ছয় দফা দাবিতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কাফনের কাপড় পরে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা। শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) জুমার নামাজের পর থেকে তারা এ কর্মসূচি পালন করেন। 

ঢাকা: ছয় দফা দাবি আদায়ে আজ জুমার নামাজ শেষে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের হল মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে কাফনের কাপড় পরে মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা ‘তুমি কে, আমি কে, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার’, ‘কুমিল্লায় হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

ফরিদপুর: শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক ফলপ্রসূ না হওয়া এবং কুমিল্লায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে আজ দুপুরে কাফনের কাপড় মাথায় বেঁধে গণমিছিল করেছে ফরিদপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। প্রতিষ্ঠানের অডিটোরিয়ামের সামনে জড়ো হয়ে তারা এ কর্মসূচি পালন করেন।

আরো পড়ুন:

কারিগরি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ছাত্রলীগের সমর্থন ‘ঘৃণাভরে’ প্রত্যাখ্যান

কুয়েট ভিসির পদত্যাগ দাবিতে মশাল মিছিল

ফরিদপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের মেকানিক্যাল ডিপার্টমেন্টের সপ্তম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী বুলবুল আহমেদ মাহিম বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের দাবি জানালেও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় আমাদের সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। শিক্ষার পরিবেশ ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। কুমিল্লায় আমাদের সহপাঠীদের ওপর হামলা রাষ্ট্রেরই ব্যর্থতা।”

কম্পিউটার ডিপার্টমেন্টের পঞ্চম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী নাফিজুল রোহান বলেন, ‍“আমরা কাফন পরেছি এই বার্তা দিতে যে, যদি আমাদের ন্যায্য দাবি না মানা হয়, তবে আমরা মৃত্যু পর্যন্ত লড়াই করতে প্রস্তুত। সরকারকে অবিলম্বে আমাদের দাবিগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে।”

ইলেকট্রিক্যাল ডিপার্টমেন্টের তৃতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী লামীম ইসলাম বলেন, “আমরা কোনো রাজনৈতিক দলের অংশ নই, আমরা শুধু আমাদের অধিকার চাই। শিক্ষা মন্ত্রণালয় যদি আমাদের সমস্যা সমাধানে আন্তরিক না হয়, তাহলে আন্দোলন আরো তীব্র হবে।”

ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ওসি আসাদুজ্জামান বলেন, "জুমার নামাজের আগে থেকেই আমরা ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অবস্থান করছিলাম, যাতে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি না হয়। শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে তাদের কর্মসূচি পালন করেছেন। কোনো ধরনের উত্তেজনাকর ঘটনা ঘটেনি।”

রংপুর: একই দাবিতে দুপুরে কাফনের কাপড় মাথায় বেঁধে শিক্ষার্থীরা রংপুর পলিটেকনিক ক্যাম্পাসে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে তারা সেখান থেকে একটি গণমিছিল বের করেন। মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে পুনরায় ক্যাম্পাসে ফিরে আসে। এসময় সেখানে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
 
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন দাবি নিয়ে আন্দোলন করা হলেও কর্তৃপক্ষ তাদের কথা শুনছে না। তাই বাধ্য হয়ে এবার তারা প্রতীকী ‘কাফনের কাপড়’ পরে মাঠে নেমেছেন। অতি দ্রুত দাবি আদায় না হলে সামনে আরো কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন শিক্ষার্থীরা।

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সপ্তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হাফিজুর রহমান, ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের সাব্বির হোসেন ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২১ শিক্ষাবর্ষের ফুয়াদ। 

গোপালগঞ্জ: শুক্রবার জুমার নামাজের পর বেলা ৩টার দিকে গোপালগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সামনে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। তারা মাথায় কাফনের কাপড় পরে বিক্ষোভ মিছিল করেন। মিছিলটি বিভিন্ন সড়ক ঘুরে সদর উপজেলার চন্দ্রদিঘলীয়া এলাকায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে গিয়ে শেষ হয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে ক্যাম্পাসে ফেরত পাঠায়।

এর আগে, সমাবেশে শিক্ষার্থীরা জানান, সরকারকে বলব, তারা যেনে দাবিগুলো দ্রুত মেনে নেয়, তাহলে শিক্ষার্থীরা রাজপথ ছেড়ে দেব। কারিগরি শিক্ষা সেক্টরে যে বৈষম্য আছে, শিক্ষার্থীরা চায় সরকার যেন তা দূর করে। তা না হলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- শিক্ষার্থী মো.

