কয়েক বছর ধরে বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশে রিকন্ডিশন্ড যান আমদানি ও বিক্রি কমেছে। এ পরিস্থিতিতে জ্বালানি সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব হাইব্রিড গাড়ির শুল্ক হার কমানোর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বারভিডা)। এছাড়াও গণপরিবহন হিসেবে ব্যবহৃত মাইক্রোবাসের সম্পূরক শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহারেরও আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি। 

শনিবার রাজধানীর বিজয়নগর ফার্স হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বারভিডার সভাপতি আবদুল হক এ দাবি জানান। এ সময় সংগঠনের অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

লিখিত বক্তব্যে বারভিডার সভাপতি আবদুল হক মোটরযান আমদানির জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি কর কাঠামো এবং শুল্ক হার নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন। রিকন্ডিশন মোটরযান আমদানিতে ন্যূনতম ১২৯ শতাংশ ও সর্বোচ্চ ৮২৬ শতাংশ শুল্ক দিতে হচ্ছে। মাইক্রোবাসের সম্পূরক শুল্ক ও অ্যাম্বুলেন্স আমদানির শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার এবং পিক আপ বা ভ্যানের শুল্ক সর্বনিম্ন স্তরে নির্ধারণ করা উচিত। এছাড়াও ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে মানসম্পন্ন গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ১৬ থেকে ৪০ আসনের বাস আমদানিতে শুল্ক কমাতে হবে। হাইব্রিড গাড়ির সিসি স্ল্যাব ও সম্পূরক শুল্ক হার পুনর্বিন্যাস করা হলে এসব গাড়ি আমদানি সহজ হবে এবং সরকারে রাজস্ব আয় বাড়বে বলে মনে করে বারভিডা। 

আবদুল হক বলেন, করোনা মহামারির কারণে বারভিডার সদস্যদের ব্যবসা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর ডলার সংকট ও দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে আমদানি করা গাড়ির দামও বেড়েছে। ফলে মধ্য ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রেতাদের সামর্থ্যের বাইরে চলে গেছে রিকন্ডিশন গাড়ি। এতে এসব গাড়ি আমদানি কমেছে।

বারভিডার সভাপতি বলেন, বৈদ্যুতিক গাড়ি আমদানিতে দেশে বেশ আগ্রহ তৈরি হয়েছে। মোটরযানে ২০৩০ সাল নাগাদ ফসিল ফুয়েলের ব্যবহার কমে আসার পরিপ্রেক্ষিতে দেশে বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহার বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ইদানীং নিম্নমানের বৈদ্যুতিক গাড়ি আমদানি হচ্ছে। তাই দেশে বৈদ্যুতিক, হাইব্রিড, প্লাগ-ইন হাইব্রিড এবং হাইড্রোজেন গাড়ি আমদানি ও ব্যবহার বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়ন করা দরকার। 

রিকন্ডিশন্ড গাড়ি এবং দেশে আমদানি করা নতুন গাড়ির নিবন্ধন ফি’র মধ্যে অনেক বৈষম্য রয়েছে বলে দাবি করেন বারভিডা সভাপতি। 

তিনি বলেন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) নিবন্ধন খরচ নতুনের চেয়ে পুরোনো গাড়িতে অনেক বেশি। দেড় হাজার সিসি সক্ষমতার গাড়ি নিবন্ধন, মালিকানা বদল ও মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) মিলিয়ে নতুন গাড়িতে খরচ পড়ে ৮০ হাজার ৪০৮ টাকার বেশি। অন্যদিকে পুরোনো গাড়িতে এ খরচ হয় ১ লাখ ৭ হাজার টাকার বেশি। আর সাড়ে তিন হাজার সিসি সক্ষমতার নতুন গাড়িতে খরচ ১ লাখ ৫৯ হাজার ৭৫৮ টাকা। একই সক্ষমতার পুরোনো গাড়ির বেলায় তা ২ লাখ ১৩ হাজার ৭১৬ টাকা।

মডেল ভেদে পুরোনো গাড়ির নিবন্ধন খরচ নতুনের তুলনায় ২৭ হাজার থেকে ৫৪ হাজার টাকার মতো বেশি। এছাড়া আমদানি করা রিকন্ডিশন গাড়ি বিক্রির সময় ‘দ্বৈত নিবন্ধন’ করতে হয়। বৈষম্যমূলক এসব সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানান তারা।

