Samakal:
2025-05-01@02:40:32 GMT

বৈশাখজুড়ে শতবর্ষী মেলা

Published: 18th, April 2025 GMT

বৈশাখজুড়ে শতবর্ষী মেলা

বাঙালির নানা রূপের চিরায়ত লোকজ সংস্কৃতির মধ্যে বৈশাখী মেলা একটি। ঐতিহাসিকভাবে মেলার জন্য বিখ্যাত চলনবিল অধ্যুষিত জনপদ তাড়াশ। তাড়াশের কলেজশিক্ষক মোছা. মাসুমা খাতুন বলেন, ‘যেহেতু এই গ্রামীণ জনপদেই জন্ম, সেহেতু চৈত্রসংক্রান্তিতে শ্মশান থেকে হাজরা ছোটা, বৈশাখী মেলায় গিয়ে নাগরদোলায় দোল খেলা, বায়োস্কোপে বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুর ফাঁসির দৃশ্য দেখে কষ্ট পাওয়া, পতুল নাচ, মৃত্যুকূপে মোটরসাইকেল খেলা, জাদু খেলা দেখা বা সার্কাসের ইয়া বড় হাতি দর্শন জীবনের এক বড় অধ্যায় হয়ে রয়েছে। সেই সঙ্গে ছোট ভাইদের জন্য টিন বা কাঠের বন্দুক, বাঁশের বাঁশি, বেলুন, আম কাটার চাকু, নিজের ও বোনদের কাচের লাল চুড়ি, চুল বাঁধার ফিতা, বনানী নামের স্নো কেনাসহ উপভোগ্য বহু ঘটনা এখনও আমায় স্মৃতিকাতর করে।’
স্থানীয় একাধিক প্রবীণ ব্যক্তি জানান, আশি ও নব্বই দশকেও তাড়াশে অনুষ্ঠিত হওয়া বেশ কয়েকটি বড় মেলায় সন্ধ্যারাত থেকে কুপি বাতি, হারিকেন, হ্যাজাক জ্বালিয়ে চলত নানা অনুষ্ঠান, হরেক রকমের পণ্যের বিকিকিনি। এখন তা চলছে বিদ্যুতের বাতিতে। তাড়াশের ২৯টি বার্ষিক মেলার সবই দিনক্ষণ নির্ধারিত হয় চান্দ্রক্ষণের ওপর নির্ভর করে। মূলত সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলায় চৈত্র, বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ– এ তিন মাসে ২৯টি মেলার আয়োজন হয় বিভিন্ন গ্রামে; যার অধিকাংশ মেলার স্থান শত বা অর্ধশত বছর আগে নির্ধারিত। এগুলোর মধ্যে উপজেলা প্রশাসন মেলার ব্যাপকতা, লোক সমাগম ও গুরুত্ব বিবেচনা করে শতবর্ষী বা শতবর্ষের কাছাকাছি ১৭টি মেলাকে একদিনের বিশেষ হাট হিসেবে ইজারা দিয়ে রাজস্ব আদায় বা টোল আদায় করে থাকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য– বেহুলার স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখতে বৈশাখী পূর্ণিমায় বিনসাড়া গ্রামে বসে তিন দিনের বেহুলা সুন্দরীর ‘চাঁদের মেলা’। চৈত্রের পূর্ণিমার রাতে তাড়াশের ‘বারুহাঁসের ভাদাই মেলা’, বৈশাখের তৃতীয় মঙ্গলবার বসা বড় ও ছোট ‘গুড়মা মেলা’ এবং কৃষ্ণা দিঘির ‘কৃষ্ণপুরের মেলা’ অন্যতম। অন্যদিকে জ্যৈষ্ঠের শুরুতে বসে ‘গোনতা মেলা’, ‘মাঝদক্ষিণা মেলা’, ‘রানীর হাট মেলা’, ‘আড়ংগাইল মেলা’, ‘দোবিলা মেলা’, ‘বস্তল মেলা’, ‘কুন্দইল মেলা’, ‘গুড়পিপুলের নিশানের মেলা’ প্রভৃতি।
