হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে অবৈধ বালু জব্দ করে বিপাকে প্রশাসন
Published: 16th, April 2025 GMT
অবৈধভাবে উত্তোলন করা বালু জব্দ করে বিপাকে পড়েছে হবিগঞ্জের প্রশাসন। জব্দ করা এ বালু গতকাল মঙ্গলবার নিলামে বিক্রির দিন ও তারিখ ধার্য করেও প্রশাসন এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে।
এলাকাবাসীর দাবি, রাজনৈতিক নেতাদের চাপে পরে প্রশাসন এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে। তবে প্রশাসন চাপের বিষয়টি অস্বীকার করেছে।
চুনারুঘাট উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার কাচুয়া মৌজার পাকরিয়া মহাল থেকে ইজারা ছাড়াই বালু উত্তোলন করে আসছিলেন উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবু নাঈম ও চুনারুঘাট পৌর যুবদলের আহ্বায়ক আমিনুল ইসলামসহ সংগঠনটির বেশ কিছু নেতা-কর্মী। তাঁরা যন্ত্রের সাহায্যে প্রায় ৮ থেকে ১০ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলন করে স্তূপ করে রাখেন বালুমহাল এলাকায়। এ নিয়ে এলাকাবাসী মৌখিকভাবে চুনারুঘাট উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করেন।
যে জায়গা থেকে বালুগুলো উত্তোলন করা হয়, সেই স্থান জেলা প্রশাসন থেকে ইজারা দেওয়া হয়নি।মো.রবিন মিয়া, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, চুনারুঘাট, হবিগঞ্জ
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহবুব আলম ঘটনাস্থলে যান। খবর পেয়ে বালু উত্তোলনকারীরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। পরে মাহবুব আলম উত্তোলন করা বালুগুলো থেকে ২ লাখ ঘনফুট বালু জব্দ করে তালিকা প্রকাশ করেন। পাশাপাশি গত শনিবার ইউএনও মো. রবিন মিয়া সীমানা যাচাই করে প্রমাণ পান, ইজারা–বহির্ভূত স্থান থেকে এসব বালু উত্তোলন করা হয়েছে।
এলাকাবাসী ৮ থেকে ১০ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলনের কথা বললেও প্রশাসন কেন ২ লাখ ঘনফুট বালু জব্দ করেছে প্রশ্ন করলে চুনারুঘাটের ইউএনও মো. রবিন মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, যখন বালুগুলো জব্দ করা হয়, তখন উপজেলা প্রশাসনের লোকজন ছাড়া আর কেউ উপস্থিত ছিলেন না। কাজেই যাঁরা দাবি করছেন ৮ থেকে ১০ লাখ ঘনফুট বা কোটি টাকার বালু নিজেদের, তাঁদের এ দাবি ঠিক নয়। যতটুকু উত্তোলন করা হয়েছে, সেটুকুই জব্দ করেছেন।
তবে যাঁদের বিরুদ্ধে বালু উত্তোলনের অভিযোগ, সেই ছাত্রদল নেতা আবু নাঈম ও যুবদল নেতা আমিনুল ইসলাম দাবি করেন, বালু উত্তোলনের জায়গাটি তাঁরা ইজারা নিয়েছেন।
জব্দ বালু ছাড়িয়ে নিতে চাপএদিকে জব্দ করা বালু ছাড়িয়ে নিতে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনকে রাজনৈতিকভাবে চাপ প্রয়োগের অভিযোগ উঠেছে।
গত বৃহস্পতিবার জব্দ করা বালু নিলামে বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে জেলা প্রশাসনের রাজস্ব শাখা নিলাম–সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। গতকাল মঙ্গলবার নিলামের দিন-তারিখ নির্ধারণ করা হয়; কিন্তু গতকাল দুপুরে জেলা প্রশাসনের রাজস্ব শাখা আবার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিলাম স্থগিত করে।
উপজেলার সাটিয়াজুরি কচুয়া এলাকার একজন বাসিন্দা বলেন, যাঁরা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছেন, তাঁরা নিজেদের ইজারার স্থান থেকে বালু উত্তোলনের দাবি করে এলেও এ দাবি সঠিক নয়। এখন তাঁরা এ বালু নিলামে বিক্রি করতে চাপ দিচ্ছেন প্রশাসনকে।
জানতে চাইলে হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসন (রাজস্ব) নাঈমা খন্দকার বলেন, ‘কোনো চাপে নয়, বালু উত্তোলনকারীরা হাইকোর্টে এ জব্দ করা বালুর নিলাম বন্ধে মামলা করেছেন। যে কারণে আপাতত নিলাম স্থগিত রেখেছেন তাঁরা। আদালতের পরবর্তী নির্দেশ পাওয়ার পর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চ ন র ঘ ট উপজ ল ল খ ঘনফ ট ব ল
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ঘেঁষে একের পর এক অঘোষিত ভাগাড়, বর্জ্য ফেলে পরিবেশদূষণ
