চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকা পাঁচ হাজার বন্দির দুই বেলা খাবারের উচ্ছিষ্ট ফেলা হয় নালানর্দমায়। সেই উচ্ছিষ্ট খায় ইঁদুরের পাল। এ খাবার খেয়ে দৈত্যাকার হয়ে উঠছে একেকটি ইঁদুর। সাধারণ ইঁদুর থেকে কয়েক গুণ বড় হওয়ায় এদের কারাগারের সবাই ডাকে ‘ডাকু ইঁদুর’। কারাগারের ছয়টি ভবনের নিচতলায় থাকা ১২টি ওয়ার্ডে এসব ইঁদুর দিনে-রাতে হানা দিয়ে বন্দিদের কামড়ে দেয়। অনেক সময় ঘুমন্ত বন্দির শরীরেও উঠে যায়। ওয়ার্ডের শৌচাগারেও ইঁদুরের যন্ত্রণা থেকে নিস্তার নেই, কমোডের ভেতরেও করে কিলবিল। এসব ইঁদুরের আতঙ্কে ঘুম হারাম সাড়ে ৫০০ বন্দির। 
যদিও গেল ছয় মাসে কারাগারের ভেতরে মেরে ফেলা হয়েছে সহস্রাধিক ইঁদুর। তবু ইঁদুরের উৎপাত থামছে না। বন্দিদের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা মাথায় রেখে কীটনাশক ও ওষুধ ছিটিয়েও ইঁদুর মারতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। 

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো.

ইকবাল হোসেন বলেন, ইঁদুরের উৎপাতে বন্দিরা অতিষ্ঠ হওয়ার অভিযোগ পেয়ে ছয়টি ফাঁদযন্ত্র কিনে প্রতিদিনই ইঁদুর মেরেছি। কারা অভ্যন্তরে বিশাল বিশাল গর্ত করে তাতে লুকিয়ে থাকা অবস্থায় গরম পানি দিয়েও বহু ইঁদুর নিধন করা হয়েছে। আগে উৎপাত থাকলেও, এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
কারাগারের জেলার মাসুদ হাসান জুয়েল বলেন, নালানর্দমার উচ্ছিষ্ট খাবার খেয়ে দ্রুত ইঁদুরের বংশ বৃদ্ধি হচ্ছে। দেড় থেকে দুই হাজার মারার পরও ইঁদুরের সংখ্যা কমছে না। বন্দিদের স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তার কারণে ওষুধ ও কীটনাশক দিয়েও ইঁদুর মারতে পারছি না। বন্দি ভবনের নিচতলায় ইঁদুরের উৎপাত এখন নিয়ন্ত্রণে এসেছে।  
মো. কাদের নামে সদ্য জামিনে মুক্ত এক আসামি বলেন, ‘আমি যমুনা ভবনের নিচতলার ওয়ার্ডে প্রায় দুই মাস ছিলাম। সেখানে ইঁদুরের অত্যাচারে রাতে ঘুমাতে ভয় পেতাম। বাথরুমেও ঠিকমতো প্রাকৃতিক কাজ করতে পারতাম না।’ 

গত রোববার আদালতে হাজিরা দিতে আসা বন্দি রমজান বলেন, ‘মেঘনা ভবনের নিচতলার একটি ওয়ার্ডে আমি থাকি। সেখানেও আগে ইঁদুরের উৎপাত ছিল। কারা কর্তৃপক্ষ নিয়মিত ইদুর না মারলে এ অত্যাচার বন্ধ হবে না।’
চট্টগ্রাম কারাগারে পাঁচতলা ছয়টি বন্দি ভবন রয়েছে। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, কর্ণফুলী, সাংগু ও হালদা ভবনের নিচতলায় দুটি করে ওয়ার্ড রয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে ৪০ থেকে ৫০ বন্দি থাকেন। সে হিসাবে ছয়টি ভবনের নিচের ১২ ওয়ার্ডে সাড়ে ৫০০ বন্দি বাস করেন। আর এই ১২টি ওয়ার্ডেই সবচেয়ে বেশি উৎপাত করছে ডাকু ইঁদুর। পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে প্রতিটি বন্দি ভবনের সঙ্গে সরাসরি বড় বড় নালার সংযোগ রয়েছে। তাই সহজেই নালা ও পাইপের মাধ্যমে ইঁদুর বন্দি ভবনের নিচতলায় পৌঁছে যায়। আবার নালা থেকে মাটিতে উঠেও এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলাফেরা করে। কারণ সন্ধ্যার পর কারাগারের ভেতর মানুষের হাঁটাচলা না থাকায় ইঁদুরগুলো সহজেই নালার ওপর উঠে কারাগারজুড়ে বিচরণ করে। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ভবন র ন চতল য় ই দ র র উৎপ ত ভবন র ন চ বন দ র

