আবারও ২০০ কোটি টাকার মুনাফার ঘরে আইডিএলসি ফাইন্যান্স
Published: 18th, April 2025 GMT
ঋণের ও সরকারি ট্রেজারি বিল-বন্ডের উচ্চ সুদের কল্যাণে আবারও ২০০ কোটি টাকার মুনাফার ঘরে ফিরেছে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইডিএলসি ফাইন্যান্স। ২০২১ সালের পর কোম্পানিটির মুনাফা আবারও দ্বিশতকের ঘর ছাড়াল। গত বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় গত বছরের আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন করা হয়। তাতে মুনাফার এই তথ্য পাওয়া গেছে।
আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, এক বছরের ব্যবধানে আইডিএলসি ফাইন্যান্সের মুনাফা ৪৯ কোটি টাকা বা প্রায় সাড়ে ৩২ শতাংশ বেড়েছে। ২০২৩ সালে কোম্পানিটি সব ধরনের খরচ বাদ দেওয়ার পর মুনাফা করেছিল ১৫১ কোটি টাকা। ২০২২ সালে যার পরিমাণ ছিল ১৯১ কোটি টাকা। আর ২০২১ সালে আইডিএলসি ২১২ কোটি টাকা মুনাফা করেছিল।
ভালো মুনাফা করায় ২০২৩ সালের চেয়ে ২০২৪ সালের জন্য শেয়ারধারীদের বেশি লভ্যাংশ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে কোম্পানিটি। গত বছরের জন্য কোম্পানিটি ২০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। যার মধ্যে ১৫ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ বোনাস। ২০২৩ সালে কোম্পানিটি শেয়ারধারীদের ১৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। এদিকে ২০২৪ সালের জন্য ১৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিতে কোম্পানিটির খরচ হবে ৬২ কোটি ৩৫ লাখ টাকার বেশি। যার মধ্যে কোম্পানিটির উদ্যোক্তা-পরিচালকেরা পাবেন ৩৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকা, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা পাবেন ১৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকা আর ব্যক্তিশ্রেণির সাধারণ বিনিয়োগকারীরা পাবেন ৯ কোটি ২৬ লাখ টাকা।
আইডিএলসির গত বছরের মুনাফা বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে প্রতিষ্ঠানটির বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত আয়। সরকারি ট্রেজারি বিল-বন্ডসহ অন্যান্য খাতের বিনিয়োগ থেকে প্রতিষ্ঠানটি গত বছর আয় করেছে ১৪৩ কোটি টাকা। ২০২৩ সালে এই খাত থেকে প্রতিষ্ঠানটির আয় ছিল ২৯ কোটি টাকা। সেই হিসাবে সুদ আয়ের বাইরে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ থেকে প্রতিষ্ঠানটির আয় আগের বছরের চেয়ে ১১৪ কোটি টাকা বা প্রায় ৪০০ শতাংশ বেড়েছে। সাধারণত বিনিয়োগ থেকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যে আয় করে, তার বিপরীতে খরচ তুলনামূলক কম। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মূল ব্যবসা ঋণের সুদ আয়। গ্রাহকের কাছ থেকে আমানত নিয়ে কিছুটা বাড়তি সুদে তা ঋণ হিসেবে বিতরণ করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। এ জন্য আমানতের সুদ বাবদ প্রতিষ্ঠানগুলোকে বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় করতে হয়। সেই তুলনায় বিনিয়োগ আয়ের বিপরীতে খরচ অনেক কম।
গত বছর ঋণের সুদ যেমন বাড়তি ছিল, তেমনি সরকারি ট্রেজারি বিল-বন্ডের সুদও ছিল বেশি। তাতে সুদ ও বিনিয়োগ আয়ে বাড়তি সুদের সুফল পেয়েছে আইডিএলসি। গত বছর কোম্পানিটি ঋণের সুদ বাবদ আয় করেছে ১ হাজার ৪৭৮ কোটি টাকা। ২০২৩ সালে কোম্পানিটির এই বাবদ আয় ছিল ১ হাজার ২৫৫ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে আইডিএলসির সুদ বাবদ আয় ২২৩ কোটি টাকা বা প্রায় ১৮ শতাংশ বেড়েছে।
ঋণের সুদ বাবদ আয় যতটা বেড়েছে, তার চেয়ে বেশি বেড়েছে আমানতের সুদ বাবদ ব্যয়। গত বছর আমানতের সুদ বাবদ ব্যয় হয়েছে ৯৯৭ কোটি টাকা। ২০২৩ সালে এই বাবদ কোম্পানিটির খরচ করেছিল ৭৫৬ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে আমানতের সুদ বাবদ ব্যয় বেড়েছে ২৪১ কোটি টাকা বা প্রায় ৩২ শতাংশ। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণ গ্রাহকের পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠান থেকেও বেশি সুদে আমানত সংগ্রহ করে থাকে। এ কারণে ব্যাংকের তুলনায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানতের সুদ বাবদ ব্যয় বেশি।
