হার্ভার্ডে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের হুমকি ট্রাম্প প্রশাসনের
Published: 17th, April 2025 GMT
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের দাবির কাছে নতি স্বীকার না করার পর, এবার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিষিদ্ধ করার হুমকি দিয়েছে মার্কিন সরকার। খবর বিবিসির।
হোয়াইট হাউজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়টিকে নিয়োগ, ভর্তি এবং শিক্ষাদান পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনার দাবি জানিয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের মতে, নতুন সংস্কার ক্যাম্পাসে ইহুদি-বিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করবে।
গাজা যুদ্ধ ও ইসরায়েলকে সমর্থনের প্রতিবাদে বিক্ষোভের সময় বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ইহুদি শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
আরো পড়ুন:
মার্কিন উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ
ডিসেম্বরের আগেও নির্বাচন সম্ভব, মনে করছে বিএনপি
৫০ হাজার কোটি টাকা বৈদেশিক ঋণ শোধ করা হয়েছে: বাণিজ্য উপদেষ্টা
বুধবার (১৬ এপ্রিল) মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোয়েম হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ‘জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি’ এবং ‘ইহুদি-বিদ্বেষের কাছে নতজানু’ হওয়ার অভিযোগ এনেছেন।
তিনি হার্ভার্ডকে দেওয়া এক চিঠিতে ৩০ এপ্রিলের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টির বিদেশি শিক্ষার্থীদের অবৈধ ও সহিংস কার্যকলাপ সম্পর্কিত রেকর্ড দাবি করেছেন।
ক্রিস্টি নোয়েম বলেছেন, “যদি হার্ভার্ড তথ্য দেওয়ার বাধ্যবাধকতার বিষয়টি প্রমাণ করতে না পারে, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়টি বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ হারাবে।”
চলতি বছর হার্ভার্ডে ভর্তির ২৭ শতাংশেরও বেশি বিদেশি শিক্ষার্থী।
গাজা যুদ্ধ ও ইসরায়েলকে সমর্থনের প্রতিবাদে বিক্ষোভের সময় বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ইহুদি শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
গত সোমবার হার্ভার্ড কমিউনিটিতে দেয়া একটি চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রেসিডেন্ট অ্যালান গার্বার বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় এর স্বাধীনতা ও সাংবিধানিক অধিকারকে পরিত্যাগ করবে না।”
যুক্তরাষ্ট্রে হার্ভার্ড প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় যারা নীতি পরিবর্তনে ট্রাম্প প্রশাসনের চাপকে প্রত্যাখান করেছে।
হার্ভার্ড তাদের ভর্তি প্রক্রিয়া, নিয়োগ এবং রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির ওপর সরকারি তদারকি মানতে অস্বীকার করায় ট্রাম্প এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ব্যাপক ক্ষুব্ধ।
মার্কিন সরকার ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টির জন্য ২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের ফেডারেল তহবিল স্থগিত করেছে। এছাড়াও ট্রাম্প বিশ্ববিদ্যালয়টির করমুক্ত মর্যাদাও বাতিল করার হুমকি দিয়েছেন। এর ফলে প্রতি বছর লাখ লাখ ডলার ক্ষতির মুখে পড়তে পারে হার্ভার্ড।
বুধবার (১৬ এপ্রিল) ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে এক পোস্টে বলেন, “হার্ভার্ডকে আর শিক্ষার জন্য উপযুক্ত স্থান হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না এবং বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজের কোনো তালিকায় এটিকে বিবেচনা করা উচিত নয়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরো বলেন, “হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে রসিকতা। এখানে ঘৃণা ও বোকামি শেখানো হয়। হার্ভার্ডের আর ফেডারেল তহবিল পাওয়া উচিত নয়।”
