নামে কী যায় আসে—সব জায়গায় এই কথা চলে না। রাজনীতিতে তো চলেই না। রাজনীতিতে নামে যায় আসে। কারণ ‘নামের আমি নামের তুমি নাম দিয়ে যায় চেনা’। রাজনীতিতে নামের যে কত দাম, তা আমের মৌসুম শুরুর আগেই ‘আম’ নিয়ে ‘আমজনতার দল’ আর ‘আ-আমজনতা পার্টি’র ঝগড়া দেখে বোঝা যাচ্ছে। 

নুরুল হকের ‘গণ অধিকার পরিষদ’ থেকে বেরিয়ে মিয়া মশিউজ্জামান আর মো.

তারেক রহমান যে নতুন পার্টি খুলেছেন, তার নাম ‘আমজনতার দল’। এর মধ্যে টাকা পাচার আর ট্রি প্লান্টেশন দুর্নীতি মামলায় জেলে খেটে বের হওয়া ডেসটিনি গ্রুপের এমডি মোহাম্মদ রফিকুল আমীন ‘আমজনতা’র আগে ‘আ’ জুড়ে দিয়ে ‘বাংলাদেশ আ-আম জনতা পার্টি’ খুলেছেন।

এতে ‘অরিজিনাল’ আমজনতা পার্টি ডার্টি পলিটিকসের গন্ধ পেয়ে নির্বাচন কমিশনের সালিসে নালিশ করেছে। তারা বলছে, ‘আম’ আর ‘আ-আম’ লিখলে আলাদা দেখায়, কিন্তু বললে শোনায় একই রকম। সুতরাং রফিকুল আমীনের দলকে যেন এই নামে নিবন্ধন দেওয়া না হয়। তাদের দাবি, যেহেতু তারা ‘আমজনতার দল’ নামটি আগেই ছালাবন্দী করেছে, সেহেতু আম এবং ছালা দুটোই তাদের। 

৫ আগস্টের ঝড়ে যেহেতু বহু বক পড়েছে, সেহেতু কিছু ফকিরের কেরামতি বাড়ারই কথা। অভ্যুত্থানের ঝড়ের তোড়ে আদি ও আসল ‘আম’ ওরফে ‘আওয়াম’ ওরফে ‘আওয়ামী’ বৃক্ষ উড়ে গেছে। সেই বৃক্ষের ছায়াপুষ্ট গাছপালারও ডালপালা ভেঙেছে। কিন্তু মাটির সাথে ঘাপটি মারা ঘাসপাতার কিছু হয়নি। 

৫ আগস্টের ঝড়ে শুধু বাতাস ছিল না; বৃষ্টিও ছিল। সেই বৃষ্টিতে দেড় যুগের খরাপীড়িত রাজনীতির খটখটে মাঠে জো এসেছে। ভেজা মাঠে এখন রাজনৈতিক দলরূপী নতুন নতুন ঘাসপাতা ও গাছগাছড়া গজাতে শুরু করেছে। 

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন শর্ত সহজ করার সুপারিশ করেছে। ইসি হয়তো ‘শত ফুল ফুটতে দাও’ নীতির পথে হাঁটতে চায়। আর তাই দেখে নতুন নতুন ফুল গাছের চারা মাথা উঁচু করছে। তবে চারাগুলোর নামের মধ্যেই যে ভাব লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে, এসব ফুলের মধ্যে ধুতরা-আকন্দের বাড়বাড়ন্ত বেশি। চামেলি, গোলাপের আলাপ প্রলাপের মতো মনে হচ্ছে।

এখন ইসিতে নিবন্ধিত দল আছে ৫০টি। ২০ এপ্রিল পর্যন্ত ৬৫টি দল নিবন্ধন পাওয়ার আরজি জানিয়েছে। এর বাইরে আরও ৪৬টি দল নিবন্ধনের আবেদন জমা দেওয়ার সময় বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে। মানে, দেড় শতাধিক দল আমজনতার সেবায় দাঁড়িয়েছে। আর এই দলগুলোর ৯৯ শতাংশের মোটের ওপর যা আছে, তা হলো একটি নাম। নামসর্বস্ব এই দলগুলোর নেতা কারা, কেন তঁারা রাজনীতিতে আসতে চান, সে এক বিরাট প্রশ্ন।

যাত্রা পার্টিতে একজন অধিকারী থাকেন। তিনিই কলাকৌশল করে দল চালান। যাত্রা পার্টির কুশীলবদের অভিনয় করতে হয়। পলিটিক্যাল পার্টিতেও একজন বড় নেতা থাকেন। তাঁর নিচে মেজ-সেজ-নেতা থাকেন। তাঁদের বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অভিনয় করে পাবলিকের মন জয় করতে হয়। অ্যাকটিংয়ের পাশাপাশি পিকেটিং করতে হয়। কিন্তু কথা হচ্ছে, যে পার্টিতে নাম ছাড়া আর কিছুই নেই, সে পার্টির সঙ্গে কি যাত্রা পার্টির তুলনা চলে?  

