Samakal:
2025-06-16@09:00:10 GMT

বালু লুটপাটে ঝুঁকিতে সেতু

Published: 24th, April 2025 GMT

বালু লুটপাটে ঝুঁকিতে সেতু

বহু দেনদরবার, আন্দোলন, মানববন্ধন করতে হয়েছিল বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার বাঙ্গালী নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণের জন্য। সেই সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০২০ সালে। ২০২৩ সালের শেষের দিকে খুলে দেওয়া হয় আড়িয়াঘাট ও মধুপুরের মধ্যে সংযোগকারী সেতুটি। এতে যোগাযোগ হয় সহজ। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন আশপাশের ৩৫ গ্রামের মানুষ। তাদের সেই স্বস্তি হাওয়া হয়ে গেছে স্থানীয় একটি বালুদস্যু চক্রের কারণে। প্রভাবশালী এ চক্রটি সেতুর কাছ থেকে লুটে নিচ্ছে বালু। ভয়ে প্রতিবাদেরও সাহস পাচ্ছেন না এলাকার লোকজন। 
এলাকাবাসী জানায়, বছরের পর বছর আশপাশের ৩৫ গ্রামের মানুষকে বাঙ্গালী নদী পারাপার করতে নৌকা ব্যবহার করতে হতো। তাদের নানা আন্দোলনের পর ২০২০ সালে আড়িয়াঘাট এলাকায় সেতু নির্মাণের জন্য ৫১ কোটি ৩২ লাখ টাকা বরাদ্দ পায় সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হয় ৩৬ মিটার চওড়া ও ২৯৮ দশমিক ৮ মিটার দীর্ঘ সেতুটির নির্মাণকাজ। ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মঈন লিমিটেড অ্যান্ড ডন এন্টারপ্রাইজ ২০২৩ সালের আগস্টে কাজ শেষ করে। ওই বছরের ১৯ অক্টোবর উদ্বোধন করা হয় সেতুটি। 
সেতু উদ্বোধনের বছরখানেক পরই বাঙ্গালী নদীতে শ্যালো মেশিন বসিয়ে বালু তোলা শুরু করে একটি চক্র। স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, তারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মিনহাদুজ্জামান লিটনের অনুসারী। ওই ব্যক্তিরা বালুর পাশাপাশি মাটিও কেটে নিয়ে যায়। ৫ আগস্টের পর তারা পালিয়ে গেলে ওই ব্যবসা দখলে নেন বিএনপি সমর্থক কিছু লোক। এলাকাবাসীর অভিযোগ, রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে প্রশাসন আগেও নীরব ছিল, এখনও মুখে কুলুপ এঁটেছে।

সূত্র জানায়, সেতুটির পূর্ব পাশে মধুপুর, পশ্চিম পাশে আড়িয়াঘাট। দিনে অন্তত ৫০টি ট্রাক-ট্রলিতে করে বালু নেওয়া হচ্ছে। স্থানীয়ভাবে তৈরি আরও অন্তত ৩০০ যানবাহনও এ কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। এলাকাবাসীর ভাষ্য, বাঙ্গালী নদীটি শুকনো মৌসুমে নিরীহ মনে হলেও বর্ষা মৌসুমে খরস্রোতা হয়ে ওঠে। এভাবে মাটি-বালু লুটের কারণে আসন্ন বর্ষায় তীরের ঘরবাড়ি ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়বে। 
মধুপুরের বাসিন্দা জাহিদুল ইসলাম একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। তাঁর ভাষ্য, ওই সেতু নির্মাণের জন্য আশপাশের এলাকার মানুষ অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। কত দলের নেতার কাছে ধর্না দিয়েছেন। অবশেষে সেতুটি নির্মিত হলেও বালু দস্যুদের কারণে এটি রক্ষা করাই কঠিন হয়ে পড়েছে। আগে বালু তুলেছে আওয়ামী লীগের লোকেরা, এখন তুলছে বিএনপির লোকেরা। তাদের বিষয়ে প্রশাসন নিশ্চুপ।
বালু-মাটি লুটের বিষয়ে কথা হয় আড়িয়াঘাট এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রহিম ও চকনন্দন এলাকার শাহীন আলমের সঙ্গে। এই দুই বিএনপি কর্মীরই মাটি-বালুর ব্যবসা। তারা বাঙ্গালী নদী থেকে বালু-মাটি তোলার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘শুধু আমরা নই, বালু তোলায় আরও কয়েকজন জড়িত আছে।’
মধুপুর এলাকার বালু ব্যবসায়ী আব্দুল মোমিনের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ রয়েছে। তিনিও বিএনপি সমর্থক। আব্দুল মোমিনের দাবি, ‘ব্রিজের নিচ থেকে বালু তোলায় প্রায় ২১ জন ব্যক্তি জড়িত।’ তারা প্রতি ট্রলি বালু দুই হাজার থেকে ২৫০০ টাকায়, প্রতি ট্রাক বালু চার হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। 

