ইরানের বন্দরে বিস্ফোরণে নিহত বেড়ে ১৮, আহত সাত শতাধিক
Published: 27th, April 2025 GMT
ইরানের বৃহত্তম বাণিজ্যিক বন্দর আব্বাস বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ জন। আহত হয়েছেন সাত শতাধিক মানুষ।
রবিবার (২৭ এপ্রিল) ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানের জিও নিউজ।
জিও নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, গতকাল শনিবার (২৬ এপ্রিল) ওমানে ইরানের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় দফা পারমাণবিক আলোচনা শুরু হওয়ার সময় ইরানের আব্বাস বন্দরের শহীদ রাজাই অংশে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে, তবে দুটি ঘটনার মধ্যে কোনো যোগসূত্রের ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।
আরো পড়ুন:
ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা কমাতে মধ্যস্থতার প্রস্তাব ইরানের
পারমাণবিক ইস্যুতে চীন-ইরান গভীর আলোচনা
ইরানের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থার মুখপাত্র হোসেইন জাফরি শহীদ রাজাইতে বিস্ফোরণের জন্য রাসায়নিকের দুর্বল মজুতকে দায়ী করেছেন। ইরানের আইএলএনএ সংবাদ সংস্থাকে তিনি বলেন, “কন্টেইনারের ভেতরে থাকা রাসায়নিকই ছিল বিস্ফোরণের কারণ।”
জাফরি বলেন, “এর আগে, সংকট ব্যবস্থাপনার মহাপরিচালক বন্দর পরিদর্শনের সময় এখানে সতর্কতা দিয়েছিলেন এবং বিপদের সম্ভাবনা উল্লেখ করেছিলেন।”
ইরান সরকারের একজন মুখপাত্র বলেন, “রাসায়নিক পদার্থের কারণে বিস্ফোরণ ঘটেছে, যদিও সঠিক কারণ নির্ধারণ করা এখনও সম্ভব হয়নি।”
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছেন।
ইরানের সরকারি সংবাদ চ্যানেলগুলো বিস্ফোরণের পর বন্দরের উপরে কালো ও কমলা রঙের ধোঁয়ার কুণ্ডলী উড়ে যাওয়ার এবং একটি অফিস ভবনের দরজা উড়ে যাওয়ার এবং কাগজপত্র ও ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে পড়ার ফুটেজ প্রচার করেছে। বিস্ফোরণের তীব্রতা এতই বেশি ছিল যে, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের মতে, কৌশলগত হরমোজ প্রণালীর কাছে অবস্থিত শহীদ রাজাই বন্দরটি ইরানের বৃহত্তম কন্টেইনার হাব, যা দেশের বেশিরভাগ কন্টেইনার পণ্য পরিবহন করে।
ইরানি গণমাধ্যম জানিয়েছে, বিস্ফোরণে কয়েক কিলোমিটার দূরবর্তী এলাকাগুলোর ভবনের জানালা ভেঙে গেছে এবং বন্দর থেকে ২৬ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত কেশমে একটি দ্বীপে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।
আধা-সরকারি তাসনিম সংবাদ সংস্থা রাস্তায় পড়ে থাকা আহত ব্যক্তিদের ফুটেজ পোস্ট করেছে।
বন্দরের কাস্টমস কর্মকর্তাদের মতে, যেখানে বিস্ফোরণটি ঘটেছে সেখানে সম্ভবত ‘বিপজ্জনক পণ্য এবং রাসায়নিক’ ছিল। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের পর বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
জাতীয় ইরানি পেট্রোলিয়াম পরিশোধন ও বিতরণ কোম্পানি এক বিবৃতিতে বলেছে, বিস্ফোরণের ফলে বন্দর এলাকার তেল স্থাপনাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। কোম্পানিটি বলেছে, শহীদ রাজাই বন্দরের বিস্ফোরণ ও আগুনের সঙ্গে এই কোম্পানির পরিশোধন কেন্দ্র, জ্বালানি ট্যাংক, বিতরণ কমপ্লেক্স এবং তেল পাইপলাইনের কোনো সংযোগ নেই।
২০২০ সালের মে মাসে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এই একই বন্দরে একটি বড় সাইবার হামলা চালানোর অভিযোগ উঠে। ওই হামলায় বন্দরের কম্পিউটার সিস্টেম বিকল হয়ে কয়েক দিন পরিবহন ব্যবস্থা ব্যাহত হয়।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইসরায়েলের হামলা
রবিবার বিকেল থেকে ইরানজুড়ে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
রবিবার রাতে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইদ খাতিবজাদেহ ইসরায়েলি হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে তিনি জানান, রবিবার রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।
এক্স-পোস্টে সাইদ বলেছেন, “ইসরায়েলের অপরাধী শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবনে ইচ্ছাকৃত এবং নির্মম হামলা চালিয়েছে।”
আরো পড়ুন:
ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত
ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত
উপ-মন্ত্রী আরো বলেন, “এই হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন, আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মীও আহত হয়েছেন, যাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”
সাইদ বলেন, “এটি আরো একটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর চলমান ও নিয়মতান্ত্রিক আগ্রাসন অভিযানের অংশ।”
এর আগে শনিবার ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা তেহরানের অস্ত্র উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে ইরানের আইআরজিসি ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে রবিবার নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, এই হামলায় ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি), গার্ডস কুদস ফোর্স এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আরো জানিয়েছে, ইরানজুড়ে অসংখ্য অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে।
ইরানি বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই হামলায় আইআরজিসিরি গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার সহকারী হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া মোহসেন বাঘারি নামে আইআরজিসির আরো একজন জেনারেল নিহত হয়েছেন। এর প্রতিশোধ নিতে রবিবার রাতে ইসরায়েলে ৫০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও শতাধিক ড্রোন ছুড়েছে ইরান।
ইসরায়েলের ফায়ার ও রেসকিউ সার্ভিসের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, উত্তর ইসরায়েলে দুটি এবং হাইফায় একটি আবাসিক ভবনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হানার খবর পেয়েছে তারা।
ইসরায়েলি জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা জানিয়েছে, হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সাতজন আহত হয়েছেন। এছাড়া কিরিয়াত গাটের কাছে দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি শহরে একজন আহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামির ইরানের ওপর আক্রমণ আরো তীব্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একটি বিবৃতি জারি করে ইসরায়েরি সেনাপ্রধান বলেছেন, “আমরা আমাদের অভিযান তীব্রতর করে যাব এবং এটি করে, আগামী বছরগুলোতে আমাদের নিরাপত্তা জোরদার করব। আমরা জানতাম এর একটি মূল্য দিতে হবে এবং এটিই বোঝায় যে, আমরা কেন এখনই পদক্ষেপ নিয়েছি, তা অনেক দেরি হওয়ার আগেই।”
ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ৯০০ জন আহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত এবং ৩৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।
ঢাকা/ফিরোজ