কানে স্বর্ণপামের জন্য লড়বে বাংলাদেশের ‘আলী’
Published: 25th, April 2025 GMT
দেশের সিনেমা–সিনেমা সংশ্লিষ্টদের জন্য এ এক ইতিহাস, গৌরবের ঘটনা। বিশ্ব চলচ্চিত্রের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আসর কান চলচ্চিত্র উৎসবের ৭৮তম আসরে আনুষ্ঠানিকভাবে জড়িয়ে গেল বাংলাদেশের নাম। উৎসবের স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা বিভাগে লড়তে যাচ্ছে দেশের সিনেমা ’আলী’। কানের অফিসিয়াল সিলেকশনের স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা বিভাগে দেশের কোনো সিনেমার তালিকাবদ্ধ হওয়া এটাই প্রথম। পৃথিবীর বিভিন্ন সিনেমার সঙ্গে ‘আলী’ লড়বে পাম দি’অর বা স্বর্ণপামের জন্য।
স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন আদনান আল রাজীব। এর প্রযোজনায় আছেন দেশের তানভীর হোসেন এবং ফিলিপাইনের ক্রিস্টিন ডি লিওন। সিনেমাটির লাইন প্রোডাকশন কোম্পানি ’রানআউট ফিল্মস’।
এমন একটি ঘটনা দেশের চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের তো আনন্দিত করবেই, তরুণদের অনেক বেশি অনুপ্রাণিত করবে বলে মনে করেন প্রযোজক তানভীর হোসেন। তিনি বলেন, ’স্বল্পৈদর্ঘ্য চলচ্চিত্রকে তো আমরা খুব একটা গুরুত্ব দেই না। কিন্তু এই ধরনের কাজের মধ্য দিয়েই একজন তরুণ–নবীন বড়–অভিজ্ঞ হয়ে ওঠে। আমাদের সিনেমা কানের মূল প্রতিযোগিতায় জায়গা করে নেয়াটা একটা ইন্সপায়ারিং ঘটনা বলেই মনে করি। এই জায়গা করে নেয়ার মাধ্যমে আমরা বলতে চাই, আমরাও বিশ্ব মানের কাজ করি।’
নিয়মের কারণে ’আলী’ সিনেমাটি নিয়ে বেশি কিছু বলতে পারলেন না নির্মাতা আদনান আল রাজীব। জানালেন ২০২৪ এর নভেম্বরে সিলেটে হয়েছে এর দৃশ্যধারণ। গল্পের সামান্য ধারণা দিয়ে আদনান বলেন, ব্যক্তিজীবনের ভেতর দিয়ে আমরা একটা অনিবার্য সত্যকে আবিষ্কার করার চেষ্টা করেছি। সহজ–সরল–সুন্দর ঢংয়েই কাজটি করার চেষ্টা ছিল আমাদের।’
স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমার নির্বাহী প্রযোজক হাবিবুর রহমান তারেক। জানান, গল্প নিয়ে তিনি একরকম নিশ্চতই ছিলেন যে বাইরের দর্শকরা এটা পছন্দ করবেন। তিনি বলেন, ’পরিচালক ও প্রযোজককে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। তারা কী ধরনের কাজ করেন, সেটাও আমার জানা। তাই কাজটি নিয়ে আত্মবিশ্বাসী ছিলাম শুরু থেকেই। বরং আমি বিশেষ নজর রেখেছিলাম এর মান নিয়ে। আমি দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, আমরা আন্তর্জাতিক মানের কাজ করার স্বক্ষমতা অর্জন করে ফেলেছি। নির্মাণে আমরা এখন খুবই আত্মবিশ্বাসী।’
নির্মাতা আদনান ও প্রযোজক তানভীরের এবারের কান যাত্রা এখানেই শেষ নয়।.
