পৃথিবীর শীতলতম আর্কটিক অঞ্চলে এত দ্রুত পরিবর্তন আসবে, এমনটা কয়েক দশক আগেও কেউ কল্পনা করেননি। সবকিছু বদলাচ্ছে। যেখানে বরফের সুউচ্চ আস্তরণ ছিল, সেখানে সবুজ অঞ্চল ভেসে উঠছে। দেখতে মনোরম হলেও এ এক বিশাল বিপর্যয়ের বার্তা, সতর্কতা সংকেত। উত্তর মেরু বা আর্কটিকে শুধু বরফই থাকার কথা, সেখানে গাছগাছালি, ঘাস, সবুজের বিস্তার হওয়াটাই অস্বাভাবিক।
 
আর্কটিকে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার প্রভাব পড়ছে এর আশপাশের বরফ আচ্ছাদিত এলাকায়ও। গ্রিনল্যান্ডের মতো অঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকায় বরফ গলতে শুরু করেছে। সম্প্রতি ডেনমার্কের শাসনে থাকা দ্বীপটির দখল নেওয়ার হুমকি দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সাইবেরিয়ার উত্তর তীরে রাশিয়া ও চীনের আগ্রহ বাড়ার প্রেক্ষাপটে ট্রাম্পের এ অভিলাষ নতুন করে গ্রিনল্যান্ডকে সবার সামনে এনেছে।

পুরো বিষয়টিই ভূরাজনীতি। যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা থেকে ফিনল্যান্ডের একেবারে উত্তরের ল্যাপল্যান্ড– আর্কটিক অঞ্চলের গন্তব্যগুলো দর্শনার্থীদের কাছে এখন বেশ জনপ্রিয়। পর্যটক এসব এলাকায় ঘুরে বরফ-পাহাড়ের রোমাঞ্চ উপভোগ করেন। এ সুযোগ কাজে লাগাতে চাচ্ছে বিভিন্ন পর্যটন কোম্পানি।
 
ওশানস্কাই ক্রুজ নামে সুইডেনের এক স্টার্টআপ কোম্পানি উত্তর মেরুতে বিলাসবহুল বিমানযাত্রা চালানোর পরিকল্পনা করছে, যদিও এর কার্যক্রম শুরুর দিন-তারিখ এখনও ঠিক হয়নি। কিন্তু আমাদের গ্রহের শীর্ষবিন্দু (উত্তর মেরু) বহুকাল ধরে ভ্রমণপিপাসুদের নাগালের বাইরে থাকলেও সম্প্রতি কয়েকটি বিমান সংস্থা অবিশ্বাস্যভাবে এর কাছাকাছি ওড়ার চেষ্টা করছে।

এখন আসা যাক আলোচ্য বন্দরটি প্রসঙ্গে। নরওয়ের সোয়ালবার্ড দ্বীপপুঞ্জের সোয়ালবার্ড বিমানবন্দরটি বিশ্বের সবচেয়ে উত্তরের বিমানবন্দর, যেখানে নির্ধারিত বাণিজ্যিক ফ্লাইটের ব্যবস্থা রয়েছে। দুটি বিমান সংস্থা– এসএএস ও নরওয়েজিয়ানের উড়োজাহাজ দ্বীপপুঞ্জের প্রধান বসতি লংইয়ারবাইন বিমানবন্দর ও দক্ষিণে ৮০০ কিলোমিটারের বেশি দূরে নরওয়ের মূল ভূখণ্ডের মধ্যে সারাবছর চলাচল করে। বিমানবন্দরটি নিয়মিতভাবে চার্টার ফ্লাইট ও ব্যক্তিগত জেট বিমানও স্বাগত জানায়। এটি এর অনন্য ভৌগোলিক অবস্থানের আকর্ষণ।

কার্যত আর্কটিক বিশ্বের সবচেয়ে পরিবেশগতভাবে ভঙ্গুর অঞ্চলগুলোর মধ্যে একটি। এ অঞ্চলে থাকা সোয়ালবার্ড বিমানবন্দরও এরই মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলা করতে শুরু করেছে। ১৯৭০-এর দশকের গোড়ার দিকে যখন লংইয়ারবাইনের ২ হাজার ৩০০ মিটার দীর্ঘ রানওয়ে তৈরি করা হয়েছিল, তখন কেউ আশা করেনি যে এটির ওপর নির্মিত পারমাফ্রস্ট স্তরটি গলে যাবে। কিন্তু এখন ঠিক তাই ঘটছে।