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের যেসব ঘটনা ঘটছে সেগুলোকে গণহত্যা আখ্যা দিয়ে আবদুল হক বলেন, 
ব্যাটারিচালিত রিকশা পরিবেশের জন্য হুমকি ও দেশের জন্য ‘ক্যান্সারে’ পরিণত হয়েছে। গাড়ি এখন আর বিলাসিতা নয়। নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজন। গাড়ির ব্যবহার বাড়লে দুর্ঘটনার পরিমাণ কমে যাবে

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবহ র র জন য আমদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

দলগুলোর সঙ্গে কথা বলে মানবিক করিডরের সিদ্ধান্ত নিতে হতো: নাহিদ ইসলাম

মানবিক করিডরের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অবশ্যই রাজনৈতিক দলগুলো সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন ছিল বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।

আজ বুধবার বিকেলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সঙ্গে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় শেষে এক প্রশ্নের জবাবে এনসিপির নাহিদ এ কথা বলেন। রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দুই দলের বৈঠক হয়।

জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক বলেন, এই সরকার একটি ঐকমত্যের ভিত্তিতেই তৈরি হয়েছে এবং পরিচালিত হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে সরকারের প্রতি একটা সমর্থন আছে। ফলে জাতীয় সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা প্রয়োজন। এই করিডর বা রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি কীভাবে থাকবে, তা তারা (এনসিপি) এখনো স্পষ্ট নয়। তবে মানবিক করিডরের বিষয়টি নিয়ে অন্যান্য রাজনৈতিক দল যে বক্তব্য–বিবৃতি দিচ্ছে, তার সঙ্গে তারা একমত।

জুলাই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা, প্রত্যাশা এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠার জন্য ঐক্যের জায়গাটা ধরে রাখতে হবে উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, সে উদ্দেশ্যই মূলত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে বসা। ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে বিচার, সংস্কার এবং গণপরিষদ নির্বাচনের এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘ইসলামী আন্দোলন নিম্ন ও উচ্চ উভয় কক্ষেই সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের কথা বলছে। কিন্তু এনসিপি উচ্চকক্ষে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের কথা বলেছে। ইসলামী আন্দোলন নিজেদের যুক্তি উপস্থাপন করেছে। আমরা বলেছি, আমরা এ বিষয়ে আলোচনা করব। সংবিধানের মৌলিক সংস্কারের জন্য কেন গণপরিষদ নির্বাচন প্রয়োজন, আমরা সে বিষয়ে ব্যাখ্যা করেছি। উনারা বলেছেন, বিষয়টি ভেবে দেখবেন।’

বৈঠকে দলগতভাবে আওয়ামী লীগকে বিচারের আওতায় আনার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের বিচার চলার সময় তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা, নিবন্ধন স্থগিত করাসহ বেশ কিছু বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বেশির ভাগ বিষয়ে দুই দল একমত।

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সারা দেশে চাঁদাবাজি, লুটপাট এবং জনগণের অধিকার হরণের মতো কর্মকাণ্ড বেড়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ নতুন বাংলাদেশের জন্য, রাজনৈতিক সংস্কৃতির জন্যই জুলাই অভ্যুত্থানে রাজপথে নেমে এসেছিল। যদি পুরোনো বন্দোবস্তের জন্য কেউ চেষ্টা করে, জনগণ তা মেনে নেবে না।

সভায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সঙ্গে তিনটি বিষয়ে ঐকমত্য হয় জাতীয় নাগরিক পার্টির।

বিষয়গুলো হলো দ্রুত স্থানীয় নির্বাচনের আয়োজন; গণহত্যা ও ফ্যাসিজমের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত বিচার করা এবং দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার ও বিচার চলাকালে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত রাখা এবং সর্বশেষ মৌলিক সংস্কার শেষ করে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা।

মতবিনিময় সভায় এনসিপির পক্ষ থেকে আরও উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব, আতিক মুজাহিদ, সরোয়ার তুষার, আশরাফ উদ্দিন মাহদী, যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক সাদ্দাম হোসেন, কেন্দ্রীয় সদস্য আল আমীন।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পক্ষে ছিলেন মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, আশরাফুল আলম প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দলগুলোর সঙ্গে কথা বলে মানবিক করিডরের সিদ্ধান্ত নিতে হতো: নাহিদ ইসলাম
  • স্পেন ও পর্তুগালে ভয়াবহ বিদ্যুৎবিভ্রাট, সব ধরনের গণপরিবহনে বিপর্যয়