কুরাইশ নেতার সঙ্গে মহানবীর (সা.) ঐতিহাসিক সংলাপ
Published: 19th, April 2025 GMT
মক্কায় কুরাইশের দুজন সাহসী পুরুষ হামজা ইবন আবদুল মুত্তালিব (রা.) ও উমর ইবন খাত্তাব (রা.) ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নেওয়ার পর মক্কার মুসলমানদের ওপর চলমান নির্যাতনের তীব্রতা কমে আসতে শুরু করে। কুরাইশ নেতারা বুঝতে পারেন, মুসলমানদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া নিপীড়ন আর ফল দিচ্ছে না। ফলে তারা তাদের কৌশল বদলে ফেলে।
বিশ্বস্ত সিরাত গ্রন্থগুলো থেকে জানা যায়, মক্কার নেতারা নবী করিম (সা.
একদিন মক্কার প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তি কাবাঘরের কাছে জড়ো হন। তাদের মধ্যে অন্যতম নেতা ছিল উতবা ইবনে রাবিআ। সে প্রস্তাব দেয়, নবীজি (সা.)-এর সঙ্গে একান্তভাবে কথা বলবে এবং তাঁর সামনে একটি সমঝোতার প্রস্তাব রাখবে। প্রস্তাব ছিল—যদি তিনি তাঁর ধর্মীয় আহ্বান থেকে বিরত থাকেন, তবে তাঁকে অর্থ, ক্ষমতা, নেতৃত্ব—যা কিছু চান, সবকিছু দেওয়া হবে। কুরাইশ নেতারা এ প্রস্তাবে সম্মতি দেন এবং উতবাকে আলোচনার দায়িত্ব দেন।
আরও পড়ুনজীবনে একবার হলেও যে নামাজ পড়তে বলেছেন নবীজি (সা.)১৩ মার্চ ২০২৫উতবার প্রস্তাব ছিল এমন, ‘হে মুহাম্মদ! যদি এই হয় যে তুমি সম্পদের আশায় এ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছ, তবে আমরা সবাই মিলে তোমাকে এত সম্পদ দেব যে তুমি আমাদের সবার চেয়েও ধনী হয়ে উঠবে। যদি তুমি নেতৃত্ব চাও, আমরা তোমাকে আমাদের নেতা মানতে রাজি আছি। যদি রাজত্বের আকাঙ্ক্ষা থাকে, আমরা তোমাকে আমাদের রাজা হিসেবে মেনে নেব। আর যদি কোনো অশরীরী বা জিন তোমার ওপর প্রভাব বিস্তার করে, তবে আমরা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আনব, যারা তোমার চিকিৎসা করবে।’
নবী করিম (সা.) ধৈর্যসহকারে তাঁর কথা শুনলেন। সব কথা শেষ হলে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার বলা শেষ হয়েছে?’ উতবা সম্মতি দিলে তিনি কোরআনের সুরা ফুসসিলাতের কিছু আয়াত তিলাওয়াত শুরু করলেন:
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
হা-মীম। এই কিতাব আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ—যিনি পরম করুণাময়, অশেষ দয়ালু। এটি এমন একটি গ্রন্থ, যার আয়াতসমূহ সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এটি একটি আরবি কোরআন, তাদের জন্য যারা জানে। এটি সুসংবাদ ও সতর্কবার্তা দেয়; কিন্তু তাদের অধিকাংশই মুখ ফিরিয়ে নেয়, তারা শুনতেই চায় না। তারা বলে, ‘তুমি যা বলছ, তার প্রতি আমাদের অন্তর পর্দায় আচ্ছাদিত… (সুরা ফুসসিলাত, আয়াত: ১-৫)
আরও পড়ুনকেন ‘বিসমিল্লাহ’ বলতে হয়১১ এপ্রিল ২০২৫মহানবী (সা.) সুরা ফুসসিলাতের আয়াত তিলাওয়াত করতে থাকলেন। উতবা পেছনে হাত দিয়ে ভর দিয়ে বসে তাঁর তিলাওয়াত মনোযোগ সহকারে শুনতে লাগলেন। যখন নবীজি (সা.) এমন এক আয়াতে পৌঁছালেন যেখানে সেজদা করা আবশ্যক, তিনি সঙ্গে সঙ্গে সেজদায় লুটিয়ে পড়লেন।
সেজদা শেষ করে নবীজি (সা.) উতবার দিকে ফিরে বললেন: ‘ওয়ালিদের বাবা, তুমি তো আমার জবাব শুনে নিয়েছ, এখন তুমি যা ইচ্ছা তাই করতে পারো।’
উতবা ফিরে গেল তার সঙ্গীদের কাছে। তারা তাকে দেখেই বলল, ‘তুমি যে মুখ নিয়ে গিয়েছিলে, ফিরে এসেছ ভিন্ন এক চেহারায়!’ সত্যিই তার মুখাবয়ব বদলে গিয়েছিল।
সে তার কথা ও নবীজির (সা.) জবাব পুরো বিবরণ দিয়ে জানিয়ে বলল, আমি এ রকম কোনো কথা জীবনে শুনিনি। এটা না কবিতা, না জাদু, না কোনো জ্যোতিষীর বচন। কুরাইশবাসীগণ, আমি তোমাদের একটিই পরামর্শ দিতে চাই—এই মানুষটিকে ছেড়ে দাও, তার পথ চলতে দাও।
