উত্তর কোরিয়ার পাইকতু পর্বতকে গ্লোবাল জিওপার্ক হিসেবে মনোনীত করেছে ইউনেস্কো। পর্বতটিকে পবিত্র পর্বত বলা হয়। এই পর্বতের সামরিক চেকপয়েন্ট ও এবড়োখেবড়ো ময়লা রাস্তা পেরিয়ে উঁচুতে উঠে গেলে চোখে পড়ে আগ্নেয়গিরি থেকে সৃষ্ট একটি গভীর হ্রদ। 

পর্বতটির অবস্থান উত্তর কোরিয়া ও চীনের সীমান্তে। এই পর্বতেই কোরিয়ান উপদ্বীপের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ রয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার সংবাদ সংস্থার বরাত দিয়ে সিএনএন জানায়, প্রথমবারের মতো পাইকতু পর্বত গ্লোবাল জিওপার্কের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। ইউনেস্কোর নির্বাহী বোর্ড গত ফেব্রুয়ারিতে পর্বতটির প্রকৃতিকে চিত্তাকর্ষক ও এলাকাকে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যভুক্ত হিসেবে মনোনীত করে। তাদের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, আগ্নেয়গিরি, হিমবাহের ক্ষয় এবং পাথুরে সমভূমি পাইকতুকে বিশেষ বৈশিষ্ট্য দান করেছে।   

জিওপার্কের তাৎপর্য বুঝতে হলে আপনাকে পাইকতুর ‘চোন’ হ্রদের ধারে দাঁড়াতে হবে। লেকটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৭ হাজার ২০০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত। হাজার বছরের বেশি আগে এক বিশাল অগ্ন্যুৎপাতের ফলে লেকটি জন্মলাভ করে। লেকের ধারে দাঁড়ালে পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে বাতাসের শির শির আমেজ। 

পর্বতটিকে বলা হয়, ‘কোরিয়ান বিপ্লবের আত্মা’। পর্বতটির মেঘে ঢাকা ঢাল নিয়ে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসছে নানা গল্প। যদি আপনি কখনও নিজে পর্বতের চূড়ায় স্থির হন, হ্রদের দিকে তাকিয়ে থাকেন এবং হিম বাতাসে শ্বাস নেন, তাহলে বুঝতে পারবেন কেন পর্বতটি উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার ‘আত্মা’ ধারণ করে।

কাহিনি প্রচলিত আছে, পর্বতটি ছিল প্রথম কোরিয়ান রাজ্যের পৌরাণিক প্রতিষ্ঠাতা ডাঙ্গুনের জন্মস্থান। উত্তর কোরিয়ার প্রতিষ্ঠাতা কিম ইল সুং (কিম জং উনের দাদা) ১৯৪০-এর দশকে স্বাধীনতার জন্য জাপানি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে লড়াই করার সময় পাহাড়টিকে আস্তানা হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। সুংকে ‘পাইকতুর কিংবদন্তি নায়ক’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। কিম রাজবংশ তাদের পারিবারিক শ্রেষ্ঠত্ব প্রদর্শনের জন্য এই পর্বতটি ব্যাপকভাবে ব্যবহার করেছে। এই পর্বতের নামে রকেট, বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ দেশটির নানা প্রতিষ্ঠানের নাম রাখা হয়েছে। 

ইউনেস্কোর মতে, বর্তমানে ৪৯টি দেশে ২০০টিরও বেশি জিওপার্ক রয়েছে। জিওপার্কের স্থানগুলোর কিছু অনন্য সাধারণ বৈশিষ্ট্য থাকে। জিওপার্কের জন্য বিশেষ ভৌগোলিক অঞ্চলের স্বীকৃতি বা আঞ্চলিক ভূতাত্ত্বিক তাৎপর্যপূর্ণ স্থানকে অগ্রাধিকারভাবে বিবেচনায় নেওয়া হয়। ইউনেস্কোর এই স্বীকৃতির কারণে পাইকতু পর্বতকে একটি ভূপর্যটন গন্তব্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারবে পিয়ংইয়ং।   