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের হাড়াতলী এলাকা। কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার এই এলাকায় গেলে দূর থেকেই নাকে ভেসে আসে উৎকট দুর্গন্ধ। মহাসড়কের ঢাকামুখী লেনের পাশে চোখে পড়ে সারি সারি ময়লার স্তূপ। মহাসড়কের পাশ যেন হয়ে উঠেছে ময়লা-আবর্জনা ফেলার ভাগাড়ে।
শুধু হাড়াতলী এলাকাই নয়; ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের বেশ কয়েকটি স্থানে এমন অঘোষিত ভাগাড় গড়ে উঠেছে। মহাসড়কের প্রায় ১০০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে রয়েছে কুমিল্লা জেলার অংশ। এর মধ্যে অন্তত ২০টি স্থানে একইভাবে ময়লা ফেলা হচ্ছে। কোথাও কোথাও সিটি করপোরেশন, পৌরসভার মতো স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান মহাসড়কের পাশে তাদের সংগ্রহ করা ময়লা ফেলছে। এতে মহাসড়কের পাশে বিভিন্ন স্থানে আবর্জনার স্তূপ দিন দিন বাড়তে, মহাসড়ক পরিণত হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা ফেলার ভাগাড়ে। এভাবে পরিবেশদূষণ বেড়ে যাওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পরিবেশবাদীরা।
বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লার সভাপতি মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এভাবে বর্জ্য ফেলার কারণে পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা যদি সঠিকভাবে করতে না পারে, তাহলে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের কাজটা কী? মানুষ তো ট্যাক্স দেয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য। এভাবে ময়লা-আবর্জনা ফেলা একধরনের অপরাধও। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে এসব বিষয়ে কঠোর হওয়া দরকার।
হাড়াতলী এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, প্রায় দুই বছর আগে স্থানটিতে ময়লা ফেলা শুরু করে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন। এরপর সেটি ধীরে ধীরে পরিণত হয় ভাগাড়ে। দিন যত গেছে, ময়লা ফেলার জায়গাটির আকার ততই দীর্ঘ হয়েছে। এ কারণে ওই স্থান দিয়ে হেঁটে চলাচল করা বেশ দুষ্কর হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন আশপাশের বসবাসকারীরা। ভাগাড়ের আশপাশে অন্তত তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেগুলোর শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও ময়লার দুর্গন্ধে নাকাল।
এভাবে পরিবেশদূষণ বন্ধে আমরা দীর্ঘদিন ধরে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করছি। তবে এ বিষয়ে মূল দায়িত্বটা পালন করতে হবে সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদকে।মোসাব্বের হোসেন মোহাম্মদ রাজীব, উপপরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর কুমিল্লাস্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ময়লা ফেলতে আমরা বারবার বাধা দিয়েছি, কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি। সিটি করপোরেশন সবুজে ঘেরা এলাকাটির বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। এখনো প্রতিদিন ময়লা বাড়ছে। সিটি করপোরেশন বলে, তারা নাকি এখন ময়লা ফেলে না। তাহলে আমাদের প্রশ্ন, ময়লা কারা ফেলছে?’
স্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী তাহমিনা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, শ্রেণিকক্ষে বসা যায় না দুর্গন্ধের জন্য। একটু বাতাসেই নাকে ভেসে আসে ময়লার দুর্গন্ধ। কলেজে প্রবেশের সময় নাক চেপে ধরে আসতে হয়। এ ছাড়া পরিবেশও মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে।
জানতে চাইলে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, হাড়াতলীতে তিন মাস ধরে তাঁরা আবর্জনা ফেলছেন না। সিটি করপোরেশনের ফেলা ময়লাগুলো ভেকু দিয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। এখন রাতের আঁধারে আশপাশের লোকজন এবং বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁসহ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান মহাসড়কের পাশে ময়লা ফেলছে। যারা ময়লা ফেলছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার প্রবেশমুখ বালুজুড়ি এলাকায় ময়লার ভাগাড়