প্রথম আলো :

সরকারের কোনো আর্থিক তহবিল পেয়েছিলেন?

ইলিয়াস কাঞ্চন: না। ২০১২ সালে বাজেটে অর্থমন্ত্রী ২০ কোটি টাকার বরাদ্দ ঘোষণা করেছিলেন ইনস্টিটিউট করে তা পরিচালনার জন্য। বিশ্বাস করুন, আজ পর্যন্ত সেই তহবিলের সিকিটিও পাইনি। এর মধ্যে অর্থমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে অনেক কথা হয়েছে। কিন্তু কোনো সদুত্তর পাইনি, কাজও হয়নি।

প্রথম আলো :

মনে পড়ছে, মিশুক মুনির ও তারেক মাসুদের মৃত্যুর পর আপনার আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে পরিবহনশ্রমিকেরা খেপেছিলেন। প্রকাশ্যে অনেক খারাপ মন্তব্য করেছিলেন। নিশ্চয়ই এমন পরিস্থিতি আরও হয়েছে?

ইলিয়াস কাঞ্চন: তা হয়েছে, কিন্তু কাজটাকে আমি ভালোবেসেই করতে চেয়েছি। তাই বিষয়কে অন্যভাবে আমলে নিয়ে তাঁদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে তাঁদের মানসিকতার পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিই। আসলে এ ক্ষেত্রে নিজের ব্যবহার, আচরণ বড় একটা বিষয়। আমি নিজেও যাত্রীদের বিষয়টি বুঝিয়েছি। বাসে উঠে একজন শ্রমিক বা চালকের সঙ্গে ভালো আচরণ করলে, তাঁকে বয়সানুযায়ী ‘ভাই’, ‘চাচা’ কিংবা এ ধরনের কোনো সম্বোধনে ডাকলে দেখবেন ঠিকই তিনি আপনার কথা শুনবেন। তাঁরা ভালো আচরণ করবেন। আমি এ জায়গায় সফল। একসময় পরিবহনমালিক-শ্রমিকেরা আমাকে দেখতে পারতেন না। তাঁরা মনে করতেন, আমি ভুল করছি। তাঁদের ধারণা ছিল, দুর্ঘটনা কপালের লেখা। এখন এ ধারণা থেকে তাঁরা বেরিয়ে এসেছেন। আমার ওপর ধারণা বদলে গেছে। মনে পড়ছে, কয়েক বছর আগে এক অনুষ্ঠানে খুলনায় একজন ড্রাইভার আমাকে ধরে কেঁদেই ফেলেন। বললেন, ‘আপনাকে ভুল বুঝেছিলাম। কারণ, আপনার সম্পর্কে এত খারাপ শুনেছি যে মনে হতো রাস্তায় পেলে আপনার ওপর দিয়েই গাড়ি চালিয়ে দেব। এখন মনে হচ্ছে, আপনাকে মহব্বত করা উচিত।’ তাঁর কথা আমার হৃদয় ছুঁয়ে যায়, চোখ ভিজে যায়।

প্রথম আলো :

শুধুই চালক আর শ্রমিকদের নিয়েই কাজ করেছেন?

ইলিয়াস কাঞ্চন: পথচারীদের নিয়েও কাজ করেছি। তাঁদেরও সচেতন হওয়া জরুরি। তরুণ পথচারীদের উদ্দেশে বিভিন্ন সময়ে আমি বলেছি, শুধু চালকদের দোষ, গাড়ির দোষ, রাস্তার দোষ খুঁজে বেড়াবেন? তাহলে আপনাদের কোনো দায়িত্ব নেই? আপনার নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য পথচারী হিসেবে আপনার দায়িত্ব নেই? পথচারী হিসেবে নিজে যে ভুলগুলো করেন, তা কখনো দেখতে চান না। শুধু অন্যের দোষ দেখেন।

প্রথম আলো :

২৫ বছরে কী পেলেন, কী হারালেন?

