ঘুষ চাওয়ার অডিও ফাঁস: শ্রীপুরের ওসির বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি
Published: 22nd, April 2025 GMT
গাজীপুরের শ্রীপুর থানার ওসি মো. জয়নাল আবেদীন মণ্ডলের বিরুদ্ধে ঘুষ চাওয়ার অভিযোগে প্রকাশিত অডিও ক্লিপ ঘিরে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং অডিওটি ফরেনসিক পরীক্ষায় পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
অডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপে ভাইরাল হওয়ার পর বিষয়টি পুলিশের নজরে আসে। মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) দুপুরে গাজীপুরের পুলিশ সুপার ড.
ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন নগরহাওলা গ্রামের ঝুট ব্যবসায়ী সেলিম সিকদার, যিনি অভিযোগ করেছেন, থানার ওসি তাঁর কাছে মোটা অঙ্কের ঘুষ দাবি করেন। ভাইরাল অডিওটিতে শোনা যায়, এক ব্যক্তি আরেকজনকে টাকা দেওয়ার বিষয়ে চাপ প্রয়োগ করছেন। অভিযোগকারীর দাবি, এই কণ্ঠ ওসি জয়নালের। তবে ওসি জয়নাল আবেদীন মণ্ডল তা অস্বীকার করে বলেন, ‘‘এটি একটি ষড়যন্ত্র। অডিওটি এডিট করা এবং এটি আমার কণ্ঠ নয়।’’
আরো পড়ুন:
বিএনপি নেতার বাড়ির সামনে ককটেল বিস্ফোরণ
বরিশালে গুলিতে মাদক কারবারি নিহত, ১ জন গুলিবিদ্ধ
এদিকে তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু করেছে। সেলিম সিকদারকে পুলিশ সুপারের দপ্তরে ডেকে পাঠানো হয়েছে। জেলা পুলিশের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, অডিওটি ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হবে, যাতে কণ্ঠ শনাক্ত করা যায় এবং কোনো কারসাজি হয়েছে কি-না, তা নিরূপণ করা যায়।
স্থানীয় পর্যায়ে এ ঘটনা পুলিশের ভাবমূর্তিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এলাকাবাসী স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। মানবাধিকার সংস্থার এক প্রতিনিধির মন্তব্য, ‘‘এই ধরনের ঘটনায় দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে দোষী ব্যক্তিকে চিহ্নিত না করলে সাধারণ মানুষের মধ্যে পুলিশ সম্পর্কে আস্থাহীনতা বাড়বে।’’
তদন্ত কমিটির রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর জেলা পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলে জানানো হয়েছে। এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেবে।
বিষয়টি নিয়ে দেশের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজপোর্টাল রাইজিংবিডিডটকম-এ সোমবার (২১ এপ্রিল) ‘গাজীপুরে ওসির ৫ লাখ টাকা ঘুষ চাওয়ার অডিও ফাঁস’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
ঢাকা/রফিক/বকুল
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
৮% জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে কীভাবে ঐক্য হয়, প্রশ্ন সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনসহ কোনো সংস্কার কমিশনে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি দেখা যায়নি বলে মন্তব্য করেছে সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলন। তাদের প্রশ্ন, ঐকমত্য কমিশনে কোনো রাজনৈতিক দলকেও প্রশ্ন করতে দেখা গেল না যে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৮ শতাংশ জনগোষ্ঠীর কোনো প্রতিনিধি না থাকলে বা তাদের বাদ দিয়ে কীভাবে ঐক্য গঠন হয়।
‘অভ্যুত্থান পরবর্তী এক বছরে ৮% জনগোষ্ঠীর অবস্থা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্ন তোলা হয়েছে সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের লিখিত বক্তব্যে। আজ শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সংগঠনটি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) তরুণ রায়। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গণ-অভ্যুত্থানের আগে হোক বা পরে, রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে এখনো ৮ শতাংশ শুধু রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করার জায়গা। তাদের অধিকার নিয়ে সচেষ্ট হতে দেখা যাচ্ছে না কোনো রাজনৈতিক দলকে। সে ক্ষেত্রে এমন অবস্থা চলমান থাকলে ৮ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে নিজেদের অস্তিত্বের জানান দিতে ভবিষ্যতে নির্বাচনের সময় ভোটকেন্দ্র বয়কটের সিদ্ধান্তও নিতে হতে পারে।
সংবাদ সম্মেলন থেকে বলা হয়, গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষেরা আক্রান্ত হতে থাকেন। তাৎক্ষণিকভাবে গত বছরের ৯ আগস্ট থেকে সংখ্যালঘুরা জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলেন। সেই আন্দোলন থেকে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠনসহ ৮ দফা দাবি তোলা হয়। সেসব দাবি বাস্তবায়নে তখন অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিল। কিন্তু গত ১ বছরে ৮ দফা দাবি বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকারের আশানুরূপ কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হয়নি।
সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলন লিখিত বক্তব্যে আরও উল্লেখ করেছে, বিগত ৫৩ বছরে কোনো সরকারই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি। আগামী দিনের নিরাপত্তা ও অধিকার রক্ষায় ৮ দফার বাস্তবায়ন করতে হবে। ৮ দফা যে দেশের ৮ শতাংশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রত্যেকের মনের কথা জানান দিতে ২২ আগস্ট ‘জাতীয় সংখ্যালঘু সম্মেলন-২০২৫’ আয়োজন করা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক সুস্মিতা কর বলেন, সরকারের ঐকমত্য কমিশনে সংখ্যালঘু প্রতিনিধি নেই। দেশের একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীকে নিয়ে তো ঐকমত্য গঠন হতে পারে না। গত বছরের ৯ আগস্ট থেকে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নিজেদের অধিকার নিয়ে সচেষ্ট আছে। সংখ্যালঘুদের সব সংগঠন আট দফা দাবিতে একাত্ম। যদি নির্বাচন–পূর্ববর্তী সময়ে সরকার কিংবা রাজনৈতিক দলগুলো থেকে এসব দাবি বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করতে না দেখা যায়, তাহলে হয়তো সংখ্যালঘুরা ভোট বয়কট লড়তে পারে।
এই সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের প্রচার সম্পাদক সুব্রত বল্লভ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির আদিবাসী সংগঠক সুমন ত্রিপুরা।