দর পতন থেকে বের হতে পারছে না শেয়ারবাজার
Published: 21st, April 2025 GMT
দর পতন থেকে বের হতে পারছে না শেয়ারবাজার। গত সপ্তাহের চার কর্মদিবসের প্রতিদিন ঢাকার শেয়ারবাজারে সূচক কমে যায়। চলতি সপ্তাহের প্রথম দুই দিনেও একই অবস্থা। প্রতিদিনই বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ সব শেয়ার বিক্রি করে লোকসান নিয়ে বাজার ছাড়ছেন। এ নিয়ে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত টানা ষষ্ঠ দিনের দর পতনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ১৬০ পয়েন্ট কমেছে। পতনের হার ৩ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। সূচক নেমেছে
৫০৪৪ পয়েন্টে। এর আগে গত বছরের নভেম্বরের দ্বিতীয় ও তৃতীয় সপ্তাহ মিলে এমন দর পতন হয়।
গত ছয় দিনে তালিকাভুক্ত ৩৬০ কোম্পানির মধ্যে ২৮৬টির বা ৭৯ শতাংশের দর পতন হয়েছে।
এ ছাড়া তালিকাভুক্ত ৩৭ মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর হারিয়েছে ৩২টি। লেনদেন কমে গতকাল নেমেছে ৩০০ কোটি টাকার ঘরে।
কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বাজারে আসা ছেড়ে দিয়েছেন। এখনও যাদের শেয়ার আছে, এমন বিনিয়োগকারীরা জানতে চাচ্ছেন, এ বাজার আদৌ ‘ভালো’ হওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা। বিনিয়োগকারীদের তারা কোনো উত্তর দিতে পারছেন না।
অন্তর্বর্তী সরকারের শুরুর দিকে দায়িত্ব গ্রহণের পর বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ ঘোষণা দেন, তাঁর লক্ষ্য অন্তত ৫০ লাখ বিনিয়োগকারী বাড়ানো। ডিজিটাল ব্যবস্থায় শেয়ার ধারণের তথ্য সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এ সময়ে উল্টো প্রায় ৬৫ হাজার বিনিয়োগকারী বাজার ছেড়েছেন।
ডিএসইর ব্রোকারদের সংগঠন ডিবিএ সভাপতি সাইফুল ইসলাম সমকালকে বলেন, বিনিয়োগকারী বাড়ানো বা কতজন বিনিয়োগকারী আসবে, তার লক্ষ্য নির্ধারণ করা বিএসইসির কাজ নয়। বিএসইসির কাজ হলো, বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ে সম্মিলিতভাবে এমন পরিবেশ তৈরি করা, যেখানে বিনিয়োগকারীরা স্বচ্ছন্দে বিনিয়োগ করতে আস্থা পান। দুঃখজনক হলেও সত্য, এমন পরিবেশ বিএসইসি তৈরি করতে পারেনি। বিনিয়োগ পরিবেশ ঠিক নেই বলে বাজারও ঠিক নেই।
ডিবিএ সভাপতি বলেন, শেয়ারবাজারই ঠিকভাবে চলছে না। বাজার কোন দিকে যাচ্ছে বা কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, সে বিষয়ে বিনিয়োগকারী এবং বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানের কেউ দিকনির্দেশনা পাচ্ছে না। একদিকে বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারাচ্ছেন, অন্যদিকে লেনদেন কমে যাওয়ায় ব্রোকারেজ হাউস, মার্চেন্ট ব্যাংকসহ সব মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান আয় হারিয়ে চরম দুর্দশায় পড়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের ঠিকমতো বেতন দিতে পারছে না। গেল ঈদের সময় অনেক প্রতিষ্ঠান কর্মীদের পূর্ণ বোনাস দিতে পারেনি। আগামী ঈদেও একই অবস্থা হবে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন।
এ বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সঙ্গে কথা হয়েছে কিনা– জানতে চাইলে সাইফুল ইসলাম বলেন, গত আট মাসে কয়েকবার কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে তারা বাজার নিয়ে উদ্বেগের কথা বলেছেন। কিন্তু কমিশনের কোনো উদ্যোগ দেখছেন না। উদ্যোগ না থাকার কারণ হতে পারে, কমিশন ঠিকমতো কাজ করতে পারছে না। গত মাসে বিএসইসিতে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার মধ্য দিয়ে এর কিছুটা প্রকাশ হয়েছে। বিনিয়োগকারীরা এসব বিষয় পর্যবেক্ষণ করছেন। এর কোনো সমাধান হয়েছে কিনা– খোদ কমিশন থেকে তেমন কোনো বার্তা নেই। ফলে বিনিয়োগকারীরা যা বোঝার বুঝে নিচ্ছেন। তিনি মনে করেন, বর্তমান কমিশনের কর্মকর্তারা কর্মকর্তা না হয়ে যদি শুধু বিনিয়োগকারী হতেন, তাহলেও তারাও এমন বাজারে বিনিয়োগ করতেন না বা বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নিতেন।
