কারাগারে থাকা বগুড়া সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু সুফিয়ান (শফিক) পুলিশ হেফাজতে আদালতে হাজিরা দিতে এসে হাজতখানার (গারদখানা) ভেতরে হামলার শিকার হয়েছেন। আজ মঙ্গলবার বেলা দুইটার দিকে বগুড়ার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের হাজতখানার ভেতরে এ ঘটনা ঘটে।

আবু সুফিয়ান সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, আদালত পরিদর্শক মোসাদ্দেক হোসেনের নির্দেশে হাজতখানার ভেতরে চারজন তাঁর ওপর হামলা করেছেন। তাঁরা শাজাহানপুর থানার একটি হত্যা মামলার আসামি। তিনি বলেন, ‘হামলাকারীদের সঙ্গে আমার কোনো পূর্বপরিচয় নেই। হাজতখানার ভেতরে টয়লেটের ভেতরে ঢুকে সাগর, জলিলসহ চারজন হত্যা মামলার আসামি আমার ওপর চড়াও হয়ে মাটিতে ফেলে এলোপাথাড়ি মাথায়, কোমরে আঘাত করেন। হামলার বিষয়ে আদালত পরিদর্শকের কাছে অভিযোগ করা হলেও তিনি জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি।’

আবু সুফিয়ানের সঙ্গে আদালতে দেখা করতে আসা মেয়ে সাদিয়া সুফিয়ান অভিযোগ করেন, হাজতখানার ভেতরে তাঁর বাবার ওপর সন্ত্রাসীদের হামলার ঘটনা ঘটলেও হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য না নিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি এবং বাবার চিকিৎসা চেয়েছেন সাদিয়া।

বগুড়া আদালতের পরিদর্শক মোসাদ্দেক হোসেন দাবি করেন, জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় করা একটি মামলায় গ্রেপ্তার আবু সুফিয়ানকে বগুড়া কারাগার থেকে আজ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করার দিন ধার্য ছিল। সেই অনুযায়ী তাঁকে বগুড়া কারাগার থেকে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের হাজতখানায় আনা হয়। সেখানে অন্য মামলার আসামিরাও ছিলেন। দুপুরের দিকে হাজতখানার ভেতরে শৌচাগার থেকে বের হওয়ার পর হাত ধোয়ার পানির ছিটা শরীরে লাগাকে কেন্দ্র করে আবু সুফিয়ানের সঙ্গে সাগর নামের এক আসামির বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে সাগর ও তাঁর সহযোগীদের সঙ্গে আবু সুফিয়ানের হাতাহাতি হয়। বিষয়টি কোর্ট পুলিশের মাধ্যমে জানতে পেরে তাৎক্ষণিক আবু সুফিয়ানকে হাজতখানার ভেতর থেকে সরিয়ে নিরাপদ হেফাজতে নেওয়া হয়। হাজতখানার ভেতরে এ ধরনের ঘটনার জন্য সতর্ক করায় আবু সুফিয়ান ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশকে দোষারোপ করছেন।

বিষয়টি নিয়ে বগুড়া জেলা পুলিশের মুখপাত্র সুমন রঞ্জন সরকার জানান, হাজতখানার ভেতরে আসামির ওপর হামলার ঘটনায় আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটলে, তা পুলিশের পক্ষ থেকে খতিয়ে দেখা হবে। এ ঘটনায় আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পুলিশ সূত্র জানায়, আবু সুফিানের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিরা বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার সাবরুল এলাকার ‘সাগর বাহিনীর’ প্রধান সাগর হোসেন তালুকদার (৩৫) ওরফে ‘টোকাই সাগর’ ও তাঁর সহযোগী স্বপন (৩২) হত্যা মামলার আসামি। গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর সাবরুল ছোট মন্ডলপাড়া এলাকায় এই জোড়া হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

বগুড়া সদর থানা–পুলিশ জানায়, জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় আবু সুফিয়ানের বিরুদ্ধে সদর থানায় করা তিনটি হত্যা মামলা ছাড়াও বিস্ফোরক আইনে ১২টি মামলা তদন্তাধীন। গত ১৮ ডিসেম্বর আবু সুফিয়ান ও তাঁর স্ত্রী সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক মাহফুজা খানকে (লিপি) রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।