এছাড়াও পড়ুন:

রাজশাহীতে জুলাই শহীদদের স্মরণে মিনি ম্যারাথন

রাজশাহীতে জুলাই শহীদদের স্মরণে মিনি ম্যারাথন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শুক্রবার সকাল ছয়টার দিকে নগরের বিনোদপুর এলাকা থেকে এ দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু হয়। আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) রাজশাহী মহানগর শাখা এ ম্যারাথনের আয়োজন করে।

ম্যারাথনে অংশ নিতে প্রতিযোগীরা আজ ভোর সাড়ে পাঁচটার পর থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়–সংলগ্ন বিনোদপুর বাজারে জমায়েত হতে থাকেন। সকাল ছয়টার পর শুরু হয় পাঁচ কিলোমিটারের ম্যারাথন প্রতিযোগিতা।

অংশগ্রহণকারীরা বিনোদপুর থেকে শুরু হয়ে নগরের তালাইমারী মোড় হয়ে আবার বিনোদপুর হয়ে চৌদ্দপায় ফায়ার সার্ভিস মোড় হয়ে আবার বিনোদপুরে ফিরে আসেন।পরে সেখানে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। প্রথম পুরস্কার ১০ হাজার টাকা, দ্বিতীয় পুরস্কার ৮ হাজার টাকা, তৃতীয় পুরস্কার হিসেবে ৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অংশগ্রহণকারী তিন নারীসহ আরও ১০ জনকে পুরস্কৃত করা হয়।

ম্যারাথন উপলক্ষে আগে থেকেই মেডিকেল টিমসহ একটি অ্যাম্বুলেন্স ছিল। এ ছাড়া সবার জন্য টি-শার্ট, গ্লুকোজ পানিসহ বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হয়। ম্যারাথনে অংশ নেওয়াদের বেশির ভাগই ছিল তরুণ। তাঁদের মধ্যে বেশি বয়সী নারীরাও অংশ নেন।

প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া ৫৮ বছর বয়সী পিয়ারুল ইসলাম বলেন, এ উদ্যোগ খুবই ভালো হয়েছে। অসুস্থমুক্ত জীবন গড়তে হলে দৌড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। শারীরিক বিভিন্ন অ্যাকটিভিটিসের মধ্যে থাকলে সুস্থ জীবন গড়া যায়। এ বয়সে তাঁর কোনো ওষুধ লাগে না। তাঁরও অনেক সিনিয়র আছেন, কারও বয়স ৭৫, তাঁদেরও ওষুধ লাগে না। তাই এ ধরনের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হবে। সবাইকে উদ্ধুব্ধ করতে হবে। যাতে নিজেদের শরীরকে সব সময় উপযুক্ত রাখে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, অনেক দিন পর তিনি দৌড়াবেন। সাধারণত দৌড়ানো হয় না। আজকের পর থেকে তিনি প্রতিদিন সকালে উঠে দৌড়াবেন।

স্থানীয় বাসিন্দা নাঈম হাসান বলেন, জুলাই গণ–অভ্যুত্থান শুধু সরকারের পতন নয়। এর মাধ্যমে এ দেশের মানুষ একটি নতুন নিশ্বাস নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে। সেই নতুন নিশ্বাস নিয়ে ম্যারাথনে তিনি অংশ নিয়েছেন।

ম্যারাথন প্রতিযোগিতায় ১৩ জনকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে রাজশাহী নগরের বিনোদপুর এলাকায়

সম্পর্কিত নিবন্ধ