হার্ভার্ডের ওপর প্রশাসনের আক্রমণ বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময়, ট্রাম্প বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেডারেল তহবিল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন, সেগুলোকে রক্ষণশীলদের প্রতি শত্রু হিসেবে চিত্রিত করেছিলেন।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে, তার প্রশাসন বিশেষ করে সেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নজর দিয়েছে যেখানে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ হয়েছে। কিছু ইহুদি শিক্ষার্থী বলেছেন যে, তারা অনিরাপদ বোধ করেছেন এবং ক্যাম্পাসে হয়রানির সম্মুখীন হয়েছেন।
ফেব্রুয়ারিতে গঠিত সরকারের ইহুদি-বিরোধী টাস্ক ফোর্স পর্যালোচনার জন্য কমপক্ষে ৬০টি বিশ্ববিদ্যালয় চিহ্নিত করেছে।
গত মাসে, কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাম্প প্রশাসনের বেশ কয়েকটি দাবি মেনে নেয়। ক্যাম্পাসে ইহুদি-বিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়াই করতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগে ৪০০ মিলিয়ন ডলার ফেডারেল তহবিল স্থগিত করার ঘোষণা দিলে ট্রাম্পের দাবির কাছে নতজানু হয় কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এখন পর্যন্ত ট্রাম্প প্রশাসনের সর্বশেষ দাবির প্রতি প্রকাশ্যে সাড়া দেয়নি।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য ক তর ষ ট র র ফ ড র ল তহব ল র জন য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
সমুদ্র বাণিজ্যে অশনিসংকেত
ইরান-ইসরায়েলের সংঘাত তীব্র হতে থাকায় সমুদ্র বাণিজ্যের আকাশে মেঘ জমেছে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ তালিকাভুক্ত তেলবাহী ট্যাঙ্কার কোম্পানি ‘ফ্রন্টলাইন’ হরমুজ প্রণালি দিয়ে উপসাগরে নতুন করে জাহাজ পাঠানোর চুক্তি থেকে সরে আসছে। ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠায় জাহাজ মালিকরা হরমুজ প্রণালি এড়িয়ে চলতে চাইছেন।
আবার বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ ও আমেরিকাতে গার্মেন্ট পণ্য পাঠাতে জাহাজগুলোকেও ব্যবহার করতে হয় গুরুত্বপূর্ণ এই সমুদ্রপথ। চট্টগ্রাম বন্দরে আসা জাহাজগুলো রপ্তানি পণ্য কনটেইনার বোঝাই করে এতদিন এই পথে চলাচল করলেও এখন বাধার মুখে পড়ছে তারাও। বাধার মুখোমুখি বাংলাদেশের জ্বালানি তেলের জাহাজগুলোও। বিশ্বের প্রায় এক-চতুর্থাংশ তেলের জোগান এবং এক-তৃতীয়াংশ তরল প্রাকৃতিক গ্যাস এই পথ দিয়েই বহন করা হয়। দুবাইয়ের জেবেল আলি বন্দরকেন্দ্রিক কনটেইনার জাহাজ চলাচলেও ব্যবহৃত হয় এই পথ। এই বন্দর দিয়ে বাংলাদেশও মধ্যপ্রাচ্যে পণ্য পাঠায়।
ফ্রন্টলাইনের প্রধান নির্বাহী লার্স বারস্টাড আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এই অঞ্চলে ঢোকার জন্য এখন খুবই কমসংখ্যক মালিক চার্টার নিচ্ছেন, আমরাও না। আমরা নতুন করে উপসাগরে ঢোকার চুক্তি করছি না, এটা এখন আর হচ্ছে না।’ বারস্টাড জানান, ফ্রন্টলাইন কোম্পানির যেসব ট্যাঙ্কার আগে থেকে উপসাগরে অবস্থান করছিল সেগুলো নিরাপত্তা জোরদার করে, আন্তর্জাতিক নৌবাহিনীর নিরাপত্তা বহরের সঙ্গে হরমুজ প্রণালি থেকে বের হয়ে আসবে।
চট্টগ্রাম বন্দরের সাবেক বোর্ড সদস্য জাফর আলম বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি কনটেইনার নিয়ে অনেক জাহাজ এই পথ ধরে ইউরোপ ও আমেরিকাতে যায়। সংঘাতের প্রভাবে এখন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এই যাত্রা। এটির প্রভাব পড়বে চট্টগ্রাম বন্দরে। আর চট্টগ্রাম বন্দরে প্রভাব পড়লে এর ব্যাপকতা ছড়াবে পুরো দেশে।’