ইলিয়াস কাঞ্চন: আমি তখন চলচ্চিত্রে সুপারস্টার ছিলাম। এ কাজে এসে আমার চলচ্চিত্রের ক্যারিয়ার নষ্ট হয়েছে। আমি অবশ্য ওই সময় ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবিনি। এই আন্দোলন যখন শুরু করলাম, প্রথম দিকে কোনো সাফল্য পাইনি, বরং অনেকে আমাদের গালাগালি করতেন। কেউ বলতেন, ‘মাথা খারাপ হয়ে গেছে’, ‘আল্লাহর হুকুমের বিরুদ্ধে কাজ করছি, আল্লাহর মাল আল্লাহ নেয়’—এমনই নানা কথা। এখন কিন্তু মানুষ এই ধারণা থেকে বেরিয়ে এসেছে। এখন সবাই বোঝে, দুর্ঘটনা কারও না কারও গাফিলতির জন্য, অনিয়মের জন্য ঘটছে। এটা শুধু নিয়তির বিষয় না। আমরা এই সচেতনতাকে আন্দোলনের সবচেয়ে বড় সফলতা মনে করি। দেখেন, এত বছর পর এই নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাজপথে নেমেছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। শুরু থেকে শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে আমি একাত্মতা প্রকাশ করেছি। এই সময়ে আমার সন্তানসম্ভবা মেয়ে ইমাকে দেখতে যাওয়ার কথা ছিল লন্ডনে। এ সময় মেয়ের পাশে বাবা হিসেবে আমার থাকাটা ভীষণ জরুরি, কিন্তু এরপরও যাইনি শুধু একটি কারণে। লন্ডনে আমার একটা মেয়ে, আর এই দেশে বর্তমানে নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়নে রাস্তায় আন্দোলনে হাজার হাজার সন্তান। এই কোমলমতি সন্তানদের রাস্তায় রেখে আমি কী করে মেয়ের কাছে যাই?

‘বেদের মেয়ে জোসনা’ ইলিয়াস কাঞ্চন অভিনীত তথা বাংলা চলচ্চিত্রের সর্বাধিক ব্যবসাসফল ছবি.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রথম আল র জন য আপন র পথচ র

এছাড়াও পড়ুন:

ভারতে কোনো বাংলাদেশি থাকলে উপযুক্ত চ্যানেলে পাঠাতে হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, বাংলাদেশের কোনো নাগরিক ভারতে থেকে থাকলে, তাঁদের উপযুক্ত চ্যানেলে পাঠাতে হবে।

ভারত থেকে কিছু মানুষকে বিভিন্ন জেলার সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানোর বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করেছি। আমাদের দেশের নাগরিক যদি ভারতে থাকেন, তাহলে উপযুক্ত চ্যানেলে পাঠালে আমরা নেব। কিন্তু তাঁদের জঙ্গলের ভেতর ও নদীতে ফেলে যাওয়া কোনো সভ্য দেশের আচরণ হওয়া উচিত নয়।’

আজ রোববার দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে ঈদ–পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময় ও আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে উপদেষ্টা এ মন্তব্য করেন। এ সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘বিগত সরকারের সময়ে মারধর করলে পুলিশকে খুব সচল বলে ভাবা হতো। কিন্তু বর্তমান সরকার এমন পুলিশ চাইছে না। আমরা মানবিক পুলিশ চাচ্ছি, যারা সবার সঙ্গে ভালো আচরণ করবে। এখনকার পুলিশ হচ্ছে মানবিক পুলিশ। তারা এখন ভালো ব্যবহার করে দেখেই সাধারণ জনগণ ভাবছে, পুলিশ সচল হয়নি। বর্তমান পুলিশ কিন্তু আগের চেয়ে আরও বেশি সক্রিয়।’

আরও পড়ুন২৪ দিনে ১১৪৩ জনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ০১ জুন ২০২৫

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কতটা প্রস্তুত এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করবে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশন যখন নির্বাচনের সময় ঘোষণা করবে, আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সে অনুযায়ী প্রস্তুত রয়েছে।’

আরও পড়ুনভারত থেকে ‘পুশ ইন’ ঠেকানো সম্ভব নয়: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা০৩ জুন ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারতে কোনো বাংলাদেশি থাকলে উপযুক্ত চ্যানেলে পাঠাতে হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ, সামরিক কুচকাওয়াজ ঘিরে উত্তেজনা
  • যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ, সামরিক কুচকাওয়াজ ঘিরে ব্যাপক উত্তেজনা
  • ইরানে ইসরায়েলের হামলা বিশ্বকে বড় ঝুঁকিতে ফেলেছে: খেলাফত মজলিস