মাত্র তিন দিন আগে জম্মু-কাশ্মিরের পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় স্বামী বিতান অধিকারীকে হারিয়েছেন স্ত্রী সোহিনী অধিকারী। গত বুধবার প্রশাসনের চেষ্টায় তিন বছরের ছেলে হৃদানকে নিয়ে কলকাতায় ফেরেন তিনি। কিন্তু তার পর থেকেই সদ্য বিধবাকে ঘিরে শুরু হয়েছে নানা বিতর্ক। তাতে বাদ যায়নি রাজনীতিও।

‘বৌমা’ অর্থাৎ সোহিনীকে ‘বাংলাদেশি’ বলে দাবি করেছে বিতানের পরিবার। যদিও সোহিনীর ভাইয়ের দাবি, তার বোনকে নিয়ে যে সব অভিযোগ করা হচ্ছে, তার সবই মিথ্যা। 

গত বুধবার সন্ধ্যায় কলকাতা বিমানবন্দরে সোহিনীরা নামার পরে রাজ্য সরকারের পক্ষে মন্ত্রী, বিধায়কেরা যেমন গিয়েছিলেন, তেমনই সেখানে উপস্থিত হন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং তার কয়েক জন রাজনৈতিক সঙ্গী। শুভেন্দুকে সোহিনী জানান, হিন্দু বলে তার স্বামীকে গুলি করে মেরেছে সন্ত্রাসীরা এবং তিনি শুভেন্দুর ভরসায় কলকাতায় এসেছেন।

পরের দিন, বৃহস্পতিবার সোহিনীর সঙ্গে দেখা করতে তার পাটুলির বাড়িতে যান শুভেন্দু, অগ্নিমিত্রা পালরা। 

শুভেন্দু জানান, প্রায় আধ ঘণ্টা সোহিনীর সঙ্গে তার কথা হয়েছে। তবে সেগুলো জনসমক্ষে বলা যাবে না এবং তারা সোহিনীর পাশে আছেন।

বৃহস্পতিবার নিহত বিতানের ভাই বিভু দাবি করেছেন, তার ভ্রাতৃবধূ আদতে ভারতের নাগরিকই নন! 
পেশায় আইনজীবী বিভুর মন্তব্য, ‘তার (সোহিনীর) পরিচয় দিতে গেলে ইতিহাস হয়ে যাবে।” এমনকি, ভ্রাতৃবধূকে ‘ইন্টারন্যাশনাল জালিয়াত’ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

বিভু জানান, বছর দুয়েক আগে সোহিনী এবং তার মা ভারতী রায়ের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছিল। সেই মামলা এখনো চলছে। ভারতী বাংলাদেশ চলে গেছেন। তবে এ দেশে থেকে যান তার মেয়ে। 

বিভুর আরো দাবি, পরিচয় গোপন করে তার ভাই, পেশায় আইটি কর্মী বিতানকে বিয়ে করেছিলেন সোহিনী।

তিনি বলেন, “সোহিনীর দুটো জন্ম সনদ রয়েছে। উনি আদতে বাংলাদেশের নাগরিক। পরে তারা এ দেশের ভোটার কার্ড, আধার কার্ড ইত্যাদি বানিয়েছিলেন। অবশ্য পরে প্রমাণ হয়েছে, সেগুলো ভুয়া।”

বিতানের পরিবারের দাবি, সোহিনী যেখানে থাকেন সেই বাড়ির ‘অবৈধ মালিক’ তিনি। কারণ, ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে তার মা ওই বাড়িটি কেনেন। পরে সেটি মেয়েকে উপহার দেন।

ভাইয়ের মৃত্যুতে সরকার আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিলে সেটা স্ত্রী হিসাবে সোহিনীর পাওয়ার আইনি অধিকার নেই বলে মনে করেন বিভু। 

তার ভাষ্য, “তার তো ভারতে থাকার কথাই নয়। আইনগতভাবে দেখলে কোনো ক্ষতিপূরণ তার পাওয়ার কথা নয়। ক্ষতিপূরণ দেওয়া হলে সেটা আমাদের বাবা-মায়ের পাওয়া উচিত।”
 

ঢাকা/শাহেদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

করিডোরের জন্য দু’দেশের সম্মতি লাগবে: জাতিসংঘ 

রাখাইন রাজ্যের বেসামরিক নাগরিকের জন্য মানবিক সহায়তা পাঠাতে করিডোরের বিষয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সম্মতি প্রয়োজন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। 

ঢাকার জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয় সমকালকে এক বিবৃতিতে জানায়, বাংলাদেশে জাতিসংঘ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তা অব্যাহত রেখেছে। একই সঙ্গে রাখাইনে মানবিক পরিস্থিতির অবনতি নিয়েও উদ্বিগ্ন তারা।

জাতিসংঘ অন্য অংশীদারকে সঙ্গে নিয়ে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দাতা হিসেবে বাংলাদেশের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন জোরদার করবে। বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমার সীমান্ত পেরিয়ে যে কোনো মানবিক সহায়তা বা সরবরাহের জন্য প্রথমে দুই সরকারের মধ্যে সম্মতি প্রয়োজন। সীমান্ত অতিক্রম করে সহায়তা দেওয়ার জন্য জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সরকারগুলোর অনুমতি নেওয়ার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এটি ছাড়া জাতিসংঘের সরাসরি ভূমিকা সীমিত।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গত রোববার এক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছিলেন, ‘নীতিগতভাবে আমরা রাখাইন রাজ্যে মানবিক করিডোরের ব্যাপারে সম্মত। কারণ এটি একটি মানবিক সহায়তা সরবরাহের পথ হবে। তবে আমাদের কিছু শর্ত আছে। সেই শর্ত যদি পালন করা হয়, অবশ্যই আমরা জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সহযোগিতা করব।’ 

এ খবর চাউর হলে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। সরকারের এমন সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নের শঙ্কা করছে রাজনৈতিক দলগুলো। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ছাড়া সরকার কীভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

তথাকথিত মানবিক করিডোর স্থাপন নিয়ে জাতিসংঘ বা অন্য কারও সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনা হয়নি বলে দাবি করছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

গত অক্টোবরে জাতিসংঘের উন্নয়ন প্রকল্প (ইউএনডিপি) রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে ১২ পাতার একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। প্রতিবেদনে রাখাইনের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অবনতির কথা উল্লেখ করা হয়। রাখাইনের পণ্য প্রবেশের জন্য আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ সীমান্ত বন্ধ রয়েছে, আয়ের কোনো উৎস নেই। ভয়াবহ মূল্যস্থিতি, অভ্যন্তরীণ খাদ্য উৎপাদনে ধস, জরুরি সেবা এবং সামাজিক সুরক্ষায় ঘাটতি দেখা দিয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যে সেখানে ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর পরিস্থিতি আরও অবনতির শঙ্কা করছে জাতিসংঘ। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