ভারতের বিভিন্ন মুসলিম সংগঠনের পক্ষ থেকে শুরু হয়েছে ‘ওয়াক্ফ বাঁচাও’ আন্দোলন। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মুসলমান নেতারা বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের শরিকদের উদ্দেশে বলেছেন, তাঁরা যেন সমবেতভাবে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন, যাতে ওয়াক্ফ আইন প্রত্যাহারে সরকার বাধ্য হয়। অন্যথায় ওই শরিকদের প্রত্যেককে মুসলমান সমাজের ক্রোধ, রোষ ও ক্ষোভের মুখোমুখি হতে হবে।

অল ইন্ডিয়া মুসলিম পারসোনাল ল বোর্ডের সভাপতি খালিদ সইফুল্লাহ রাহমানি, হায়দরাবাদের এআইএমআইএম নেতা আসাউদ্দিন ওয়েইসি, উত্তর প্রদেশের শিয়া সমাজের নেতা মাওলানা কালবে জাওয়াদসহ বিভিন্ন নেতা এনডিএ শরিকদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ওয়াক্ফ বিলকে সমর্থন করে তাঁরা সবাই মুসলমানদের পেছন থেকে ছুরিকাঘাত করেছেন। শরিক দলের নেতাদের উচিত, সরকারকে ওই আইন প্রত্যাহার করতে চাপ দেওয়া। না হলে সর্বত্র তাঁদের মুসলমান সমাজের ক্রোধ ও ক্ষোভের মুখোমুখি হতে হবে।

গতকাল মঙ্গলবার দিল্লির তালকাটোরা স্টেডিয়ামে আয়োজিত এক সমাবেশে এ কথা বলেন মুসলিম নেতারা।

সমাবেশে মুসলমান নেতারা বিজেপি নেতৃত্বাধীন শরিকদের নাম করে এই হুঁশিয়ারি দেন। তাঁরা বলেন, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের জেডিইউ, চিরাগ পাসোয়ানের এলজেপি, হিন্দুস্তান আওয়াম মোর্চার জিতেন রাম মাঞ্ঝি, অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডুর টিডিপি ও উত্তর প্রদেশের জয়ন্ত চৌধুরীর আরএলডি সবাই ওয়াক্ফ বিলকে সমর্থন করেছেন। ওই বিল সমর্থন করে তাঁরা মুসলমানদের পেছনে ছুরি মেরেছেন। এখন তাঁদেরই চাপ সৃষ্টি করতে হবে, যাতে সরকার আইন প্রত্যাহারে বাধ্য হয়। না হলে ওই দলগুলোকে সর্বত্র মুসলমান সমাজের রোষের মোকাবিলা করতে হবে।

মুসলিম নেতাদের ওই হুমকি সমর্থন করেন উত্তর প্রদেশের সমাজবাদী পার্টি (এসপি) ও বিহারের আরজেডি। এসপির সংসদ সদস্য ধর্মেন্দ্র যাদব ও মহিবুল্লাহ্ নাদভি এবং আরজেডির সংসদ সদস্য মনোজ ঝা তালকাটোরা সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। এসপি নেতারা ‘ওয়াক্ফ বাঁচাও’ আন্দোলন সমর্থন করে বলেন, মুসলিম ল বোর্ডের সঙ্গে তাঁরা একমত। সংবিধান প্রদত্ত অধিকার ও ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষায় তাঁরা একমত। ওয়াক্ফ আইন গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। সরকারকে তা প্রত্যাহার করতে হবে। একই কথা বলেন আরজেডি নেতা মনোজ ঝা–ও। তিনি বলেন, এই আইন সংবিধানের পরিপন্থী। তাঁর দল কিছুতেই তা মেনে নেবে না।

লক্ষণীয়, মুসলিম পারসোনাল ল বোর্ড আয়োজিত এই সমাবেশে শিয়া সম্প্রদায়ের অবিসংবাদিত নেতা মাওলানা কালবে জাওয়াদ উপস্থিত ছিলেন। লক্ষ্ণৌয়ের এই প্রবীণ নেতা অটল বিহারি বাজপেয়ীর সময় থেকে বিজেপিকে সমর্থন জানিয়ে আসছেন। কিন্তু এই বার তিনিও ওয়াক্ফ আইনের বিরোধিতায় অন্যদের সঙ্গে শামিল হয়েছেন।

এআইএমআইএম নেতা আসাউদ্দিন ওয়েইসি বলেন, দেশের কোনো মুসলমান এই কালো আইন মেনে নেবে না। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই আইন এনেছেন মুসলমানদের জমিজমা ও সম্পত্তির দখল নিতে। মুসলিম পারসোনাল ল বোর্ডের সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহিম মুজাদ্দিদি বিজেপির শরিক দলের নেতাদের নাম করে বলেন, এই আইন পাস করাতে সরকারকে সমর্থন দিয়ে তাঁরা দেশের সংবিধানকেও অমান্য করেছেন। মুসলমান সমাজ ও গণতন্ত্রপ্রিয় সব মানুষ ওঁদের চিনে নিয়েছেন। তাঁরা যা করেছেন, তা না শোধরালে ফলভোগ করতে হবে। তিনি বলেন, এই আইন মুসলমানদের জীবন–মরণের প্রশ্ন।

ওয়াক্ফ আইনের সাংবিধানিক বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে শতাধিক মামলা হয়েছে। শুনানির দ্বিতীয় দিনেই কেন্দ্রীয় সরকার সুপ্রিম কোর্টকে জানায়, পরবর্তী শুনানি পর্যন্ত নতুন আইনের দুটি বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ করা হবে না। এক, ওয়াক্ফ সম্পত্তি বলে যা কিছু পরিচিত, তার কোনোটি তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে না। দুই, কেন্দ্রীয় ওয়াক্ফ কাউন্সিল ও রাজ্য ওয়াক্ফ বোর্ডে নতুন কোনো সদস্য নিযুক্তি হবে না।

তালকাটোরা স্টেডিয়ামে সমবেত নেতারা অবশ্য জানিয়েছেন, আইন খারিজ না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের লড়াই চলবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এই আইন কর ছ ন আইন প সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

রাকসু নির্বাচনে বামদের প্যানেলে নারী একজন, শক্তি ‘ধারাবাহিক লড়াই’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে বাম সংগঠনগুলোর একটা বড় অংশ এক ছাতার নিচে এসেছে। তারা যে প্যানেল দিয়েছে, তাতে জায়গা পেয়েছেন মূলত জোটে থাকা সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতারাই। নারী আছেন মাত্র একজন। তবে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর দুজনকে প্রার্থী করা হয়েছে। অধিকার আদায়ের লড়াইয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছে পরিচিতি তৈরি হওয়াকে এই প্যানেলের ‘বড় শক্তি’ বলে মনে করা হচ্ছে।

রাকসুর ২৩ পদের বিপরীতে ১৬টিতে প্রার্থী দিয়েছে বাম সংগঠনগুলোর মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট। তাদের প্যানেলের নাম ‘গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ’। এই প্যানেলে আছেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ছাত্র গণমঞ্চ, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র যুব আন্দোলন, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নেতা-কর্মীরা। রাজনৈতিক–সংশ্লিষ্টতা নেই, এমন শিক্ষার্থী আছেন দুজন। তবে প্যানেলে থাকা দুজন সদস্য সরে দাঁড়িয়েছেন।

এই প্যানেল থেকে সহসভাপতি (ভিপি) পদে লড়বেন ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল। সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) কোষাধ্যক্ষ কাউছার আহম্মেদ এবং সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে প্রার্থী করা হয়েছে ছাত্র গণমঞ্চের আহ্বায়ক নাসিম সরকারকে।

বাম জোটের নেতারা বলছেন, ক্যাম্পাসে ধারাবাহিকভাবে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই-সংগ্রাম করে আসছেন তাঁরা। এর মাধ্যমেই তাঁরা শিক্ষার্থীদের কাছে পরিচিত। শিক্ষার্থীদের ‘প্রধান কণ্ঠস্বর’ হিসেবে কাজ করেছেন, করছেন। তাঁদের দাবি, এটাই তাঁদের বড় শক্তি।