ঝুঁকিতে তীর সংরক্ষণ বাঁধ
বাঙ্গালী নদীর ভাঙন থেকে তীর রক্ষায় ২০২০ সালে ডান তীরে (আড়িয়াঘাটের পাশে) পাঁচ দশমিক ২২ কিলোমিটার সংরক্ষণ কাজ করা হয়। এতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) খরচ হয় ১৪৮ কোটি ১৩ লাখ টাকা। এতে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পায় উপজেলার নামাজখালী, রানীরপাড়া, রংরারপাড়া, নিশ্চিন্তপুর, হলিদাবগা, পোড়াপাইকর এলাকা।  সাম্প্রতিক সময়ে বালু উত্তোলনের কারণে এসব এলাকার বাড়িঘর, আবাদি জমি ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। 
বালু উত্তোলনের বিষয়ে কথা হয় সোনাতলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হক লিপনের সঙ্গে। তিনি বলেন, বিএনপির কারা বালু তুলছে তাদের বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছেন। তথ্য সংগ্রহের পর দলের ঊর্ধ্বতন নেতাদের জানাবেন। 
সোনাতলার ইউএনও স্বীকৃতি প্রামাণিক বলেন, আড়িয়াঘাট এলাকায় সেতুর নিচ থেকে বালু তোলার বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছেন। শিগগির সেখানে অভিযান চালাবেন। 
এই সেতুর নিচ থেকে বালু-মাটি তোলা হলে তা ধসে পড়তে পারে বলে জানান বগুড়া সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল মনসুর আহম্মেদ। তিনি বলেন, সেতুটি রক্ষা করতে হলে অবশ্যই বালু তোলা ও মাটি কাটা বন্ধ করতে হবে। এ বিষয়ে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করবেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এল ক র ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

সরকারি হিসাবের চেয়ে করোনায় মৃত্যু ছিল বেশি

করোনা মহামারিকালে মৃত্যুর যে হিসাব স্বাস্থ্য বিভাগ প্রকাশ করেছিল, তা বাস্তব চিত্রের চেয়ে ভিন্ন ছিল। অন্তত দুটি গবেষণায় বিষয়টি আবারও সামনে এসেছে। এতে দেখা গেছে, সরকারি হিসাবের চেয়ে করোনায় মৃত্যু বেশি ছিল।

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) বিজ্ঞানী ও গবেষকেরা চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলা এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় করোনাকালে মৃত্যু নিয়ে পৃথক দুটি গবেষণা করেছেন। একটি ছিল গ্রামীণ এলাকা, অন্যটি শহর এলাকা।

বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ২০২০ সালের ৮ মার্চ। আর দেশে করোনায় প্রথম মৃত্যু হয় ওই বছরের ১৮ মার্চ। ১৩ জুন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে গত সাড়ে পাঁচ বছরে ২৯ হাজার ৫০২ জনের মৃত্যু হয়েছে। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার বারবার দাবি করেছে, সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ায় দেশে করোনায় মৃত্যু কম হয়েছে।

অনেকে রোগ লুকিয়ে রেখেছিলেন, মৃত্যুর ঘটনাও জানাজানি হতে দেননি। অনেক ক্ষেত্রে লোকচক্ষুর অগোচরে মরদেহ কবর দেওয়া হয়েছে। সরকারি হিসাবে আছে শুধু হাসপাতালে মৃত্যুর তথ্য। যাঁরা হাসপাতালে আসেননি, যাঁরা করোনার সব ধরনের উপসর্গ নিয়ে ভুগেছেন, তাঁদের মৃত্যু সরকারি পরিসংখ্যানে নেই।

যদিও মহামারিকালে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে করোনাকালে মৃত্যু অনেক বেশি ছিল। ২০২২ সালের ১০ মার্চ বাড়তি মৃত্যুর অনুমিত সংখ্যা প্রকাশ করেছিল চিকিৎসা ও জনস্বাস্থ্য সাময়িকী ল্যানসেট। এতে বলা হয়, করোনাকালে ২০২০ ও ২০২১ সালে বাংলাদেশে বাড়তি ৪ লাখ ১৩ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

