ফের বিতর্কে উঠে এলেন কেরালার তিরুবনন্তপুরমের কংগ্রেস সংসদ সদস্য শশী থারুর। কংগ্রেস আমলে জরুরি অবস্থার তীব্র সমালোচনা করে দেশের বিভিন্ন সংবাদপত্রে নিবন্ধ লিখে নিজেকে তিনি আবার টেনে এনেছেন বিতর্কের শীর্ষে। থারুরের নাম না করেও লোকসভায় কংগ্রেসের চিফ হুইপ মনিকম টেগোর কটাক্ষ হেনে বলেছেন, কোনো সহকর্মী যখন হুবহু বিজেপির মতো কথা বলেন তখন মনে হয় পাখিটা আর পাখি নেই। তোতা পাখি হয়ে গেছে।

কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব কেউ অবশ্য এ বিষয়ে মন্তব্য করেননি। কেরালার ওয়েনাড থেকে লোকসভায় নির্বাচিত প্রিয়াঙ্কা গান্ধীও নন। প্রিয়াঙ্কা শুধু বলেছেন, নিবন্ধটি পড়া হয়নি। এর মধ্য দিয়ে মনে হতে পারে, বিতর্কে অংশ নিয়ে থারুরকে গুরুত্ব দিতে কংগ্রেস হয়তো রাজি নয়। বারবার দলের বিরুদ্ধাচরণ করলেও কংগ্রেস সম্ভবত থারুরকে উপেক্ষা করার নীতি নিয়েছে।

কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একাংশের দৃঢ় ধারণা, থারুর চাইছেন দল তাঁকে বহিষ্কার করুক, যাতে লোকসভার সদস্যপদ তিনি ধরে রাখতে পারেন। কংগ্রেস তা করতে চায় না। দলের অধিকাংশ মনে করে, থারুর চাইলে দলত্যাগ করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে তাঁকে উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে।

১৯৭৫ সালের জুন মাসে ইন্দিরা গান্ধী দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেছিলেন। এই বছরের জুন মাসে সেই সিদ্ধান্তের বয়স হলো ৫০ বছর। এই উপলক্ষে বিজেপি দেশজুড়ে বেশ কিছু কর্মসূচি নিয়েছিল। জরুরি অবস্থা জারির নিন্দা করতে তারা সংসদের বিশেষ অধিবেশনও ডাকবে ভেবেছিল। কিন্তু পেহেলগাম–কাণ্ড ও অপারেশন সিঁদুরের পর সরকার সেই পরিকল্পনা বাতিল করে দেয়, যেহেতু বিরোধীরা বিশেষ অধিবেশন ডাকার জন্য সরকারকে চাপ দিচ্ছিল। জরুরি অবস্থা জারির নিন্দা করে বিজেপির একাধিক নেতা খবরের কাগজে নিবন্ধ লেখেন। কংগ্রেসের শশী থারুরও একই কাজ করেছেন। তাঁর লেখা নিবন্ধ দেশ ও বিদেশের বহু কাগজে প্রকাশিত হয়। সেই নিবন্ধ ‘ইন্দিরার জরুরি অবস্থা, ৫০ বছরে ভারত কী শিক্ষা পেল’ বৃহস্পতিবার প্রখম আলোতেও প্রকাশিত হয়েছে।

জরুরি অবস্থা জারির জন্য থারুর তাঁর নিবন্ধের ছত্রে ছত্রে ইন্দিরা গান্ধী ও তাঁর পুত্র সঞ্জয় গান্ধীর তীব্র সমালোচনা করেছেন। লিখেছেন, গণতন্ত্রের চারটি স্তম্ভকেই আঘাত করা হয়েছিল। বিচারব্যবস্থা প্রবল চাপে নতি স্বীকার করেছিল। সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত মানুষের মৌলিক অধিকার হরণের সিদ্ধান্তকে বৈধতা দিয়েছিলেন। তিনি লিখেছেন, বিরোধীদের দমন–পীড়ন করা, বিচারবহির্ভূত হত্যা, সাধারণ মানুষের অধিকার হরণ ছিল নৈমিত্যিক ব্যাপার। ইন্দিরা গান্ধীর ‘স্বৈরাচারী মানসিকতা’ কীভাবে সাধারণ মানুষের জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল, শশী তাঁর নিবন্ধে তা ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি লিখেছেন, জরুরি অবস্থা দেশের ছবিটাই পাল্টে দিয়েছিল। সাংবাদিক, সমাজকর্মী, বিরোধী নেতাদের ঠিকানা হয়েছিল জেলখানার গারদ।