প্রার্থীদের প্রায় সবাই জোটের নেতা

বামদের এই প্যানেলে সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে লড়বেন বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলনের আহ্বায়ক তারেক আশরাফ। মহিলাবিষয়ক সহসম্পাদক পদে ছাত্র ফ্রন্টের শ্রেয়সী রায়, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক পদে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর হাসান শাহরিয়ার খন্দকার আলিফ এবং তথ্য ও গবেষণা সহসম্পাদক পদে লড়বেন ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক মো. সজীব আলী।

এ ছাড়া সহবিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক পদে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক রিসার্চ চাকমা এবং সহপরিবেশ ও সমাজসেবা সম্পাদক পদে একই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শামীন ত্রিপুরাকে প্রার্থী করা হয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক পদে ছাত্র ফ্রন্টের সদস্য মুনতাসির তাসিন, পরিবেশ ও সমাজসেবা–বিষয়ক সম্পাদক পদে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আজমাইন আতিক ও নির্বাহী সদস্য পদে লড়বেন ছাত্র ইউনিয়নের দপ্তর সম্পাদক আহমেদ ইমতিয়াজ।

এই প্যানেল থেকে জোটের বাইরে দুজনকে প্রার্থী করা হয়েছে। তাঁরা হলেন সহমিডিয়া ও প্রকাশনা সম্পাদক প্রার্থী ফাহিম মুনতাসির এবং নির্বাহী সদস্য পদে লড়বেন আসাদ সাদিক।

দাবি আদায়ের মাঠে থাকা ‘বড় শক্তি’

শিক্ষার্থীদের দাবিদাওয়ার আন্দোলনে বাম সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সব সময় মাঠে দেখা গেছে। বিভিন্ন জাতীয় ইস্যুতেও তাঁরা তৎপর থেকেছেন। সংখ্যায় কম থাকলেও আন্দোলনের জায়গায় পিছিয়ে ছিলেন না। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ছাত্রলীগের বিভিন্ন অপকর্ম ও শিক্ষার্থী নির্যাতনের বিরুদ্ধেও বাম নেতারা ছিলেন সোচ্চার।

শিক্ষার্থীদের আবাসন, খাদ্য, পরিবহনসংকট, ফি কমানো, নারীদের নিরাপত্তাসহ নানা ইস্যুতে আন্দোলন করে আসছে বাম সংগঠনগুলো। জুলাই আন্দোলনেও সক্রিয় ছিল তারা। এই প্যানেলের ভিপি প্রার্থী ফুয়াদ রাতুল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়কদের একজন।

বাম নেতারা বলছেন, নব্বই–পরবর্তী বাম রাজনীতির ক্রান্তিকাল চলছে। এর পর থেকে আত্মকেন্দ্রিকতা বেড়ে গেছে। সেই ছায়া পড়েছে প্রগতিশীল রাজনীতিতে। অন্য সংগঠনগুলোতে ব্যক্তিগত স্বার্থ বা লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু বাম রাজনীতি করলে সেই সুবিধা পাওয়া যায় না। কিন্তু শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে বাম সংগঠনগুলো যে সব সময় সক্রিয় থেকেছে, এটাকেই রাকসু নির্বাচনে একটা বড় শক্তি মনে করছেন তাঁরা।

বামদের প্যানেলের ভিপি প্রার্থী ও ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের পক্ষে আন্দোলন করায় আমরা ক্যাম্পাসে পরিচিত। সে হিসেবে আমরা শিক্ষার্থীদের কাছে পরীক্ষিত। বিগত দিনে আমরা ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের প্রধান কণ্ঠ ছিলাম। আমাদের তারা মূল্যায়ন করবে। আমাদের এই লড়াই–ই বড় শক্তি।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শাকসু নির্বাচন সামনে রেখে একাধিক শর্তে ছাত্ররাজনীতি চালুর সুপারিশ
  • ভিন্ন পরিবেশে নির্বাচন, সবারই প্রথম অভিজ্ঞতা
  • রাকসু নির্বাচনে বামদের প্যানেলে নারী একজন, শক্তি ‘ধারাবাহিক লড়াই’
  • শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে কেমন ছাত্ররাজনীতি দেখতে চান