গত বছর দেশে ঋণের চাহিদা কম ছিল। এ কারণে অতিরিক্ত তারল্যের একটি বড় অংশ সরকারি ট্রেজারি বিল-বন্ডে বিনিয়োগ করেছি। আবার মন্দ ঋণ বা খেলাপি ঋণ ব্যবস্থাপনায়ও আমরা খুব ভালো করেছিসৈয়দ জাভেদ নুর, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক,আইডিএলসিআর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর কোম্পানিটির প্রকৃত সুদ আয় আগের বছরের চেয়ে কমেছে। গত বছর প্রকৃত সুদ আয় দাঁড়িয়েছে ৪৮১ কোটি টাকা। ২০২৩ সালে যার পরিমাণ ছিল ৪৯৯ কোটি টাকা। ঋণের সুদ আয় থেকে আমানতের সুদ বাদ দেওয়ার পর যে আয় হয়, সেটিই প্রকৃত সুদ আয় হিসেবে বিবেচিত হয়। প্রকৃত সুদ আয় কমলেও কোম্পানিটির পরিচালন আয় আগের বছরের চেয়ে ৯১ কোটি টাকা বা ১৪ শতাংশের বেশি বেড়েছে। গত বছর আইডিএলসির পরিচালন আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২৬ কোটি টাকায়। ২০২৩ সালে যার পরিমাণ ছিল ৬৩৫ কোটি টাকা।
গত বছর ভালো মুনাফা করার কয়েকটি কারণের কথা জানালেন আইডিএলসি ফাইন্যান্সের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ জাভেদ নুর। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত বছর দেশে ঋণের চাহিদা কম ছিল। এ কারণে অতিরিক্ত তারল্যের একটি বড় অংশ সরকারি ট্রেজারি বিল-বন্ডে বিনিয়োগ করেছি। বিল-বন্ডের সুদ হারও ছিল বেশি, তাই সেখান থেকে আমরা ভালো আয় করেছি। আবার মন্দ ঋণ বা খেলাপি ঋণ ব্যবস্থাপনায়ও আমরা খুব ভালো করেছি। গত বছর আমাদের ঋণ খুব বেশি বাড়েনি। কিন্তু খেলাপি ঋণ আমরা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কমিয়েছি। ফলে নিরাপত্তা সঞ্চিতির পরিমাণও কমেছে। আবার দক্ষতার সঙ্গে আমরা পোর্টফোলিও ব্যবস্থাপনা করেছি। সব মিলিয়ে তাই বছর শেষে আমাদের মুনাফা ৩২ শতাংশের বেশি বেড়েছে।’
আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর আইডিএলসি নিরাপত্তা সঞ্চিতি বাবদ সংরক্ষণ করেছে ৭০ কোটি টাকা। ২০২৩ সালে যার পরিমাণ ছিল ৯৮ কোটি টাকার বেশি। সেই হিসাবে নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ বাবদ সাশ্রয় হয়েছে ২৮ কোটি টাকা।
আইডিএলসি ১৯৯২ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত একটি কোম্পানি। ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এটির যাত্রা শুরু হয় ১৯৮৫ সালে। সেই হিসাবে এটি ৪০ বছরের পুরোনো একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ৪১৫ কোটি টাকা। শেয়ারবাজারে এটি ভালো মৌলভিত্তির কোম্পানি হিসেবে ‘এ’ শ্রেণিভুক্ত। গত বৃহস্পতিবার দিন শেষে এটির শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ৩০ টাকা ৫০ পয়সা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য র পর ম ণ ছ ল ফ ইন য ন স ২০২৩ স ল আইড এলস ঋণ র স দ ব ল বন ড গত বছর সরক র বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
খালেদা জিয়াকে নিয়ে বিএনপির নির্বাচনী যাত্রা শুরু
সব জল্পনার অবসান হলো—বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্বাচন করছেন। তিনি ফেনী-১, বগুড়া-৭ ও দিনাজপুর-৩ আসনে প্রার্থী হবেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচন করবেন।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সোমবার বিএনপি ২৩৭ আসনে মনোনীত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। তাতে দলের দুই শীর্ষ নেতার নির্বাচন করা এবং তাঁদের নির্বাচনী আসনগুলো নিশ্চিত করা হয়। এ ছাড়া দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঠাকুরগাঁও-১ আসনে নির্বাচন করবেন।
তারেক রহমান বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচন করবেন, অনেক আগে থেকেই এমন আলোচনা আছে। তবে অসুস্থতার কারণে এবার খালেদা জিয়ার নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংশয় ছিল। আবার তাঁর নিজেরও নির্বাচন করার ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহ ছিল না।
