বিদেশ থেকে প্রথম সন্তানের মুখ দেখে কাঁদলেন বাবা
Published: 15th, April 2025 GMT
মোবারক হোসেন ও তানজিলা আক্তারের বিয়ে হয় ২০২৪ সালের মার্চে। কিছুদিন পর তানজিলার গর্ভে সন্তান আসে। এদিকে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে রেখে বিয়ের ছয় মাসের মাথায় সৌদি আরবে চলে যান মোবারক। সেখানে বসে তিনি তানজিলাকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন। তবে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে সব সময় তাঁর খোঁজখবর রেখেছেন। প্রয়োজনীয় জিনিস দিতে কার্পণ্য করেননি। দূর পরবাসে বসে অপেক্ষায় ছিলেন, কখন সন্তানের মুখ দেখবেন। অবশেষে তাঁর সে আশা পূরণ হয়েছে সোমবার পহেলা বৈশাখের সকালে।
এদিন সকাল ৯টায় সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে স্বাভাবিক প্রসবের (নরমাল ডেলিভারি) মাধ্যমে কন্যাসন্তানের জন্ম দেন তানজিলা আক্তার। কিছুক্ষণ পরই স্বজনদের মাধ্যমে ভিডিও কলে প্রথম সন্তানের মুখ দেখেন মোবারক। এ সময় আনন্দে তাঁর চোখে পানি চলে আসে।
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার মহব্বতপুর গ্রামের আবদুল মতিন ও সেলিনা বেগম দম্পতির ছেলে মোবারক। একই উপজেলার কাউয়ারগড়ের শামছুল হক ও রেজিয়া আক্তারের মেয়ে তানজিলা। তিনি গর্ভবর্তী হওয়ার পর থেকে গ্রামে থাকলেও ছিলেন সচেতন এবং নিজের প্রতি যত্নশীল। নিয়ম করে মাসে একবার পাশের কমিউনিটি ক্লিনিকে যেতেন তানজিলা। সেখানে চিকিৎসকের পরামর্শ এবং নিজের মায়ের পরামর্শ মেনে চলায় সুস্থ সন্তানের মুখ দেখেছেন বলে মনে করেন এই গৃহবধূ। তিনি সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘জীবনের সবচেয়ে আনন্দের এই সময়ে স্বামীকে পাশে পেলে আরও ভালো লাগত। তাকে অনেক মিস করছি। আমার সন্তান ও আমি দুজনেই সুস্থ আছি। সবার কাছে আমার মেয়ের জন্য দোয়া চাই।’
তানজিলার মা রেজিয়া বেগম বলেন, ‘মেয়েটা পোয়াতি (গর্ভবতী) হওয়ার পরই আমরা ইখানো (মহব্বতপুর) কমিউনিটি ক্লিনিকে লইয়া গেছি। তারা কইছইন সন্তান পেটো আওয়ার প্রথম দিন থাকি ভালা পুষ্টিকর খানি খাওয়ানি লাগে। আমরা সবতা (সবকিছু) না পারলেও শাকসবজি, ডিম, মাছ, ঘরের গরুর দুধ, বাড়ির গাছে আওয়া (আসা) কলা খাওয়াইছি। প্রত্যেক দিন ফজরের নামাজের পরে কোরআন তেলোয়াত, জোহরের নামাজের পরে তেলোয়াত করছে তানজিলা। আমরারে ডাক্তারে কইছলা, (বলেছিলেন) ১৭ এপ্রিল বাচ্চার জন্ম অইবো। ১৩ এপ্রিল রাইতঔ (রাতে) মেয়েটা চইট (প্রসব বেদনা) আরম্ভ করে। রাইত কোন লাখান (কোনোরকমে) পার করছি, সকালে তাইর (মেয়েটার) বাবায় সিএনজি আইন্না (এনে) সদর হাসপাতালে লইয়া (নিয়ে) গেছইন (গেছেন)। হিকানো আল্লার ইচ্ছায় সবতা (সবকিছু) ভালা অইছে।’
জন্মের পর পরই নাতনির জন্য হাসপাতালের সামনে থেকে হলুদ সুতি কাপড়ের জামা কিনে এনে পরিয়ে দেন তানজিলার বাবা শামছুল হক। তিনি জানান, তাঁর মেয়ে গর্ভধারণের সময়ও তেমন অসুস্থবোধ করেননি। গৃহস্থালির কাজ নিয়মিত করতেন। এ ছাড়া নিয়মিত নামাজ ও কোরআন তেলাওয়াত করেছেন তানজিলা। প্রসব ব্যথা ওঠায় সোমবার সকাল ৭টায় সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তাঁকে নিয়ে বাড়ি থেকে রওনা দিয়েছিলেন তারা। রাস্তা ভালো থাকায় সোয়া ঘণ্টায় সদর হাসপাতালে পৌঁছান। সেখানে হাসপাতালের নার্সরা সহযোগিতা করেছেন। সকাল ৯টায় সন্তানের জন্ম দেন তানজিলা। সঙ্গে সঙ্গে নবজাতকের কানে আজান শুনিয়েছেন শামছুল হক। এরপর এক আত্মীয় সৌদি প্রবাসী মোবারক হোসেনকে তাঁর কন্যাসন্তানের ছবি পাঠান। তিনি ভিডিও কলে মেয়েকে চুমু দিয়েছেন।