নিবন্ধিত হতে চাওয়া একটি দলের নাম দেখা যাচ্ছে ‘বাংলাদেশ সংসারবন্দি পার্টি’। রাজনীতির সংসারে এই ধরনের ‘সঙ’-সারসম্পন্ন পলিটিক্যাল পার্টির নাম শুনতে হবে, তা কে কবে ভেবেছে? একইভাবে নিবন্ধন চেয়েছে ‘বাংলাদেশ শান্তির দল’, ‘দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলন’, ‘জাতীয় ভূমিহীন পার্টি’, ‘বাংলাদেশ বেকার সমাজ’, ‘বাংলাদেশ জনপ্রিয় পার্টি’, ‘জনতার কথা বলে’। 

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার দাবি যখন কোনো কোনো মহল থেকে তোলা হচ্ছে, সেই সময়ে ‘আওয়ামী লিগ’ নামে নিবন্ধন চেয়ে উজ্জ্বল রায় নামের এক লোক আবেদন করে বসেছেন। তবে সে নামটি শেষ পর্যন্ত তালিকায় রাখা হয়নি। এর বাইরে বাংলাদেশ
সংরক্ষণশীল দল (বিসিপি), জনতা কংগ্রেস দল, বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণময় পার্টি, বাংলাদেশ মুক্তি ঐক্যদল, বাংলাদেশ জনশক্তি পার্টি—এ ধরনের বহু বাহারি নামের দল আছে।

নিবন্ধন চাওয়া কোনো কোনো দলের নেতা সম্ভবত পলিটিক্যাল পার্টির সঙ্গে যাত্রা পার্টির মিল পেয়েছেন। তাঁরা হয়তো ভেবেছেন, একটা পলিটিক্যাল পার্টি মানে একটা দল; একটা যাত্রা পার্টি মানেও একটা দল। দুই কিসিমের দলেই নানান কিসিমের জনবল থাকে। 

যাত্রা পার্টিতে একজন অধিকারী থাকেন। তিনিই কলাকৌশল করে দল চালান। যাত্রা পার্টির কুশীলবদের অভিনয় করতে হয়। পলিটিক্যাল পার্টিতেও একজন বড় নেতা থাকেন। তঁার নিচে মেজ-সেজ-নেতা থাকেন। তাঁদের বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অভিনয় করে পাবলিকের মন জয় করতে হয়। অ্যাকটিংয়ের পাশাপাশি পিকেটিং করতে হয়। কিন্তু কথা হচ্ছে, যে পার্টিতে নাম ছাড়া আর কিছুই নেই, সে পার্টির সঙ্গে কি যাত্রা পার্টির তুলনা চলে?  

ডেসটিনির রফিকুল সাহেব বিবিসি বাংলাকে সরল সোজা মনে বলেছেন, তিনি জেলখানায় ছিলেন। ৫ আগস্টের পর দেখলেন, জেলখানা থেকে অনেক রাজনীতিককে বিনা জামিনে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। তিনি জেলারকে বললেন, ‘আমি তো বহুদিন জেলে, আমাকে ছাড়েন না কেন?’ জেলার তখন তাঁকে বললেন, ‘আপনি তো রাজনীতিক না, আপনি যদি রাজনীতিক হতেন, তাহলে ছেড়ে দিতাম। আপনি যদি আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের লোক হতেন, তাহলেও ছেড়ে দিতাম।’

জেলারের এই বাণীই কি রফিকুল আমীন সাহেবকে রাজনৈতিক দল খুলতে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে? রফিকুলের মতো অনেকেই জানেন, একটি রাজনৈতিক দল মানে একটি ঢাল। সে নামসর্বস্ব হোক আর কামসর্বস্ব হোক। 

নিবন্ধন দেওয়ার সময় ইসিকে এই সত্য বুঝতে হবে। 

সারফুদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক

[email protected]

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পল ট ক য ল প র ট আমজনত র র জন ত ত ত র দল ন বন ধ দল র ন আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

সিদ্দিককে মারধর ও শিল্পীদের বিরুদ্ধে মামলা, যা বললেন অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি

শোবিজের একঝাঁক একঝাঁক অভিনয়শিল্পীকে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি করা হয়েছে। প্রথমে ইরেশ যাকের, তারপর সুবর্ণা মুস্তাফা, অপু বিশ্বাস, নুসরাত ফারিয়া, নিপুণসহ ১৭ অভিনয়শিল্পীর নাম প্রকাশ্যে এসেছে। এরই মধ্যে গতকাল অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর ও লাঞ্ছিত করে রাজধানীর রমনা থানায় সোপর্দ করা হয়। এসব বিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চর্চা চলছে। এ নিয়ে অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি আজাদ আবুল কালাম নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন।

সিদ্দিকের ওপর হামলা ও লাঞ্ছনা ঘটনা নিয়ে আজাদ আবুল কালাম গণমাধ্যমে বলেন, “সিদ্দিকের সঙ্গে যা ঘটেছে, এটা তো মব। এই মব ভায়োলেন্সকে তো ঠেকাচ্ছে না। কেন যেন মনে হচ্ছে, মব ভায়োলেন্সকে নীরবে বলা হচ্ছে, করে যাও। আমাদের কিছুই করার নেই। একজনের রাজনৈতিক চিন্তাচেতনা থাকতে পারে। অভিনেতা হিসেবে সিদ্দিক সবার কাছে পরিচিত। কিছু লোক তাকে এভাবে রাস্তায় ধরে মেরে দেবে!”

