দেশের করব্যবস্থা জটিল ও অনাধুনিক। শুধু তা–ই নয়, অস্থায়ী ভিত্তিতে (অ্যাডহক) এ করব্যবস্থার আওতায় বিশেষ বিশেষ ব্যবসায়ীকে করছাড় দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। এ ক্ষেত্রে কাজ করেছে রাজনৈতিক প্রভাব। কর দেওয়ার মতো লোক থাকলেও সরকার তাঁদের কাছে পৌঁছাতে পারছে না। তবে অন্তর্বর্তী সরকার কর প্রশাসন ও করনীতিকে আলাদা করার যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা ইতিবাচক। এতে কর সংগ্রহ বাড়তে পারে। যদিও কর বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখতে পারে সব ক্ষেত্রে ডিজিটাল ব্যবস্থা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অর্থনীতি অধ্যয়ন কেন্দ্র বা ইকোনমিকস স্টাডি সেন্টারের আয়োজনে (ইএসসি) তিন দিনব্যাপী ‘৬ষ্ঠ বাংলাদেশ ইকোনমিকস সামিট, ২০২৫ ’-এর প্রথম অধিবেশনে বক্তারা এসব কথা বলেন। অধিবেশন শুরুর আগে আজ মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক মোজাফাফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে প্রধান অতিথি হিসেবে এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) সাইমা হক।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথিরা ইএসসির প্রকাশনা ‘সেটেরিস প্যারিবাস’ ও ‘বাংলাদেশ স্টুডেন্ট অন ইকোনমিকস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিএসডিইডি)’ নামক জার্নালের মোড়ক উন্মোচন করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারপারসন মাসুদা ইয়াসমিন এ সময় উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ইএসসির সভাপতি হাসিবুল হাসান ও সাধারণ সম্পাদক জারিন তাসনীম রাইসা। এ ধরনের সম্মেলন আয়োজন তরুণ অর্থনীতিবিদ ও গবেষক তৈরিতে সহায়ক হবে বলে তাঁরা মনে করেন।

‘রাজস্ব সংগ্রহ এবং টেকসই প্রবৃদ্ধি’ শীর্ষক প্রথম অধিবেশনে নির্ধারিত আলোচক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক সেলিম রায়হান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক শরমিন্দ নিলোর্মী, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান। এ ছাড়া অনলাইনে যুক্ত ছিলেন বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ধ্রুব শর্মা।

সেলিম রায়হান বলেন, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় দেশে রাজস্ব আদায়ের হার কম থাকার পেছনে রাজস্ব খাতে থাকা কিছু সংস্কারবিরোধী প্রভাবকও রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক দল ও অভিজাত ব্যবসায়িক শ্রেণির হস্তক্ষেপ। তিনি বলেন, অর্থনীতিতে টেকসই উন্নয়নের জন্য কর খাতে ব্যাপক সংস্কার দরকার।

বিশ্বব্যাংকের অর্থনীতিবিদ ধ্রুব শর্মা বলেন, বিশ্বের উন্নত কিংবা উন্নয়নশীল দেশে রাজস্বের হার গড়ে প্রায় ১৮ থেকে ১৯ শতাংশ। বাংলাদেশে এ হার এখনো একক সংখ্যা অর্থাৎ ৮ শতাংশের ঘরে। কর আহরণের ব্যয়ও বেশি বাংলাদেশে। অন্তর্বর্তী সরকার যেহেতু করনীতি ও কর প্রশাসনকে আলাদা করার উদ্যোগ নিয়েছে, তার বাস্তবায়ন হলে কর আদায়ে ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

কর আদায়ে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার প্রবর্তন, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবস্থার আধুনিকায়ন এবং বাণিজ্যনির্ভর রাজস্ব আইনের যথাযথ বাস্তবায়নও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করেন ধ্রুব শর্মা। তিনি রাজস্ব আদায়ে নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধির প্রতিও জোর দেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক শরমিন্দ নিলোর্মী বলেন, নিরাপত্তাব্যবস্থা ঠিক রাখার জন্য বাসার নিরাপত্তাকর্মীকে এমনকি ঈদের সময়ও ছুটি দেওয়া যায় না। আবার ওয়াসার পানির লাইন থাকা সত্ত্বেও আলাদা করে ফিল্টার কিনতে হয়। এসব সেবা রাষ্ট্র থেকে পাওয়ার কথা থাকলেও এসব খাতে নাগরিকদের বাড়তি ব্যয় করতে হয়। অভিজাত শ্রেণির স্বার্থে প্রজ্ঞাপন জারি করার উদাহরণও দেশে রয়েছে বলে উল্লেখ করেন শরমিন্দ নিলোর্মী।

সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান কৃষি খাতে রাজস্ব আরোপের পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, বছরের পর বছর ধরে কৃষি খাত করের বাইরে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এমন সব নীতি করা হয়েছিল যে সংসদ সদস্যেরা কৃষি খাত ও মৎস্য খাতে বিনিয়োগের নাম করে কর–সুবিধা নিয়েছেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, অর্থনীতি বিভাগ নিজেই একটি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান। এ বিভাগের ওপর দেশের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। তিনি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও আঞ্চলিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে আন্তগবেষণার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।

জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে ধারণ করে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং ন্যায় ও সাম্যের দেশ গঠনে সবার অংশগ্রহণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন সাইমা হক।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবস থ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

মাঠ নিয়ে শ্রাবণের আফসোস

আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেও বসুন্ধরা কিংসের গোলরক্ষক মেহেদী হাসান শ্রাবণ নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। ফেডারেশন কাপের ফাইনালে আবাহনীর বিপক্ষে টাইব্রেকারে কিংসের জয়ের নায়ক ক্যারিয়ার নিয়ে কথা বলেছেন সমকালের সঙ্গে। শুনেছেন সাখাওয়াত হোসেন জয়

সমকাল: দু’দিনের ফাইনালের অভিজ্ঞতাটা কেমন হলো?
শ্রাবণ: (হাসি) না, এটা খুব কঠিন ছিল। আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েছি এক দিন ফাইনাল খেলব, জিতব এবং উদযাপন করব। কিন্তু প্রাকৃতিক কারণে খেলা অনেকক্ষণ বন্ধ ছিল। বাকি ১৫ মিনিট আরেক দিন। এটা একটা নতুন অভিজ্ঞতা। একই চাপ দু’বার নিতে হলো।

সমকাল: এই মাঠের সমস্যার কারণেই কি এমনটা হয়েছে?
শ্রাবণ: অবশ্যই। এত বড় একটা টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা যে মাঠে, সেখানে ফ্লাডলাইট নেই। যদি ফ্লাডলাইটের সুবিধা থাকত, ওই দিনই খেলাটা শেষ করা যেত। আমার মনে হয়, দেশের ফুটবলের কিছু পরিবর্তন করা উচিত। বিশেষ করে আমরা যখন জাতীয় দলের হয়ে বিদেশে খেলতে যাই, তখন দেখি অন্যান্য দেশের মাঠ খুব গতিশীল। আমাদের দেশের মাঠগুলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ের না। প্রায় সময়ই সমস্যা হয়। আমরা স্লো মাঠে খেলি। বিদেশে গতিশীল মাঠে খেলতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। আমাদের লিগটা যদি আন্তর্জাতিক মানের মাঠে হতো।

সমকাল: পেনাল্টি শুটআউটের সময় কী পরিকল্পনা ছিল আপনার?
শ্রাবণ: আমি আগেও বলেছি যে অনুশীলনের সময় আগের ম্যাচের টাইব্রেকার নিয়ে কাজ করেছি। কে কোন দিকে মারে, সেগুলো ট্রেনিংয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন কোচ। কোচের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছি এবং সফল হয়েছি।

সমকাল: এমেকার শট ঠেকানোর পর মার্টিনেজের মতো উদযাপন করেছেন। এটি কি আগে থেকেই পরিকল্পনা ছিল?
শ্রাবণ: না, সেভ দেওয়ার পর মাথায় এলো। তাই এমি মার্টিনেজের মতো উদযাপন করেছি। বলতে পারেন, এটি কোনো পরিকল্পনা ছিল না। তৎক্ষণাৎ মাথায় এলো।

সমকাল: জাতীয় দল আর ক্লাব– দুটোর অভিজ্ঞতা যদি একটু বলতেন।
শ্রাবণ: ক্লাব আর জাতীয় দল– দুটো ভিন্ন বিষয়। ক্লাব হচ্ছে শুধু একটা ক্লাবকে প্রতিনিধিত্ব করা। আর জাতীয় দল তো পুরো বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করা। যারা ক্লাবে ভালো পারফরম্যান্স করে, তাদেরই জাতীয় দলে ডাকে। আর জাতীয় দলে ডাক পাওয়াটা একজন প্লেয়ারের সবচেয়ে বড় অর্জন।

সমকাল: আপনি একটি সেভ করেছেন। কিন্তু আবাহনীর মিতুল মারমা পারেননি। জাতীয় দলে বেস্ট ইলেভেনে থাকতে পারবেন?
শ্রাবণ: না না, ব্যাপারটা এমন না। ও (মিতুল) সেভ করতে পারেনি আর আমি পারছি– এটি কিন্তু বড় বিষয় না। ও কিন্তু সেমিফাইনালে সেভ করে দলকে ফাইনালে এনেছে। বরং অনুশীলনে কোচ যাঁকে ভালো মনে করেন, তাঁকেই শুরুর একাদশে রাখেন।

সমকাল: একজন গোলরক্ষক হিসেবে নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
শ্রাবণ: আমি চাই দেশসেরা গোলরক্ষক হতে। আমার স্বপ্ন আছে, বিদেশে লিগে খেলব।    

সম্পর্কিত নিবন্ধ