মোবারকের মামা নাছির উদ্দীন বলেন, ‘পহেলা বৈশাখে সন্তানের জন্ম হওয়ায় বাংলা নববর্ষ ও ধর্মীয় দিক মিলিয়ে মোবারকই তাঁর মেয়ের নাম রাখবে।’
সদর হাসপাতালের গাইনি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মিডওয়াইফ সোনালী রানী দাস জানান, হাসপাতালে আসার আধা ঘণ্টার মধ্যে তানজিলা স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসব করেছেন। নবজাতকের ওজন দুই কেজি ৮০০ গ্রাম। তানজিলা সঠিক সময়েই সন্তান জন্ম দিয়েছেন। মা-মেয়ে দু’জনেই সুস্থ আছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ন মগঞ জ র জন ম ন র জন প রসব
এছাড়াও পড়ুন:
মঙ্গলবার কুয়াকাটায় রাস উৎসব, গঙ্গা স্নান বুধবার
প্রায় ২০০ বছর ধরে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার মদনমোহন সেবাশ্রম মন্দির ও কুয়াকাটার রাধা-কৃষ্ণ মন্দিরে পৃথক আয়োজনে রাস উৎসব পালন করে আসছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। এবছরও জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে হবে এ উৎসব। রাস উৎসব উপলক্ষে কলাপাড়ায় বসছে ৫ দিনব্যাপী মেলা।
কলাপাড়ায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, শেষ সময়ে প্রস্তুত করা হচ্ছে মন্দিরের আঙ্গিনাসহ রাধা ও কৃষ্ণের ১৭ জোড়া প্রতিমা।
মঙ্গলবার পূর্ণিমা তিথিতে রাত ৯টা ২২ মিনিটে অধিবাসের মধ্যে দিয়ে শুরু হবে রাস পূজার আনুষ্ঠানিকতা। পরের দিন বুধবার সন্ধ্যা ৭টা ৬ মিনিটে এ তিথি শেষ হবে। সেদিন সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে কুয়াকাটা সৈকতে গঙ্গা স্নান করবেন পুণ্যার্থীরা। এর পর মন্দিরের আঙ্গিনায় রাধা-কৃষ্ণের যুগল প্রতিমা দর্শন করবেন তারা। তাই, দুই মন্দিরেই ১৭ জোড়া প্রতিমা বানানো হয়েছে। প্যান্ডেল সাজানোর কাজ শেষ। চলছে লাইটিং ও সাজসজ্জার কাজ।
এ উৎসব উপলক্ষে কলাপাড়ার মন্দির প্রাঙ্গণ, কুয়াকাটার মন্দির প্রাঙ্গণ ও সৈকতে অস্থায়ীভাবে বসছে শতাধিক পোশাক, প্রসাধনী, খেলনা ও গৃহস্থালী সামগ্রীর দোকান। কুয়াকাটায় তিন দিনব্যাপী উৎসব হলেও কলাপাড়ায় এ উৎসব চলবে পাঁচ দিন। এসব দোকানে অন্তত ৩০ লাখ টাকার পণ্য বিক্রির আশা করছেন আয়োজকরা।
কলাপাড়ার শ্রী শ্রী মদনমোহন সেবাশ্রমের রাস উদযাপন কমিটির সভাপতি দিলীপ কুমার হাওলাদার বলেছেন, আজকের মধ্যেই আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে। হিন্দু ধর্মালম্বীদের এ উৎসব হলেও এখানে ৫ দিনব্যাপী মেলায় সব ধর্মের মানুষের আগমন ঘটে। আমাদের মন্দির প্রাঙ্গণে অন্তত ৭০টি দোকান বসেছে। আশা করছি, শান্তিপূর্ণভাবে রাস উৎসব সম্পন্ন হবে।
কুয়াকাটার রাধা-কৃষ্ণ মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক নীহার রঞ্জন মন্ডল বলেছেন, আগামীকাল রাতভর মন্দির প্রাঙ্গণে ধর্মীয় অনুষ্ঠান চলবে। পরদিন সকালে গঙ্গা স্নান হবে। লাখো পুণ্যার্থীর আগমনের আশা করছি আমরা। বুধবারও গঙ্গা স্নান হবে। উৎসব উপলক্ষে আমাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
কলাপাড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাউসার হামিদ বলেছেন, রাস উৎসব উপলক্ষে কুয়াকাটায় ১ লাখ পুণ্যার্থী সমাগমের আশা করছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আশা করছি, শান্তিপূর্ণভাবে এ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হবে।
ঢাকা/ইমরান/রফিক