পাইকতুর আশপাশের জীবনযাত্রা গ্রামীণ ও বিচ্ছিন্ন। ২০১৭ সালে যখন সিএনএনের প্রতিবেদক পাইকতু পর্বত পরিদর্শনে যান, তখন ক্যামেরা দেখে শিশুরা ভয়ে পালিয়ে যাচ্ছিল। হয়তো তারা কোনো বিদেশিকে কখনও দেখেনি। কাইকতুর নিকটতম শহর সামজিওন। এখানে সুংয়ের স্মৃতিস্তম্ভগুলো শোভা পাচ্ছে। ভবনগুলোতে জাপানিদের সঙ্গে যুদ্ধের ক্ষতচিহ্ন এখনও লক্ষ্য করা যায়। 

ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পাওয়ার পর পাইকতু এখন আর সাধারণ কোনো স্থান নয়। এটি এখন থেকে বিশ্বব্যাপী ‘বিশেষ ভূতাত্ত্বিক মর্যাদা’ লাভ করল। সিএনএন।   


 
 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইউন স ক ইউন স ক র

এছাড়াও পড়ুন:

শি জিনপিং ফোন করেছিলেন, ট্রাম্পের এমন দাবি প্রত্যাখ্যান চীনের

শুল্ক আরোপ নিয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তাকে ফোন করেছিলেন বলে যে দাবি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তা প্রত্যাখ্যান করেছে চীন। সোমবার বেইজিং জানিয়েছে, শি জিনপিং সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনে কথা বলেননি। এমনকি দুই দেশের মধ্যে শুল্কযুদ্ধ মেটাতে কোনো আলোচনাও হচ্ছে না। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র এক বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছে। খবর-সিএনএন

গত সপ্তাহে টাইম সাময়িকীকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, চীনের প্রেসিডেন্ট সি তাঁকে ফোন করেছেন। এ ঘটনায় চীন তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া না জানালেও আজ দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে ট্রাম্পের এমন দাবি নাকচ করে দিয়েছে।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গুয়ো জিয়াকুন নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমার জানামতে, সম্প্রতি দুই রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে ফোনে কোনো কথা হয়নি। আমি আবারও স্পষ্ট করে বলতে চাই, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শুল্ক ইস্যু নিয়ে কোনো আলোচনা বা দর–কষাকষি চলছে না।’

গত শুক্রবার টাইম সাময়িকীতে প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে সির প্রতি ইঙ্গিত করে ট্রাম্প বলেন, ‘তিনি আমাকে ফোন করেছিলেন। আমি মনে করি না এটি তাঁর পক্ষ থেকে কোনো দুর্বলতার ইঙ্গিত।’

ট্রাম্প বারবার সি চিন পিংকে ‘বন্ধু’ বলে উল্লেখ করেছেন। তবে টাইম সাময়িকীকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে চীনের নেতার সঙ্গে কথিত ফোনালাপের বিষয়বস্তু বা সময় সম্পর্কে কোনো নির্দিষ্ট তথ্য দেননি। এমনকি সিএনএন শুক্রবার জানতে চাইলেও তিনি এ বিষয়ে কিছু বলতে চাননি।

শুক্রবার হোয়াইট হাউসে সিএনএনের সাংবাদিক অ্যালাইনা ট্রিনের প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাই না। তবে আমি তাঁর (সি চিন পিং) সঙ্গে অনেকবার কথা বলেছি।’

সর্বশেষ গত ১৭ জানুয়ারি ট্রাম্প দ্বিতীয় দফায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক দিন আগে দুই নেতা ফোনে কথা বলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শি জিনপিং ফোন করেছিলেন, ট্রাম্পের এমন দাবি প্রত্যাখ্যান চীনের
  • ট্রাম্পের সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে চীনের প্রেসিডেন্টের কোনো কথা হয়নি: বেইজিং