মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স গত সোমবার চার দিনের সফরে ভারতে পৌঁছেছেন। ওই দিন সন্ধ্যায় তিনি নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তাঁর বাসভবন লোককল্যাণ মার্গে বৈঠক করেছেন। তিন সন্তানসহ ভারতীয় বংশোদ্ভূত স্ত্রী উষা ভ্যান্সকে সঙ্গে নিয়েই মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রী মোদির নিমন্ত্রণে অংশ নেন। ভ্যান্স দম্পতির তিন সন্তানকে তিনটি ময়ূর পালক উপহার দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।

লোককল্যাণ মার্গে মোদি-ভ্যান্স আলাদা করে বৈঠক করেছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানিয়েছে, বৈঠকে ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে যে অগ্রগতি হয়েছে, তাকে স্বাগত জানিয়েছেন দুই নেতা। বৈঠকে তাঁরা জ্বালানি, প্রতিরক্ষা, কৌশলগত প্রযুক্তিসহ নানা খাতে সহযোগিতার সম্পর্ক জোরদারের আশা প্রকাশ করেছেন। তাঁরা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নানা বিষয় নিয়েও আলোচনা করেছেন।

ভ্যান্সের কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে একটি নতুন ও আধুনিক রূপরেখা উন্মোচনের দরজা খুলে যাবে, যা দুই দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে এবং উভয় দেশের জনগণের জন্য মঙ্গলজনক হবে।

২ এপ্রিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বের যেসব দেশে উচ্চ শুল্ক আরোপ করেছেন, ভারত তাদের মধ্যে অন্যতম। দেশটির ওপর নতুন করে ২৬ শতাংশ শুল্ক বসানোর ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। এখন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভারতের পণ্য প্রবেশে সব মিলিয়ে ২৮ দশমিক ৫ শতাংশ শুল্ক বসতে পারে।

মোদি সরকারের জন্য এটি বড় এক ধাক্কা। কারণ, ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির রপ্তানি পণ্যের সবচেয়ে বেশি যায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে। তাই ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক ঘোষণার পর থেকে মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিবিড় আলোচনা শুরু করেছেন ভারতের কর্মকর্তারা। চেষ্টা করছেন নতুন একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করতে, যাতে ট্রাম্পের ঘোষিত শুল্ক কমানো যায়।

আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্র-ভারত বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে অগ্রগতিকে স্বাগত জানালেন মোদি-ভ্যান্স২১ এপ্রিল ২০২৫

ট্রাম্পের ঘোষিত উচ্চ শুল্ক ৯ এপ্রিল থেকে কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও পরে তা চীন ছাড়া অন্য দেশগুলোর ক্ষেত্রে ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়। তবে সব দেশের জন্য আরোপিত ১০ শতাংশ সর্বজনীন (ইউনিভার্সাল) শুল্ক ভারতসহ সব দেশে ২ এপ্রিল কার্যকর হয়।

ভারতের কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন দ্বিপক্ষীয় চুক্তির যে চেষ্টা করছেন, তা নিয়ে দেশটির কৃষকেরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের শঙ্কা, দর-কষাকষির অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা কৃষিপণ্যে বেশি হারে শুল্ক কমাতে পারে মোদি সরকার। এতে দেশটির বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিপণ্য বাড়বে। এমনটি হলে তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

এই আশঙ্কা থেকে গত সোমবার ভারতের বিভিন্ন গ্রামে কৃষকেরা বিক্ষোভ করেছেন। জেডি ভ্যান্সের কুশপুত্তলিকা দাহ করেছেন। স্লোগান দিয়েছেন, ‘ফিরে যাও ভ্যান্স। ভারত বিক্রির জন্য নয়।’

নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সপরিবারে জেডি ভ্যান্স। ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে মোদির বাসভবনে, ২১ এপ্রিল ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

কাশ্মীরে হামলার জবাব দিতে সশস্ত্র বাহিনীকে ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ দিলেন মোদি

কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার জবাব দিতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কখন, কোথায়, কীভাবে হামলা চালানো হবে তা ঠিক করতে সশস্ত্র বাহিনীকে ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। 

মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী মোদি নিজ বাসভবনে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এবং চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ (সিডিএস) জেনারেল অনিল চৌহান-সহ তিন বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেন। সেখানেই মোদি স্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছেন যে, যখন খুশি, যেখানে খুশি পেহেলগামে হামলার বদলা নিতে পারে ভারতীয় সেনা, বিমান ও নৌ-বাহিনী। কীভাবে হামলা চালানো হবে, কীভাবে পরিকল্পনা করা হবে- সে সব সিদ্ধান্তও স্বাধীনভাবেই নেবে এই তিন বাহিনী। 

যেমনভাবে মনে হবে, সেরকমভাবেই অভিযান চালানোর জন্য তাদের স্বাধীনতা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আর সেই ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে তিন বাহিনীর ওপরই পূর্ণ আস্থা রেখেছেন তিনি।

ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী, বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল এপি সিং এবং নৌ বাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল দীনেশকুমার ত্রিপাঠীর সামনেই প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রতিক্রিয়া কী হবে, কীভাবে সেই পদক্ষেপ নেওয়া হবে, লক্ষ্যবস্তু কী হবে এবং কখন ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তা নির্ধারণ করার পূর্ণ স্বাধীনতা আছে।

বৈঠক চলে মোট ৯০ মিনিট। ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং গত সপ্তাহেই পাকিস্তানকে ‘কঠোর জবাব’ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। একই সুর ছিল প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কণ্ঠেও।

সেই আবহেই ভারতে একের পর এক জরুরি বৈঠক চলছে। যার ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে উচ্চপর্যায়ের ওই বৈঠক হয়।

এর ঠিক এক সপ্তাহ আগের মঙ্গলবারেই জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে বৈসরন উপত্যকায় সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হন। তাদের অধিকাংশই পর্যটক ছিলেন।

পাকিস্তান ভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়বার ছায়া সংগঠন ‘দ্য রেজিট্যান্স ফ্রন্ট’ এই হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তারপর থেকেই কূটনৈতিক দিক থেকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একাধিক কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে ভারত।

বন্ধ করা হয়েছে সিন্ধু পানিচুক্তি। নেওয়া হয়েছে আরও একাধিক পদক্ষেপ। জঙ্গি-নিধন অভিযানও চালাচ্ছে ভারত। পেহেলগামে হামলায় যে জঙ্গিরা জড়িত আছে বলে ধারনা করা হচ্ছে, তাদেরকে এখনও ধরা না গেলেও সন্ত্রাসবাদী নিধন অভিযান চলছে। খুঁজে-খুঁজে বের করা হচ্ছে জঙ্গিদের। খবর এনডিটিভি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কাশ্মীরে হামলার জবাব দিতে সশস্ত্র বাহিনীকে ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ দিলেন মোদি