এসব মেলা ঘিরে রয়েছে বিভিন্ন আঞ্চলিক রেওয়াজ; যা কমবেশি আজও বিদ্যমান। মেলার আগেই ঝি, জামাই, কাছের-দূরের আত্মীয়-স্বজনকে নাইওর আনার প্রচলন রয়েছে এ জনপদে। আজও ‘বারুহাঁস’, ‘গুড়মা’, ‘রানীর হাট’, ‘বেহুলার মেলা’সহ অনেক মেলা বসার আগেই স্থানীয় প্রায় প্রতিটি বাড়িতে মেয়ে জামাই, আত্মীয়-স্বজনে ঠাসা থাকে। এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে বৈশাখী মেলার সতেজ আমেজ। সে আমেজে রেওয়াজ মেনে শ্বশুরবাড়ির পক্ষ থেকে শাশুড়ির হাত দিয়ে নতুন-পুরোনো সব জামাইকে মেলার ‘পরবি’ (নগদ টাকা) এবং মেলা শেষে বাড়ি ফিরে যাওয়ার সময় নতুন পোশাক, বিশেষ করে দামি লুঙ্গি উপহার দেওয়া এবং মেলার ঝুরি, মুড়কি, শাঁস, শুকনা মিষ্টি, রান্না করা খাবার বেঁধে আত্মীয় বাড়িতে পাঠানোর চল এখনও রয়েছে। নাইওরে আসা জামাইদেরও এসব মেলায় বড় অঙ্কের টাকা খরচ হয়। মেলা থেকে হাঁড়িভর্তি মিষ্টি, বড় মাছ, মাংস, শাশুড়ির জন্য পান-সুপারি কিনে শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে যেতে হয়। সে ক্ষেত্রে অনেক জামাই শ্বশুরের নাম রাখতে প্রতিযোগিতা করে মেলার সবচেয়ে বড় মাছ কিনে থাকেন। এ ছাড়া শ্যালক-শ্যালিকা ও তাদের সন্তানসহ ছোটদের মেলার পরবি দেওয়া বা অন্য উপহারের আবদার মেটানোও জামাইদের পুরোনো রেওয়াজ। তাড়াশের বৈশাখী মেলায় চিনি দিয়ে তৈরি সুস্বাদু হাতি, ঘোড়া, হরিণ, পাখি আকৃতির ছাঁচ, খাগড়াই, বাতাসা, কদমা প্রচুর পরিমাণে বিক্রি হয়। আরও রয়েছে বাহারি মিষ্টি রসগোল্লা, চমচম, ছানার জিলাপি, রসমালাই, শাহি, ক্ষীরশা দই। এ ছাড়া মেলায় শত শত মণ ঝুরি বিক্রি হয়। বাঁশ-বেতের জিনিস, কাঠের আসবাব, মসলা, শীতলপাটি, মৃৎ পাত্র, খেলনা, কসমেটিক সামগ্রী, কৃষিজ উপকরণ– হরপাট, কারাল, ডালি, টুপরি, চালুন, কুলা এমনকি হাতপাখা, চুন, পান-সুপারি ইত্যাদি তো আছেই। সব মিলিয়ে তাড়াশের ২৯টি মেলায় দুই-আড়াই মাসের মধ্যে কয়েক কোটি টাকার পণ্য কেনাবেচা হয়। তাড়াশের নওগাঁ জিন্দানী ডিগ্রি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক সনাতন দাশ বলেন, ‘এটা শুধু অর্থনৈতিক বিষয় নয়। সব বয়সী লাখো মানুষের মেলাকেন্দ্রিক বাঙালি সংস্কৃতির অদৃশ্য খোরাক পূরণ হয় এসব মেলায়। উৎসবের মূল্যের কাছে অর্থের মূল্য অতি নগণ্য।’ 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব শ খ উৎসব

