শৈশবের প্রিয় মুহূর্ত
শৈশবের সবচেয়ে প্রিয় মুহূর্ত কেটেছে আমার বাবার সঙ্গে। তিনি একজন শিক্ষক ছিলেন। আমার বাবাকে এখনও মনে করি তিনি পৃথিবীর সেরা শ্রেষ্ঠ মানুষ। হাত ধরে বাজারে যাওয়া, কোথাও বের হওয়া, তাঁর সঙ্গে সময় কাটানো সবচেয়ে প্রিয় মুহূর্ত। বাবা আমার একজন আইডল ছিলেন। বাবার মতো হওয়ার জন্য ভাই-বোনদের মধ্যে তাঁর সঙ্গে সবচেয়ে বেশি সময় ব্যয় করেছি। তিনি আমাকে সবখানে নিয়ে যেতেন। তাঁর সঙ্গে সময় কাটানোটাই ছিল জীবনের সেরা সময়।
যখন আপনি নবীন লেখক
বাবা মঞ্চ নাটকে অভিনয় করতেন। বিভিন্ন রিহার্সাল বা নাটক দেখানোর জন্য আমাকে নিয়ে যেতেন। তবে পরিবারের কেউ লেখালেখি করতেন না। বাবা প্রতি সপ্তাহের শুক্রবারের পত্রিকা কিনতেন। সাহিত্য পাতার বিভিন্ন গল্প-কবিতা পড়তেন। বিশিষ্ট লেখকদের গল্প আমাকে শোনাতেন। আমার কাছে মনে হলো, আমি বাবাকে শ্রদ্ধা করি। বাবা তাদের শ্রদ্ধা করেন। লেখালেখি করতে হবে, আমাকে লেখক হতে হবে। সে সময় আমাদের সৈয়দপুরে ‘বার ওয়েল’ নামে রেলওয়ের একটা সংগঠন ছিল। তখন আমি কলেজে পড়ি। সেখানে নোটিশ বোর্ডে দেখলাম, নবারুণের জন্য নতুনদের কাছ থেকে লেখা আহ্বান। গল্পের কোনো কিছু বুঝি না। সত্য বলতে গল্পের প্যারা, দাঁড়ি, কমা, সেমিকোলন এসব কিছুই বুঝতাম না। তবুও একটি গল্প সেখানে পাঠিয়ে দিই। তখন তো টেলিফোন বা যোগাযোগ তেমন ছিল না। আলম ভাই নামে একজন আমার বাসায় আসেন। তিনি আবার বাবার ছাত্র ছিলেন। তাঁকে দেখেই বাবা চিনতে পারেন। কী অবস্থা জানতে চান। তখন আলম ভাই জানান, রেজানুর গল্প দিয়েছে, ওর সঙ্গে কথা আছে। তারপর আমাকে পরের দিন যেতে বলেন তাঁর কাছে। পরে তিনি গল্প ধরে ধরে পুরো বোঝালেন। গল্প সম্পর্কে একটা প্রশিক্ষণ দিলেন আর কি; যা পরবর্তী জীবনে বেশ কাজে আসে। কীভাবে গল্পের প্যারা, দাঁড়ি বা অন্যান্য সেসব বুঝিয়ে বললেন। গল্পটির নাম ছিল ‘ক্ষুদার জ্বালা’। পরবর্তী সময়ে সেই গল্পটি যখন ছাপা হলো, তখন অন্যরকম অনুভূতি কম্পিত হয়। যে পছন্দ করে তাকেও দেখাই, যে অপছন্দ করে তাকেও দেখাই।
প্রথম নাটক যেভাবে লেখা হয়
ঢাবিতে পড়ার সময় আমার ইচ্ছে হলো নাটক লিখব। একদিন বিটিভিতে আতিকুল হক চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করতে চলে যাই। পরে সেখানে আমার নাটক লেখার অনুভূতির কথা জানাই। তাঁকে নাটকের স্ক্রিপ্ট দিই। তিনি পরে জানাবেন বলে রেখে দেন। দুই মাস যায় কোনো খোঁজ পাই না। তখন আবার তাঁর কাছে চলে যাই। তিনি জানান, লেখা আরও ঠিকঠাক করতে হবে। এক পর্যায়ে সব ঠিক হয়ে যায়, তিনি পছন্দ করেন। নাটকের রিহার্সাল শুরু হয়। এক পর্যায়ে শুটিং শেষ হয়। পরে আতিকুল হক চৌধুরী জানান, নাটক অমুক দিন প্রচার হবে। আমি তো খুশিতে আত্মহারা। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন সবাইকে বলেছি। দুঃখের কাহিনি হলো, যেদিন প্রচার হওয়ার কথা, সেদিন আর নাটক প্রচারিত হলো না। সবাই তো আমাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ভাবা শুরু করল। এক পর্যায়ে আতিকুল হক চৌধুরী চিঠির মাধ্যমে আমাকে খোঁজ করেন। আমি দেখা করি। পরে তিনি সান্ত্বনা দেন। শিডিউল জটিলতার জন্য প্রচার হয়নি। নেক্সটে প্রচার করা হবে। পরে সত্যি সত্যি প্রচার হলো। যখন নাম ঘোষণা হলো রেজানুর রহমানের গল্প অবলম্বনে আতিকুল হক চৌধুরীর প্রযোজনায় নাটক। শোনার পর শরীর দিয়ে ঘাম বেরিয়ে গেল।
