রাজনীতিতে আসা ভুল ছিল না, নির্বাচন করলে হারব না: সাকিব
Published: 16th, April 2025 GMT
আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রতীক নৌকা নিয়ে গত জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে এমপি হয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর তাকে আওয়ামী লীগের ‘দোসর’ বলা হচ্ছে। তার নামে হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা হয়েছে। যে কারণে দেশে আসতে পারছেন না সাকিব। খেলতে পারছেন না জাতীয় দলের হয়ে। এমনকি ঘরের মাঠে টেস্ট খেলে অবসর নেওয়ার ইচ্ছেও পূরণ হয়নি তার।
সাকিব জাতীয় দলের হয়ে ১৮ বছর ক্রিকেট খেলেছেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেছেন ৬ মাস। তাতেই যেন ক্রিকেটার ছাড়িয়ে তার রাজনৈতিক পরিচয় মূখ্য হয়ে উঠেছে। অথচ সাকিব মনে করেন রাজনীতিতে আসা ভুল ছিল না। এমনকি সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এবং তিনি অংশ নিলে তাকে কেউ হারাতে পারবে না। সংবাদ মাধ্যম ডেইলি সানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন লম্বা সময় আইসিসির সেরা অলরাউন্ডার থাকা বাঁ-হাতি স্পিন অলরাউন্ডার সাকিব।
তিনি বলেন, ‘দেখুন, আমার জন্য যদি রাজনীতিতে যোগ দেওয়া ভুল হয়ে থাকে, তাহলে ভবিষ্যতে যারাই রাজনীতিতে অংশ নেবে তারা ভুল করতে যাচ্ছে। তিনি ডাক্তার হন, ব্যারিস্টার হন কিংবা ব্যবসায়ী, রাজনীতিতে যোগ দেওয়া মানেই ভুল। কিন্তু রাজনীতিতে যোগ দেওয়া সকল নাগরিকের অধিকার, যেকেউ রাজনীতি করতে পারে। জনগন ভোট দেবে কিনা সেটা তাদের বিষয়। আমি মনে করি, যখন রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলাম, আমি সঠিক ছিলাম। এখনো মনে করি, আমি সঠিক। কারণ আমার উদ্দেশ্য ছিল মাগুরার জনগণের জন্য কাজ করা।
আমার মনে হতো, আমি তাদের জন্য কিছু একটা করতে পারবো। আমি মনে করি, আমার আসনে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছিল এবং আমি মনে করি এ বিষয়ে কারো সন্দেহ নেই। আমি যদি আবার নির্বাচনে অংশ নিই আমাকে কেউ হারাতে পারবে না। যখন আমি নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলাম, এটাকে এলাকার মানুষের জন্য কাজ করার সুযোগ হিসেবে দেখেছিলাম। র্দূভাগ্যবশত, যেভাবে চেয়েছিলাম, সেভাবে তাদের আমি সেবা করতে পারিনি, এটা আমাকে স্বীকার করে নিতে হবে।’
মাগুরার মানুষের সেবা করার জন্য নির্বাচনে অংশ নিলেও সাকিব স্বীকার করেছেন, ছয় মাস এমপির দায়িত্ব পালন করলেও তিনি মাগুরা গেছেন তিনবার। ক্রিকেট নিয়েই বেশি ব্যস্ত থেকেছেন। বাকি সময় দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে পরিবারকে। সাকিব বলেন, ‘আমি ৬ মাসের মতো রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলাম। এমপি হওয়ার পর মাগুরা গিয়েছি তিনবারের মতো। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আমাকে বলেছিলেন, তোমার রাজনীতি করার দরকার নেই। খেলায় মন দাও। আমি উনার উপদেশ শুনেছি। চার-পাঁচ মাসের মতো ক্রিকেট খেলেছি। বাকি সময়টা পরিবারকে দিয়েছি।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ক ব আল হ স ন র জন ত ত র র জন ত র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
কাজাকিস্তানের যাযাবর জাতির করুণ ইতিহাস
বিংশ শতাব্দীর আগে পৃথিবীর মানচিত্রে কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান এবং তুর্কমেনিস্তান নামের এই পাঁচটি দেশ ছিলো না। মূলত ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এই রাষ্ট্রগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা লাভ করে। পরে চীনের সহায়তায় ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চলগুলো বাণিজ্যিক কেন্দ্রস্থল হিসেবে পুনরুত্থান হয়েছে। এখন প্রশ্ন করা যেতে পারে, চীন কেন আবারও এই অঞ্চলগুলোকে শক্তিশালী করে তুলছে?
