ফেব্রুয়ারিতে ফুসফুসের ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন পোপ ফ্রান্সিস। এর মাত্র তিন দিন আগে তিনি অভিবাসীদের ব্যাপারে ট্রাম্পের মনোভাব সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি কঠোর বার্তা দিয়েছিলেন। দেশটির রোমান ক্যাথলিক বিশপদের তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়েছিলেন, অবৈধ অভিবাসীদের ব্যাপারে ট্রাম্পের গণনির্বাসন পরিকল্পনার সঙ্গে তিনি সম্পূর্ণ একমত নন। তাঁর মতে, ‘যা বল প্রয়োগের ভিত্তিতে তৈরি এবং মানুষের সমমর্যাদার সত্যবাণীর ওপর প্রতিষ্ঠিত নয়, তা খারাপভাবে শুরু হয় এবং সেভাবে শেষ হয়।’

এই অনুভূতি কেবল ট্রাম্পের ব্যাপারে সীমাবদ্ধ ছিল না। পোপ হিসেবে তাঁর ১২ বছরের কর্মজীবনে তিনি মানুষের মর্যাদার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন, বিশেষত যাদের অন্যরা বহিরাগত হিসেবে গণ্য করে। সবার প্রতি তিনি সমমর্যাদা দিয়ে বিচার করতেন। সোমবার ৮৮ বছর বয়সে তিনি মারা গেছেন। বহিরাগতদের প্রতি এই গুরুত্ব দেওয়া ফ্রান্সিসের নিজের অভিজ্ঞতা থেকে কিছুটা উদ্ভূত।
তিনি ভ্যাটিকান থেকে প্রায় ৭ হাজার মাইল দূরে আর্জেন্টিনায় বেড়ে ওঠেন এবং অভিবাসী পরিবারের সন্তান ছিলেন।

এসব অভিজ্ঞতা ফ্রান্সিসের চিন্তাভাবনায় ভূমিকা রাখলেও যিশু খ্রিষ্টের জীবন ও শিক্ষাবিষয়ক বইগুলোও প্রভাব রেখেছে।
তিনি খ্রিষ্টীয় বিশ্বাসের অন্যতম মহান প্রচারক হিসেবে গড়ে উঠেছিলেন। সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে তাঁর সাধারণ শ্রোতাদের কাছে তিনি একজন আনুষ্ঠানিকভাবে পুরোহিতের মতো আড্ডা দিতেন।
সেন্ট পিটারের উত্তরাধিকার হিসেবে তিনি অ্যাপোস্টোলিক প্রাসাদ ত্যাগ করে কাসা সান্তা মার্টায় একটি সাধারণ কক্ষে বসতেন, যা রোম দর্শনে আসা বিশপ ও কার্ডিনালদের বাসস্থান ছিল।
ফ্রান্সিস ছিলেন এমন একজন পোপ, যিনি পোপের জাঁকজমক চাননি। এর পেছনেও ছিল এক গভীর বিষয়। অর্থনৈতিক দুর্দশা, যুদ্ধ ও রাজনীতি যেমন তাঁর এই জীবনাচরণে ভূমিকা রেখেছে, তেমনি রেখেছে ইউরোপ ও আমেরিকাজুড়ে শরণার্থীর ঢেউ। সেই সঙ্গে জলবায়ু সংকটে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের প্রতি তাঁর ছিল ব্যাপক সহানুভূতি।

তাঁর সবচেয়ে শিক্ষণীয় ও বহুল প্রচারিত দলিল হলো ‘লাউদাতো সি’। ২০১৫ সালে এটি প্রকাশ পায়। এতে জলবায়ু বিপর্যয় থেকে গ্রহকে রক্ষার জন্য বৈজ্ঞানিক ও ধর্মতাত্ত্বিক কারণগুলো তুলে ধরা হয়েছে। তিনি প্রায়ই তাঁর দর্শনার্থীদের এই দলিলের একটি অনুলিপি উপহার দিতেন। ২০১৭ সালে ট্রাম্পের হাতেও একটা কপি তুলে দেন। 
ন্যায়বিচার, পরিবেশ ও দারিদ্র্যের ব্যাপারে তাঁর মনোযোগ থাকা সত্ত্বেও, গির্জার ভেতরে তাঁর পোপ পদ নিয়ে অসন্তোষজনক গুঞ্জন ছিল। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে বেনেডিক্ট ষোড়শের আকস্মিক পদত্যাগের পর যখন কার্ডিনালরা রোমে জড়ো হন, তখন তারা এমন একজন সংস্কারককে চেয়েছিলেন যিনি গির্জার আর্থিক ব্যবস্থাপনা বদলে দিতে পারেন। ভ্যাটিকানের নিজস্ব আর্থিক অব্যবস্থাপনা উদোম হলে ফ্রান্সিস কার্ডিনাল অধ্যক্ষদের পুরোনো দলকে সরিয়ে দেন এবং ধর্মযাজক ও সাধারণ বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি দল গঠন করেন।

