আদিবাসীদের ছাড়া রাষ্ট্র সংস্কার সম্পূর্ণ হবে না: নাজমুল হক প্রধান
Published: 20th, April 2025 GMT
বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান বলেন, রাষ্ট্র সংস্কারের যে কথা বলা হচ্ছে, সেখানে আদিবাসীদের ছাড়া রাষ্ট্র সংস্কার সম্পূর্ণ হবে না। এই সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির সঙ্গে কোনো সংলাপের উদ্যোগ এখনও নিচ্ছে না। সংলাপ দ্রুত শুরু করতে হবে। আমরা আশা করবো, সরকার পাহাড়ের আদিবাসীদের সঙ্গে নতুন করে সংলাপ শুরু করবে। অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মসূচিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি অগ্রাধিকার তালিকায় রাখার দাবিতে গণসংযোগ, পথসভা ও প্রচারপত্র বিতরণ কর্মসূচিতে এসব কথা বলেন তিনি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে শনিবার ঢাকায় দিনব্যাপী গণসংযোগ ও পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের উদ্যোগে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক থেকে সকাল ১০টায় কর্মসূচি শুরু হয়, যা সন্ধ্যায় উত্তরাতে গিয়ে শেষ হয়। গণসংযোগে ৬টি পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম পথসভাটি হয় পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কে, এরপর জাতীয় প্রেস ক্লাব, শাহবাগ, ফার্মগেইট , মিরপুর-১০ ও উত্তরার রাজলক্ষ্মীতে পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। পথসভাগুলো সঞ্চালনা করেন চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের সদস্য মানবাধিকার কর্মী দীপায়ন খীসা।
দিনব্যাপী কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের দুই যুগ্ম সমন্বয়কারী মানবাধিকারকর্মী জাকির হোসেন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক খায়রুল ইসলাম চৌধুরী। পথসভাগুলোতে বক্তব্য রাখেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুল রশীদ ফিরোজ, দৈনিক সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান প্রমুখ।
বাহাদুর শাহ পার্কে স্বাগত বক্তব্যে খায়রুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন না হলে জাতীয় ঐক্য ও সংহতি সুদৃঢ় হবে না। সেজন্য এ চুক্তি বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবি।
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, পাহাড়ের সমস্যা সমাধানের মুল কাজটা হচ্ছে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন। আমার ধারণা এ বিষয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করলে তারা ঐক্যমত্য পোষণ করবেন। এই ঐক্যমত্যের মাধ্যমেই চুক্তি বাস্তবায়নের উদৌগ নিতে হবে।
বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুল রশীদ ফিরোজ বলেন, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য সরকারের আশু করণীয় কী সেটা জানানোর জন্য এবং দেশবাসীকে সচেতন করার জন্য আমরা আজকে প্রচার কার্যক্রম চালাচ্ছি। আপনারা জানেন, পাহাড়ের মানুষের নিজস্ব সংস্কৃতি, সমাজ ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের সঙ্গে সমতলের বাঙালিদের একটি মৌলিক পার্থক্য আছে। আমরা আশা করেছিলাম, স্বাধীনতার পর এ সকল ভিন্ন জাতিসত্তার মানুষের সাংবিধানিক স্বীকৃতি থাকবে। কিন্তু তা না করে তাদের সংখ্যালঘু করার জন্য পাহাড়ের বাঙালি নিয়ে গিয়ে সেটলার হিসেবে স্থাপন করা হয় এবং সেনা ছাউনির ছত্রছায়ায় আদিবাসীদের নিপীড়নের মধ্যে রাখা হয়েছে। সেই নিপীড়নের অবসান ঘটানোর জন্য ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার চুক্তি বাস্তবায়ন করেনি। আমরা আশা করবো, বর্তমান সরকার অন্তত এ চুক্তি বাস্তবায়নে এগিয়ে আসবে এবং একটি রূপরেখা ঘোষণা করবে। অন্তত সেনাশাসনের অবসানে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