একই বিষয়ে আরও দুটি গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। সীতাকুণ্ড এলাকায় করোনাকালে মৃত্যুবিষয়ক গবেষণাটি ২০২৪ সালে জার্নাল অব গ্লোবাল হেলথ–এ প্রকাশিত হয়েছে। আর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার মৃত্যু নিয়ে গবেষণাটি এ বছর ছাপা হয়েছে। গবেষকেরা জানিয়েছেন, ঢাকা শহরে করোনাকালে মৃত্যু নিয়ে আরও একটি গবেষণাকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নিজেদের গবেষণায় বলেছে, মৃত্যুর যে সংখ্যা বলা হয় সারা বিশ্বে কোভিডে মৃত্যু হয়েছে তার চেয়ে তিন গুণ বেশি। আইসিডিডিআরবির গবেষণাটি গুরুত্বপূর্ণ, এবং তারা সত্যের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করেছে। পরোক্ষ কারণে মৃত্যুর হিসাব সরকার দেয় না, তাই সংখ্যা কম থাকে, কম দেখায়।জনস্বাস্থ্যবিদ মুশতাক হোসেন

আইসিডিডিআরবির গবেষকেরা দাবি করছেন, সরকার যে সংখ্যা দিচ্ছে তা সঠিক নয়। মহামারি শুরুর সময় রোগ পরীক্ষার এবং চিকিৎসার সুযোগ কম ছিল। কোভিড–১৯–এ আক্রান্ত অনেকের মৃত্যু বাড়িতে হয়েছে, অনেকের রোগ শনাক্ত হয়নি, অনেক ঘটনা লিপিবদ্ধ হয়নি। অনেকে রোগ লুকিয়ে রেখেছিলেন, মৃত্যুর ঘটনাও জানাজানি হতে দেননি। অনেক ক্ষেত্রে লোকচক্ষুর অগোচরে মরদেহ কবর দেওয়া হয়েছে। সরকারি হিসাবে আছে শুধু হাসপাতালে মৃত্যুর তথ্য। যাঁরা হাসপাতালে আসেননি, যাঁরা করোনার সব ধরনের উপসর্গ নিয়ে ভুগেছেন, তাঁদের মৃত্যু সরকারি পরিসংখ্যানে নেই।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জনস্বাস্থ্যবিদ মুশতাক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নিজেদের গবেষণায় বলেছে, মৃত্যুর যে সংখ্যা বলা হয় সারা বিশ্বে কোভিডে মৃত্যু হয়েছে তার চেয়ে তিন গুণ বেশি। আইসিডিডিআরবির গবেষণাটি গুরুত্বপূর্ণ, এবং তারা সত্যের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করেছে। পরোক্ষ কারণে মৃত্যুর হিসাব সরকার দেয় না, তাই সংখ্যা কম থাকে, কম দেখায়।’

আমরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কারণে মৃত্যুর হিসাব বের করার চেষ্টা করেছি। আমরা দেখেছি মহামারির আনুষঙ্গিক কারণে মানুষের মৃত্যু হয়েছে। মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারেননি, মানুষ হাসপাতালে যেতে ভয় পেয়েছেন, ঠিক সময়ে চিকিৎসা নেননি। এসব কারণে মৃত্যু বেড়েছে।আইসিডিডিআরবির মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের সহযোগী বিজ্ঞানী আনীকা তাসনিম হোসেনসীতাকুণ্ডে করোনাকালে মৃত্যু

আইসিডিডিআরবির গবেষকেরা চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলায় করোনাকালে মৃত্যুর তথ্য সংগ্রহের কাজটি করেন ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে। গবেষক দলের সদস্যরা ২৫ হাজার ৬৬৯টি পরিবারের তথ্য সংগ্রহ করেন। গবেষকেরা মূলত ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সালে ওই সব পরিবারে কোন বয়সী কতজন মানুষ মারা গেছেন সেই তথ্য সংগ্রহ করেন। এর মধ্যে ২০২০ সাল ছিল করোনার বছর।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৮ সালে সীতাকুণ্ডের ওই পরিবারগুলোতে ৪৯৩টি মৃত্যুর ঘটনা ছিল। পরের বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে ছিল ৪৯৪টি মৃত্যু। অর্থাৎ পরপর দুই বছর মৃত্যুর সংখ্যায় বিশেষ কোনো পার্থক্য নেই। মাত্র একটি মৃত্যু বেশি। পরিসংখ্যানের দিক থেকে তা তাৎপর্যপূর্ণ নয়।

কিন্তু মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যায় ২০২০ সালে। ওই বছর ওই সব পরিবারে ৭৬১ জনের মৃত্যু হয়েছিল। আগের বছরের তুলনায় ২৬৭ জন বেশি। অর্থাৎ আগের দুই বছরের তুলনায় ২০২০ সালে ৫৪ শতাংশ মৃত্যু বেশি হয়েছিল সীতাকুণ্ডে।

