শাবিপ্রবির উন্নয়ন প্রকল্পে গুণগত মানে কোনো আপস নয়: উপ-উপাচার্য
Published: 19th, April 2025 GMT
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সাজেদুল করিম বলেছেন, “প্রকল্প বাস্তবায়নে কোনো রকম আপসের সুযোগ নেই। প্রতিটি ধাপে স্বচ্ছতা ও মান বজায় রাখতে হবে।”
শনিবার (১৯ এপ্রিল) দুপুর সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে ‘অধিকতর উন্নয়ন (দ্বিতীয় পর্যায়)’ শীর্ষক প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে আয়োজিত এক পর্যালোচনা সভায় প্রকল্প বাস্তবায়নে গুণগত মান রক্ষার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করে তিনি এসব কথা বলেন।
সভায় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) প্রতিনিধি দল। তারা সভার পূর্বে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন স্থান সরেজমিনে পরিদর্শন করেন এবং তাদের পর্যবেক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সামনে উপস্থাপন করেন।
এ সময় উপ-উপাচার্য ড.
তিনি বলেন, “রড, সিমেন্ট ও বালির মতো মূল উপকরণে মানের কোনো ঘাটতি চলবে না। সময়মতো কাজ শেষ করার পাশাপাশি গুণগত মান অক্ষুণ্ন রাখতে হবে। আমাদের লক্ষ্য ভবনগুলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা।”
ঠিকাদারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনাদের কাজ যেন ভবিষ্যতে আপনাদের গর্বের বিষয় হয়। মানুষ যেন বলতে পারেন, এ উন্নয়ন কাজ আপনারাই করেছেন। আগামী জুন মাসের মধ্যে কাজের দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখতে চাই।”
সভায় ইউজিসির পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক সুরাইয়া ফারহানা, সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. আসিফ সিদ্দিক, সহকারী পরিচালক তানভীর মোর্শেদ ও মোশাররফ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন প্রকল্প পরিচালক ও প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) জয়নাল ইসলাম চৌধুরী, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বিকাশ চন্দ্র দাস, উপ-রেজিস্ট্রার শাহীন আহমদ চৌধুরী এবং নির্বাহী প্রকৌশলী মো. তানজিম শামস প্রমুখ।
বর্তমানে শাবিপ্রবিতে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ১০তলা বিশিষ্ট চারটি শিক্ষাভবন, একটি ছাত্র হল, একটি ছাত্রী হল, একটি প্রশাসনিক ভবন, চারতলা বিশিষ্ট একটি মসজিদ, ১১তলা বিশিষ্ট একটি শিক্ষক-কর্মকর্তা আবাসিক ভবন, দ্বিতল বিশিষ্ট একটি সেন্ট্রাল ওয়ার্কশপ, এক কিলোমিটার রাস্তায় দুইটি স্প্যান ব্রিজ এবং একটি পাওয়ার স্টেশনের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।
ঢাকা/ইকবাল/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রকল প উপস থ ত
এছাড়াও পড়ুন:
এই অদম্য মেয়েদের আমরা হারিয়ে যেতে দিতে পারি না
অবহেলিত মেয়েরা কঠিন একটি কাজ সম্পন্ন করেছেন। অনেকের কাছে এখনো অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে। অসাধ্য এক অর্জনকে বাস্তবের জমিনে নামিয়ে এনেছেন আমাদের বাঘিনীরা। সাফ পর্যায় জয় করে নারীদের ফুটবলকে এশীয় পর্যায়ে নিয়ে গেলেন। বিশ্বকাপও খেলে ফিরতে পারেন এই অদম্য বাঘিনীরা।
এখন বলাই যায়, নারী ফুটবলের বিশ্ব পর্যায়ে কড়া নাড়ছেন আমাদের মেয়েরা। ফুটবলকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তাঁরা। শুধু ফুটবলই নয়, আমাদের নারী জাগরণের নতুন দিশা হতে পারে মেয়েদের এই সাফল্য। এই মেয়েরা সারা দেশের মেয়েদের জন্য উদাহরণ। নারী অধিকার, নারী ক্ষমতায়নের নতুন দিনের আলোকবর্তিকা আমাদের নারী ফুটবল দল।
ফুটবলে মেয়েদের এই সাফল্যের পেছনে আছে দীর্ঘদিনের লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাস। সফলতা খুব সহজে আসেনি। নানা প্রতিবন্ধকতা পার করে কঠিন এক সংগ্রামের ফসল মেয়েদের আজকের এই অর্জন। ঠাকুরগাঁওয়ের প্রত্যন্ত পল্লি থেকে কোহাটি কিষ্ক, কলসিন্দুরের মারিয়া মান্দা, শামসুন্নাহার, তহুরা খাতুন, সানজিদা আক্তার বা রাঙামাটির দুর্গম গ্রাম মগছড়ি থেকে ঋতুপর্ণা চাকমাদের আজকের এই পর্যায়ে আসার ইতিহাসটা আমরা কমবেশি সবাই জানি।
