জয়পুরহাট পৌরসভার মালিকানাধীন বিপণিবিতানগুলোর দোকানের ভাড়া একলাফে পাঁচ গুণ বাড়ানোর প্রতিবাদে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করেছেন ব্যবসায়ীরা। আজ রোববার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করে এ কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা। পৌরসভার পাঁচটি মার্কেটের পাঁচ শতাধিক ভাড়াটে দোকানির পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধিদল জেলা প্রশাসকের কাছে একটি স্মারকলিপি দিয়েছেন।

কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জয়পুরহাট পৌরসভার মালিকানাধীন পাঁচটি মার্কেট রয়েছে। এ পাঁচটি মার্কেটের পাঁচ শতাধিক দোকান ভাড়া নিয়ে তাঁরা ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। তাঁরা পৌরসভার নির্ধারিত প্রতি বর্গফুট চার ও পাঁচ টাকা হারে ভাড়া পরিশোধ করছিলেন। পৌরসভা কর্তৃপক্ষ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রতি বর্গফুটে দোকানভাড়া ৪ ও ৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ ও ২৫ টাকা নির্ধারণ করে। তাঁরা পৌরসভা কর্তৃপক্ষের কাছে যৌক্তিক ভাড়া বাড়ানোর দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পৌরসভার পূর্ববাজার, মাছুয়া বাজার, নতুন পাঁচুর মোড়ের পৌর মার্কেট ও বাস টার্মিনালের দোকানিরা দোকান বন্ধ রেখে শহীদ ডা.

আবুল কাশেম ময়দানে এসে জড়ো হতে শুরু করেন। সকাল ১০টার দিকে দোকানিরা সেখান থেকে জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কার্যালয় অভিমুখে রওনা হন। সেখানে তাঁরা বেলা একটা পর্যন্ত অবস্থান করেন। এরপর তাঁরা জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেন। জয়পুরহাটের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আফরোজা আকতার চৌধুরী স্মারকলিপি পাওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন।

জয়পুরহাট পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, পৌরসভার মালিকানাধীন মার্কেটগুলোয় প্রতি তিন বছর পর ভাড়া বাড়ানোর নিয়ম রয়েছে। তবে ২০১৬ সালের পর থেকে দীর্ঘদিন ধরে কোনো ভাড়া বৃদ্ধি করেনি। ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের পর সারা দেশে পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলরদের অপসারণ করে সরকার প্রশাসক নিয়োগ দেয়। পৌরসভার রাজস্ব আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে পৌর প্রশাসক গত ফেব্রুয়ারিতে প্রতি বর্গফুট দোকানভাড়া ২০ ও ২৫ টাকা নির্ধারণ করে। দোকানিদের আপত্তির কারণে প্রতি বর্গফুট ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। দোকানিরা ওই ভাড়াতেও আপত্তি জানিয়েছেন।

পৌর মার্কেট ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুদ পারভেজ বলেন, এমনিতে ব্যবসা–বাণিজ্য খুব ভালো যাচ্ছে না। হঠাৎ পৌরসভা কর্তৃপক্ষ একলাফে দোকানভাড়া প্রতি বর্গফুটে পাঁচ গুণ বাড়িয়েছে। এটা অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত। অযৌক্তিক ভাড়া বৃদ্ধির দাবিতে তাঁরা দোকান বন্ধ রেখে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করেছেন।

জয়পুরহাট পৌরসভা নিয়ন্ত্রণাধীন সব মার্কেট ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক এ টি এম শাহনেওয়াজ কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই এভাবে ভাড়া বাড়ানো অযৌক্তিক। আমরা যৌক্তিক ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছি। জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছি।’

জয়পুরহাটের স্থানীয় সরকার শাখার উপপরিচালক ও জয়পুরহাট পৌরসভার প্রশাসক মো. সবুর আলী প্রথম আলোকে বলেন, তিন বছর পর ভাড়া বাড়ানোর নিয়ম আছে। ২০১৬ সাল থেকে কোনো ভাড়া বাড়ানো হয়নি। ভাড়া বৃদ্ধির জন্য কমিটি করা হয়েছিল। সেই কমিটির সুপারিশে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু নিয়মানুযায়ী ভাড়া বাড়েনি। ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে দোকানিরা আপত্তি জানিয়েছেন। এ নিয়ে তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ম রকল প প রসভ র ম ব যবস য়

এছাড়াও পড়ুন:

অনুমোদনের প্রথম দিন সেন্ট মার্টিন যায়নি কোনো পর্যটকবাহী জাহাজ

দীর্ঘ ৯ মাস পর শনিবার থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের অনুমতি দিয়েছে সরকার। কিন্তু প্রথম দিন কোনো জাহাজ সেন্ট মার্টিনে না যাওয়ার কারণে পর্যটকেরা দ্বীপে যেতে পারেননি। হাজারো পর্যটক সেন্ট মার্টিনে যেতে না পেরে হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন। অন্যদিকে জাহাজমালিকেরা বলছেন, সরকারের বিভিন্ন শর্তের কারণে পর্যটকদের আগ্রহ না থাকায় জাহাজ চলাচল বন্ধ ছিল।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী দ্বীপটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। ১ নভেম্বর থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলে সরকারের কোনো বাধা নেই। লিখিতভাবে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে দিনে গিয়ে দিনেই চলে আসতে হবে; রাতে থাকা যাবে না।

এদিকে রাতে থাকার সুযোগ না থাকায় পর্যটকেরা যেতে আগ্রহী হচ্ছেন না। কারণ, দীর্ঘ সময় ভ্রমণ করে দ্বীপে গিয়ে আবার সেদিনই চলে আসতে হবে। এ কারণে জাহাজমালিকেরাও জাহাজ চালাতে অনীহা প্রকাশ করছেন। তাঁদের দাবি, দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত নয়।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. শাহিদুল আলম বলেন, জাহাজমালিকেরা যদি জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখেন, সেটা তাঁদের ব্যাপার। সেন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারের জারি করা ১২টি নির্দেশনা এবার কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করবে জেলা প্রশাসন।

শাহিদুল আলম বলেন, আগে টেকনাফ থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করলেও নিরাপত্তার কারণে এখন কক্সবাজার শহর থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে সেন্ট মার্টিনে যাতায়াত করবে।

সি ক্রুজ অপারেটরস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (স্কোয়াব) সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া ঘাট থেকে জাহাজ ছেড়ে গেলে সেন্ট মার্টিন পৌঁছাতে সাত থেকে আট ঘণ্টা সময় লাগে। ফলে পর্যটকেরা কিছুই ঘুরে দেখতে পারবেন না। দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসা যেমন কষ্টসাধ্য, তেমনি ব্যবসার জন্যও তা অলাভজনক। এ কারণেই অনেক পর্যটক সেন্ট মার্টিন যেতে অনীহা প্রকাশ করেছেন।

হোসাইন ইসলাম আরও বলেন, রাতযাপন করার সুযোগ না থাকলে সেন্ট মার্টিনের পর্যটন মৌসুম জমে না। পর্যটকেরা রাতের সৈকত দেখতে চান, ঢেউয়ের শব্দ শুনতে চান। সেটাই তো সেন্ট মার্টিনের আসল আকর্ষণ।

পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের পরিচালক মো. জমির উদ্দিন বলেন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সরকারের নির্দেশনা কঠোরভাবে কার্যকর করা হবে। এ লক্ষ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুনসেন্ট মার্টিনে নিষেধাজ্ঞা উঠছে কাল, তবে জাহাজ চলবে কি৩১ অক্টোবর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