ফয়সাল, মো. রাব্বি, মো. ফজলে রাব্বি বাঁধন ও মো. মোস্তাকিন মিয়া।

নরসিংদী: কুমিল্লায় পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ও ছয় দফা দাবি আদায়ে মিছিল করেছে নরসিংদীর সরকারি-বেসরকারি সব পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থীরা।

শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে বিক্ষোভ মিছিলটি নরসিংদী সরকারি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট থেকে শুরু হয়। সেটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে সাহেপ্রতাপে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা জানান, বাংলাদেশ কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে একাত্বতা পোষণ করে তারা ছয় দফা দাবি জানিয়ে আসছেন। তাদের দাবি মেনে নিতে কর্তৃপক্ষ ব্যর্থ হলে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তারা।

ফেনী: জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে অষ্টম শ্রেণি বা এসএসসি পাস ‘ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের’ পদোন্নতির প্রতিবাদে কাফনের কাপড় মাথায় বিক্ষোভ মিছিল করেছেন ফেনী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। প্রতিষ্ঠানটির জামে মসজিদের সামনে থেকে বের হওয়া মিছিলটি শহরের সদর হাসপাতাল মোড়সহ বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে ‘জুলাই ২৪ শহীদ স্মৃতি চত্বরে’ গিয়ে সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা।

ফেনী পলিটেকনিকের শিক্ষার্থী রাতুল বলেন, ‘আমরা ৬ দফা দাবি নিয়ে আন্দোলন করছি অনেকদিন। সরকার বলেছে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা হবে। কিন্তু কাল যে বৈঠক ডাকা হয়েছিল, সেখানে কেউই ছিল না। তাহলে আমাদের যৌক্তিক দাবি মানতে গড়িমসি কেন?’

শিক্ষার্থী সানি বলেন, ‍“ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের বেশির ভাগই অষ্টম শ্রেণি বা এসএসসি পাস। তাদের পক্ষে ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দেওয়া সম্ভব নয়।’

এই প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদক ও জেলা প্রতিনিধিরা।

ঢাকা/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম ছ ল কর ছ কর ছ ন আম দ র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

এসএসসিতে অনুপস্থিতির বড় কারণ বাল্যবিবাহ

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীন এ বছরের এসএসসি পরীক্ষায় ছয় হাজারের বেশি পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। তাদের মধ্য থেকে পাওয়া ১ হাজার ২০৩ জনের তথ্য বলছে, প্রায় ৪০ শতাংশের (৪৮১) বিয়ে হয়ে গেছে।

বিয়ে হওয়ার এ হার মেয়ে ও ছেলে মিলিয়ে। এ ছাড়া ৭ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল পারিবারিক অসচ্ছলতার জন্য কর্মক্ষেত্রে যোগ দেওয়ার কারণে। বাকিরা অসুস্থতা, প্রস্তুতি ভালো না থাকাসহ নানা কারণে পরীক্ষায় অংশ নেয়নি।

উদ্বেগের বিষয় হলো অনুপস্থিত ওই সব পরীক্ষার্থীর মধ্যে যাদের তথ্য পাওয়া গেছে, তাদের প্রায় ৫১ শতাংশ আর পড়াশোনা করবে না। বাকিরা বলেছে, পরবর্তী বছরে পরীক্ষা দেবে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ তাদের অধীন বিদ্যালয়গুলো থেকে এসব তথ্য পেয়েছে। এখন এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হবে।

সারা দেশে এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ফরম পূরণ করা পরীক্ষার্থীর সংখ্যা গতবারের চেয়ে প্রায় এক লাখ কম ছিল। বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে এবারই সবচেয়ে কম ছাত্রছাত্রী পরীক্ষা দিয়েছে।

বিয়ে হওয়ার এ হার মেয়ে ও ছেলে মিলিয়ে। এ ছাড়া ৭ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল পারিবারিক অসচ্ছলতার জন্য কর্মক্ষেত্রে যোগ দেওয়ার কারণে। বাকিরা অসুস্থতা, প্রস্তুতি ভালো না থাকাসহ নানা কারণে পরীক্ষায় অংশ নেয়নি।

আবার এবার পরীক্ষার ফরম পূরণ করে অংশ না নেওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও ছিল অন্যান্যবারের তুলনায় বেশি। ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীন এসব পরীক্ষার প্রথম দিনেই অনুপস্থিত ছিল ২৬ হাজার ৯২৮ পরীক্ষার্থী। অথচ গত বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় প্রথম দিনে অনুপস্থিত ছিল ১৯ হাজার ৩৫৯ পরীক্ষার্থী।