করণীয় জানতে চাইলে দীর্ঘ অভিজ্ঞ এ ব্রোকার বলেন, সময় কখনও শেষ হয়ে যায় না। বর্তমান অবস্থায় বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ সব অংশীজনের একসঙ্গে বিনিয়োগকারীদের এই বলে আশস্ত করতে হবে, তারা বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আছেন। বিনিয়োগকারী জানেন, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। তারা শুধু এটাই দেখতে চান, তাদের বিনিয়োগ সুরক্ষিত রাখতে সংশ্লিষ্টরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছেন এবং বিনিয়োগ থেকে মুনাফা পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এ জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে এবং এটা আগে অনুধাবন করতে হবে, যে বাজার নিয়ে তারা কাজ করছেন, তা ঠিক নেই।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ য় রব জ র শ য় রব জ র ব এসইস র দর পতন র কর ম করছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
পুঁজিবাজারে আস্থা ফেরাতে একগুচ্ছ পদক্ষেপ নেবে বিএসইসি
শেয়ার সূচকের নিয়মিত পতনের মূল কারণ খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সেই সঙ্গে যেসব শেয়ারের অস্বাভাবিক বিক্রির চাপ দেখা যাচ্ছে, বাজার তদারকির মাধ্যমে সেসব শেয়ার চিহ্নিত করা হবে বলেও জানিয়েছে তারা।
দেশের পুঁজিবাজারে সাম্প্রতিক নিম্নমুখী প্রবণতার পরিপ্রেক্ষিতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। গতকাল মঙ্গলবার এক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। সভায় পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে তাৎক্ষণিক কিছু কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী। এ ছাড়া সভায় বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক, বিএসইসির কমিশনার মু. মোহসিন চৌধুরী, মো. আলী আকবর, ফারজানা লালারুখ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্ম সচিব দেলোয়ার হোসেন, পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের প্রতিনিধি ও বিএসইসির নির্বাহী পরিচালকেরা উপস্থিত ছিলেন।
সভার সিদ্ধান্ত হয়, বিনিয়োগকারীদের জ্ঞান ও সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় টক শো ও বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। পাশাপাশি বিআইসিএম ও বিএএসএম পুঁজিবাজার-বিষয়ক শিক্ষণীয় ভিডিও তৈরি করবে। ফেসবুক ও ইউটিউবের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে পুঁজিবাজার সম্পর্কে ইতিবাচক বার্তা প্রচার ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সচেতন করা হবে।
প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির শেয়ার পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রমালিকানাধীন লাভজনক কোম্পানির শেয়ার অফলোড করা, বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্তিতে উৎসাহিত করা এবং টেক্সটাইল ও ওষুধ খাতের দেশী লাভজনক কোম্পানিগুলোর শেয়ার পুঁজিবাজারে নিয়ে আসা হবে।
যেসব কোম্পানি এখনো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়নি, তাদের তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত করার জন্য আকর্ষণীয় করছাড় দেওয়া হবে। পাশাপাশি ব্যাংকিং খাত থেকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের সুযোগ সীমিত করা এবং পুঁজিবাজারকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের প্রধান উৎস হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয়, পুঁজিবাজারের উন্নয়নের স্বার্থে দেশের আর্থিক খাতের অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে সমন্বয় বাড়ানো হবে। সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা ও প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা হবে। এ ছাড়া আসন্ন জাতীয় বাজেটে বিনিয়োগকারীদের জন্য করছাড়ের সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব করা হবে। এর মধ্যে লভ্যাংশ আয়ের ওপর করছাড় এবং পুঁজিবাজারের বিনিয়োগের ওপর বিশেষ করছাড়ের সুবিধা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।