শিশুদের যৌন নির্যাতনে জড়িত পুরোহিতদের সঙ্গে গির্জার লেনদেন পদ্ধতি পরিবর্তনের চেষ্টা করেছিলেন তিনি। তাঁর পরিবর্তনগুলো ভালোভাবে শুরু হয়েছিল, কিন্তু ফ্রান্সিস নিজে যাদের ব্যাপারে খুব বেশি নমনীয় ছিলেন, তাদের আসল চেহারা বেরিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে তা ব্যর্থ হয়। 
ফ্রান্সিসের নীতিবোধের দৃষ্টিভঙ্গি গির্জার রক্ষণশীলদের সবচেয়ে বেশি ক্ষুব্ধ করেছিল। বিশেষত তিনি যেসব তালাকপ্রাপ্ত ক্যাথলিক পুনরায় বিয়ে করবে তাদের সম্প্রদায়ভুক্ত করার ব্যাপারে প্রতিটি সমস্যা আলাদাভাবে বিচার করা উচিত কিনা, এ ব্যাপারে পুরোহিতদের অনুরোধ করার সিদ্ধান্তে রক্ষণশীলরা ক্ষেপে গিয়েছিলেন। নারীর পুরোহিত হওয়ার ব্যাপারে তিনি অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। এতে উদারপন্থিরাও হতাশ হয়েছিলেন। তিনি কয়েকজন সম্পূর্ণ নান হওয়া নারীকে ভ্যাটিকানের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ করেছিলেন, যেখানে আগে সবসময় পুরুষরা অধিষ্ঠিত ছিল। 

ক্যাথেরিন পেপিন্সটার: ‘দ্য ট্যাবলেট’ ক্যাথলিক জার্নালের সাবেক সম্পাদক; দ্য গার্ডিয়ান থেকে সংক্ষিপ্ত ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম 

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন

র‍াস্টফ ব্যান্ডের ভোকাল আহরার মাসুদ মারা গেছেন। সেমাবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। ভক্তদের কাছে দীপ নামে পরিচিত ছিলেন আহরার মাসুদ। 

মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টায় ব্যান্ডের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে এ তথ্য জানানো হয়। তবে এ শিল্পীর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। 

আরো পড়ুন:

৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে

সিজেএফবি পারফরম্যান্স অ্যাওয়ার্ড ঘোষণা

রাস্টফ ব্যান্ডের ফেসবুক পেজে দীপের মৃত্যুর খবর জানিয়ে লেখা হয়, “এমন এক বেদনাদায়ক মুহূর্তে সঠিক শব্দ খুঁজে পাওয়া বা কোনো শব্দ খুঁজে পাওয়া—প্রায় অসম্ভব। প্রিয় ভোকালিস্ট, বন্ধু ও সহযাত্রী আহারার ‘দীপ’ মাসুদের মৃত্যুসংবাদ আমাদের স্তম্ভিত করেছে। আমরা শোকে ভেঙে পড়েছি, এখনো অবিশ্বাসের ভেতর ডুবে আছি। গত রাতেই তিনি আমাদের ছেড়ে চিরবিদায় নিয়েছেন।” 

দীপের শূন্যতা ব্যাখ্যা করে লেখা হয়, “তার পরিবার, বন্ধু ও প্রিয়জনদের প্রতি আমাদের অন্তরের সমবেদনা ও প্রার্থনা। আপনাদের মতো আমরাও এই অপূরণীয় ক্ষতি বোঝার চেষ্টা করছি, চেষ্টা করছি দীপের অসাধারণ প্রতিভাকে সম্মান জানাতে এবং তার চেয়েও বড় কথা—মানুষ হিসেবে তিনি আমাদের কাছে যে অমূল্য ছিলেন, তাকে স্মরণ করতে। এই কঠিন সময়ে সবার কাছে অনুরোধ, দয়া করে পরিবার ও কাছের মানুষদের ব্যক্তিগত পরিসরকে সম্মান করুন এবং তার আত্মার শান্তির জন্য প্রার্থনা করুন। শান্তিতে ঘুমাও, দীপ। তোমার শূন্যতা চিরকাল বেদনাময় হয়ে থাকবে।” 

তরুণদের কাছে জনপ্রিয় আরেকটি ব্যান্ড পাওয়ারসার্চও দীপের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে। ব্যান্ডের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে লেখা হয়েছে, “স্মরণ করছি আহরার মাসুদ দীপকে। কিছুক্ষণ আগে আমরা হারিয়েছি আমাদের প্রিয় ভাই, ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং এক সত্যিকারের শিল্পীকে। এক্লিপস, কার্ল, ক্যালিপসো ও সবশেষ রাস্টফ ব্যান্ডের অবিস্মরণীয় কণ্ঠ আহরার মাসুদ দীপ আমাদের মাঝে আর নেই। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।” 

পাওয়ারসার্চ আরো লেখেন, “আহরার মাসুদ দীপ শুধু একজন ভোকালিস্টই ছিলেন না, তিনি ছিলেন শক্তি, সৃজনশীলতা আর আবেগের প্রতীক, যিনি তার চারপাশের সবাইকে অনুপ্রাণিত করেছেন; একই সাথে তার অত্যন্ত নমনীয় ব্যবহার, যা সবাইকে তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষীই করে ফেলত! শান্তিতে থাকো ভাই, তুমি সব সময় আমাদের গল্পের অংশ হয়ে থাকবে।”

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভোররাতে রণক্ষেত্র: নরসিংদীতে নিহত ১, গুলিবিদ্ধ ৫
  • গাজায় ২৬ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার: জাতিসংঘ
  • গ্রাহকের কাছে পেয়ারা খেতে চায় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা
  • গল্পটা এই ক্লাসরুম থেকেই শুরু: ইরফান সাজ্জাদ
  • রাশিয়ায় এক বাঙালি বিপ্লবীর খোঁজে
  • আপনার এত সাহস হয় কী করে, সাংবাদিককে নায়িকা
  • দুবাইয়ে বিকৃত যৌন ব্যবসা চক্রের প্রধানকে চিহ্নিত করল বিবিসির এক অনুসন্ধান
  • মহানবী (সা.)–এর ইন্তেকালের পরে শাসন নিয়ে যা ঘটেছে
  • কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ
  • সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন