‘পুরোটাই স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে, ডুবে যাচ্ছি, আবার ভেসে উঠছি’
Published: 26th, April 2025 GMT
নাটক, বিজ্ঞাপনচিত্র ও চলচ্চিত্র বানিয়ে ১৮ বছর পার করেছেন আদনান আল রাজীব। পরিচালক হিসেবে সবচেয়ে মন ভালো করা খবরটি পেলেন। কান চলচ্চিত্র উৎসবের স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বিভাগে মনোনীত হয়েছে তাঁর পরিচালিত সিনেমা ‘আলী’। সিনেমাটির দৈর্ঘ্য ১৫ মিনিট।
গতকাল বিকেলে অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের তালিকা ঘোষণা করে কান উৎসব কর্তৃপক্ষ। এর কাছাকাছি সময়ে নির্মাতা রাজীবও ফেসবুকে সুখবরটি জানান। সহকর্মী থেকে শুরু করে বিনোদন অঙ্গনের শুভাকাঙ্ক্ষীরা আদনানের এ খবরে তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
কানে তাঁর সিনেমার মনোনয়ন নিয়ে জানতে চাইলে উচ্ছ্বসিত আদনান প্রথম আলোকে বলেন, এবারই প্রথম কান উৎসবের মূল প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের কোনো ছবি জায়গা করে নিয়েছে। তাঁর ভাষ্যে, ‘আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না। অদ্ভুত একটা অভিজ্ঞতা। পুরোটাই স্বপ্নের মতো। মনে হচ্ছে, ডুবে যাচ্ছি, আবার ভেসে উঠছি। বোঝানো যাবে না, হার্টবিট (হৃৎস্পন্দন) বেড়ে যাচ্ছে। কান চলচ্চিত্র উৎসব পৃথিবীর অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ আসর। জানতে পেরেছি, সাড়ে চার হাজার চলচ্চিত্র থেকে আমাদেরটা নির্বাচিত হয়েছে। এটা আসলে কল্পনাই করা যায় না।’
‘আলী’ ছবির শুটিং প্রসঙ্গে আদনান জানান, গত বছরের ডিসেম্বরে সিলেটের বিভিন্ন লোকেশনে শুটিং করেছিলেন। টানা পাঁচ দিন কাজ করে শুটিং শেষ করেন।
সিনেমাটি উৎসবের কথা মাথায় রেখে বানিয়েছেন আদনান আল রাজীব। তবে তা যে কান উৎসব হবে, ভাবেননি তিনি। আদনান বলেন, ‘আমরা তো আসলে কখনোই কান উৎসবের কথা ভাবিনি। এটা তো স্বপ্নের মতো ব্যাপার। আমাদের লক্ষ্য ছিল একটা ফিল্ম বানাব। এরপর একটা অভিনব ভাবনা মাথায় আসে। তখন আমার কাছে মনে হয়েছিল, এই ভাবনা নিয়ে কাজ করি। আমাদের একটা প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়েছে, ক্যাটালগ নামে। বাংলাদেশ থেকে সেই প্রতিষ্ঠানে আছি আমি আর তানভীর, ফিলিপাইন থেকে আছে আমাদের আরও দুজন বন্ধু। চারজন মিলে গেল বছরে প্রতিষ্ঠানটা শুরু করি। শুরুর পর কোনো কাজ করা হচ্ছিল না। তারপর আমরা কাজ শুরু করলাম। ‘আলী’ গল্পটা বানালাম, যা আমাদের প্রতিষ্ঠানের প্রথম প্রযোজনা। ফেব্রুয়ারিতে আমরা জমা দিই কান উৎসবে। এরপর জানতে পারলাম মনোনয়নের খবর।’
পরিচালক আদনান জানান, ‘আলী’ ছবিতে অভিনয় করেছেন আল আমিন। যিনি গান করেন এবং ইনফ্লুয়েন্সার হিসেবেও পরিচিত। এ ছাড়া আছেন ইন্দ্রানী সোমা।
‘আলী’ কানে জায়গা করে নেওয়ায় আনন্দিত সংস্কৃতি উপদেষ্টা ও নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চলচ চ ত র ক ন উৎসব উৎসব র আম দ র আদন ন
এছাড়াও পড়ুন:
তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রাম ঘেঁষে তুলশীগঙ্গা নদীর অদূরে সন্ন্যাসতলীর বটতলা। জায়গাটিতে প্রায় একশ বছর আগে থেকে বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার আয়োজন হয় ঘুড়ির মেলা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অন্তত ৫০ গ্রামের হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শুক্রবার সন্ন্যাসতলী ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মেলার দিনক্ষণ মনে রেখে সময়মতো দোকানিদের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা ভিড় জমান নিভৃত পল্লীতে। আগে মেলার দিন বৃষ্টি হওয়া যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। প্রচণ্ড গরম ও তাপপ্রবাহের মধ্যেই চলে এ আয়োজন। বৈরী পরিবেশের কারণে উৎসবের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন, সন্ন্যাসতলীর এ ঘুড়ি উৎসব শুরুর দিন বিকেলে বটতলায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় সন্ন্যাস পূজা পালন করেন। তাদের এ পূজা-অর্চনা ঘিরেই মূলত এ মেলার উৎপত্তি। তবে শুরুর কথা কেউ বলতে পারেননি। প্রবীণরা শুধু জানেন, একশ বছরের বেশি সময় ধরে তারা এ মেলার আয়োজন দেখে আসছেন।
মেলার নিজস্ব জায়গা না থাকলেও এর ব্যাপ্তি প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই এক দিনের এ মেলা ঘিরেই জেলার জামালগঞ্জ চারমাথা থেকে ঐতিহাসিক আছরাঙ্গাদীঘি পর্যন্ত রকমারি পণ্যের দোকান বসে। এখান থেকে সংসারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আসবাব থেকে শুরু করে ছোট মাছ ধরার বাঁশের তৈরি পণ্য খলসানি, টোপা, ডালা, চালুন কিনে নেন অনেকে।
সুতার তৈরি তৌরা জাল, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মিষ্টান্ন, প্রসাধনী, মাটির তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল নাগরদোলার ব্যবস্থাও। আর মেলার বড় আকর্ষণ ঘুড়ি ওড়ানো ও বিক্রি। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন ঘুড়ি বিক্রি করতে।
প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি তেমন হাওয়া-বাতাস না থাকায় এবার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা সেভাবে জমে ওঠেনি। তবে ঘুড়ি বেচাকেনা ও শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এ উপলক্ষে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থীর নিরাপত্তার জন্য মেলায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল ছিল।
আদমদীঘির শিববাটি গ্রামের ঘুড়ি ব্যবসায়ী সালাম হোসেনের ভাষ্য, সন্ন্যাসতলীর মেলা বড় হওয়ায় তিনি এসেছেন ঘুড়ি বিক্রির জন্য। মেলায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘুড়ি বিক্রি করতে পেরে তিনি খুশি। জয়পুরহাটের পার্বতীপুর এলাকার ঘুড়ি ব্যবসায়ী মফিজ উদ্দিন ও মজনু সরদার বলেন, পূর্বপুরুষের আমল থেকে এ মেলার কথা শুনে আসছেন তারা।
মেলা উদযাপন ও পূজা কমিটির সদস্য মহব্বতপুর গ্রামের মন্টু মণ্ডল বলেন, মেলাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এটি আসলে সব ধর্মালম্বীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।
মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিলন হোসেনের ভাষ্য, এক দিনের আয়োজনে যে এত লোকের সমাগম হতে পারে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মেলায় যেন অনৈতিক কর্মকাণ্ড না হয়, সে ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ক্ষেতলাল থানার ওসি মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং মেলায় আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন সতর্ক আছে। মেলায় অনৈতিক আচরণ লক্ষ্য করা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।