা রিসোর্ট, তদন্ত কমিটি গঠন’ শিরোনামে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে রাইজিংবিডি। গত ১৩ সেপ্টেম্বর ‘কবরস্থানে হরিণের খামারসহ নানা অনিয়মের আখড়া ডেরা রিসোর্ট’ শিরোনামে প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ডেরার লাইসেন্স নামঞ্জুর করে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।
সুশাসনের জন্য নাগরিক মানিকগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ইন্তাজ উদ্দিন বলেন, “অনলাইন নিউজ পোর্টাল রাইজিংবিডিতে ডেরা রিসোর্ট নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোতে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ ও ভোগান্তি তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদক অনুসন্ধান করে ডেরা রিসোর্টের নানা অনিয়ম তুলে এনেছেন। প্রতিবেদন প্রকাশের পর প্রশাসন লাইসেন্স বাতিল করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে এটি ভালো উদ্যোগ। তবে এসব নির্দেশনা কাগজে কলমের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে বাস্তবায়ন করাটাই বড় কাজ। নির্দেশনা বাস্তবায়ন হলে সুশাসন নিশ্চিত হবে।”
মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, “মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার কপি পেয়েছি। সে অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
ডেরা রিসোর্ট এন্ড স্পা সেন্টারের ব্যবস্থাপক ওমর ফারুক বলেন, “লাইসেন্সের বিষয়ে কোন নোটিশ এখনও পাইনি আমরা। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার বিষয়েও জানা নেই। যদি লাইসেন্স বাতিল করে থাকে, তাহলে আমরা আইনিভাবে বিষয়টি সমাধান করব।”
এ বিষয়ে জানতে বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকালে এশিউর গ্রুপের অঙ্গসংগঠন ডেরা রিসোর্ট এন্ড স্পা সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ সাদীর মোবাইলে ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
ঢাকা/চন্দন/এস