এই পথচলায় সামাজিক বিধিনিষেধ ছিল। ছিল আর্থিক টানাপোড়েন, অনিশ্চয়তা। জীবনের এমন কোনো সংকট নেই, যা তাঁদের সামনে আসেনি। কিন্তু হিমালয়সম সেই বাধাকে সাহসিকতার সঙ্গে পেছনে ঠেলে আজকে তাঁরা এশীয় পর্যায়ে নিজেদের উন্নীত করেছেন।
তাঁদের অর্জনের তুলনায় রাষ্ট্র দিতে পেরেছে খুবই কম। বলতে গেলে, তাঁরা পেটেভাতে দেশের জন্য খেলে দিচ্ছেন। যেন খেলার বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি চলছে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির আদলে। যৎসামান্য যে বেতন দেওয়া হয়, সেটাও অনিয়মিত। যেকোনো সাফল্যের পর যখন মেয়েদের কাছে শুনতে চাওয়া হয়, ‘আপনারা কী চান?’ উত্তরে মেয়েরা জানান, ‘নিয়মিত বেতনটা চাই। আর বেতনটা বাড়ালে আরও ভালো হয়।’ ২০২৫ সালে এসে এটা মেনে নেওয়া কঠিন।
দেশে মেয়েদের নিয়মিত লিগ হয় না। অন্য কোনো টুর্নামেন্টও হয় না নিয়মিত। নিয়মিত খেলার জন্য আমাদের মেয়েদের ভুটান লিগে খেলতে যেতে হয়। কেবল আবাসিক ক্যাম্পের প্রশিক্ষণ ও কিছু প্রস্তুতিমূলক ম্যাচ খেলেই মেয়েদের আন্তর্জাতিক পর্যায়ের প্রতিযোগিতামূলক খেলায় নামতে হয়। সেই সব খেলায় তাঁরা নিয়মিত লিগ খেলা দলগুলোকে বলে-কয়ে হারাচ্ছে।
আমাদের খেলাধুলাকে রাজধানীকেন্দ্রিক না রেখে প্রান্তিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। শুধু নারী ফুটবল নয়, সব ধরনের খেলাধুলার আয়োজন করতে হবে তৃণমূল থেকে। তবেই নতুন নতুন প্রতিভাবান খেলোয়াড় বেরিয়ে আসবে। ঢাকাকেন্দ্রিক খেলার কুফল কী হতে পারে, তার বড় উদাহরণ আমাদের ছেলেদের ফুটবল। সারা দেশে নিয়মিত প্রতিযোগিতামূলক লিগ না হওয়ার কারণে নতুন নতুন ফুটবলার বেরিয়ে আসছেন না।কী পরিমাণ প্রতিভার অধিকারী হলে ন্যূনতম সুবিধা না পেয়েও এ পর্যায়ে সাফল্য অর্জন করা যায়, তা এককথায় অবিশ্বাস্য। ভারত ও নেপালে নিয়মিত মেয়েদের খেলা হয়, লিগ হয়। আর আমরা তাদের এখন নিয়মিতই হারাই। এখন সাফের বাইরের দলগুলোকেও আমরা হারাতে শুরু করেছি।
এই মেয়েদের প্রচেষ্টা ও সাহস নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। প্রচণ্ড রকম ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে তাঁরা খেলতে নামেন। ভয়হীন ফুটবল খেলেন। সব থেকে বড় কথা, খেলার যেকোনো ধরনের ট্যাকটিকসের সঙ্গেই তাঁরা দ্রুত মানিয়ে নিতে পারেন। আগে আমাদের মেয়েরা কিছুটা রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলতেন। রক্ষণ সামলে প্রতি-আক্রমণে যেতেন। এবার এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে মেয়েরা পুরো খেলার ধরন বদলে ফেলেছেন।
আমাদের মেয়েরা এবার হাই প্রেসিং ফুটবল খেলেছেন। এই দল আগের থেকে দ্রুতগতিসম্পন্ন ফুটবল খেলে। বল পায়ে রাখতে পারে। তাদের বল ডিস্ট্রিবিউশন আগের থেকে অনেক উন্নত হয়েছে। পাসিংও ভালো। পজিশন সেন্স চমৎকার। বিশেষ করে বল হারালে দ্রুত নিজেরা অবস্থান নিতে পারে।
এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে পুরো টুর্নামেন্টজুড়ে হাই লাইন ডিফেন্স করে গেছে দুর্দান্তভাবে। আর বাহরাইনের সঙ্গে শামসুন্নাহার জুনিয়র যেভাবে গতি সঞ্চার করে ডিফেন্স থেকে বেরিয়ে ওয়ান টু ওয়ানে গোলরক্ষককে পরাজিত করলেন ঠান্ডা মাথায়, তা আমাদের পুরুষ দলের স্ট্রাইকার বা উইঙ্গাররাও করতে পারেন না। নিয়মিত খেলার মধ্যে না থাকা একটি দলের কাছে এর বেশি আশা করা উচিত নয়। কিন্তু তাঁরা আমাদের সেই আশাকে ছাড়িয়ে গেছেন। তাঁরা পরিস্থিতি বুঝে মাঠে খেলাটা তৈরি করতে পারেন।
মেয়েদের এই লড়াইকে ধরে রাখতে হবে। তাঁদের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। সিরাত জাহান স্বপ্না বা আঁখি খাতুনের মতো খেলোয়াড়দের আর্থিক অনিশ্চয়তার কারণে ফুটবল থেকে হারিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না। মেয়েদের প্রতিযোগিতামূলক লিগ নিয়মিত আয়োজন করতে হবে। এর পাশাপাশি জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে লিগের আয়োজন করতে হবে।
‘সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে এই মেয়েরা আমাদের ফুটবল নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবেন।’