ইন্দিরার পুত্র সঞ্জয় গান্ধীর সমালোচনা করতেও থারুর ছাড়েননি। তিনি লিখেছেন, দেশের ইতিহাসে সেটা ছিল এক অন্ধকার অধ্যায়। শান্তি ও শৃঙ্খলার প্রচারের আড়ালে জায়গা নিয়েছিল ভয়ংকর নিষ্ঠুরতা। পুরুষদের জবরদস্তি বন্ধ্যত্ব করানোর কর্মসূচি ছিল তার সবচেয়ে নির্মম উদাহরণ। দিল্লির সৌন্দর্য বাড়ানোর নামে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল অসংখ্য বস্তি। গৃহহীন হয়েছিলেন হাজার হাজার অসহায় মানুষ। স্বৈরাচারীর নিপীড়নে প্রজাতন্ত্রের আত্মা হারিয়ে গিয়েছিল।

জরুরি অবস্থার নিন্দা করে বিজেপির দেশজুড়ে ‘সংবিধান হত্যা দিবস’ কর্মসূচি পালনের সময় শশী থারুরের এই নিবন্ধ কংগ্রেসকে ক্ষুব্ধ করলেও কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব উপেক্ষার নীতি গ্রহণই সেরা উপায় বলে মনে করছে। উপেক্ষা করা হবে বলেই কেরালার নিলাম্বুর উপনির্বাচনে শশীকে প্রচারে ডাকা হয়নি। ওই আসনটি বামপন্থীদের হাত থেকে কংগ্রেস এবার কেড়ে নিয়েছে।

শশীর নাম না করে রাজ্য কংগ্রেস নেতা মনিকম টেগোর তাঁকে ‘বিজেপির তোতা’ উল্লেখ করলেও কেন্দ্রীয় নেতারা এই ধরনের বিতর্কে নীরব থাকা পছন্দ করছেন। কিন্তু তাই বলে থারুর থেমে নেই। নিবন্ধ তো লিখছেনই। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রশংসাও করে যাচ্ছেন নিয়মিত। রাজ্যে অনুষ্ঠিত এক জনমত সমীক্ষার ফল নিজের ‘এক্স ’ হ্যান্ডেলে শেয়ার করে থারুর নিজেকে মুখ্যমন্ত্রিত্বের দাবিদার হিসেবেও তুলে ধরেছেন।

ওই সমীক্ষায় দেখানো হয়েছে, অধিকাংশ মানুষ শশী থারুরকেই মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দেখতে পছন্দ করছেন। তাঁর সমর্থনে রয়েছেন ২৮ দশমিক ৩ শতাংশ, বিরোধী নেতা ভি ডি সতীশনের পক্ষে মত দিয়েছেন ১৫ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ। সাবেক বিরোধী নেতা রমেশ চেন্নিথালা পেয়েছেন ৮ দশমিক ২ শতাংশের ভোট এবং কেন্দ্রীয় নেতা কে সি বেনুগোপাল পেয়েছেন মাত্র ৪ দশমিক ২ শতাংশ।

সমীক্ষার ফল ও ‘এক্স’ হ্যান্ডেলে তা তুলে দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন করা হলে রাজ্যের কংগ্রেস নেতা কে মুরলীধরন বলেন, এমন ধরনের সমীক্ষা গাদা গাদা হচ্ছে। থারুরকে আগে ঠিক করতে হবে তিনি কোন দলের। তারপর অন্য বিষয়। মুরলীধরন বলেন, নির্বাচনে জিতলে মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন তা ঠিক করবে যুক্ত ফ্রন্টের নেতারা। আপাতত আমাদের লক্ষ্য ভোটে জেতা। সেই লক্ষ্য পূরণে শশী থারুরের যে কোনো ভূমিকা থাকবে না কংগ্রেস কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে এ নিয়ে এখনো কোনো দ্বিমত নেই।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইন দ র ন বন ধ থ র রক হয় ছ ল ব তর ক অবস থ দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

