প্রত্যাশা অনুযায়ী ফলন না পাইলে গড় উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পায় বলিয়া ফসলের উৎপাদককে লোকসান গুনিতে হয়, ইহা আমরা জানি। বিস্ময়কর হইল, এই দেশে ‘বাম্পার’ ফলনও কৃষককে যে লোকসানে ফেলিয়া দিতে পারে, উহা পরিলক্ষিত হইল সদ্য বিদায় লওয়া মৌসুমে।

আবহাওয়া অনুকূল থাকিবার কারণে শীত মৌসুমে সবজির ফলন বৃদ্ধিতে ভোক্তার উপকার হইলেও সংশ্লিষ্ট কৃষককে বিপুল লোকসান গুনিতে হইয়াছে। বুধবার প্রকাশিত সমকালের শীর্ষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিয়মিত বিভিন্ন কৃষিপণ্যের যৌক্তিক পাইকারি মূল্য ও পাইকারি বাজারের প্রকৃত মূল্যের তথ্য সংগ্রহকারী কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য বলিতেছে, পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি টমেটোর যৌক্তিক মূল্য ২৬ টাকার বিপরীতে রমজান মাসে খুচরা বাজারে টমেটো বিক্রি হইয়াছে সর্বোচ্চ ১৫ টাকায়। কাঁচামরিচ ও মিষ্টিকুমড়ার ক্ষেত্রেও অনুরূপ মূল্য বিপর্যয় ঘটিয়াছে। পণ্য দুইটির যৌক্তিক পাইকারি মূল্য প্রতি কেজি যথাক্রমে ৪৫ টাকা ও ২৪ টাকা হইবার কথা থাকিলেও, রমজানে সেইগুলি ভোক্তা পর্যায়ে বিক্রয় হইয়াছে যথাক্রমে ৪০ ও ২০ টাকায়। আলু, টমেটো, ফুলকপি, বেগুন, লাউ ইত্যাদির ক্ষেত্রেও পরিস্থিতি ছিল উৎপাদকদের প্রতিকূলে। উদাহরণস্বরূপ, প্রতিটি ফুলকপির উৎপাদন ব্যয় ১০ টাকা হইলেও কৃষককে বিক্রয় করিতে হইয়াছে মাত্র ২ টাকায়। সরকারি তথ্যই বলিতেছে, কৃষক যেই আলুর দর কেজিপ্রতি ৯ টাকারও কম পান, উহা ভোক্তাকে ক্রয় করিতে হয় ২২ টাকায়। অনস্বীকার্য, এই শীতকালে এবং রোজার সময়ে সবজির দাম অন্যান্য বৎসর অপেক্ষা কম থাকায় ভোক্তারা স্বস্তি পাইয়াছেন। ইহাতে কৃষকের যে সর্বনাশ ঘটিয়াছে– উহাও স্বীকার করিতে হইবে। কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ক্ষতি পোষাইয়া লওয়া বিশেষ করিয়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষকের পক্ষে এক প্রকার দুরূহ।
কৃষি বিশেষজ্ঞরা এই আশঙ্কাও করিতেছেন, এইরূপ পরিস্থিতি কৃষককে উৎপাদনে নিরুৎসাহিত করিতে পারে। কারণ, দেশের অধিকাংশ কৃষকের জীবন-জীবিকা যদ্রূপ কৃষির উপর নির্ভরশীল, তদ্রূপ তাহাদের অনেককে ঋণের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পুঁজি সংগ্রহ করিতে হয়। এত লোকসান হইলে সংসারের ব্যয় নির্বাহ কিংবা মুনাফা দূরস্থান, সেই ঋণও পরিশোধ করা যাইবে না। ফলে পুনরায় চাষে মনোযোগী হইতে হইলে সংশ্লিষ্ট কৃষককে ঋণচক্রে আটকা পড়িতে হইতে পারে। জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তার জন্যও এইরূপ পরিস্থিতি ঝুঁকি সৃষ্টি করিতে পারে। এই দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতির জন্য বিদ্যমান ত্রুটিপূর্ণ বিপণন ব্যবস্থাই প্রধানত দায়ী– এই কথা আমরা অতীতে বহুবার বলিয়াছি। কৃষিপণ্য কৃষক হইতে ভোক্তার নিকট পৌঁছাইতে অন্তত তিন দফা হস্তান্তর হয়; যেই প্রক্রিয়ায় স্থানীয় ব্যবসায়ী, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফা করেন। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরও তাহা সম্যক জ্ঞাত। পরিতাপের বিষয়, অদ্যাবধি এই বিপণন প্রক্রিয়া সংশোধনে কার্যকর পদক্ষেপ গৃহীত হয় নাই।
২০১৮ সালের আইনে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কার্যাবলিতে বলা হইয়াছে, কৃষিপণ্যের দাম নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন এই সংস্থার প্রধান কাজ। কৃষিপণ্যের বাজার সংযোগ সৃষ্টি ও সুষ্ঠু সরবরাহে সহায়তা করাও তাহাদের কাজ। সংস্থাটি মাঝেমধ্যে বিভিন্ন কৃষিপণ্যের দর নির্ধারণ করিয়া দিলেও উহার বাস্তবায়নে নজরদারি-বিষয়ক ঘাটতি প্রকট। নিয়মিত ঢাকা শহরের দৈনিক পণ্যমূল্যের তালিকা প্রস্তুত করিয়া মন্ত্রণালয় ও সংস্থাকে পাঠায় বটে, তাহার সহিত বাজারের দর মিলে না। প্রতিযোগিতামূলক দরে পণ্য ও সেবাপ্রাপ্তি নিশ্চিতকরণের দায়িত্ব প্রতিযোগিতা কমিশনের হইলেও উহার কার্যাবলি বাজার পরিদর্শনেই সীমাবদ্ধ।
কৃষকের জন্য ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণ, তৎসহিত ভোক্তাকেও সন্তুষ্টকরণে বাজার ব্যবস্থা গড়িয়া তোলাই এখন গুরুত্বপূর্ণ। বাংলা প্রবাদে বিনা ক্ষতিতে কঠিন কার্যসাধন বুঝাইতে সর্প মারিয়া লাঠি না ভাঙিবার নিদান রহিয়াছে। আমরা বলিতে চাহি, ভোক্তাকে যদ্রূপ বাঁচাইতে হইবে, তদ্রূপ কৃষকের মেরুদণ্ড ভাঙা চলিবে না। এই ক্ষেত্রে দ্রুত কৃষি কমিশন উপযুক্ত পদক্ষেপ হইতে পারে। কৃষিপণ্য সংরক্ষণে পর্যাপ্ত হিমাগার স্থাপনও জরুরি। কৃষি বীমার প্রচলনও কৃষকের ক্ষতির ঝুঁকি নিরসনে সহায়ক হইতে পারে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর স থ ত ক ষকক ব যবস হইয় ছ ব পণন