এছাড়াও পড়ুন:

আ.লীগ নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা তাদেরকেই নির্ধারণ করতে হবে: ড. ইউনূস

আওয়ামী লীগকে সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কিনা তা তাদেরকেই নির্ধারণ করতে হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আলজাজিরায় এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা জানান। ‘মুহাম্মদ ইউনূস: রিয়েল রিফর্ম অর জাস্ট আ নিউ রুলিং ক্লাস ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামে সাক্ষাৎকারটি গতকাল রোববার আলজাজিরার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে জুলাই বিপ্লব, সাবেক স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়া, সাবেক সরকারের দুর্নীতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন তিনি।    

নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হবে কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, এ প্রশ্নের জবাবের একটি অংশ আওয়ামী লীগকেই নির্ধারণ করতে হবে। দলটি আগে নিজেই সিদ্ধান্ত নেবে– তারা নির্বাচনে যোগ দেবে কিনা। তারা এখনও কিছু ঘোষণা করেনি। তা ছাড়া নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশন কী প্রতিক্রিয়া দেয়, সেটাসহ নানা বিষয় সামনে আসতে পারে। 

তাহলে আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের ওপর ছেড়ে দিচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি তা নয়। অন্যান্য রাজনৈতিক দল আছে, যারা বলতে পারে যে, এই আইনের অধীনে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। 

বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং উদাহরণ সৃষ্টিকারী নির্বাচন উপহার দেওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনের আগে সংস্কারের তালিকা ছোট হলে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন এবং তালিকা বড় হলে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনপ্রত্যাশা এখনও তুঙ্গে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণ মনে করে অন্তর্বর্তী সরকার এখনও তাদের জন্য ভালো সমাধান।

আলজাজিরার উপস্থাপক ড. ইউনূসকে প্রশ্ন করেন, এটা কি বলা ঠিক যে, শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের ‘মধুচন্দ্রিমা’ এখন সম্ভবত শেষ হয়েছে? কিছু বেশ বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যেগুলোর সুনির্দিষ্ট জবাব আপনাকে দিতে হবে। কারণ, পুরোনো ক্ষমতাধরদের প্রভাব রয়েছে, অনেকে রাজনৈতিক শূন্যতাকে কাজে লাগাতে চাইতে পারে। 

জবাবে ড. ইউনূস বলেন, মধুচন্দ্রিমা শেষ হোক বা না হোক, বাংলাদেশের মানুষ মনে করে অন্তর্বর্তী সরকার এখনও তাদের জন্য ভালো সমাধান। তারা অন্তর্বর্তী সরকারকে সরাসরি চলে যেতে এখনও বলছে না। বরং একটা ভালো নির্বাচন উপহার দিতে সরকারই নির্বাচন আয়োজনের দিকে যাচ্ছে। জনগণ তাড়াতাড়ি ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা এখনও বলছে না।  

লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর সমাধান কি বাংলাদেশ একা করতে পারবে? জবাবে ড. ইউনূস বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক সংস্থা ও জাতিসংঘের সঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে কাজ করছি। তারা যাতে নিরাপদে বাড়ি ফিরে যেতে পারে, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে কিছু বোঝাপড়া যাতে তৈরি হয়।  

সাক্ষাৎকারে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে ড. ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকের প্রসঙ্গ ওঠে। ড. ইউনূস জানান, তিনি বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে মোদির সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। সেখানে শেখ হাসিনাকে ‘চুপ’ রাখতে বলেছিলেন তিনি। জবাবে মোদি বলেছিলেন, এটা তাঁর জন্য সম্ভব নয়। শেখ হাসিনা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে কিছু বললে, সেটি তিনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না।

যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে ড. ইউনূস বলেন, একসঙ্গে কাজ করার নীতি নিয়ে আগাতে চাই। আমরা একসঙ্গেই পারস্পরিক সহযোগিতামূলক পদক্ষেপ নিতে চাই।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হলো ‘জনপদের বর্ষবরণ ১৪৩২’
  • বিদ্যালয়ের ১৮টি গাছ বিক্রি করলেন প্রধান শিক্ষক 
  • কর্ণাটকে ক্রিকেট খেলার সময় বচসা, যুবককে পিটিয়ে হত্যা
  • বাঁধভাঙা বন্যার গল্প
  • দেশে আন্তর্জাতিক পেমেন্ট গেটওয়ে চালুর দাবি 
  • রাখাইন রাজ্যে ‘মানবিক করিডোর’ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিলেন প্রেস সচিব
  • কানাডায় আবারও লিবারেল পার্টির সরকার গঠনের আভাস
  • আ.লীগ নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা তাদেরকেই নির্ধারণ করতে হবে
  • আ.লীগ নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা তাদেরকেই নির্ধারণ করতে হবে: ড. ইউনূস
  • উপকূল রক্ষা বাঁধে ভয়াবহ ধস, প্লাবনের আশঙ্কা সুন্দরবন তীরবর্তী জনপদে