প্রথম আলো আজ শুধু পত্রিকা নয়, এটি একটি প্রতিষ্ঠান

নানা প্রতিকূলতা ও বাধা সত্ত্বেও প্রথম আলো কখনো সত্য প্রকাশে পিছপা হয়নি। সত্যই প্রথম আলোর সাহস ও শক্তি। সাহসী ও বস্তুনিষ্ঠ খবর প্রকাশের কারণে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই প্রথম আলোর পথচলা ছিল স্রোতের বিপরীতে। প্রথম আলো আজ শুধু একটি পত্রিকা নয়, এটি একটি প্রতিষ্ঠান। সমাজের অসংগতি তুলে ধরার পাশাপাশি প্রথম আলো আরও বেশি ইতিবাচক খবর উপস্থাপন করবে—এটাই পাঠকদের প্রত্যাশা।

প্রথম আলোর ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কুমিল্লায় আয়োজিত সুধী সমাবেশে অংশ নিয়ে বক্তারা এসব কথা বলেন। আজ শুক্রবার বিকেল পৌনে চারটায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ইনস্টিটিউট কুমিল্লা কেন্দ্রের মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান। এতে কুমিল্লার শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, চিকিৎসক, গণমাধ্যমকর্মী, উদ্যোক্তা, লেখক, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পদস্থ কর্মকর্তা, আইনজীবী, প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিশিষ্টজনেরা অংশ নিয়ে প্রথম আলো সম্পর্কে তাঁদের মতামত তুলে ধরেন।

জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে সমাবেশের শুরু হয়। পরে প্রথম আলোর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রসংগীত ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্যসুন্দর’ গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করা হয়। অনুষ্ঠানে আয়োজন সহযোগী হিসেবে ছিল কুমিল্লার কোটবাড়ী এলাকায় প্রতিষ্ঠিত সিসিএন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

‘আমরা প্রথম আলোর পাশে রয়েছি’

সমাবেশে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. আবুল বাশার ভূঁঞা বলেন, ‘প্রথম আলো তার নিজস্বতা নিয়ে যে জায়গায় দাঁড়িয়েছে, সেটি অবশ্যই প্রশংসনীয়। দায়িত্বশীল সংবাদ পরিবেশনে বাংলাদেশে তারাই প্রথম বলে আমি মনে করি। অতীতের মতো আগামী দিনেও প্রকৃত সত্য তুলে ধরবে প্রথম আলো সব সময়—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. আবদুল হাকিম বলেন, প্রথম আলো পত্রিকা সব সময় সত্যটাই প্রকাশ করে। এটাই তাঁদের শক্তি।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আলী রাজিব মাহমুদ বলেন, ‘২৭ বছর ধরে একটি পত্রিকা প্রকাশ হওয়া মানে এই পত্রিকা আমাকেও গড়ে তুলেছে। কারণ, এই পত্রিকার শিক্ষা পাতার নিয়মিত পাঠক ছিলাম আমি। গোটা দেশ ও গোটা বিশ্বকে হাতের মুঠোয় এনে দেওয়ার জন্য প্রথম আলোর প্রতি রইল কৃতজ্ঞতা।’

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. রাশেদুল হক চৌধুরী বলেন, ‘সকালে ঘুম থেকে ওঠে প্রথম আলো না পড়লে পত্রিকা পড়ার তৃপ্তি পাই না। প্রথম আলো ছাত্রজীবন থেকেই আমার আস্থায় রয়েছে। এখনো প্রতিদিনই প্রথম আলোর সঙ্গে আছি।’

আরও পড়ুনপ্রথম আলো বাংলাদেশের মানুষের বিজয়ের সঙ্গী২২ ঘণ্টা আগেপ্রথম আলোর ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কুমিল্লায় আয়োজিত সুধী সমাবেশে মঞ্চে বিভিন্ন অঙ্গনের বিশিষ্টজনেরা। আজ শুক্রবার বিকেলে কুমিল্লায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে

সম্পর্কিত নিবন্ধ