গ্রেপ্তারের পরদিন সন্ধ্যায় তাঁদের বগুড়া চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত চত্বরে নেওয়া হলে আগে থেকে অবস্থান নেওয়া বিএনপির ৪০০ থেকে ৫০০ কর্মী-সমর্থক দলীয় স্লোগান দিতে দিতে প্রিজন ভ্যানে থাকা আবু সুফিয়ান ও মাহফুজা খানমকে লক্ষ্য করে ডিম ছুড়তে থাকেন। পরে প্রিজন ভ্যানেই আদালতে বসিয়ে অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সুকান্ত সাহার নির্দেশে এই দম্পতিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। সেই থেকে আবু সুফিয়ান কারাগারে রয়েছেন।

এর মধ্যে জামিনে মুক্ত হয়ে বাড়ি যাওয়ার পথে আবার গ্রেপ্তার হন মাহফুজা খানম। তিনি সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য। গত শনিবার সদর থানার একটি মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। অন্যদিকে হাইকোর্টের আদেশে ১৫ ফেব্রুয়ারি বগুড়া জেলা কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছিলেন মাহফুজা খানম। পরে বাড়ি যাওয়ার পথে শহরের সাতমাথা এলাকা থেকে তাঁকে আবারও গ্রেপ্তার করে অন্য মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট দেখায় সদর থানার পুলিশ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সদর উপজ ল সদর থ ন র উপজ ল আওয় ম ঘটন য়

এছাড়াও পড়ুন:

কুমিল্লায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ৩৫ কিলোমিটারজুটে যানজট

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার নিমশার থেকে দাউদকান্দি পর্যন্ত প্রায় ৩৫ কিলোমিটারজুড়ে যানজট দেখা দিয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রী ও চালকেরা। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি কাভার্ড ভ্যান উল্টে যাওয়ায় আজ বৃহস্পতিবার ভোর থেকে এ যানজট দেখা দেয়। 

হাইওয়ে পুলিশ  জানায়, বৃহস্পতিবার ভোরে মহাসড়কে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার নূরীতলা এলাকায় একটি কাভার্ড ভ্যান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। ফেনী থেকে রেকার এনে কাভার্ড ভ্যানটি উদ্ধারের কাজ শুরু করে পুলিশ। 

সকাল সাড়ে ১০টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মহাসড়কে যানজট দেখা গেছে। 

ঢাকাগামী রয়েল পরিবহনের চালক রমিজ উদ্দিন বলেন, সকাল সাড়ে ৮টায় ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা করে বুড়িচংয়ের নিমশার বাজারে যানজটে এক ঘণ্টা বসে থাকতে হয়েছে। ৫ মিনিট গাড়ি চললে ২০ মিনিট বসে থাকতে হয়। এভাবে ১০টা ৪০ মিনিটে চান্দিনায় পৌঁছেছি। এ সময়ে ঢাকার কাছাকাছি থাকার কথা ছিল। 

নিমশার বাজারে আটকে থাকা প্রাইভেট কারের যাত্রী তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ভোর থেকে যানজট অথচ সড়কে হাইওয়ে পুলিশ দেখছি না। 

ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রুহুল আমিন বলেন, মহাসড়কের নূরীতলা এলাকায় উল্টে কাভার্ড ভ্যানটি আড়াআড়িভাবে পড়ে ছিল। পরে ঢাকামুখী লেনের বেশ কিছু গাড়ি উল্টো পথে ঢোকায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ফেনী থেকে ক্রেন এনে গাড়িটি উদ্ধার করা হয়েছে। যান চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে। 

হাইওয়ে কুমিল্লা রিজিওনের পুলিশ সুপার অতিরিক্ত ডিআইজি মো. খাইরুল আলম সমকালকে বলেন, দুর্ঘটনার কারণেই যানজট দেখা দিয়েছে। দুর্ঘটনা কবলিত কাভার্ড ভ্যানটি উদ্ধার করা হয়েছে। যান চলাচল স্বাভাবিক হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