এ বছর বাংলাদেশি হজযাত্রীদের সৌদি আরবে থাকার জন্য বাড়িভাড়া নেওয়ার কাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (হজ) মো. মতিউল ইসলাম। আজ সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে সৌদি আরবের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।

সৌদি পাসপোর্ট বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সালেহ বিন সাদ আল মুরাব্বা ১১ সদস্যের সৌদি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট বিভাগের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো.

নূরুল আনোয়ারসহ ১১ জন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মতিউল ইসলাম বলেন, গত বছর ১০০–এর কম যাত্রীর ব্যাগ নিয়ে ঝামেলা হয়েছে, এবার যেন সেটি না হয় সে জন্য আরএফআইডি (রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন) ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে ব্যাগের অবস্থান শনাক্তের ব্যবস্থা থাকবে। ফলে এবার সেটি সহজে খুঁজে পাওয়া যাবে। সৌদি আরব এ সুবিধা দেবে।

এ সময় মতিউল ইসলাম বলেন, ইতিমধ্যে বাংলাদেশি হজযাত্রীদের জন্য বাড়িভাড়া নেওয়ার কাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। তিনি আরও জানান, ভিসা নিয়ে কোনো জটিলতার শঙ্কা নেই, ভিসা পাওয়ার হার ভালো।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে কথা বলেন ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট বিভাগের মহাপরিচালক নূরুল আনোয়ার। সৌদি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে যাওয়া হাজিদের হজযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে করণীয় বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি মক্কা রুট ইনিশিয়েটিভের আওতায় হাজিদের জন্য যে সুযোগ-সুবিধাগুলো দেওয়া হচ্ছে, সেগুলো বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

নূরুল আনোয়ার বলেন, মক্কা রুট ইনিশিয়েটিভের আওতায় হাজিদের ঢাকাতেই ইমিগ্রেশনের কাজ সম্পন্ন করা হয় এবং সৌদি আরবে হাজিদের থাকার জায়গায় লাগেজ পৌঁছে দেওয়ার বিষয়টি রয়েছে। তবে এ সুবিধা পাবেন শুধু হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে যাওয়া হজযাত্রীরা। দেশের অন্য বিমানবন্দরেও এ সুবিধা চালুর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

এবার ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে ৭৭ হাজার ১০০ হজযাত্রী হজে যাবেন। বাকি ১০ হাজার হজযাত্রী দেশের অন্য বিমানবন্দর হয়ে সৌদি আরবে যাবেন। এ বছর ৮৭ হাজার ১০০ হজযাত্রীর বাংলাদেশ থেকে হজে যাওয়ার কথা রয়েছে।

সৌদি ভিশন ২০৩০-এর অন্যতম কর্মসূচি পিলগ্রিম এক্সপেরিয়েন্স প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে ২০২২ সালে একটি চুক্তির মাধ্যমে মক্কা রুট ইনিশিয়েটিভ নামের উদ্যোগটি নেয় দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই উদ্যোগে বাংলাদেশ, মরক্কো, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, তুরস্ক ও আইভরি কোস্ট—এই ৭টি দেশের ১১টি বিমানবন্দরে ডেডিকেটেড লাউঞ্জ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হজয ত র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

মদিনায় রয়েছে বেহেশতের বাগান

মদিনার পূর্ব নাম ইয়াসরিব। রাসুলুল্লাহ (সা.) হিজরতের পর এই শহরের নাম হয় মদিনাতুন্নবী বা নবীর শহর। মদিনা হচ্ছে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আশ্রয়ভূমি; প্রেম, ধৈর্য ও আত্মত্যাগের উজ্জ্বল দৃষ্টান্তস্থান এবং সত্যনিষ্ঠার পুণ্যময় কর্মক্ষেত্র। এটি নবীজি (সা.)-এর শহর, শান্তির নগর। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে আমার রওজা জিয়ারত করল, তার জন্য আমার সাফায়াত ওয়াজিব হয়ে গেল।’ (দারুকুতনি: ২৬৯৫; বায়হাকি: ৩৮৬২)

রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, ‘যে হজ করল, কিন্তু আমার রওজা জিয়ারত করল না, সে আমার প্রতি জুলুম করল।’ (দারুকুতনি, পৃষ্ঠা: ২৭২) ফকিহদের মতে, মদিনা শরিফ জিয়ারত করা সুন্নত। আল্লামা ইউসুফ ইসলাহি (রহ.) বলেন, ‘হাজি সাহেবদের জন্য রওজা শরিফ জিয়ারত করা ওয়াজিব।’ (আসান ফিকাহ, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ২৫০)