আরও পড়ুনসৎসঙ্গ কেন গ্রহণ করবেন১২ এপ্রিল ২০২৫আমি কসম করে বলছি, তার কথা বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। যদি অন্য আরবরা তাকে প্রতিহত করে, তাহলে তোমাদের কষ্ট কমে যাবে। আর যদি সে আরবদের ওপর কর্তৃত্ব লাভ করে, তবে তাতে তোমরাও তার সম্মান ও শক্তির অংশীদার হতে পারো।
কিন্তু উতবার এই প্রজ্ঞাপূর্ণ কথা কুরাইশদের হৃদয়ে পৌঁছাল না। তারা বিদ্রূপ করে বলল, নবী মুহাম্মদ (সা.) যেন উতবাকে মোহাচ্ছন্ন করে ফেলেছেন! ( ইবন হিশাম, ১/২৯৩-২৯৪)
এই ঘটনার আরেকটি বর্ণনায় বলা হয়েছে, উতবা গভীর মনোযোগে নবী করিম (সা.)-এর তিলাওয়াত শুনছিলেন, এমন সময় তিনি এই আয়াতে পৌঁছালেন: তবে যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে (হে মুহাম্মদ!) তুমি বলে দাও, আমি তোমাদেরকে এক ভয়াবহ বজ্রপাতের বিষয়ে সতর্ক করে দিচ্ছি— যেমন বজ্রপাত আদ ও সামুদ জাতির ওপর নেমে এসেছিল। (সুরা ফুসসিলাত, আয়াত: ১৩)
এই আয়াত শুনেই উতবা আঁতকে উঠলেন। আতঙ্কে নবীজির (সা.) মুখে হাত দিয়ে বললেন, ‘আল্লাহর দোহাই লাগে, আত্মীয়তার খাতিরে থেমে যাও! না হলে কুরাইশদের ওপরও এ দুর্যোগ নেমে আসবে!’
এরপর তিনি ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে দ্রুত সঙ্গীদের কাছে ফিরে গেলেন এবং যা শুনলেন, সব খুলে বললেন। (তাফসীর ইবন কাসীর ৬/১৫৯-১৬১)
আরও পড়ুন‘আত-তাহিয়্যাতু’র মর্মবাণী কী১১ এপ্রিল ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রস ত ব আম দ র র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
পাকিস্তানে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পদেও আইএসআই প্রধান মালিক
পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার সার্ভিস ইন্টেলিজেন্সের (আইএসআই) বর্তমান মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল মুহাম্মদ অসিম মালিক। বৃহস্পতিবার পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডনের খবরে এই তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারিভাবে দেশের প্রধান গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের বর্তমান মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল মুহাম্মদ অসিম মালিককে নতুন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি পাকিস্তানের দশম জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা।
গত মঙ্গলবার মন্ত্রিসভা বিভাগ থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, জেনারেল মালিক আইএসআই মহাপরিচালক হিসেবে তার বর্তমান পদেও বহাল থাকবেন।২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে তিনি এই পদে রয়েছেন। প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, লেফটেন্যান্ট জেনারেল মুহাম্মদ অসিম মালিক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করবেন।
তার এই নিয়োগের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো একজন আইএসআই প্রধান একই সঙ্গে এনএসএ'র দায়িত্ব পেলেন। সম্প্রতি ভারতশাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার পর ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের সামরিক উত্তেজনার মধ্যে লেফটেন্যান্ট জেনারেল মুহাম্মদ অসিম মালিক নতুন দায়িত্ব পাওয়ার খবর এলো।
২০২২ সালের এপ্রিলে ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন পিটিআই সরকার অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে পাকিস্তানের এনএসএ পদটি শূন্য ছিল। সে সময় মঈদ ইউসুফ এনএসএ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।