ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ১৪ ও ১৫ জুলাই সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের শনাক্তে গঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন নিয়ে অসন্তোষ জানিয়ে ছায়া তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতিতে এক সংবাদ সম্মেলন করে ৩৪ সদস্যের এই ছায়া তদন্ত কমিটির ঘোষণা করা হয়।

শিক্ষার্থীদের তদন্ত কমিটিকে ইতিবাচক হিসেবে উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘তারা যদি এ নিয়ে কাজ করে কিছু তথ্য প্রমাণাদি বের করে, তাহলে তো আমি বলব এটা আমাদের তথ্যানুসন্ধান কমিটির কাজকে সহায়তা করবে।’

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী রেজওয়ান আহম্মেদ রিফাত। তিনি বলেন, ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে হামলার শিকার ও প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে একটি ছায়া তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রধান কাজ হবে জুলাই–আগস্টে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িতদের তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করা। এক মাসের মধ্যে শ্বেতপত্রটি প্রকাশ করা হবে।

এ সময় শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং গণমাধ্যমকর্মীদের উপযুক্ত তথ্য–প্রমাণ দিয়ে হামলাকারীদের তালিকা প্রণয়নে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান রেজওয়ান আহম্মেদ। গুগল ফরম হিসেবে https://forms.

gle/bZgSD8EVo3nTCZru8 এবং তাদের ফেসবুক পেজ বা টেলিগ্রামে তথ্য–প্রমাণ দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। একই সঙ্গে ছায়া তদন্ত কমিটির সঙ্গে কাজ করতে বিভাগভিত্তিক প্রতিনিধি এবং ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ করতে কমিটির যেকোনো সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করার আহ্বান জানান তিনি।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রেজওয়ান আহম্মেদ বলেন, ‘সময় যত যাচ্ছে, তথ্য–প্রমাণ মুছে যাচ্ছে। তাই আমরা একটা শ্বেতপত্র তৈরি করে রেখে দিতে চাই, যেন আগামী প্রজন্ম মনে রাখে যে কারা এই হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল। আমরা এটা পরে প্রশাসনের কাছে জমা দেব। প্রশাসন চাইলে আমাদের রিপোর্ট বিবেচনায় নিয়ে তদন্তে নামতে পারে।’ অনলাইনে উসকানি দেওয়া, ফেসবুক মেসেঞ্জারে হামলার বিষয়ে ইন্ধন দেওয়ার ব্যক্তিদেরও এ তালিকায় রাখা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সর্দার নাদিম মাহমুদ বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হাজারখানের ছাত্রলীগের নেতা–কর্মী হামলা চালান। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটিতে আমরা মাত্র ১২৮ জনের নাম পাই। তাই আমাদের এই উদ্যোগ।’

ছায়া তদন্ত কমিটির সদস্য যাঁরা

রেজওয়ান আহমেদ রিফাত, নাজিমুদ্দিন সাইফ, স্মৃতি আফরোজ সুমি, মিনহাজুল আলী ঈশান, নুরুল ইসলাম, নাহিদ, ঐতিহ্য আনোয়ার ওহী, রওনক জাহান, জাহেদ হোছাইন, রুহুল আমিন রবিন, আবু মিশাল, সর্দার নাদিম মাহমুদ শুভ, আরিফুর রহমান, আহমেদ তানভীর, মো. আরমান হোসেন, মোনতাকিম তালুকদার, মাহমুদ রিদওয়ান, বায়েজিদ হাসান, এ এ এম মোজাহিদ, মো. দেলোয়ার হোসেন, তাপসী রাবেয়া, রাকিব রহমান, মো. মুঈনুজ্জামান, মুসআব আব্দুল্লাহ খন্দকার, মোহাম্মদ তৌফিকুল ইসলাম, মো. পাভেল আহমদ, নাফিসা তাবাসসুম মিথিলা, পারভেজ গাজী, মো. রুবায়েত হাসান রিমন, ইমরান সাদমান, আবু উবাইদা আব্দুল্লাহ খন্দকার, মো. জহির রায়হান, মো. মারুফ হাসান, মো. তরিকুল ইসলাম ও ওমর ফাইয়াজ তামিম।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জওয় ন আহম

এছাড়াও পড়ুন:

চাকরি খেয়ে ফেলব, কারারক্ষীকে কারাবন্দী আ’লীগ নেতা

‘চাকরি খেয়ে ফেলব, দেখে নেব তোমাকে, চেন আমি কে?’ কারবন্দী কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজু (৪৯) মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে ২ কারারক্ষীকে এভাবে হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 

জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে দেখতে যান তার কয়েকজন স্বজন। কারা নিয়মানুযায়ী সাক্ষাৎ কক্ষে বেঁধে দেওয়া সময়ে কথা শেষ করার কথা থাকলেও তিনি তার মানতে রাজি নন। তিনি দীর্ঘ সময় কথা বলতে চাইলে সাক্ষাৎ কক্ষে দায়িত্বরত মহিলা কারারক্ষী পপি রানী কারাবন্দী নেতার স্বজনদের সময়ের মধ্যে কথা শেষ করতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হন আওয়ামী লীগ নেতা সাজু। তখন তিনি বলেন, ‘এই আপনি কে? ডিস্টার্ব করছেন কেন? চিনেন আমাকে? চাকরি খেয়ে ফেলব।’

এ সময় সাক্ষাৎ কক্ষে সাজুর স্বজনরাও পপি রানীর সঙ্গেও আক্রমণাত্মক আচরণ করেন। পপি রানীকে নিরাপদ করতে সুমন নামের আরেকজন কারারক্ষী এগিয়ে এলে তাকে লাথি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন সাজু। উত্তেজনার একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত উপস্থিত হন প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি সাজুর স্বজনদের সাক্ষাৎ কক্ষ থেকে চলে যেতে বলেন। তারাও চলে যাওয়ার সময়ে কারারক্ষীদের গালিগালাজ করেন। 

এ ব্যাপারে কারারক্ষী পপি রানী  বলেন, ‘আমি ডিউটিরত অবস্থায় তিনি আমাকে প্রভাব দেখিয়ে চাকরি খাওয়ার হুমকি দেন ও গালিগালাজ করেন। আমি জেলার স্যারের কাছে বিচার প্রার্থনা করছি।’

প্রত্যক্ষদর্শী কারারক্ষী মো. সুমন বলেন, ‘আমরা তো ছোট পদে চাকরি করি, আমাদের নানান নির্যাতন সহ্য করতে হয়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আর কিছু বলতে পারব না।’

প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সাক্ষাৎ কক্ষের ভেতরে পুলিশ সদস্যকে গালিগালাজ করা হয়। পরে আমি গিয়ে পরিবেশ শান্ত করি।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার এ জি মো. মামুদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। বন্দীরা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলেও আমরা মানবিকতা প্রদর্শন করি। কেউ অতিরিক্ত কিছু করলে জেলের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রংপুর শহরের সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও শিক্ষার্থী আশিক হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