একই প্রতিষ্ঠান থেকে প্রযোজিত দুটি ছবির এই অর্জন বিরল। সব মিলিয়ে, কানের ৭৮তম আসরের মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে বাংলাদেশের শর্টফিল্ম “আলী” এবং ফিলিপাইনের শর্টফিল্ম “আগাপিতো” নিয়ে জমজমাট বাংলাদেশের অংশগ্রহণ।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক ন চলচ চ ত র উৎসব চলচ চ ত র র জন য স বল প
এছাড়াও পড়ুন:
তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রাম ঘেঁষে তুলশীগঙ্গা নদীর অদূরে সন্ন্যাসতলীর বটতলা। জায়গাটিতে প্রায় একশ বছর আগে থেকে বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার আয়োজন হয় ঘুড়ির মেলা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অন্তত ৫০ গ্রামের হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শুক্রবার সন্ন্যাসতলী ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মেলার দিনক্ষণ মনে রেখে সময়মতো দোকানিদের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা ভিড় জমান নিভৃত পল্লীতে। আগে মেলার দিন বৃষ্টি হওয়া যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। প্রচণ্ড গরম ও তাপপ্রবাহের মধ্যেই চলে এ আয়োজন। বৈরী পরিবেশের কারণে উৎসবের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন, সন্ন্যাসতলীর এ ঘুড়ি উৎসব শুরুর দিন বিকেলে বটতলায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় সন্ন্যাস পূজা পালন করেন। তাদের এ পূজা-অর্চনা ঘিরেই মূলত এ মেলার উৎপত্তি। তবে শুরুর কথা কেউ বলতে পারেননি। প্রবীণরা শুধু জানেন, একশ বছরের বেশি সময় ধরে তারা এ মেলার আয়োজন দেখে আসছেন।
মেলার নিজস্ব জায়গা না থাকলেও এর ব্যাপ্তি প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই এক দিনের এ মেলা ঘিরেই জেলার জামালগঞ্জ চারমাথা থেকে ঐতিহাসিক আছরাঙ্গাদীঘি পর্যন্ত রকমারি পণ্যের দোকান বসে। এখান থেকে সংসারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আসবাব থেকে শুরু করে ছোট মাছ ধরার বাঁশের তৈরি পণ্য খলসানি, টোপা, ডালা, চালুন কিনে নেন অনেকে।
সুতার তৈরি তৌরা জাল, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মিষ্টান্ন, প্রসাধনী, মাটির তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল নাগরদোলার ব্যবস্থাও। আর মেলার বড় আকর্ষণ ঘুড়ি ওড়ানো ও বিক্রি। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন ঘুড়ি বিক্রি করতে।
প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি তেমন হাওয়া-বাতাস না থাকায় এবার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা সেভাবে জমে ওঠেনি। তবে ঘুড়ি বেচাকেনা ও শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এ উপলক্ষে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থীর নিরাপত্তার জন্য মেলায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল ছিল।
আদমদীঘির শিববাটি গ্রামের ঘুড়ি ব্যবসায়ী সালাম হোসেনের ভাষ্য, সন্ন্যাসতলীর মেলা বড় হওয়ায় তিনি এসেছেন ঘুড়ি বিক্রির জন্য। মেলায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘুড়ি বিক্রি করতে পেরে তিনি খুশি। জয়পুরহাটের পার্বতীপুর এলাকার ঘুড়ি ব্যবসায়ী মফিজ উদ্দিন ও মজনু সরদার বলেন, পূর্বপুরুষের আমল থেকে এ মেলার কথা শুনে আসছেন তারা।
মেলা উদযাপন ও পূজা কমিটির সদস্য মহব্বতপুর গ্রামের মন্টু মণ্ডল বলেন, মেলাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এটি আসলে সব ধর্মালম্বীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।
মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিলন হোসেনের ভাষ্য, এক দিনের আয়োজনে যে এত লোকের সমাগম হতে পারে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মেলায় যেন অনৈতিক কর্মকাণ্ড না হয়, সে ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ক্ষেতলাল থানার ওসি মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং মেলায় আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন সতর্ক আছে। মেলায় অনৈতিক আচরণ লক্ষ্য করা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।