গাজীপুরের শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন মন্ডলের বিরুদ্ধে এক ঝুট ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ঘুষ দাবি এবং ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ উঠেছে। এ সংক্রান্ত একটি অডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে ওসিকে পাঁচ লাখ টাকা এবং একটি ফুল হাতা গেঞ্জি চাওয়ার কথা বলতে শোনা যায়। ব্যবসায়ী সেলিম সিকদার দাবি করেছেন, রেকর্ডটি সত্য এবং তিনি ওসির নিয়মিত হুমকির শিকার হচ্ছেন।

সোমবার (২১ এপ্রিল) দুপুরে সাংবাদিকদের কাছে সেলিম সিকদার বলেন, “অনেক টেনশনে আছি। অডিও ফাঁস হওয়ার আগে থেকেই ওসি বিভিন্ন মাধ্যমে ফোন দিচ্ছিলেন। রেকর্ড ফাঁসের পর উনি চাপ দিচ্ছেন, যেন ফেসবুক লাইভে এসে বলি রেকর্ডটি ভুয়া।”

অডিওতে ওসিকে বলতে শোনা যায়, “তুমি তো আমাকে গেঞ্জি দিলা না, ফুল হাতা। আচ্ছা ঢাকা থেকে নিয়ে আসব। তোমার নানা আমাকে দেখে না কেন? পাঁচ হাজার, দশ হাজার—এই টাকা দিয়ে কী হয়? আমি অনেক চাপ নিচ্ছি। তোমার নানাকে বোলো, আমাকে পাঁচ লাখ টাকা দিতে।”

সেলিম জানান, তার নানা ১০-১৫ বছর আগে শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের নগর হাওলা গ্রামে ফর্মুলা ওয়ান স্পিনিং মিলসের জন্য জমি কিনে দেন এবং তিনি শুরু থেকে সেখানে ঝুট ব্যবসা করে আসছেন।

সেলিমের ভাষ্য অনুযায়ী, ওসি জয়নাল আবেদীন ২০২৩ সালের ৫ আগস্ট থানায় যোগদানের পর তার নম্বর সংগ্রহ করে দেখা করতে বলেন। পরে থানায় গিয়ে জানতে পারেন, ব্যবসা চালিয়ে যেতে হলে তাকে প্রতি মাসে দুই লাখ টাকা করে দিতে হবে। প্রথম মাসে এক লাখ, পরে দেড় লাখ থেকে দুই লাখ পর্যন্ত টাকা দিতে হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

এছাড়া সাহাবুদ্দিন নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা এবং সেলিমের খালু জাকিরের কাছ থেকেও অর্থ নিয়েছেন ওসি—এমন অভিযোগও তোলেন সেলিম। 

সেলিম বলেন, “যেহেতু আমি পাঁচ লাখ টাকা দিতে পারিনি, তাই আমাকে গ্রেপ্তারের হুমকি দেন এবং এক পর্যায়ে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। পরে আমাকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়। আমার পরিবারের কাছ থেকে গরু বিক্রির আড়াই লাখ টাকা নিয়ে আমাকে ছেড়ে দেন।”

তিনি আরো অভিযোগ করেন, পৌরসভার তুলা গবেষণা মাঠ এলাকায় এক বৈঠকে ওসি সরাসরি বলেন, ব্যবসা করতে হলে তাকে টাকা দিতে হবে। তখনই তিনি ফোনে কথোপকথনের রেকর্ড করেন। 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি জয়নাল আবেদীন মন্ডল বলেন, “অডিওটি আমার না। একটি চক্র আমার কণ্ঠ নকল করে বা এডিট করে তা ছড়িয়েছে।”

এ বিষয়ে গাজীপুর জেলার পুলিশ সুপার ড.

চৌধুরী যাবের সাদেকের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

ঢাকা/রফিক/বকুল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ

সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়। 

গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’ 

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।

টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন। 

এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’ 

সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।

সম্পর্কিত নিবন্ধ