পারমাফ্রস্ট বলতে এমন ভূমিকে বোঝায়, যা কমপক্ষে দুই বছর ধরে হিমায়িত থাকে। পারমাফ্রস্টের উত্তাপ ও গলানো সোয়ালবার্ডের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক রাগনহিল্ড কোমিসরুড বলেন, ‘গ্রীষ্মের মাসগুলোতে আমাদের প্রতিদিন রানওয়েটি সাবধানতার সঙ্গে পরীক্ষা করতে হয়। কারণ, মাটি যে কোনো সময় দেবে যেতে পারে। এটি এমন একটি চ্যালেঞ্জ, যা আমরা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও খারাপ হতে পারে বলে শঙ্কা করছি।’ খবর সিএনএন


 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: নরওয়

এছাড়াও পড়ুন:

অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার

অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় ওই চারজনের কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবের শুনানি শেষে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বহিষ্কৃত সদস্যরা হলেন আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক, সৈয়দ কবির হোসেন, রফিকুল ইসলাম রফিক ও তরফদার আবদুল মুকিত। তাঁদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আদালতের সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।

এ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম এ গফুর বলেন, ‘অভিযোগ প্রমাণিত হওয়াতে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেউ সমিতির নিয়মনীতির ঊর্ধ্বে নন। বৃহস্পতিবার ওই চার সদস্যকে বহিষ্কারের বিষয়টি নোটিশ দিয়ে জানানো হবে।’

সমিতি সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য সৈয়দ কবির হোসেনের (জনি) কাছে ৩৫ লাখ টাকায় শহরের বারান্দীপাড়া কদমতলা এলাকায় জমি বিক্রি করেন ইমরান হাসান। জমি রেজিস্ট্রির আগে সব টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও সৈয়দ কবির হোসেন ১০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। বাকি ২৫ লাখ টাকা না দিয়ে টালবাহানা করতে থাকেন। পরে তিনি আরও ১৭ লাখ টাকা দেন। বাকি ৮ লাখ টাকা চাইলে হুমকি দিতে থাকেন কবির হোসেন। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে ইমরান হাসান আইনজীবী সমিতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।

সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শেষে কবির হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কবির হোসেনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।

এ বিষয়ে আইনজীবী কবির হোসেন বলেন, ‘বহিষ্কারের বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে যে বিষয়ে আমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, সেই বিষয়ে অভিযুক্ত আমি নই। তারপরও আইনজীবী সমিতি আমার অভিভাবক; তারা যে ব্যবস্থা নিয়েছে, তার বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।’

অন্যদিকে অভয়নগরের নওয়াপাড়ার জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশন পাওনা টাকা আদায়ে আবদুর রাজ্জাককে মামলার আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছিল। ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আবদুর রাজ্জাক আটটি চেকের মামলা পরিচালনা করেন। এসব মামলার রায় ও আপিল বাদীর অনুকূলে যাওয়ার পর আটটি চেকের ৪১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে নেন আবদুর রাজ্জাক। এ টাকা জয়েন্ট ট্রেডিং কর্তৃপক্ষকে না দিয়ে তিনি ঘোরাতে থাকেন। চলতি বছরের ৪ জুন তিনি ১৫ লাখ টাকার একটি চেক দেন। চেকটি ব্যাংকে জমা দিলে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় নগদায়ন করা যায়নি। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল ওহাব গত ২৮ জুলাই আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে যশোর আইনজীবী সমিতি‌ বরাবর অভিযোগ করেন।

এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আবদুর রাজ্জাককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় যশোর আইনজীবী সমিতি। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় আবদুর রাজ্জাককে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া রফিকুল ইসলাম রফিক তাঁর সহকর্মীর সঙ্গে অসদাচরণ ও মামলা করতে টাকা ও কাগজপত্র নিয়ে মামলা না করায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। আইনজীবী তরফদার আবদুল মুকিতের বিরুদ্ধেও নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে তাঁকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