মোবারক হোসেন ও তানজিলা আক্তারের বিয়ে হয় ২০২৪ সালের মার্চে। কিছুদিন পর তানজিলার গর্ভে সন্তান আসে। এদিকে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে রেখে বিয়ের ছয় মাসের মাথায় সৌদি আরবে চলে যান মোবারক। সেখানে বসে তিনি তানজিলাকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন। তবে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে সব সময় তাঁর খোঁজখবর রেখেছেন। প্রয়োজনীয় জিনিস দিতে কার্পণ্য করেননি। দূর পরবাসে বসে অপেক্ষায় ছিলেন, কখন সন্তানের মুখ দেখবেন। অবশেষে তাঁর সে আশা পূরণ হয়েছে সোমবার পহেলা বৈশাখের সকালে।
 
এদিন সকাল ৯টায় সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে স্বাভাবিক প্রসবের (নরমাল ডেলিভারি) মাধ্যমে কন্যাসন্তানের জন্ম দেন তানজিলা আক্তার। কিছুক্ষণ পরই স্বজনদের মাধ্যমে ভিডিও কলে প্রথম সন্তানের মুখ দেখেন মোবারক। এ সময় আনন্দে তাঁর চোখে পানি চলে আসে।
 
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার মহব্বতপুর গ্রামের আবদুল মতিন ও সেলিনা বেগম দম্পতির ছেলে মোবারক। একই উপজেলার কাউয়ারগড়ের শামছুল হক ও রেজিয়া আক্তারের মেয়ে তানজিলা। তিনি গর্ভবর্তী হওয়ার পর থেকে গ্রামে থাকলেও ছিলেন সচেতন এবং নিজের প্রতি যত্নশীল। নিয়ম করে মাসে একবার পাশের কমিউনিটি ক্লিনিকে যেতেন তানজিলা। সেখানে চিকিৎসকের পরামর্শ এবং নিজের মায়ের পরামর্শ মেনে চলায় সুস্থ সন্তানের মুখ দেখেছেন বলে মনে করেন এই গৃহবধূ। তিনি সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘জীবনের সবচেয়ে আনন্দের এই সময়ে স্বামীকে পাশে পেলে আরও ভালো লাগত। তাকে অনেক মিস করছি। আমার সন্তান ও আমি দুজনেই সুস্থ আছি। সবার কাছে আমার মেয়ের জন্য দোয়া চাই।’

তানজিলার মা রেজিয়া বেগম বলেন, ‘মেয়েটা পোয়াতি (গর্ভবতী) হওয়ার পরই আমরা ইখানো (মহব্বতপুর) কমিউনিটি ক্লিনিকে লইয়া গেছি। তারা কইছইন সন্তান পেটো আওয়ার প্রথম দিন থাকি ভালা পুষ্টিকর খানি খাওয়ানি লাগে। আমরা সবতা (সবকিছু) না পারলেও শাকসবজি, ডিম, মাছ, ঘরের গরুর দুধ, বাড়ির গাছে আওয়া (আসা) কলা খাওয়াইছি। প্রত্যেক দিন ফজরের নামাজের পরে কোরআন তেলোয়াত, জোহরের নামাজের পরে তেলোয়াত করছে তানজিলা। আমরারে ডাক্তারে কইছলা, (বলেছিলেন) ১৭ এপ্রিল বাচ্চার জন্ম অইবো। ১৩ এপ্রিল রাইতঔ (রাতে) মেয়েটা চইট (প্রসব বেদনা) আরম্ভ করে। রাইত কোন লাখান (কোনোরকমে) পার করছি, সকালে তাইর (মেয়েটার) বাবায় সিএনজি আইন্না (এনে) সদর হাসপাতালে লইয়া (নিয়ে) গেছইন (গেছেন)। হিকানো আল্লার ইচ্ছায় সবতা (সবকিছু) ভালা অইছে।’

জন্মের পর পরই নাতনির জন্য হাসপাতালের সামনে থেকে হলুদ সুতি কাপড়ের জামা কিনে এনে পরিয়ে দেন তানজিলার বাবা শামছুল হক। তিনি জানান, তাঁর মেয়ে গর্ভধারণের সময়ও তেমন অসুস্থবোধ করেননি। গৃহস্থালির কাজ নিয়মিত করতেন। এ ছাড়া নিয়মিত নামাজ ও কোরআন তেলাওয়াত করেছেন তানজিলা। প্রসব ব্যথা ওঠায় সোমবার সকাল ৭টায় সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তাঁকে নিয়ে বাড়ি থেকে রওনা দিয়েছিলেন তারা। রাস্তা ভালো থাকায় সোয়া ঘণ্টায় সদর হাসপাতালে পৌঁছান। সেখানে হাসপাতালের নার্সরা সহযোগিতা করেছেন। সকাল ৯টায় সন্তানের জন্ম দেন তানজিলা। সঙ্গে সঙ্গে নবজাতকের কানে আজান শুনিয়েছেন শামছুল হক। এরপর এক আত্মীয় সৌদি প্রবাসী মোবারক হোসেনকে তাঁর কন্যাসন্তানের ছবি পাঠান। তিনি ভিডিও কলে মেয়েকে চুমু দিয়েছেন।

মোবারকের মামা নাছির উদ্দীন বলেন, ‘পহেলা বৈশাখে সন্তানের জন্ম হওয়ায় বাংলা নববর্ষ ও ধর্মীয় দিক মিলিয়ে মোবারকই তাঁর মেয়ের নাম রাখবে।’

সদর হাসপাতালের গাইনি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মিডওয়াইফ সোনালী রানী দাস জানান, হাসপাতালে আসার আধা ঘণ্টার মধ্যে তানজিলা স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসব করেছেন। নবজাতকের ওজন দুই কেজি ৮০০ গ্রাম। তানজিলা সঠিক সময়েই সন্তান জন্ম দিয়েছেন। মা-মেয়ে দু’জনেই সুস্থ আছে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ন মগঞ জ র জন ম ন র জন প রসব

এছাড়াও পড়ুন:

জরুরি বৈঠকে বসছে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোয় ইসরায়েলি হামলার পরিপ্রেক্ষিতে জরুরি বৈঠকে বসছে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) বোর্ড অব গভর্নরস। আজ সোমবার আইএইএর সদর দপ্তরে এ বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। খবর বিবিসির

রাশিয়া, চীন ও ভেনেজুয়েলের সহায়তায় এবং ইরানের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে জরুরি বৈঠকে বসছে আইএইএ।

ইরান শুরুতে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানিয়ে প্রস্তাব উত্থাপন করতে চেয়েছিল। তবে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, ওই প্রস্তাবে সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল না। ফলে, ইরান এখন সাধারণ বিবৃতি দেওয়ার দিকে নজর দিয়েছে। ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানিয়ে এই বিবৃতি দেওয়া হবে।

ইরান বলেছে, আইএইএ–র বোর্ড অফ গভর্নরদের অবশ্যই ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানাতে হবে। তবে এই পরিস্থিতিতে এ ধরনের নিন্দা জানানোর সম্ভাবনা কম।

তবে এই বৈঠকে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতির পথ সুগম হবে কী না তার কোনো স্পষ্ট আভাস পাওয়া যায়নি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