দৈনিক সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান বলেন, বাংলাদেশ কেবলমাত্র বাঙালির না। এ দেশে বাঙালি ছাড়াও চাকমা, মারমা, সাওঁতালসহ বহু জাতির মানুষ বসবাস করে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মূল যে চেতনা সেটা হলো- একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বহুত্ববাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। কিন্তু সেটা না হওয়ায় আদিবাসীদের সঙ্গে এ রাষ্ট্রের দূরত্ব ক্রমাগত বাড়ছে। এ দূরত্ব ঘোচানোর জন্যই পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন করা দরকার। আমরা প্রত্যাশা করবো, অন্তর্বর্তী সরকার পাহাড়িদের ভূমি সমস্যার সমাধান, সামরিক কর্তৃত্বের অবসান, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন জেলা পরিষদগুলোকে গণতান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে চুক্তি বাস্তবায়নের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়েছেন বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রফন্ট, বিসিএল, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নেতারা। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিশিষ্ট নাগরিক ও মানবাধিকার কর্মীরা এতে উপস্থিত ছিলেন।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ছয় গোলের থ্রিলারে জমজমাট ড্র বার্সেলোনা-ইন্টারের
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনাল মানেই উত্তেজনার পারদ চড়া—আর বার্সেলোনা ও ইন্টার মিলান মিলে সেটিকে নিয়ে গেল অন্য উচ্চতায়। কাতালানদের ঘরের মাঠ অলিম্পিক স্টেডিয়ামে বুধবার রাতে দর্শকরা উপভোগ করলেন এক দুর্দান্ত গোলবন্যার ম্যাচ। ম্যাচ শেষে ফল—৩-৩ গোলে ড্র।
মৌসুমের রেকর্ড ৫০ হাজার ৩১৪ দর্শকের সামনে ইউরোপীয় ফুটবলের এই মহারণে উভয় দলই তুলে ধরেছে আক্রমণাত্মক ফুটবল। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনালের ইতিহাসে ১৯৯৯ সালের পর এটিই প্রথম ম্যাচ যেখানে ছয়টি গোল হয়েছে এবং শেষ হয়েছে ড্রয়ে।
ম্যাচ শুরু হতে না হতেই চমকে দেয় ইন্টার মিলান। ম্যাচের মাত্র প্রথম মিনিটেই ডেনজেল ডামফ্রিজের ব্যাকহিল গোল দলকে এগিয়ে দেন মার্কাস থুরাম। এরপর ২১ মিনিটে আবারও দিমারকোর কর্নার থেকে ফ্রান্সেসকো আকেরবির সহায়তায় শ্বাসরুদ্ধকর অ্যাক্রোব্যাটিকে ব্যবধান বাড়ান ডামফ্রিজ।
তবে ঘুরে দাঁড়াতে দেরি করেনি বার্সা। দুই মিনিট পরই ইয়ামাল ডান দিক থেকে একক নৈপুণ্যে দুর্দান্ত গোল করে ব্যবধান কমান। প্রথমার্ধ শেষের আগে পেদ্রির ফ্লিকে রাফিনিয়ার নিয়ন্ত্রণ এবং তাতে ফেরান তোরেসের শটে গোল করে ২-২ সমতায় ফেরে স্বাগতিকরা।
দ্বিতীয়ার্ধে লাউতারো মার্টিনেজের ইনজুরির পর মাঠে নামেন মেহেদি তারেমি। ৬০ মিনিটে কর্নার থেকে হেড করে নিজের দ্বিতীয় গোল করেন ডামফ্রিজ। কিন্তু দ্রুতই গোল শোধ করে বার্সা—ছোট কর্নার থেকে রাফিনিয়ার শট লাগে পোস্টে, সেখান থেকে গোলরক্ষক সোমারের পিঠে লেগে ঢুকে পড়ে জালে—ফলাফল ৩-৩। ৭৫ মিনিটে হেনরিখ মিখিতারিয়ান গোল করে ইন্টারকে আবারও এগিয়ে দিয়েছিলেন, কিন্তু ভিএআরের চোখে পড়ে সামান্য অফসাইড, বাতিল হয় সেই গোল।
এখন সবকিছু নির্ভর করছে দ্বিতীয় লেগের ম্যাচের ওপর, যা হবে ৬ মে, মঙ্গলবার, ইন্টারের ঘরের মাঠ জিউসেপ্পে মিয়াজ্জায়। ওই ম্যাচেই জানা যাবে ফাইনালে কারা প্যারিস সেইন্ট জার্মেই ও আর্সেনালের মধ্যকার বিজয়ীর মুখোমুখি হবে।