ওয়াক্ফ আইন খারিজ না হলে ফল ভোগ করতে হবে, ভারতের মুসলিম সংগঠনগুলোর হুঁশিয়ারি
Published: 23rd, April 2025 GMT
ভারতের বিভিন্ন মুসলিম সংগঠনের পক্ষ থেকে শুরু হয়েছে ‘ওয়াক্ফ বাঁচাও’ আন্দোলন। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মুসলমান নেতারা বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের শরিকদের উদ্দেশে বলেছেন, তাঁরা যেন সমবেতভাবে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন, যাতে ওয়াক্ফ আইন প্রত্যাহারে সরকার বাধ্য হয়। অন্যথায় ওই শরিকদের প্রত্যেককে মুসলমান সমাজের ক্রোধ, রোষ ও ক্ষোভের মুখোমুখি হতে হবে।
অল ইন্ডিয়া মুসলিম পারসোনাল ল বোর্ডের সভাপতি খালিদ সইফুল্লাহ রাহমানি, হায়দরাবাদের এআইএমআইএম নেতা আসাউদ্দিন ওয়েইসি, উত্তর প্রদেশের শিয়া সমাজের নেতা মাওলানা কালবে জাওয়াদসহ বিভিন্ন নেতা এনডিএ শরিকদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ওয়াক্ফ বিলকে সমর্থন করে তাঁরা সবাই মুসলমানদের পেছন থেকে ছুরিকাঘাত করেছেন। শরিক দলের নেতাদের উচিত, সরকারকে ওই আইন প্রত্যাহার করতে চাপ দেওয়া। না হলে সর্বত্র তাঁদের মুসলমান সমাজের ক্রোধ ও ক্ষোভের মুখোমুখি হতে হবে।
গতকাল মঙ্গলবার দিল্লির তালকাটোরা স্টেডিয়ামে আয়োজিত এক সমাবেশে এ কথা বলেন মুসলিম নেতারা।
সমাবেশে মুসলমান নেতারা বিজেপি নেতৃত্বাধীন শরিকদের নাম করে এই হুঁশিয়ারি দেন। তাঁরা বলেন, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের জেডিইউ, চিরাগ পাসোয়ানের এলজেপি, হিন্দুস্তান আওয়াম মোর্চার জিতেন রাম মাঞ্ঝি, অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডুর টিডিপি ও উত্তর প্রদেশের জয়ন্ত চৌধুরীর আরএলডি সবাই ওয়াক্ফ বিলকে সমর্থন করেছেন। ওই বিল সমর্থন করে তাঁরা মুসলমানদের পেছনে ছুরি মেরেছেন। এখন তাঁদেরই চাপ সৃষ্টি করতে হবে, যাতে সরকার আইন প্রত্যাহারে বাধ্য হয়। না হলে ওই দলগুলোকে সর্বত্র মুসলমান সমাজের রোষের মোকাবিলা করতে হবে।
মুসলিম নেতাদের ওই হুমকি সমর্থন করেন উত্তর প্রদেশের সমাজবাদী পার্টি (এসপি) ও বিহারের আরজেডি। এসপির সংসদ সদস্য ধর্মেন্দ্র যাদব ও মহিবুল্লাহ্ নাদভি এবং আরজেডির সংসদ সদস্য মনোজ ঝা তালকাটোরা সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। এসপি নেতারা ‘ওয়াক্ফ বাঁচাও’ আন্দোলন সমর্থন করে বলেন, মুসলিম ল বোর্ডের সঙ্গে তাঁরা একমত। সংবিধান প্রদত্ত অধিকার ও ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষায় তাঁরা একমত। ওয়াক্ফ আইন গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। সরকারকে তা প্রত্যাহার করতে হবে। একই কথা বলেন আরজেডি নেতা মনোজ ঝা–ও। তিনি বলেন, এই আইন সংবিধানের পরিপন্থী। তাঁর দল কিছুতেই তা মেনে নেবে না।
লক্ষণীয়, মুসলিম পারসোনাল ল বোর্ড আয়োজিত এই সমাবেশে শিয়া সম্প্রদায়ের অবিসংবাদিত নেতা মাওলানা কালবে জাওয়াদ উপস্থিত ছিলেন। লক্ষ্ণৌয়ের এই প্রবীণ নেতা অটল বিহারি বাজপেয়ীর সময় থেকে বিজেপিকে সমর্থন জানিয়ে আসছেন। কিন্তু এই বার তিনিও ওয়াক্ফ আইনের বিরোধিতায় অন্যদের সঙ্গে শামিল হয়েছেন।
এআইএমআইএম নেতা আসাউদ্দিন ওয়েইসি বলেন, দেশের কোনো মুসলমান এই কালো আইন মেনে নেবে না। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই আইন এনেছেন মুসলমানদের জমিজমা ও সম্পত্তির দখল নিতে। মুসলিম পারসোনাল ল বোর্ডের সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহিম মুজাদ্দিদি বিজেপির শরিক দলের নেতাদের নাম করে বলেন, এই আইন পাস করাতে সরকারকে সমর্থন দিয়ে তাঁরা দেশের সংবিধানকেও অমান্য করেছেন। মুসলমান সমাজ ও গণতন্ত্রপ্রিয় সব মানুষ ওঁদের চিনে নিয়েছেন। তাঁরা যা করেছেন, তা না শোধরালে ফলভোগ করতে হবে। তিনি বলেন, এই আইন মুসলমানদের জীবন–মরণের প্রশ্ন।
