মঙ্গলবার আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠকেও লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে সুসংবাদ দিতে পারেননি নীতিনির্ধারকেরা। বৈঠক সূত্রে জানানো হয়, ১ হাজার ৩৮৭টি অস্ত্র উদ্ধার করা যায়নি। পুলিশের সদর দপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বিভিন্ন থানা-ফাঁড়িসহ পুলিশের নানা স্থাপনা থেকে ৫ হাজার ৭৫০টি আগ্নেয়াস্ত্র লুট হয়েছিল। লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র-গোলাবারুদের মধ্যে আছে বিভিন্ন ধরনের রাইফেল, এসএমজি (স্মল মেশিনগান), এলএমজি (লাইট মেশিনগান), পিস্তল, শটগান প্রভৃতি।

লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র-গোলাবারুদ উদ্ধারে গত ৪ সেপ্টেম্বর যৌথ অভিযান শুরু হয়। ইতিমধ্যে সেই অভিযানের সাত মাস পার হয়ে গেছে। এরপরও প্রায় দেড় হাজার লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার না হওয়া উদ্বেগজনকই বটে। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠবে, অস্ত্রগুলো কাদের কাছে আছে? সংশ্লিষ্টদের দাবি, লুট হওয়া অস্ত্র জেল পলাতক আসামি, পেশাদার অপরাধী এমনকি রাজনৈতিক দলের কর্মীদের হাতে চলে যাওয়ার আশঙ্কাই বেশি। 

এ কথা ঠিক যে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সারা দেশে নৈরাজ্যকর অবস্থা চলছিল। এই সুযোগে একশ্রেণির আসামি জেল থেকে পলায়ন করেন, যাঁদের সবাইকে ফেরত আনা সম্ভব হয়নি। মাস কয়েক আগে পুলিশের পক্ষ থেকে প্রথম আলোকে বলা হয়েছিল, জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের সময় দেশের বিভিন্ন কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া আসামির মধ্যে ৭০০ জন এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। আবার রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সুযোগ বেশ কিছু জঙ্গি ও শীর্ষ সন্ত্রাসী জামিন নিয়ে জেলখানা থেকে বেরিয়ে আসেন। আবার রাজনৈতিক কর্মীদের মধ্যেও পরিস্থিতির সুযোগ নেওয়ার ঘটনা ঘটছে। যেদিন ঢাকায় আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠক হয়, সেদিনই ফেনীর সোনাগাজীতে একটি দলের যুব সংগঠনের নেতার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করা হয়।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এত বাহিনী নিয়োগ ও এত অভিযান চালানো সত্ত্বেও পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ার কারণ, লুটের অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা। অস্ত্র একবার বেহাত হলে সেটি উদ্ধার করা কঠিন। সরকার পরিবর্তনের পর মাঠপর্যায়ে পুলিশ বাহিনীতে ব্যাপক রদবদল হয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তারা সেখানকার পরিস্থিতিই সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল নন। ফলে সেখানকার অপরাধীদেরও তাদের চেনার কথা নয়। সে ক্ষেত্রে তাঁরা স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তা নিতে পারেন।

প্রতিটি থানায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসংক্রান্ত কমিটি আছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে এসব কমিটি অপরাধী ধরার চেয়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে বেশি ব্যস্ত ছিল। অতএব, অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে কমিটি পুনর্গঠনের পাশাপাশি সক্রিয় করাও জরুরি। স্থানীয় জনগণের সহায়তা পেলে ‘দুষ্ট লোক’ খুঁজে বের করা ও লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার কঠিন নয়।

এ কথা স্বীকার করতে হবে যে যতই দিন যাচ্ছে, ততই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে। অবিলম্বে অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারলে অপরাধের মাত্রাও বাড়তে থাকবে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে হলে প্রথমে নিশ্চিত হতে হবে, কাদের কাছে এই অস্ত্র আছে।

আমরা আশা করতে চাই, অন্তর্বর্তী সরকার অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযানকে সর্বাধিক অগ্রাধিকার দেবে। রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক উভয় শ্রেণির অপরাধীদের হাতে লুট হওয়া অস্ত্র আছে। এখানে কাউকে ছাড় দেওয়ার সুযোগ আছে বলে মনে করি না। আইনকে সর্বক্ষেত্রে নিজস্ব গতিতে চলতে দিতে হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর স থ ত র জন ত ক ল ট হওয় র করত সরক র অপর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট সময়কালে ফ্যাসিবাদী শক্তি নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে পারে, এসবির প্রতিবেদন

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে কর্মসূচি পালনকালে ফ্যাসিবাদী শক্তি অনলাইন-অফলাইনে প্রচারণা চালিয়ে সারা দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা করছে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি)।

গতকাল সোমবার এসবির এক প্রতিবেদনে এমন আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে। প্রতিবেদনটি পুলিশের সব বিভাগকে পাঠিয়ে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছে এসবি। এসবির একটি সূত্র প্রথম আলোকে এই প্রতিবেদনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ঐতিহাসিক জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সরকার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ফ্যাসিবাদবিরোধী সামাজিক সংগঠনগুলো ১ জুলাই থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। এই ধারাবাহিকতায় ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত কর্মসূচি পালনের সময়কাল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে কর্মসূচি পালনকে কেন্দ্র করে বিতাড়িত ফ্যাসিবাদী শক্তি অনলাইন-অফলাইনে প্রচারণা চালিয়ে দেশব্যাপী নৈরাজ্য সৃষ্টি, ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তির কর্মসূচিতে বাধা প্রদানসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর অপচেষ্টা চালাতে পারে।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখাসহ সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তি ও জানমাল রক্ষায় পুলিশের বিভিন্ন বিভাগকে কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছে এসবি।

নির্দেশনাগুলো হলো ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা। ৮ আগস্ট পর্যন্ত নিয়মিত সন্দেহজনক ব্যক্তিসহ মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস ও অন্যান্য যানবাহন তল্লাশি করা। বাস টার্মিনাল, লঞ্চঘাট, রেলস্টেশন ও বিমানবন্দরের পার্শ্ববর্তী এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিল অভিযান পরিচালনা করা। মোবাইল প্যাট্রোল জোরদার করা। গুজব রোধে সাইবার পেট্রোলিং কার্যক্রম অব্যাহত রাখাসহ গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করা।

এ ছাড়া কোনো অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকলে তা তাৎক্ষণিকভাবে এসবিকে অবহিত করার কথাও বলা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কক্সবাজারে ৩৫ পুলিশ সদস্যের পোশাকে থাকবে ‘বডি ওর্ন ক্যামেরা’
  • ২৯ জুলাই-৮ আগস্ট ‘ফ্যাসিবাদী শক্তির’ নৈরাজ্যের আশঙ্কায় এসবির সতর্কতা
  • ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট সময়কালে ফ্যাসিবাদী শক্তি নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে পারে, এসবির প্রতিবেদন
  • নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি শুরু, দেড় লাখ পুলিশকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে