মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় গাজীখালী নদীর ওপর বিকল্প সেতুর একাংশ হেলে পড়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এ সেতু দিয়ে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সাইনবোর্ড দেওয়া হলেও মানছে না কেউ।
জানা গেছে, গাজীখালী নদীর ওপর ২০১৩ সালে একটি সেতুর নির্মাণকাজ শুরুর তিন মাস আগে বিকল্প বেইলি সেতু নির্মাণ করা হয়। ২০১৫ সালের ১৫ অক্টোবর জনসাধারণের জন্য নতুন সেতু খুলে দেওয়া হয়। এ সময় সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ বেইলি সেতুটি অপসারণ করেনি। ১২ বছরে সংস্কার না করায় সেতুটির এখন ভগ্নদশা। গত সপ্তাহে কয়েক দিনের বৃষ্টির পর সেতুটি হেলে পড়ে। এর পর মানিকগঞ্জ সওজ কর্তৃপক্ষ একটি সাইনবোর্ড দিয়ে দায় সারে। সাইনবোর্ডে লেখা ‘সাবধান, ক্ষতিগ্রস্ত বেইলি সেতু, সর্বসাধারণের চলাচল নিষেধ।’ তবু ঝুঁকি নিয়ে এ সেতু দিয়ে প্রতিদিন হাজারো মানুষ চলাচল করছে।
সাটুরিয়া, ধামরাই ও নাগরপুরের মানুষ চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন সাটুরিয়া ৫০ শয্যাবিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমল্পেক্সে। বিশেষ করে বৃহস্পতিবার হাটের দিন কয়েক হাজার মানুষ এ সেতু দিয়ে চলাচল করেন। গত কয়েক দিনে অনেক শিশু শিক্ষার্থী এ সেতু পারাপারের সময় গর্তে পড়ে আহত হয়েছে।
গতকাল বুধবার সাটুরিয়া বাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সাটুরিয়া ৫০ শয্যাবিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমল্পেক্সের দিকে বেইলি সেতুর পূর্ব পাশের একাংশ প্রায় ৫ ফুট দেবে গিয়ে হেলে পড়েছে। সেতুর পাশে রয়েছে বিদ্যুতের খুঁটি। এতে রয়েছে ৩৩ হাজার ভোল্টের বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন। বিদ্যুতের খুঁটি থেকে মাটি সরে যাওয়ায় যে কোনো সময় সেতুটি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তারা জানান, গাজীখালী নদীর ওপর মূল সেতু দিয়ে বেশির ভাগ সময় গাড়ি চলাচল করে। বেইলি সেতুর পাশে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, চারটি প্রাইভেট ক্লিনিক ও হাট রয়েছে। এসব জায়গায় যেতে সময় সাশ্রয়ের জন্য বেইলি সেতু দিয়ে মানুষ হেঁটে চলাচল করে।
সাটুরিয়ার ওষুধ ব্যবসায়ী লিয়াকত আলী বলেন, বেইলি সেতু দিয়ে প্রতিদিন স্কুল-কলেজের প্রায় ৬ হাজার শিক্ষার্থী ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে। তাদের কথা চিন্তা করে কর্তৃপক্ষের কাছে শিগগির সেতুটি সংস্কারের দাবি জানান তিনি।
সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিকল্প সেতুর পাতাটনে মরিচা ধরে জায়গায় জায়গায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। পাটাতন আলগা হওয়ায় রাতের বেলা চলাচলের সময় পথচারীরা গর্তে পড়ে আহত হচ্ছে।
সাটুরিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবুল বাশার সরকার বলেন, বেইলি সেতু নির্মাণ করার সময় নিচু করে নির্মাণ করা হয়। বর্ষা মৌসুমে সেতুর দু’পাশে মাইলের পর মাইল কচুরিপানা আটকে পড়ে। এ থেকে দুর্গন্ধ ও মশার উপদ্রব বেড়ে যায়। সেতুটি উঁচু করে পুনর্নির্মাণের দাবি তাঁর।
সাটুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মামুন অর রশিদের ভাষ্য, বেইলি সেতুর পাশেই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। সেতুটি সংস্কার করা হলে এলাকার মানুষ উপকৃত হবে। হাসপাতালে আসা রোগীদের জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হবে।
এ বিষয়ে কথা হয় মানিকগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী দেবাশীষ সাহার সঙ্গে। তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত সেতু দিয়ে চলাচল করতে নিষেধ করা হয়েছে। এর পরও মানুষ চলাচল করলে তাদের করার কিছু নেই। এটি ছিল একটি বিকল্প সেতু। এটি একাধিকবার অপসারণের জন্য গেলেও জনসাধারণের অনুরোধ ও বাধার কারণে অপসারণ করা সম্ভব হয়নি। জনস্বার্থের কথা ভেবে সেতুটি সংস্কার করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ম ন কগঞ জ ব কল প র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলে ইরানের নতুন হামলায় নিহত বেড়ে ৫, আহত ২৯
ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে অন্তত চার জায়গায় হামলা চালিয়েছে ইরান। এ হামলায় তিনজন নিহত হয় বলে জানায় জেরুজালেম পোস্ট। বিবিসি আরও দুইজন নিহতের খবর দেয়। এরপর আরেকজনের ফলে নতুন হামলায় ইসরায়েলে নিহত বেড়ে পাঁচজনে পৌঁছাল।
আজ সোমবার আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের অ্যাম্বুলেন্স ও ব্লাড ব্যাংক সংস্থাগুলো বলছে, এসব হামলায় ২৯ জন আহত হয়েছেন।
বিবিসির খবরে বলা হয়, ইসরায়েলের জাতীয় জরুরি পরিষেবার প্রধান ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডম জানান, মধ্য ইসরায়েলজুড়ে ইরানের হামলায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুইজন নারী, একজন পুরুষ।
এর আগে সিএনএন ইসরায়েলের ১৫ জন নিহত হওয়ার খবর দেয়। ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কানের খবর বলছে, ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে হামলায় একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। এছাড়াও বন্দরনগরী হাইফায় অন্তত দুইজন আহত হয়েছেন। এছাড়াও সেখান আরও তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন।
এর আগে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছিল, ইরান থেকে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়েছে। একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে ইসরায়েল। বর্তমানে হামলা প্রতিহত করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।
আজ সিএনএনের এক খবরে বলা হয়েছে, তেল আবিব ও জেরুজালেমসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে জরুরি সতর্ক সংকেত (সাইরেন) বাজতে শুরু করেছে। আইডিএফ সতর্ক করে বলেছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি অভেদ্য নয়।
সিএনএনের একজন প্রযোজক জেরুজালেমে সাইরেন এবং একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। তার তোলা ভিডিওতে আকাশে বহু ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে যেতে দেখা গেছে।
ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড আদোম জানিয়েছে, তাদের দলগুলো আক্রান্ত এলাকার দিকে রওনা দিয়েছে।
সারা দেশের নাগরিকদের আশ্রয়কেন্দ্রে ঢুকতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, বর্তমানে বিমানবাহিনী হামলা প্রতিহত করার পাশাপাশি পাল্টা হামলা চালানোর কাজ করছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট নিউজ জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের পেতাহ টিকভা শহরের একটি ভবনে একটি ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হেনেছে। হামলার ফলে ওই স্থানে আগুন ধরে যায়। তবে এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে মধ্য ইরানে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর দাবি, বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সফলভাবে মধ্য ইরানে অবস্থিত একাধিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। আমাদের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, এসব স্থাপনা থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছিল।’
তবে ইসরায়েলের এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান এখনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।
এদিকে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।
বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক। হামলায় ১ হাজার ২৭০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
এপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ১৩ জুন ইরানে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ওই হামলায় ইরানের নাতাঞ্জ ও ইসফাহান অঞ্চলের পারমাণবিক স্থাপনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। ইরানে বর্তমানে মসজিদ ও মেট্রো স্টেশনগুলোকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের তিন শিশুসহ অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। রোববার ইসরায়েল সরকারের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ বলেছে, এছাড়া ইরানের হামলায় কমপক্ষে ৩৮৫ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে সাত জনের অবস্থা গুরুতর।
এদিকে ইসরায়েলি পুলিশের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, তেল আবিবের দক্ষিণে অবস্থিত বাত ইয়াম শহরে ৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। এছাড়া সাতজন এখনও নিখোঁজ। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন জরুরি সেবাদানকারীরা।