প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে আজাদ আবুল কালাম বলেন, “দলবদ্ধভাবে সিদ্দিককে শারীরিকভাবে আঘাত করেছে, আক্রমণ করেছে, গায়ে থেকে জামাকাপড় খুলে ফেলেছে, এরপর থানায় সোপর্দ করেছে। থানায় যদি সোপর্দ করতেই হয়, তাহলে প্রথমে কেন আইন হাতে তুলে নিল? তাকে হেনস্তা করে আইনের হাতে তুলে দেবে— এই মব জাস্টিস, মব ভায়োলেন্স সমাজে বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে। এটা তো একটা সময় নানা স্তরে হবে। এসব কর্মকাণ্ড সরকারকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে। সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে, যেখানে মব ভায়োলেন্স, সেখানে কঠোর হস্তে দমন করবে।”

ঢালাওভাবে অভিনয়শিল্পীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের বিষয়ে বিস্মিত আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, “ঢালাওভাবে হত্যা মামলা হচ্ছে! দেখে মনে হচ্ছে, সবাইকে মামলার মধ্যে ফেলতে হবে। ৩০০-৪০০ জন মামলার আসামি, এটা অবাস্তব একটা অবস্থা। একজন সুবর্ণা মুস্তাফার মতো শিল্পী রাস্তায় গিয়ে মানুষকে গুলি করবে? যে মানুষটি মামলা করেছেন, তিনি আন্দোলনের সময় আহত হয়েছেন, গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন; তিনি মামলা করেছিলেন অনেক লোকের নামে। মামলার নথিতে শিল্পীদের অনেকের নাম দেখলাম, তারা রাস্তায় নেমে মানুষকে গুলি করবে!”

সরকারিভাবে এ ধরনের মামলাকে প্রতিরোধ করা উচিত বলে মনে করেন আজাদ আবুল কালাম। তিনি বলেন, “সরকারিভাবে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারেরও উচিত হবে এ ধরনের মামলাকে প্রতিরোধ করা। নিরুৎসাহিত করা। যে ব্যক্তি মামলা করছেন, যদি প্রমাণিত হয়, শিল্পীরা কেউই গুলি করেনি, তখন তো এটা মিথ্যা মামলা হবে। এ রকম মিথ্যা মামলার ক্ষেত্রে, যে ব্যক্তি শিল্পীদের নামে মামলা করেছেন, তার কী শাস্তি হবে, তারও বিধান থাকতে হবে।”

“কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে, তা জানানোর একটা প্রক্রিয়া আছে। শুধু শিল্পী না, একজন খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধেও যদি কোনো অভিযোগ থাকে, তাহলে আপনি তার অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার আগপর্যন্ত তাকে অপরাধী বলতে পারেন না। তাকে সামাজিকভাবে হেয় করতে পারেন না। মামলা করে তাকে সামাজিকভাবে হেয় করা শুরু করলেন, এই প্রক্রিয়া যদি চলতে থাকে, এটাই যদি আমাদের মনস্তত্ত্ব হয়, তাহলে বিভক্তি আরো বাড়বে।” বলেন আবুল কালাম আজাদ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৫০ পেরোনো নারীর খাদ্যাভ্যাস যেমন হতে হবে
  • যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ করতে কাজ করছে চীন
  • সেলফি’র ধাক্কায় গণস্বাস্থ্যের কর্মীর মৃত্যু, ৬ বাস আটক
  • পেহেলগামে হামলার পর প্রতিশোধের আশঙ্কায় দিন কাটছে ভারতীয় মুসলিমদের
  • প্রথম আলোর সাংবাদিককে বৈষম্যবিরোধী নেতার হুমকি, থানায় জিডি
  • গাজীপুরে জমি নিয়ে বিরোধে সংঘর্ষ, হাতুড়িপেটায় একজন নিহত
  • সিদ্দিককে মারধর ও শিল্পীদের বিরুদ্ধে মামলা, যা বললেন অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি
  • কোনো মহামানবকে দায়িত্ব দেওয়ার জন্য মানুষ আন্দোলন করেনি: আমীর খসরু
  • কোনও মহামানবকে দায়িত্ব দেওয়ার জন্য মানুষ আন্দোলন করেনি: আমীর খসরু
  • কোনও মহামানবকে দায়িত্ব দেওয়ার জন্য মানুষ আন্দোলন করেনি: আমির খসরু