প্রিয় লেখক যারা
আমার প্রিয় লেখক হলেন শওকত আলী। ‘উত্তরের খেপ’ নামে একটি উপন্যাস লিখেছেন। ঢাকা থেকে ট্রাক নিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের দিকে যাচ্ছে একজন ড্রাইভার। পথের মধ্যে যত কথাবার্তা, চোখের সামনে এখনও সেসব ভাসে। তাঁর লেখা আমাকে বেশ অনুপ্রেরিত করেছে। তরুণ বয়সে আরেকজনের লেখা আমার বেশ ভালো লেগেছিল। তরুণ বয়সে ভীষণ উন্মাদনা ছিল। ইমদাদুল হক মিলনের উপন্যাস আমার বেশ ভালো লেগেছে। সবচেয়ে যে বিষয়টি ভালো লাগত, তিনি তরুণদের মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপারটি বুঝতেন। লেখালেখির জায়গায় বেশি উৎসাহিত করেছেন তিনি। হুমায়ূন আহমেদের লেখাও আমাকে বেশ উৎসাহিত করেছে। তাঁর সঙ্গে অনেক স্মৃতি রয়েছে।
এখন যা লিখছি, পড়ছি
ছোটবেলা থেকে শুরু করে, বেড়ে ওঠা পর্যন্ত এই সময়ে। একান্নবর্তী পরিবার নিয়ে বড় উপন্যাস লেখার ইচ্ছে ছিল দীর্ঘদিন ধরে। এই লেখাটি শুরু করেছি। যখনই সময় পাই বই নিয়ে বসে যাই। পড়া শুরু করি। পড়ার কোনো বিকল্প নেই। তবে এখন পড়াশোনা কমে গেছে। আশা করি সেসব কেটে যাবে খুব শিগগিরই।
প্রিয় উদ্ধৃতি
আমার সবচেয়ে বড় প্রেরণা আমার বাবা। তাঁর প্রতিটি কথাই যেন আমার প্রিয় উদ্ধৃতি। তিনি বলতেন, ‘সৎ হও, সততাই শক্তি। তুমি সৎ থাক, কেউ কোনোদিন তোমার বিরুদ্ধে কাজ করতে পারবে না। তুমি বিপদে পড়বে না।’ v
lগ্রন্থনা :: ফরিদুল ইসলাম নির্জন
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আম র ব র জন য সবচ য়
এছাড়াও পড়ুন:
কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ৮৯তম একাডেমিক কাউন্সিল মিটিংয়ে সার্বিকভাবে আসন সংখ্যা কমানোসহ অর্গানোগ্রামে আরো ১৮টি নতুন বিভাগের অন্তর্ভুক্তি, চারটি ইনস্টিটিউট চালু এবং ১২টি বিভাগে পিএইচডি ডিগ্রি চালুর সুপারিশ করা হয়েছে।
সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ল্যাবভিত্তিক বিভাগগুলোতে আসন সংখ্যা ৪০টি এবং ল্যাববিহীন বিভাগগুলোতে ৫০টি আসন রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। নতুন ১৮টি বিভাগ অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত বিভাগগুলো হলো—পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ, জৈব রসায়ন ও আণবিক জীববিজ্ঞান বিভাগ এবং জৈবপ্রযুক্তি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত বিভাগগুলো হলো—সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, জনসংখ্যা বিজ্ঞান বিভাগ এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ। কলা ও মানবিক অনুষদভুক্ত গুলো হলো—ইসলামিক স্টাডিজ ও সংস্কৃতি বিভাগ, ইতিহাস বিভাগ এবং দর্শন বিভাগ। ব্যবসায় অনুষদভুক্ত বিভাগগুলো হলো— পর্যটন ও আতিথেয়তা ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ব্যবসায়িক তথ্যবিজ্ঞান বিভাগ, আন্তর্জাতিক ব্যবসা বিভাগ এবং লজিস্টিক ও মার্চেন্ডাইজিং বিভাগ। প্রকৌশল অনুষদভুক্ত বিভাগগুলো হলো— বৈদ্যুতিক ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগ, রাসায়নিক প্রকৌশল বিভাগ, পুরকৌশল বিভাগ এবং যন্ত্রকৌশল বিভাগ। আইন অনুষদভুক্ত বিভাগটি হলো— অপরাধবিদ্যা বিভাগ।
পাশাপাশি চারটি ইনস্টিটিউট গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। সেগুলো হলো—আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় উন্নত গবেষণা কেন্দ্র এবং একাডেমিক মান বৃদ্ধি কেন্দ্র। এগুলোর গঠন কাঠামোও সুপারিশ করা হয়েছে।
এর মধ্যে আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের জন্য পরিচালক হিসেবে একজন অধ্যাপক, নিয়মিত অধ্যাপক দুইজন, তিনজন সহযোগী অধ্যাপক, সেকশন অফিসার বা ম্যানেজার একজন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা একজন, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার টাইপিস্ট একজন, অফিস সহায়ক দুইজন এবং একজন ক্লিনার।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় উন্নত গবেষণা কেন্দ্র এবং একাডেমিক মান বৃদ্ধি কেন্দ্রের জন্য পরিচালক হিসেবে একজন অধ্যাপক, একজন অতিথি অধ্যাপক, অতিরিক্ত পরিচালক হিসেবে একজন অধ্যাপক অথবা সহযোগী অধ্যাপক, সেকশন অফিসার অথবা ম্যানেজার হিসেবে একজন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা একজন, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার টাইপিস্ট একজন, অফিস সহায়ক দুইজন এবং ক্লিনার একজন।
১২টি বিভাগে পিএইচডি ডিগ্রি চালুর প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিটি বিভাগে ন্যূনতম ২৬ জন করে শিক্ষক রাখার ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেছেন, “আমরা মিটিংয়ে এগুলো সুপারিশ করেছি। অর্গানোগ্রাম অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয় ডিপার্টমেন্টের জন্য ছাড়পত্র চায়, তারপর কমিশন (ইউজিসি) যদি অনুমোদন দেয়, তখন সেটা অর্গানাগ্রামে যুক্ত হয়। অর্গানোগ্রামে থাকলেই যে বিভাগ হয়ে যাবে, এমন না। একটা অনুমোদন দিয়ে রাখে। এই অনুমোদনের আলোকে আবার যখন দরখাস্ত দেওয়া হয়, তখন কমিশন বসে সিদ্ধান্ত নেবে।”
তিনি আরো বলেন, “ইউজিসি আমাদের নির্দেশনা দিয়েছে আসন সংখ্যা কমাতে, যাতে কোয়ালিটি এডুকেশনের নিশ্চিত হয়। তারা ল্যাববেজড বিভাগের জন্য ৪০টি আসন এবং ল্যাববিহীন বিভাগের জন্য ৫০টি আসন বরাদ্দ দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে।”
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেছেন, “অনেকগুলো সিদ্ধান্তই নেওয়া হয়েছে। তবে, এখনই না দেখে বলা যাচ্ছে না। রেজ্যুলেশন পাস হলে বিস্তারিত বলতে পারব।”
ঢাকা/এমদাদুল/রফিক