দলীয় সূত্র বলছে, নির্বাচন ঘিরে নানামুখী শঙ্কা, বিশেষ করে ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়াকে নির্বাচনে নেতৃত্ব দিতে রাজি করানো হয়। শেষ পর্যন্ত তাঁর প্রার্থী হওয়ার ঘোষণায় নেতা-কর্মীরা আনন্দিত।
স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, সেলিমা রহমান ও নজরুল ইসলাম খান এবার নির্বাচন করছেন না। তবে বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা জমির উদ্দিন সরকারের পঞ্চগড়-১ আসনে তাঁর ছেলে মোহাম্মদ নওশাদ জমিরকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা মনে করছেন, নানা কারণে আসন্ন নির্বাচন বিএনপির জন্য খুব স্বস্তিদায়ক না-ও হতে পারে। খালেদা জিয়াকে নির্বাচন করতে রাজি করানোর মধ্য দিয়ে সার্বিকভাবে নির্বাচনের গুরুত্বটা আরও বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি নির্বাচন নিয়ে নতুন কোনো জটিলতার উদ্ভব হলে, সেটা মোকাবিলায়ও তাঁর ভোটে অংশগ্রহণ পরিস্থিতির ওপর একটা প্রভাব ফেলবে।
জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে সোমবার ২৩৭ আসনে মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়। বাকি ৬৩টি আসনে প্রার্থিতা পরে ঘোষণা করা হবে।
বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, স্থগিত রাখা কিছু আসনে প্রার্থিতা নিয়ে অভ্যন্তরীণ সমস্যা আছে। আর কিছু আসন জোট ও সমমনা দলগুলোর প্রার্থীদের জন্য রাখা হয়েছে, যাদের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা হতে পারে।
ঘোষিত তালিকা অনুযায়ী, বিএনপির চেয়ারপারসন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির ১২ জন সদস্য নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন। অন্যরা হলেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন (কুমিল্লা-১), মির্জা আব্বাস উদ্দিন আহমেদ (ঢাকা-৮), গয়েশ্বর চন্দ্র রায় (ঢাকা-৩), আবদুল মঈন খান (নরসিংদী-২), আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১০), ইকবাল হাসান মাহমুদ (সিরাজগঞ্জ-২), সালাহউদ্দিন আহমদ (কক্সবাজার-১), হাফিজ উদ্দিন আহমদ (ভোলা-৩) এবং এ জেড এম জাহিদ হোসেন (দিনাজপুর-১)।
স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, সেলিমা রহমান ও নজরুল ইসলাম খান এবার নির্বাচন করছেন না। তবে বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা জমির উদ্দিন সরকারের পঞ্চগড়-১ আসনে তাঁর ছেলে মোহাম্মদ নওশাদ জমিরকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২৩৭ আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। তবে তিনি বলেছেন, এটি প্রাথমিক তালিকা। প্রয়োজন বোধ করলে স্থায়ী কমিটি প্রার্থিতা পরিবর্তন করতে পারবে।
সোমবার বিকেল পাঁচটার দিকে প্রার্থী ঘোষণার আগে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে তারেক রহমানের সভাপতিত্বে দলের স্থায়ী কমিটির জরুরি সভা হয়। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে প্রায় পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী সভা হয়। সেখানে জুলাই সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন নিয়ে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে করণীয় নিয়েও আলোচনা হয়। পরে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। এ সময় বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকেরাও উপস্থিত ছিলেন।
এবারের প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু। তাঁকে ফেনী-৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।
আবদুল আউয়াল মিন্টু প্রথম আলোকে বলেন, ‘জীবনে প্রথম সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছি। দল আমার ওপর আস্থা রেখেছে, সে আস্থা রাখার জন্য ধন্যবাদ। আমি আগামীকাল (আজ মঙ্গলবার) ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) সঙ্গে দেখা করব, সালাম জানাব।’
