যেকোনো মূল্যে আমরা জিততে চেয়েছিলাম: আরভিন
Published: 23rd, April 2025 GMT
লক্ষ্য ১৭৪। বাংলাদেশকে হারাতে জিম্বাবুয়ে ছিল বদ্ধপরিকর। দুই ওপেনার ব্রেইন বেনেট ও বেন কারান শুরুতেই করলেন ৯৫ রান। তাতে মনে হচ্ছিল দুই ওপেনারই জয়ের সমীকরণ মিলিয়ে দেবেন। কিন্তু ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিলেন বাংলাদেশের দুই স্পিনার। মিরাজ টপাটপ নিলেন ৫ উইকেট। তাইজুলের শিকার ২। ৭ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশ লড়াই জমিয়ে দিলেও শেষ পর্যন্ত ওয়েসলি মাধভেরে ১৯ রানে অপরাজিত থেকে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন।
দ্রুত উইকেট হারানোয় কিছুটা চাপে পড়েছিল জিম্বাবুয়ে। ওই সময়ে ড্রেসিংরুমের আবহ তুলে ধরে জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিন বলেছেন, ‘‘চেঞ্জিং রুমটা নার্ভাস হয়ে গিয়েছিল। চতুর্থ ইনিংসে এই পজিশনে থেকে রান তাড়া করার অভ্যাস আমাদের খুব একটা। আমরা যেকোনো মূল্যে ম্যাচটা জিততে চেয়েছিলাম। এজন্য একটু নার্ভাস হয়েছিলাম।’’
সবশেষ দশ ম্যাচে কোনো ম্যাচ জেতেনি। হেরেছে আটটি। দুটি ড্র করেছে। এমন রেকর্ড নিয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে বিরুদ্ধ কন্ডিশনে এসে ম্যাচ জেতার মতো কঠিন কাজটা তারা করেছে। এভাবেই টেস্টে উন্নতি করতে চায় জিম্বাবুয়ে, ‘‘আমার মনে হয় যত বেশি টেস্ট জিততে পারব, তত বেশি সবার নজরে থাকতে পারব। টেস্ট যতই কঠিন হোক না কেন, প্রতিটি খেলোয়াড়ই খেলতে এবং আরও ভালো করতে চায়। চার বা পাঁচ দিনের মধ্যে এটি সত্যিই সবাইকে পরীক্ষা করে। ছোট দলগুলো কঠিন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ভালো ও কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে চায়। দল হিসেবে এটাই একমাত্র উপায় যার মাধ্যমে উন্নতি করা সম্ভব।’’
আরো পড়ুন:
আমার আউটটাতে আমাদের পুরো খেলাটা নষ্ট হয়ে গেছে: নাজমুল
সাকিব, তাইজুলের পর মিরাজ
চট্টগ্রামেও পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা চান আরভিন, ‘‘এই টেস্ট ম্যাচ জয়ের পর আমরা সত্যিই আত্মবিশ্বাসী। আমরা জানতাম আমরা জিততে পারি। চট্টগ্রামে আমাদের পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে। আমাদের মানসিকতা অত্যন্ত ভালো অবস্থানে আছে। বিশেষ করে সিলেটে জয়ের পর।’’
বাংলাদেশকে দ্রুত আউট করে ম্যাচ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে চেয়েছিল জিম্বাবুয়ে। তাতে সফল হয় তারা। ৬১ রান তুলতেই স্বাগতিকরা হারায় ৬ উইকেট। নিজেদের পরিকল্পনায় সফল হয়ে খুশি আরভিন, ‘‘আমরা তাড়াতাড়ি উইকেট পেতে চেয়েছিলাম। প্রথম ওভারেই শান্তকে এত তাড়াতাড়ি আউট করা আমাদের জন্য দুর্দান্ত ছিল। আমার মনে হয় ব্লেস যেভাবে শুরু করেছিলেন তা অসাধারণ ছিল। ও আমাদের চাপ প্রয়োগ করার সুযোগ দিয়েছিলেন। নিচের দিকে জাকের আলী ভালো ভূমিকা রেখেছিল।’’
সিলেট/ইয়াসিন/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আম দ র আরভ ন উইক ট
এছাড়াও পড়ুন:
বৈষম্য কেন? আদিবাসী নারী শ্রমিকরা পাই না সমান মজুরি
‘‘সাম্যের গান গাই-
আমার চক্ষে পুরুষ-রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই।
বিশ্বের যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’’
কাজী নজরুল ইসলাম ‘নারী’ কবিতায় নারী-পুরুষের সমান অধিকারের কথা বলেছেন। কিন্তু, এ বৈষম্য সমাজের সর্বস্তরে এখনো রয়ে গেছে। দিনাজপুরের হাকিমপুরে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী নারী শ্রমিকেরা। পুরুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেও সমান মজুরি পাচ্ছেন না তারা।
হাকিমপুর উপজেলার বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পাড়া ঘুরে জানা যায়, বছরে আমন এবং ইরি মৌসুমে ধানের চারা রোপণ, ক্ষেত নিড়ানিসহ ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ করেন নারী শ্রমিকেরা। পুরুষের পাশাপাশি সমান তালে এসব কাজ করেন তারা। এ কাজে পুরুষ শ্রমিকেরা ৫০০ টাকা দৈনিক মজুরি পেলেও নারী শ্রমিকেরা পান ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। শুধু ধানের মৌসুমেই নয়, অন্যান্য ফসলের ক্ষেতে কাজ করলেও তারা পুরুষের সমান মজুরি পান না। এই বৈষম্য দূর হলে আরেকটু স্বচ্ছল জীবনযাপন করা যেত বলে তারা মনে করেন।
হাকিমপুর পৌর এলাকা চন্ডিপুর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পাড়ার নারী শ্রমিক লক্ষ্মী হাসদা ও শান্তি সরেন বলেন, ‘‘আমরা বছরে দুই সিজন ধানের চারা রোপণসহ কাটা-মাড়াই করি। সকাল ৮ থেকে বিকেল ৫ পর্যন্ত কাজ করি। কিন্তু মজুরি কম পাই। পুরুষরা ৫০০ টাকা পেলে আমরা পাই সাড়ে ৩০০ টাকা। এটা কেমন নিয়ম?’’
অপর নারী শ্রমিক সুরুজ মনি হেম্ব্রন বলেন, ‘‘এখন তো হামরা তেমন কাম পাই না। আলু ও সরিষার মাঠে এখন মুসলমান বেটি ছোলরা কাম করে। আগে আমরাই করতাম, এখন অনেক কাম কমে গেছে। এরপর আবার পুরুষ মানুষের চেয়ে হামাক হাজিরাও কম দেয়। হারা (আমি) চলবো কি করে?’’
একই প্রশ্ন করেন হিলির তালতলার রানী হেম্ব্রন ও বিউটি হেম্ব্রন। শ্যামলী হাড্ডি বলেন, ‘‘এই বৈষম্যের কারণে আমরা স্বাবলম্বী হতে পারছি না। বৈষম্য দূর হলে আরেকটু ভালো করে চলতে পারতাম।’’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাকিমপুর উপজেলার ১ নাম্বার খট্রা-মাধবপাড়া ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ছদরুল শামীম স্বপন বলেন, ‘‘আমরা জানি, নারী-পুরুষ সমান অধিকারী। কিন্তু, সমাজে নারী শ্রমিকেরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। তারা সঠিক মজুরি পায় না। আমি শ্রমিক ফেডারেশনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বলব- আপনারা এই বৈষম্য দূর করুন। নারীর ন্যায্য মজুরির ব্যবস্থা করুন।’’
খট্রা-মাধবপাড়া ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সভাপতি শাহানুর আলম শাহিন বলেন, ‘‘আমাদের এই অঞ্চলে অনেক আদিবাসী নারী শ্রমিক আছেন, যারা বৈষম্যের শিকার। আমি গৃহস্থ এবং কৃষকদের বলতে চাই, আপনারা বৈষম্য না করে নারী-পুরুষ শ্রমিকদের সমান মজুরি দেবেন।’’
ঢাকা/তারা