ওয়াক্ফ আইনের সাংবিধানিক বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে শতাধিক মামলা হয়েছে। শুনানির দ্বিতীয় দিনেই কেন্দ্রীয় সরকার সুপ্রিম কোর্টকে জানায়, পরবর্তী শুনানি পর্যন্ত নতুন আইনের দুটি বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ করা হবে না। এক, ওয়াক্ফ সম্পত্তি বলে যা কিছু পরিচিত, তার কোনোটি তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে না। দুই, কেন্দ্রীয় ওয়াক্ফ কাউন্সিল ও রাজ্য ওয়াক্ফ বোর্ডে নতুন কোনো সদস্য নিযুক্তি হবে না।
তালকাটোরা স্টেডিয়ামে সমবেত নেতারা অবশ্য জানিয়েছেন, আইন খারিজ না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের লড়াই চলবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এই আইন কর ছ ন আইন প সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
জকসু নির্বাচন নিয়ে একে অপরকে দোষারোপ ছাত্র সংগঠনগুলোর
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচন নিয়ে একে অপরকে নানাভাবে দোষারোপ করছে ছাত্র সংগঠনগুলো। সরাসরি নাম উল্লেখ না করে কেউ কাউকে কিছু না বললেও ছাড় দিতে নারাজ তারা।
গত ৩০ অক্টোবর জবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা শহীদ রফিক ভবনের নিচে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের নেতারা জকসু নির্বাচনের বিধিমালা প্রণয়নে প্রশাসন একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে তাড়াহুড়ো করেছে বলে অভিযোগ করে।
আরো পড়ুন:
জবি প্রশাসনের কাছে ২০ দাবি জানাল ইউটিএল
পিএইচডি গবেষকদের জন্য বৃত্তি চালু করা হবে: জবি উপাচার্য
রবিবার (২ নভেম্বর) ভাষা শহীদ রফিক ভবনের নিচে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জকসু নির্বাচন পেছাতে নির্বাচন কমিশন ‘বিশেষ উদ্দেশ্যে’ কাজ করছে বলে অভিযোগ করেছেন জবি শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি মো. রিয়াজুল ইসলাম।
পরে সন্ধ্যায় একই স্থানে ‘জকসু নির্বাচনের আচরণবিধি ও স্পোর্টস কার্নিভাল’ বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শাখা জাতীয় ছাত্রশক্তি অভিযোগ করে, জকসু নির্বাচন নিয়ে একটি সংগঠন তড়িঘড়ি করে নির্বাচন আয়োজন করতে চাচ্ছে এবং আরেকটি সংগঠন নির্বাচন পিছিয়ে জাতীয় নির্বাচনের সময়ের কাছাকাছি নিয়ে যেতে চাচ্ছে।
রবিবার দুপুরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মো. রিয়াজুল ইসলাম বলেন, “নির্বাচন কমিশন একটি বিশেষ কারো ইশারায়, বাইরের প্রেসক্রিপশনে নির্বাচনের খসড়া প্রস্তুত করেছে। আমাদের দাবি, ২৭ নভেম্বরই শিক্ষার্থীদের নিয়ে জকসু নির্বাচন বাস্তবায়ন করা। নির্বাচন কমিশনের সবাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অংশ। তারা ২৭ নভেম্বর নির্বাচন হওয়ার বিষয়টি আগেই জানতো। কিন্তু তবু ১০ ডিসেম্বরকে সামনে রেখে খসড়া রোডম্যাপ তৈরি করেছে। এতে একটি গ্রুপকে সুবিধা দিয়ে অন্যদের ভোটাধিকার হরণের চেষ্টা চলছে।”
তিনি বলেন, “প্রশাসন ও কমিশন আগে জানিয়েছিল, আইন প্রণয়নের পরই প্রস্তুতি কমিটি গঠনের কাজ শুরু হবে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, তারা নতুনভাবে সব কাজ করতে চাচ্ছে—যেন নির্বাচন বিলম্বিত হয়। আলোচনার টেবিলে নির্বাচন কমিশন পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করছে।”