ঐতিহাসিকভাবে মধ্য এশিয়া অঞ্চল সিল্করোডের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলো। যা চীনকে মধ্যপ্রাচ্য এবং রোমান সভ্যতার সাথে যুক্ত করেছিলো। বীজ গণিতের জনক আল খারিজমি, আবু সিনার মতো বিজ্ঞানীদের জন্ম হয়েছে এখানে। যাদের লেখা বই ইউরোপে শত শত বছর ধরে চিকিৎসা ও নিরাময়ের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। চেঙ্গিস খানও এই অঞ্চলে তার সম্রাজ্যের নিদর্শন রেখে গেছেন। পাশাপাশি ঘোড়ার পিঠে আদিম যাযাবর জীবনের ঐতিহ্যও টিকে আছে এখানে।
আরো পড়ুন:
রাশিয়ার বিরুদ্ধে এবার রোমানিয়ার আকাশসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ
রাশিয়ায় ৭.১ মাত্রার ভূমিকম্প, সুনামির সতর্কতা
রাজনৈতিক প্রভাব ও সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে মধ্য এশিয়ায় আধিপত্য বিস্তার করেছিলো রুশরা। উপনিবেশিক শাসন এমনভাবে চালু করেছিলো, যা অনেকটা ব্রিটিশ বা ফরাসি সম্রাজ্যের মতো দেখতে।
রাজ্যগুলোকে শিল্পায়ন ও আধুনিকায়নের ফলে বিশাল পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। এমনকি যাযাবর জাতিকে যুদ্ধ যেতে বাধ্য করা হয়েছিলো। আর যাযাবর জাতিকে বসতি স্থাপনে বাধ্য করা হয়েছিলো। এরপর ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। ফলে কাজাখ জনগোষ্ঠীর চল্লিশ শতাংশ অর্থাৎ ২৫ শতাংশ মানুষ অনাহারে মারা যায়। এবং যাযাবর জনগোষ্ঠীর যে অর্থনীতি, তা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। কারণ সোভিয়েত আমলে কাজাখ যাযাবররা যে পশুপালন করতো তার নব্বই শতাংশই মারা যায়। ফলে বাধ্য হয়ে কাজাখদের যাযাবর জীবনযাত্রা ছেড়ে দিতে হয়। বলতে গেলে সোভিয়েত আমলে কাজাখ সভ্যতা ও সংস্কৃতির বেদনাদায়ক পুনর্গঠনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।
১৯৯১ সালে সোভিয়েন ইউনিয়নের পতন হয়, সৃষ্টি হয় এই পাঁচটি স্বাধীন দেশের। এই দেশগুলো স্বাধীন হয়েছে ঠিকই কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন পরবর্তী বিশ্বে খাপ খাইয়ে নিতে তাদের ব্যাপক সংগ্রাম করতে হয়। তবে বিগত কয়েক দশক ধরে মধ্য এশিয়ার যাযাবর জাতিগুলো নিজস্ব সীমানার মধ্যে এক অনন্য পরিচয় গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। যদিও তাদের ওপর বাইরের প্রভাবও রয়েছে। তুরস্ক এই অঞ্চলে নিজেদের উপস্থিতি আরও বেশি জানান দিচ্ছে। সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক, ধর্মীয় এবং ভাষাগত মিল আছে। এমনকি শিক্ষাগত কাঠামোতেও মিল রয়েছে। তুরস্ক মধ্য এশিয়ায় রাশিয়ার পণ্য রফতানির একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হিসেবেও বিবেচিত।
জিনজিয়াং প্রদেশে প্রায় এক কোটি উইঘুর বাস করেন। যাদের বেশিরভাগই মুসলিম। এদের নিয়ে চীনের বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া উইঘুর পরিচয় মুছে ফেলতে তাদের পুনঃশিক্ষা শিবিরে আটকে রাখার অভিযোগও আছে। যদিও চীন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
বৈশ্বিক অবকাঠামো উন্নয়নের পরিকল্পনা বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ এর চীন মধ্য এশিয়ায় ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়ন করছে। এই অঞ্চলটিকে বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত করতে চাইছে, যা অনেকটা সিল্করুটের মতোই।
চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ উদ্যোগের মাধ্যমে মধ্য এশিয়ায় প্রাচীন সিল্ক রোড পুনরুজ্জীবিত করার একটি সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। এই রোড পুনরুজ্জীবিত হলে রাশিয়া আর চীনের প্রভাব বলয়ে থাকা এই অঞ্চলের ভূ রাজনৈতিক গুরুত্ব কতটা বাড়বে-সেটাও সময় বলে দেবে।
ঢাকা/লিপি