এছাড়াও পড়ুন:

গুগলের সার্কেল টু সার্চে আসছে নতুন দুই সুবিধা

অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমে চলা স্মার্টফোনে দ্রুত নির্দিষ্ট তথ্য খুঁজে দিতে গত বছর ‘সার্কেল টু সার্চ’-সুবিধা চালু করে গুগল। এ সুবিধা কাজে লাগিয়ে ফোনে ভিডিও দেখার সময় বিভিন্ন দৃশ্যে থাকা পণ্যের ছবি নির্বাচন করে সে বিষয়ে সরাসরি গুগলে সার্চের ফলাফল জানা যায়। অর্থাৎ ভিডিওতে থাকা যেকোনো ব্যক্তির চশমা সার্কেল করলে নিচে চশমাটি-সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য গুগল সার্চের মাধ্যমে দেখার সুযোগ মিলে থাকে। ব্যবহারকারীদের দ্রুত বিভিন্ন তথ্য জানার সুযোগ দিতে সার্কেল টু সার্চে নতুন দুই সুবিধা যুক্ত করতে যাচ্ছে গুগল।

জানা গেছে, গুগল অ্যাপের সর্বশেষ বেটা সংস্করণ বিশ্লেষণ করে সার্কেল টু সার্চে নতুন দুই সুবিধা যুক্তের বিষয়টি শনাক্ত করা হয়েছে। গানের তালিকা সংরক্ষণ এবং অনুবাদপ্রক্রিয়া আরও সহজ করতে সক্ষম সুবিধাগুলো সবার জন্য উন্মুক্ত না হলেও পরীক্ষামূলকভাবে কাজ করছে।

সার্কেল টু সার্চ ব্যবহার করে গান শনাক্তের সময় পর্দায় বর্তমানে একটি ছোট মিউজিক আইকন দেখা যায়। কিন্তু নতুন সুবিধাগুলো চালু হলে মিউজিক আইকনে যুক্ত হবে একটি অতিরিক্ত বাটন, যা দেখতে অনেকটা ঘড়ির মতো। এই নতুন আইকনের মাধ্যমে সরাসরি প্রবেশ করা যাবে ‘রিসেন্ট সং সার্চ’ নামের একটি মেনুতে। ফলে ব্যবহারকারী সহজেই আগে শনাক্ত করা গানের তালিকা দেখতে পারবেন। শুধু তা-ই নয়, এখানে গানের শিরোনাম, শিল্পীর নাম এবং অ্যালবামের ছবিও দেখা যাবে।

সার্কেল টু সার্চের আরেকটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসছে অনুবাদ সুবিধায়। বর্তমানে কোনো লেখাকে চিহ্নিত করার পর তা অনুবাদ করতে চাইলে ব্যবহারকারীকে সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু করতে হয়। নতুন সুবিধা চালু হলে সার্কেল টু সার্চে কোনো লেখা ট্যাপ করলেই সঙ্গে সঙ্গে অনুবাদের বাটন পর্দায় দেখা যাবে।

সূত্র: অ্যান্ড্রয়েড পুলিশ

সম্পর্কিত নিবন্ধ