তিনি আরো বলেন, “একটা পক্ষের সব কথা শোনা হচ্ছে। কিন্তু অন্যদের মতামত গুরুত্ব পাচ্ছে না। এতে স্পষ্ট, নির্বাচন পেছানোর মানসিকতা নিয়েই তারা আলোচনায় বসছে। ১৩ ডিসেম্বর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন শিক্ষা বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা, ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস এবং ১৬ ডিসেম্বর জাতীয় বিজয় দিবসের কর্মসূচির কারণে সে সময় নির্বাচন গ্রহণ করা সম্ভব নয়।”
“এ অবস্থায় নির্বাচন কমিশন ১৬ ডিসেম্বরের পর ভোট আয়োজন করতে চাইছে। কিন্তু তখন জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে বা ছুটি শুরু হলে জকসু নির্বাচন করা অসম্ভব হয়ে পড়বে,” যুক্ত করেন শিবির সভাপতি।
আপ বাংলাদেশের সঙ্গে প্যানল ঘোষণার বিষয়ে তিনি বলেন, “আমরা ইনক্লুসিভ প্যানেল করতে চাচ্ছি। আমাদের প্যানেলে কারা থাকবেন সেটা এখনো নির্দিষ্ট হয়নি। শিগগিরই এ বিষয়ে জানতে পারবেন।”
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জবি ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল আলিম আরিফ, অফিস সম্পাদক ইব্রাহিম খলিল ও বাইতুল মাল সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচন নিয়ে একটি সংগঠন তড়িঘড়ি করে নির্বাচন আয়োজন করতে চাইছে, আরেকটি সংগঠন নির্বাচন পিছিয়ে জাতীয় নির্বাচনের সময়ের কাছাকাছি নিয়ে যেতে চাইছে বলে অভিযোগ করেছে শাখা জাতীয় ছাত্রশক্তি।
অপরদিকে, ‘জকসু নির্বাচনের আচরণবিধি ও স্পোর্টস কার্নিভাল’ বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শাখা জাতীয় ছাত্রশক্তি সদস্য সচিব শাহিন মিয়া বলেন, “একটি সংগঠন নির্বাচনকে পেছানোর চেষ্টা করছে, আরেকটি সংগঠন তড়িঘড়ি করে দিতে চাইছে। আমরা চাই এমন একটি নির্বাচন, যেখানে শিক্ষার্থীরা অবাধভাবে অংশ নিতে পারবে এবং সবাই সমান সুযোগ পাবে। নির্বাচন কমিশন যেন প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে একটি গ্রহণযোগ্য সময়সূচি ঘোষণা করে এবং কোনো পক্ষের প্রভাবে না পড়ে।”
তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশনের যে সাহসী ও নিরপেক্ষ ভূমিকা দেখানোর কথা, আজকের মতবিনিময় সভায় আমরা তা দেখতে পাইনি।”
জবি শাখার আহ্বায়ক ফয়সাল মুরাদ বলেন, “আমরা সব সময় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে। আমরা চাই না যে ক্লাস-পরীক্ষা বাদ দিয়ে হঠাৎ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। অন্যদিকে, ছাত্রশিবির দ্রুত নির্বাচন চায়, আর ছাত্রদল সেটি পেছাতে চায়—যা নির্বাচনী পরিবেশকে জটিল করে তুলছে। জাতীয় নির্বাচন ও জকসু নির্বাচন একই সময়ে পড়লে তা প্রশাসনিকভাবেও বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।”
এর আগে, গত ৩০ অক্টোবর আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল বলেছিলেন, “আমাদের প্রত্যাশা ছিল প্রশাসন একটি আধুনিক, যুগোপযোগী ও বাস্তবসম্মত জকসু নীতিমালা প্রণয়ন করবেন। কিন্তু আমরা দেখেছি, প্রশাসন একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে তাড়াহুড়ো করেছে, যা হতাশাজনক।”
তিনি বলেছিলেন, “জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর প্রথমবার জকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আমরা চাই এটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হোক—যাতে জকসু শিক্ষার্থীদের প্রকৃত প্রতিনিধি নির্বাচনের মুক্ত মঞ্চে পরিণত হয়, কোনো দলীয় প্রভাবের শিকার না হয়।”
ঢাকা/লিমন/মেহেদী