প্রতিবছরই শিক্ষার্থীরা অনুপস্থিত থাকে, কিন্তু কারণ জানা হয় না। এ জন্য বিশেষজ্ঞরা অনুপস্থিতির প্রকৃত কারণ বের করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে নিজেদের বোর্ডের অধীন পরীক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির কারণ অনুসন্ধানের উদ্যোগ নেয় ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড। এ জন্য অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীদের তথ্য নির্ধারিত গুগল ফরমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়। অনুপস্থিতির কারণ জানার জন্য পরীক্ষার্থী বা অভিভাবকের সঙ্গে সশরীর বা মুঠোফোনে যোগাযোগ করে তথ্য সংগ্রহ করা এবং কোন কোন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত, তা জানার জন্য সংশ্লিষ্ট কেন্দ্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে নির্দেশ দিয়েছিল ঢাকা বোর্ড।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এবার তাদের বোর্ডের অধীন ৬ হাজার ৩৮৯ পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। তাদের সবার তথ্য জানা যায়নি। ১ হাজার ২০৩ পরীক্ষার্থীর অনুপস্থিতির কারণসহ তথ্য পেয়েছে ঢাকা বোর্ড। তার ভিত্তিতে একটি খসড়া প্রতিবেদন করা হয়েছে। এসব পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ফরম পূরণ করেও পরীক্ষা দেয়নি।

দেশে সাধারণত মেয়েরা বাল্যবিবাহের শিকার হয়। অনেক ক্ষেত্রে বাল্যবিবাহের শিকার মেয়েদের পড়াশোনা বাদ দিতে হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা দেখেছেন, অনুপস্থিত মেয়ে পরীক্ষার্থীদের পাশাপাশি কিছু ছেলেরও বিয়ে হয়েছে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, খসড়া প্রতিবেদন অনুযায়ী তথ্য পাওয়া ১ হাজার ২০৩ জন অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশই ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের। ২৩ শতাংশ মানবিক বিভাগের ও ১৭ শতাংশ বিজ্ঞান বিভাগের। সাধারণত বিদ্যালয়গুলোয় পড়াশোনায় তুলনামূলকভাবে এগিয়ে থাকা শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান বিভাগে পড়ে। প্রাপ্ত তথ্য বলছে, এ বিভাগের শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির হার কম।

অনুপস্থিত থাকাদের মধ্যে নিয়মিত পরীক্ষার্থী প্রায় ৭০ শতাংশ। বাকি ৩০ শতাংশ অনিয়মিত পরীক্ষার্থী। উল্লেখ্য, আগের বছর অকৃতকার্য বা দু–এককটি বিষয়ে অকৃতকার্য হয়ে যারা এবার পরীক্ষা দিয়েছে, তাদের অনিয়মিত পরীক্ষার্থী বলা হয়।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এবার তাদের বোর্ডের অধীন ৬ হাজার ৩৮৯ পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। তাদের সবার তথ্য জানা যায়নি। ১ হাজার ২০৩ পরীক্ষার্থীর অনুপস্থিতির কারণসহ তথ্য পেয়েছে ঢাকা বোর্ড।

ঢাকা বোর্ডের তথ্য বলছে, গ্রাম এলাকার শিক্ষার্থীরাই বেশি অনুপস্থিত থাকে। তথ্য প্রাপ্ত ১ হাজার ২০৩ জনের মধ্যে ৭৬ শতাংশের বেশি গ্রাম এলাকার শিক্ষার্থী। প্রায় ২৪ শতাংশ শহর এলাকার। সমতল এলাকায় মোট পরীক্ষার্থী বেশি হওয়ায় অনুপস্থিতিও সেখানে বেশি।

জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা যেসব তথ্য পেয়েছেন, সেগুলো প্রতিবেদন আকারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন, যাতে পরবর্তী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া যায়।

যেসব কারণে অনুপস্থিতি

যেসব কারণে পরীক্ষার্থীরা অনুপস্থিত ছিল, সেগুলোও জানার চেষ্টা করেছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীদের মধ্যে যাদের তথ্য পাওয়া গেছে (১ হাজার ২০৩ জন), তাদের প্রায় ৪০ শতাংশের বিয়ে হয়েছে।

দেশে সাধারণত মেয়েরা বাল্যবিবাহের শিকার হয়। অনেক ক্ষেত্রে বাল্যবিবাহের শিকার মেয়েদের পড়াশোনা বাদ দিতে হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা দেখেছেন, অনুপস্থিত মেয়ে পরীক্ষার্থীদের পাশাপাশি কিছু ছেলেরও বিয়ে হয়েছে। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীদের মধ্যে কতজন মেয়ে এবং কতজন ছেলে, তা উল্লেখ করা হবে।

প্রাপ্ত তথ্য বলছে, ২১ জন (প্রায় ২ শতাংশ) মেয়ে পরীক্ষার্থী গর্ভধারণের কারণে পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিল।

আইনানুযায়ী, বাংলাদেশে মেয়েদের ১৮ বছর ও ছেলেদের ২১ বছরের নিচে বিয়ে হলে সেটিকে বাল্যবিবাহ বলা হয়। এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বয়স সাধারণত ১৮ বছরের নিচে হয়। অবশ্য ব্যতিক্রমও আছে।

নিজের অসুস্থতার জন্য ২৪ শতাংশের (১ হাজার ২০৩ জনের মধ্যে) বেশি পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। আর প্রস্তুতি ভালো না থাকার কারণে অনুপস্থিত ছিল ১১ শতাংশের বেশি। দারিদ্র্যের কারণও উঠে এসেছে এ তথ্যে। ৭ দশমিক ৩২ শতাংশ শিক্ষার্থী পারিবারিক অসচ্ছলতার জন্য কর্মক্ষেত্রে যোগ দিয়েছে। অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ১৭ জন মারা গেছেন। এ ছাড়া পরিবারের কোনো সদস্যের অসুস্থতা, মৃত্যুসহ অন্যান্য কারণে বাকিরা অনুপস্থিত ছিল।

এবার যারা এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে, তারা ২০২০ সালে যখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল, সেই বছরই দেশে করোনার সংক্রমণ শুরু হয়। এর প্রভাবে একবার টানা দেড় বছর এবং পরে আবারও কয়েক মাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। সেই ক্ষতির রেশ দীর্ঘ মেয়াদে পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। করোনার প্রভাবের কারণে অনেকেই বিভিন্ন স্তরে ঝরে পড়েছে। এসবের পাশাপাশি বাল্যবিবাহ, শিশুশ্রমসহ একাধিক কারণের কথা বলে আসছিলেন বিশেষজ্ঞরা। এখন অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীদের মধ্যে যাদের তথ্য পাওয়া গেছে, তাদের বড় অংশেরই বিয়ে হয়ে যাওয়ার তথ্য পেল ঢাকা শিক্ষা বোর্ড।

প্রথমত, সরকারি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে অনুপস্থিতির কারণ জানার প্রয়াসকে সাধুবাদ জানাই। কারণগুলো চিহ্নিত করতে পারলে ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হয়।সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী‘সরকারকেই বেশি উদ্যোগী হতে হবে’

বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ একটি বড় সমস্যা। আফ্রিকার কয়েকটি দেশ ছাড়া বিশ্বের আর কোথাও বাংলাদেশের মতো এত বেশি বাল্যবিবাহ নেই।

জাতিসংঘের জনসংখ্যাবিষয়ক সংস্থা ইউএনএফপিএর বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, দেশের ৫১ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে ১৮ বছর হওয়ার আগেই। আবার ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী এক হাজার মেয়ের মধ্যে ৭১ জন এক বা একাধিক সন্তানের মা। গত মঙ্গলবার ইউএনএফপিএর বৈশ্বিক জনসংখ্যা পরিস্থিতি ২০২৫–বিষয়ক এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

এবার যারা এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে, তারা ২০২০ সালে যখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল, সেই বছরই দেশে করোনার সংক্রমণ শুরু হয়। এর প্রভাবে একবার টানা দেড় বছর এবং পরে আবারও কয়েক মাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। সেই ক্ষতির রেশ দীর্ঘ মেয়াদে পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রথমত, সরকারি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে অনুপস্থিতির কারণ জানার প্রয়াসকে সাধুবাদ জানাই। কারণগুলো চিহ্নিত করতে পারলে ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হয়।’ তিনি বলেন, বাল্যবিবাহের পেছনে অসচ্ছলতা একটি বড় কারণ। এখনো দেখা যায়, অনেক অভিভাবক মেয়েদের জন্য বেশি ব্যয় করার চেয়ে ছেলে সন্তানের পেছনে ব্যয় করাকে বেশি প্রাধান্য দেন। আবার নিরাপত্তাহীনতাও মেয়েদের বাল্যবিবাহের একটি অন্যতম কারণ।

বাল্যবিবাহ রোধে সরকারকেই বেশি উদ্যোগী হতে হবে উল্লেখ করে রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, এ জন্য বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। আন্তমন্ত্রণালয় সভা করে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে বেসরকারি সংস্থাগুলোকেও কাজে লাগানো যেতে পারে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এসএসসিতে অনুপস্থিতির বড় কারণ বাল্যবিবাহ