২০২০ সালের শেষে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের দেওয়া তথ্যে বলা হয়েছিল, করোনায় সীতাকুণ্ডে মৃত্যু হয় ৮ জনের। আর করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যায় আরও ১৫ জন।

সীতাকুণ্ডের গবেষণার নেতৃত্বে ছিলেন আইসিডিডিআরবির মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের সহযোগী বিজ্ঞানী আনীকা তাসনিম হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কারণে মৃত্যুর হিসাব বের করার চেষ্টা করেছি। আমরা দেখেছি মহামারির আনুষঙ্গিক কারণে মানুষের মৃত্যু হয়েছে। মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারেননি, মানুষ হাসপাতালে যেতে ভয় পেয়েছেন, ঠিক সময়ে চিকিৎসা নেননি। এসব কারণে মৃত্যু বেড়েছে।’

কবরস্থানে বেশি মৃতদেহ

মৃত্যুর সংখ্যা জানার একটি সূত্র হচ্ছে কবরস্থান। হঠাৎ মৃত্যু বেড়ে গেলে চাপ পড়ে কবরস্থানে। এই বিবেচনা থেকে আইসিডিডিআরবির বিজ্ঞানী ও গবেষকেরা করোনাকালে মৃত্যুর পরিস্থিতি জানার জন্য কবরস্থানের তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের উদ্যোগ নেন।

গবেষকেরা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ছয়টি কবরস্থানকে গবেষণার জন্য বেছে নেন। এগুলো হচ্ছে—উত্তরা সেক্টর ১২ কবরস্থান, উত্তরা সেক্টর ১৪ কবরস্থান, উত্তরা সেক্টর ৪ কবরস্থান, বনানী কবরস্থান, রায়েরবাজার কবরস্থান ও মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থান। এর মধ্যে সবচেয়ে পুরোনো হচ্ছে বনানী কবরস্থান, এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭৪ সালে। সবচেয়ে নতুন উত্তরা সেক্টর ১৪ কবরস্থান, এটি তৈরি হয় ২০১৯ সালে।

গবেষকেরা এই ছয়টি কবরস্থান থেকে ১ লাখ ২ হাজার ৭৫৪টি মৃত্যুর তথ্য নেন। এর মধ্যে ৩২ হাজার ১০৮টি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল ১৯৭৪ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে। বাকি ৭০ হাজার ৫৮৫টি মৃত্যু ছিল ২০০১ সাল থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে। গবেষকেরা তাঁদের গবেষণার জন্য ২০০১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ৭০ হাজার ৫৮৫টি মৃত্যুর তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০১৮-১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে ছয়টি কবরস্থানে ৬৯ শতাংশ বেশি কবর দেওয়া হয়েছিল। ২০২৩ সালে তা ছিল ৩১ শতাংশ বেশি।

স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় করোনা মহামারিকালে বাড়তি এই মৃত্যু করোনার কারণে হয়েছে বলে গবেষকেরা মনে করছেন। যদিও বাড়তি এই মৃত্যুর তথ্য সরকারি হিসাবে প্রতিফলিত হতে দেখা যায়নি।

দুটি গবেষণায় যুক্ত ছিলেন আইসিডিডিআরবির বিজ্ঞানী ও স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সদস্য আহমেদ এহসানূর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের গবেষণা দুটি ছিল ছোট পরিসরে, কিন্তু গবেষণা ফলাফল থেকে একধরনের তাগিদ অনুভব করা যায়। তা হচ্ছে, বাংলাদেশে জরুরি ভিত্তিতে একটি শক্তিশালী মৃত্যুনিবন্ধন পদ্ধতি থাকা দরকার। প্রতিটি মৃত্যুর ঘটনা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি জরুরি প্রতিটি মৃত্যুর হিসাব থাকা। কোভিড–১৯ মহামারি অনিবন্ধিত মৃত্যুর এক করুণ উত্তরাধিকার রেখে গেছে। এখন সময় এসেছে প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যার মুখোমুখি হওয়ার।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সরকারি হিসাবের চেয়ে করোনায় মৃত্যু ছিল বেশি
  • কুষ্টিয়ায় করোনা শনাক্তের পিসিআর ল্যাবে চুরি, খোয়া গেছে ৪০ লাখ টাকার যন্ত্রাংশ
  • কুষ্টিয়ার একমাত্র পিসিআর ল্যাবের সব যন্ত্রাংশ চুরি