বাংলাদেশ ফ্রেইট ফারোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি খায়রুল আলম সুজন বলেন, ‘হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে তা পুরো সমুদ্র বাণিজ্যের জন্য হবে অশনিসংকেত। পণ্য পরিবহন খরচ অনেক গুণ বেড়ে যাবে। বাড়বে বীমার পরিমাণও।’ তিনি জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের বড় বাজার হলেও মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে রপ্তানি বাড়ছে। পোশাক রপ্তানির শীর্ষ ১০ নতুন বাজারের দুটি হচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ও সৌদি আরব। গত বছরও এই দুটি দেশে আগের চেয়ে ৪০ শতাংশ পোশাক বেশি রপ্তানি করেছিল বাংলাদেশ।
শিপিং মালিকরা খুঁজছেন বিকল্প পথ
হরমুজ প্রণালি বন্ধ হয়ে গেলে বিকল্প পথ হিসেবে লোহিত সাগর ও আরব সাগরের কথা চিন্তা করছেন শিপিং ব্যবসায়ীরা। তখন জাহাজ ভাড়া অনেক বাড়বে। বেড়ে যাবে বীমা খরচও। কারণ লোহিত সাগরপথও ঝুঁকিমুক্ত নয়।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী জানান, ২০২৩ সালের শেষ দিকে লোহিত সাগরে হুতিদের হামলা শুরু হলে অনেক বড় শিপিং কোম্পানি এশিয়া-ইউরোপের প্রচলিত সুয়েজ খালপথ ছেড়ে দক্ষিণ আফ্রিকার
উত্তমাশা অন্তরীপ ঘুরে বিকল্প পথে যাওয়া শুরু করে। এ জন্য লোহিত সাগর হয়ে মালপত্র পরিবহনের বীমা খরচ তখন ২০ শতাংশ
বেড়ে যায়। হুতি বিদ্রোহীদের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, জলদস্যুতা ও অন্যান্য ঝুঁকির কারণে বাণিজ্যিক জাহাজগুলোর জন্য বীমা খরচ তখন এতটাই বাড়ে, হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে সেটা আরও বাড়বে।
‘বিপদ’ দেখাচ্ছে অতীত
সমুদ্র বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, বিশ্ব সম্প্রদায়ের ওপর চাপ তৈরি করতে ইরান হরমুজ প্রণালিতে এক ধরনের ‘অঘোষিত অবরোধ’ আরোপ করতে পারে। কারণ ২০২৪ সালের এপ্রিলে উত্তেজনা চলাকালে ইরানের বিপ্লবী গার্ড হরমুজ প্রণালির কাছ থেকে ‘এমএসসি এরিয়াস’ নামে একটি কনটেইনার জাহাজ আটক করে তা ইরানের জলসীমায় নিয়ে যায়। জাহাজটি ছিল ইসরায়েলের ওফার পরিবারের নিয়ন্ত্রিত জোডিয়াক মেরিটাইমের সঙ্গে সংযুক্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান গোরটাল শিপিংয়ের মালিকানাধীন।
বাড়বে পণ্য পরিবহন খরচ
ইরান-ইসরায়েলে পাল্টাপাল্টি হামলায় বাংলাদেশের জ্বালানি তেল আমদানি ব্যাপকভাবে ব্যাহত হতে পারে। দেশ দুটির সশস্ত্র হামলার জেরে ইতোমধ্যে বৈশ্বিক তেলের দাম বেড়েছে ৭ শতাংশের বেশি। বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান শফিকুল আলম জুয়েল বলেন, ‘হরমুজ প্রণালি বন্ধ হয়ে গেলে জাহাজ অনেক দূর ঘুরে বিকল্প পথে আসতে হবে। এতে স্বাভাবিকভাবেই পণ্য পরিবহন খরচ বাড়বে। বাংলাদেশের এই খরচটা বাড়বে ব্যাপকহারে। কারণ আমাদের গার্মেন্ট পণ্য সমুদ্রপথে ইউরোপ ও আমেরিকাতে যায় হরমুজ প্রণালি ধরে।’
তেলের দাম বাড়তে পারে
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়ার প্রভাব পড়বে দেশেও। লিটার প্রতি দাম কত টাকা পর্যন্ত বাড়ার শঙ্কা রয়েছে তা তিনি এখনই স্পষ্ট করেননি। বিপিসি চেয়ারম্যান মো. আমিন উল আহসান বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য বিবেচনায় এনে দেশে তেলের দাম সমন্বয় করি আমরা। এ জন্য প্রতি মাসে গড় করে মূল্য নির্ধারণ করে থাকি। এখন যে
হারে দাম বাড়ছে তাতে নতুন দর ঠিক করতে হবে। তবে কত টাকা বাড়বে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।’ বিশ্ব বাণিজ্যের সর্বশেষ তথ্য নিয়ে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে তিনি জানান। ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের জের ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম এরই মধ্যে বেড়েছে। গতকাল পর্যন্ত অপরিশোধিত তেল ব্রেন্ট ক্রুড ফিউচারসের দাম ৯ দশমিক ৭ শতাংশ বা ৬ দশমিক ২৯ ডলার বেড়ে প্রতি ব্যারেলের দাম ৭৫ দশমিক ৬৫ ডলারে উঠেছে। একপর্যায়ে দাম ৭৮ দশমিক ৫০ ডলারে পৌঁছায়। এটি গত ২৭ জানুয়ারির পর সর্বোচ্চ।