যে কারণে ঢাকার সাতটি আসন ফাঁকাঢাকার ২০টি আসনের মধ্যে ১৩টিতে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি সাতটি আসন ফাঁকা রাখা হয়েছে। নেতা-কর্মীরা বলছেন, ঢাকায় প্রার্থিতা নিয়ে মারাত্মক পর্যায়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দল নেই। তাঁদের ধারণা, নির্বাচনী সমঝোতার জন্য আসনগুলোতে প্রার্থিতা স্থগিত রাখা হয়েছে।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সাতটি আসনের মধ্যে জাতীয় নাগরিক পাটির (এনসিপি) সঙ্গে সমঝোতা হলে তাদের জন্য অন্তত তিনটি আসন ছাড় দেওয়া হতে পারে। এ তালিকায় গণতন্ত্র মঞ্চ, বিজেপি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নামও আছে।
তবে এনসিপির নেতারা যেসব আসনে নির্বাচন করতে চান বলে আলোচনা আছে, সে আসনগুলোর একটি (ঢাকা-৯) ছাড়া বাকিগুলোতে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম (ঢাকা-১১), সদস্যসচিব আখতার হোসেন (রংপুর-৪), জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা (ঢাকা-৯), দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ (কুমিল্লা-৪), উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম (পঞ্চগড়-১) ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদের (নোয়াখালী-৬) স্ব স্ব আসনে তাঁদের কমবেশি তৎপরতা আছে।
ঢাকা-৯ আসন স্থগিত রাখা হলেও সেটা কার জন্য, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে সেখানে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবীব উন নবী খানকে (সোহেল) প্রার্থী করা হতে পারে বলে দলে আলোচনা আছে।
ঢাকা-১৪: মায়ের ডাক-এর সানজিদাঢাকা-১৪ আসনে এবার প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ পড়লেন এস এ খালেকের ছেলে এস এ সিদ্দিক (সাজু)। সেখানে গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের ব্যক্তিদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’-এর সংগঠক সানজিদা ইসলামকে (তুলি) প্রার্থী মনোনীত করেছে বিএনপি। এই আসনে ইতিমধ্যে জামায়াত প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুমের শিকার মীর আহমদ বিন কাসেমকে (আরমান)। তিনি আট বছর গুম ছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর গোপন বন্দিশালা ‘আয়নাঘর’ থেকে মুক্তি পান।
সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। ডিসেম্বরের শুরুর দিকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই বিএনপি জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। এ লক্ষ্যে দলটি অভ্যন্তরীণ জরিপসহ সাংগঠনিক উপায়ে প্রার্থী বাছাই সম্পন্ন করেছে। সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁদের নাম প্রকাশ করে নির্বাচনের পথে যাত্রা শুরু করল বিএনপি।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ বিগত ১৫-২০ বছর ভোট দিতে পারেনি। এখন জাতি উৎসাহিত হচ্ছে ভোটের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে। তিনি বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা, সেটি পূরণ করার লক্ষ্যে বিএনপি প্রার্থী মনোনয়ন ঘোষণা করে একটা বড় পদক্ষেপ নিল। ইতিমধ্যে অনেকে মাঠে চলে গেছেন, এ ঘোষণার পর বাকিরাও মাঠে যাবেন। এর মাধ্যমে ভোটের একটা উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হবে।
১০ নারী প্রার্থীঘোষিত ২৩৭ আসনের প্রার্থী তালিকায় নারী রয়েছেন দশজন। এর মধ্যে অন্যতম বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বাকিরা হলেন সিলেট-২ আসনে তাহসিনা রুশদীর, ফরিদপুর-২ আসনে শামা ওবায়েদ ইসলাম, ফরিদপুর-৩ আসনে নায়াব ইউসুফ আহমেদ, মানিকগঞ্জ-৩ আসনে আফরোজা খান রিতা, শেরপুর-১ আসনে সানসিলা জেবরিন, ঝালকাঠি-২ আসনে ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টো, যশোর–২ আসনে সাবিরা সুলতানা, ঢাকা-১৪ আসনে সানজিদা ইসলাম ও নাটোর-১ আসনে ফারজানা শারমিন।
মনোনয়ন না পেয়ে দুই মহাসড়ক অবরোধমাদারীপুর-১ আসনে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করে কামাল জামান মোল্লাকে। এর প্রতিবাদে আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী সাজ্জাদ হোসেন লাভলু সিদ্দিকীর অনুসারীরা রাত আটটার দিকে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন।
চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীকে মনোনয়ন না দেওয়ায় তাঁর অনুসারীরা সন্ধ্যায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।