নবী করিম (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার মসজিদে ৪০ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেছে এবং কোনো নামাজ কাজা করেনি, সে নিফাক এবং দোজখের আজাব থেকে মুক্ত।’ (তাবরানি, খণ্ড: ৫, পৃষ্ঠা: ৩২৫, হাদিস: ৫৪৪৪ ও তিরমিজি: ২০০)। তিনি আরও বলেন, ‘মসজিদে নববিতে এক রাকাত নামাজ পড়লে তার সওয়াব ৫০ হাজার রাকাত নামাজের সমান।’ (ইবনে মাজাহ: ৭৫২)

রওজা শরিফ এবং এর পশ্চিম দিকে নবীজি (সা.)-এর মিম্বর পর্যন্ত স্বল্প পরিসর স্থানকে রিয়াজুল জান্নাত বা বেহেশতের বাগান বলা হয়

মসজিদে নববির সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ স্থান হলো নবীজি (সা.)-এর রওজা শরিফ, যা হজরত আয়েশা (রা.)-এর হুজরার মধ্যে অবস্থিত। এই রওজার পাশে হজরত আবু বকর (রা.) এবং তাঁর পাশেই হজরত ওমর (রা.)-এর মাজার অবস্থিত। এখানে আরেকটি কবরের স্থান খালি রাখা হয়েছে, যেখানে হজরত ঈসা (আ.)-এর দাফন হবে বলে বর্ণিত আছে।

রওজা শরিফ এবং এর পশ্চিম দিকে নবীজি (সা.)-এর মিম্বর পর্যন্ত স্বল্প পরিসর স্থানকে রিয়াজুল জান্নাত বা বেহেশতের বাগান বলা হয়। এই স্থান আলাদা রঙের (ধূসর সাদাটে) কার্পেট দ্বারা চিহ্নিত থাকে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমার ঘর ও মিম্বরের মধ্যবর্তী স্থানে জান্নাতের একটি বাগান রয়েছে।’ (বুখারি: ১১৯৬, মুসলিম: ১৩৯১)

মসজিদে নববির পূর্ব দিকে অবস্থিত গোরস্থানকে জান্নাতুল বাকি বলা হয়, যেখানে অসংখ্য সাহাবি, আউলিয়া, বুজুর্গ ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানের কবর রয়েছে।

মদিনার উত্তর-পূর্ব দিকে ঐতিহাসিক ওহুদ পাহাড় ও ওহুদের প্রান্তর অবস্থিত, যা মসজিদে নববি থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে। এখানে হজরত হামজা (রা.)-সহ ৭০ জন সাহাবি শহীদ হন। এখানেই কাফেররা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দাঁত মোবারক শহীদ করেন। এখানে একটি মসজিদ ও মাদ্রাসা রয়েছে।

কিবলাতাইন মসজিদ: হিজরতের প্রায় দেড় বছর পর এই মসজিদ থেকে তৎকালীন কিবলা বায়তুল মোকাদ্দাসের দিকে জোহরের নামাজ পড়ার সময় নবীজি (সা.)–এর কাছে ওহি নাজিল হয় যে ‘তুমি এখনই এই অবস্থায় কাবার দিকে কিবলা করে নামাজ সমাধা করো।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৪৪)

কুবা মসজিদ: এটি ইসলামের প্রথম মসজিদ। এটি রাসুলে করিম (সা.)–এর নিজ হাতে তৈরি। মসজিদুল হারাম, মসজিদে নববি ও মসজিদুল আকসার পরই মসজিদে কুবার সম্মান। এখানে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়লে এক ওমরাহর সওয়াব হয়।

খন্দক প্রান্তরের পাশে অতি অল্প পরিসর স্থানের মধ্যে পাশাপাশি ছয়টি মসজিদ আছে। এগুলো হচ্ছে মসজিদে ফাতাহ, মসজিদে সালমান ফারসি (রা.), মসজিদে আবু বকর সিদ্দিক (রা.), মসজিদে ওমর (রা.), মসজিদে আলী (রা.), মসজিদে ফাতিমা (রা.)।

রাসুল করিম (সা.) প্রথম জুমা বনি ছালেমের মহল্লায় এই মসজিদে পড়েন। এই মসজিদকে ‘মাসজিদে জুমুআ’ বলা হয়।

মাসজিদে গামামা: গামামা অর্থ মেঘ। রাসুলুল্লাহ (সা.) এই মসজিদে ঈদের জামাতে ইমামতি করতেন এবং একসময় বৃষ্টির জন্য ‘ইসতিসকার’ নামাজ পড়েছিলেন।

বদর প্রান্তর: এখানে ইসলামের বিজয়সূচক প্রথম যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ১৪ জন সাহাবি এতে শাহাদাতবরণ করেন। এখানে শহীদদের কবর রয়েছে।

মসজিদে সাকিয়া: বদরের যুদ্ধের সময় রাসুল (সা.) এই মসজিদে নামাজ পড়েছিলেন এবং মদিনাবাসীর জন্য দোয়া করেছিলেন।

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

[email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মদিনায় রয়েছে বেহেশতের বাগান