গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার না হলে যুদ্ধবিরতি হবে না বলে জানিয়েছে হামাস। হামাসের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, যে কোনো যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে অবশ্যই গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে। গতকাল বুধবার ইসরায়েলের সর্বশেষ প্রস্তাবটি বিবেচনা করার পর প্রথম মন্তব্যে এ বার্তা জানায় হামাস।

আলজাজিরা জানায়, হামাস জানিয়েছে, যতক্ষণ ইসরায়েলি সেনারা গাজা থেকে পুরোপুরি সরে না যাবে এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে রাজি না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো জিম্মিকে তারা মুক্তি দেবে না। ফিলিস্তিন এবং তাদের প্রতিবেশী দেশগুলো ইসরায়েলি সেনাদের তাদের ভূমিতে অবস্থানকে সামরিক দখলদারিত্ব হিসেবে বিবেচনা করে, যা আন্তর্জাতিক আইনে অবৈধ। 

এদিকে দখলদার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ জানিয়েছেন, গাজা, লেবানন এবং সিরিয়ার কথিত ‘নিরাপত্তা অঞ্চলে’ অনির্দিষ্টকালের জন্য তাদের সেনা মোতায়েন থাকবে। তাঁর এ ঘোষণার কারণে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির চুক্তির আলোচনা আরও কঠিন হয়ে পড়ল। গত মাসে চুক্তি লঙ্ঘন করে গাজায় ফের তীব্র হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এর পর গাজার বিস্তৃত অঞ্চল (প্রায় অর্ধেক) দখল করে নেয় ইসরায়েলি সেনারা। বুধবার এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, অতীতের মতো ইসরায়েলি সেনারা যেসব অঞ্চল পরিষ্কার অথবা দখল করেছে, সেসব অঞ্চল থেকে সরে যাচ্ছে না। 

ডয়চে ভেলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ গাজার হাসপাতালে ইসরায়েলের হামলায় ক্ষুব্ধ। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে মাখোঁ বলেছেন, গাজায় মানুষের দুর্দশা যেন অবিলম্বে বন্ধ হয়। একমাত্র যুদ্ধবিরতি হলেই বাকি পণবন্দিরা মুক্তি পাবেন। মঙ্গলবার নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনে এসব কথা বলেন তিনি।

গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি হামলায় নতুন করে কমপক্ষে আরও ২৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অর্ধশতাধিক। এর ফলে অবরুদ্ধ এই উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা ৫১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এরই মধ্যে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় বিরল সফর করেছেন নেতানিয়াহু। মঙ্গলবার তিনি এ সফর করেন বলে জানিয়েছে তাঁর কার্যালয়। উপত্যকাটিতে নির্বিচারে ইসরায়েলি বাহিনী হামলার  মধ্যেই সফর করলেন নেতানিয়াহু। এ সময় হামলা আরও জোরদারের কথা বলেন তিনি। 

এএফপি জানায়, চিকিৎসা সহায়তা সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস (এমএসএফ) বলেছে, ইসরায়েল সামরিক অভিযান চালিয়ে এবং মানবিক সহায়তা প্রবেশে বাধা দিয়ে গাজাকে কার্যত ফিলিস্তিনি ও তাদের সাহায্যে আসা মানুষের কবরস্থানে পরিণত করেছে। গত ২ মার্চ থেকে ইসরায়েল গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে লাখো মানুষ চরম বিপদে পড়েছেন। এমএসএফের সমন্বয়কারী আমান্দে বাজেরোলে বলেন, ‘গাজা ফিলিস্তিনি ও তাদের সাহায্যে আসা ব্যক্তিদের গণকবরে পরিণত হয়েছে।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল

এছাড়াও পড়ুন:

বিএনপি ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায়: ডাকসু

সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছ ও দলীয় প্রভাবমুক্ত নিরপেক্ষ নিয়োগের সংস্কার প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে বিএনপি ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায় বলে দাবি করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)।

রবিবার (২ নভেম্বর) ডাকসুর ভিপি মো. আবু সাদিক, জিএস এসএম ফরহাদ ও এজিএস মুহা: মহিউদ্দিন খান স্বাক্ষরিত ‘রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কাৃরের বিরোধিতা এবং ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রকাঠামো অক্ষুণ্ন রাখার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে ডাকসুর প্রতিবাদ' শীর্ষক এক প্রতিবাদলিপিতে এ কথা বলা হয়েছে।

আরো পড়ুন:

ঢাবি শিক্ষার্থীদের মানবিক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ করতে ২ কমিটি

ঢাবিতে সপ্তাহব্যাপী শিল্পকর্ম প্রদর্শনী শুরু

প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়েছে, জুলাই বিপ্লব ছিল বৈষম্য, অবিচার ও ফ্যাসিবাদী শাসনকাঠামোর বিরুদ্ধে এ দেশের সর্বস্তরের ছাত্র-জনতার এক সম্মিলিত বিপ্লব। কেবল সরকার পরিবর্তন নয় বরং রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার, ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ, স্বাধীন ও শক্তিশালী সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান গঠন, প্রশাসনিক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং একটি বৈষম্যহীন-ন্যায়ভিত্তিক নতুন বাংলাদেশ গড়ার আকাঙ্ক্ষা ছিল এই বিপ্লবের মূল ভিত্তি। নতুন প্রজন্ম চেয়েছিল এমন একটি বাংলাদেশ, যেখানে কোন প্রকার বৈষম্য ও রাজনৈতিক একচেটিয়া কর্তৃত্বের জায়গা থাকবে না।

কিন্তু দুঃখজনকভাবে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করলেও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ধারাবাহিকভাবে সংস্কার কার্যকর করার বিরোধিতা করে তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে। বিশেষত বিএনপি এমন সব মৌলিক সংস্কারের বিরোধিতা করেছে যা সরাসরি ছাত্র–জনতার স্বপ্নের সঙ্গে জড়িত। পিএসসি, দুদক, ন্যায়পাল ও মহা-হিসাব নিরীক্ষকের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছ ও দলীয় প্রভাবমুক্ত নিরপেক্ষ নিয়োগ নিশ্চিত করার সংস্কার প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে তারা ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায়।

যে বৈষম্যমূলক চাকরি ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করেই জুলাই বিপ্লবের সূচনা হয়েছিল সেই কাঠামো পরিবর্তনের বিরুদ্ধাচরণ করে বিএনপি নতুন প্রজন্মের ন্যায্য দাবি অস্বীকার করছে। পাশাপাশি জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কমিশনের বিরোধিতা, অনুচ্ছেদ–৭০ সংস্কারে আপত্তি, প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান আলাদা দুজন ব্যক্তির মতো আধুনিক গণতান্ত্রিক প্রস্তাবে বিরোধিতা, আইন পেশায় রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের প্রতিবন্ধকতা, স্বতন্ত্র ফৌজদারি তদন্ত সার্ভিস গঠনে তাদের আপত্তি রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার এবং তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নির্মাণের পথে বড় বাঁধার সৃষ্টি করছে। এভাবে বিএনপি মূলত জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে অস্বীকার করে নতুন বাংলাদেশ নির্মাণের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করছে।

প্রতিবাদলিপিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, এই সংস্কারগুলো ব্যক্তি বা দলীয় স্বার্থ নয় বরং রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার এবং আধুনিক, গণতান্ত্রিক ও শক্তিশালী রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান তৈরির লক্ষ্যেই প্রস্তাবিত হয়েছে। জুলাই বিপ্লব পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ গঠনের নৈতিক দায়িত্ব ছাত্র ও সর্বস্তরের জনগণের। তাই সংস্কারের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জনগণ থেকে নিতে হবে। আর গণভোটই জনগণের ম্যান্ডেট নিশ্চিতের উপযুক্ত মাধ্যম। গণভোটের মাধ্যমেই জনগণ ঠিক করবে দেশের স্বার্থে কোন কোন সংস্কার প্রস্তাবনাগুলোকে তারা সমর্থন দিবে।

কোনো রাজনৈতিক দলের বিরোধিতা বা প্রাতিষ্ঠানিক প্রভাব যদি রাষ্ট্রগঠনমূলক সংস্কারের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তবে ছাত্র-জনতা  সেই বাধা অতিক্রমে দৃঢ়ভাবে অবস্থান নেবে জানিয়ে প্রতিবাদলিপিতে আরো বলা হয়, জুলাই বিপ্লব শুধু শাসক বা সরকার পরিবর্তনের আন্দোলন নয় বরং জুলাই বিপ্লব হলো ফ্যাসিবাদী কাঠামো বিলোপ করে ন্যায্যতা ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে নতুন রাষ্ট্র বিনির্মাণ।

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দখলদারদের কাছে প্রশাসনের আত্মসমর্পণ
  • বিএনপি ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায়: ডাকসু
  • মানবাধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবতা ভিন্ন
  • ট্রাম্প কি সত্যি ইসরায়েলি দখলদারি বন্ধ করতে চান
  • অজ্ঞাতনামা লাশ আর কারা হেফাজতে মৃত্যু বেড়েছে, শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকায় জনমনে সন্দেহ: এমএসএফ